রায় নিয়ে বিএনপির নীরবতা ও লাভ-ক্ষতির পর্যালোচনা ।
লিখেছেন লিখেছেন মহি১১মাসুম ০৯ নভেম্বর, ২০১৪, ০৪:৪৭:৫৭ রাত
এই কথা সত্য শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও শেখ হাসিনা সরকার দীর্ঘ ৪৩ বছর পর চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের ট্রাইব্যুনালে বিচারের মুখোমুখী করাতে সক্ষম হয়েছেন । একমাত্র শেখ হাসিনার দৃঢ়তার কারনেই তা সম্ভব হয়েছে, অন্য কারো পক্ষে এই বিচার কার্য্যে হাত দেয়া কল্পনাতীত বিষয় । যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে শেখ হাসিনা বাংলার ইতিহাসের আরেকটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে যাচ্ছেন- বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে আর তারই কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর হচ্ছে । জামাত হয়তঃ স্বপ্নেও ভাবেনি সুদীর্ঘ ৪৩ বছর পর এভাবে ফাঁসির রশিতে ঝুলে ইতিহাসের দায় মোচন করতে হবে ।
অন্যদিকে তারেক জিয়া লন্ডনে বসে ৭১ এর ইতিহাস গবেষণায় মত্ত আছেন, প্রেসিডেন্ট জিয়াকে মহিমান্বিত ও বঙ্গবন্ধু তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার প্রয়াসে উদ্ভট সব তথ্য হাজির করছেন । এদিকে যে ৭১ এর ধারাবাহিকতার আরেকটা পর্ব থেকে বিএনপি বঞ্চিত হচ্ছে, সেদিকটায় খেয়াল নেই । ভবিষ্যত রাজনীতিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আওয়ামী রাজনীতির নতুন খোরাক/প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে । আর বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের দোসর হিসেবেই চিহ্নিত হবে ।
সাঈদীর রায়ে শীথিলতা এবং জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গনে দন্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের জানাযা নিয়ে জামাতের সাথে সরকারের আঁতাতের অভিযোগ উঠেছিল, কিন্তু একের পর এক যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় এবং রায় বাস্তবায়নেও শেখ হাসিনা তার দৃঢ় সংকল্পের কথা সংবাদ সম্মেলনে পূনর্ব্যক্তের মাধ্যমে সেই আঁতাতের আশংকাকে ভুল প্রমানে সক্ষম হয়েছেন ।
অন্যদিকে বিএনপি নীরব থেকে হয়তঃ ভাবছে আওয়ামীলীগ ওদের বিচারগুলো শেষ করলে এবং জামাতকে নিষিদ্ধ করলে বিএনপির ভোট ব্যাংক বাড়বে । বাস্তবতা কী তা বলে, নিশ্চয় না । জামাত নিষিদ্ধ হলে আন্ডার গ্রাউন্ড রাজনীতিতে না গিয়ে অন্য নামে আবার রাজনীতিতে ফিরে আসবে । আর ঐ ক্ষেত্রে জামাত বিএনপি জোটে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ, আর থাকলেও আগের মত যুদ্ধাংদেহী মনোভাব নিয়ে মাঠে থাকবেনা, প্রতিনিয়ত লাভ-ক্ষতির অংক কষবে, জোটের রাজনীতি কঠিন দরকষাকষির ফরম্যাটে এগুবে । কারন ইতিমধ্যে জামাত-শিবিরের জানমালের অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হয়েছে । তাছাড়া জামাত ভাববে বিপর্যয়ের সময় বিএনপি যেহেতু ভূমিকা রাখেনি, তাই বিএনপির ক্ষমতায়নের সিঁড়ি জামাত হতে চাইবেনা । তাছাড়া জামাত-শিবির কর্মীদের বদ্ধমূল ধারনা বিএনপি জোটে থাকার কারনেই আওয়ামীলীগের নির্যাতনের খড়গ তাদের উপর নেমে এসেছে । তাই কিছুটা সময়ের জন্য হলেও একলা চলার রাজনীতির মাধ্যমে শক্তি সঞ্চয়ে চেষ্টা করবে এবং ট্যাকনিক্যালি আওয়ামীলীগের বিএনপি বিনাশের রাজনীতিতে পরোক্ষ সহায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে । কারন বিএনপি সাংগঠনিক ভাবে দূর্বল হলে তাদের উপর বিএনপির নির্ভরশীলতা আরো বৃদ্ধি পাবে আর বিএনপি বিলুপ্তির পথে ধাবিত হলে এ্যান্টি আওয়ামী ভোটারদের প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষেত্র তাদের জন্য প্রসারিত হবে । তাই বলা যায় বিএনপি জামাতের মধ্যে কোন সংগঠনটি আগামীতে এ্যান্টি আওয়ামী ভোটারদের প্রতিনিধিত্ব করবে ? ধীরে-ধীরে রাজনীতি সেই দিকেই ধাবিত হবে ।
যুদ্ধাপরাধীদের রায় নিয়ে বিএনপির নীরবতা বিএনপিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে । কারন একদিকে জোটমিত্র জামাতের সাথে দূরত্ব বাড়ছে অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অংশীদারিত্বের রাজনৈতিক ক্ষেত্র তাদের জন্য ক্রমশঃ সংকুচিত হচ্ছে । বড় রাজনৈতিক দলও সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহনে ব্যর্থ হলে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে । বিএনপির সিদ্ধান্তহীনতা ও রাজপথে কর্মসূচীহীন নিস্তেজ অবস্থান বিএনপিকে ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে । খালেদা জিয়ার বড় ভুল ছিল ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে অংশগ্রহন না করা । আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি ঐ নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপির জয়ের সম্ভাবনাই বেশী ছিলো, আর সরকার জোরজবরদস্তির নির্বাচন করলে বিএনপি রাজপথের আন্দোলনে সক্রীয় থাকতে পারতো, আজকের ন্যায় মুখথুবরে পরতো না । অন্যদিকে শেখ হাসিনা দ্বিধাদ্বন্ধে না ভুগে এরশাদকে ধরে বেঁধে সিএমএইচ ভর্তি করিয়ে নির্বাচন করিয়ে নিয়েছেন । ঐ সময়ে এরশাদের হুটকরে পিছুটানেও শেখ হাসিনা দ্বিধাদ্বন্ধে ভোগেননি, সিদ্ধান্ত নিয়ে একের পর এক বিপর্যয়ের আশংকা গুলো কাটিয়ে সরকারকে একটা স্ট্যাবল পজিশনে নিয়ে এসেছেন ।
খালেদা জিয়াকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে শ্যাম রাখি না কূল রাখি অবস্থানকে পরিহার স্বচ্ছ অবস্থানে আসতে হবে । হয় জামাতকে সাথে নিয়ে পুরোপুরি দক্ষিন পন্থার রাজনীতিতে মনোনিবেশ করতে হবে, না জামাতকে পরিহার করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে প্রগতিশীল ইতিবাচক রাজনীতিকে ধারন করতে হবে । মাঝা-মাঝি থেকে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের রাজনীতির ভবিষ্যত অন্ধকার । কারন জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা প্রযুক্তি ও মিডিয়ার গতিশীলতা ও সহজলভ্যতার কারনে নাগরিকরা অনেক বেশী সচেতন । তাই নাগরিকদের সমস্যাকে প্রাধান্য দিয়ে বিশ্ব রাজনীতিকে বিবেচনায় রেখেই বিএনপিকে রাজনীতি করতে হবে । সেই ক্ষেত্রেঃ এক) আন্তর্জাতিক মুসলিম জঙ্গিবাদী গ্রুপ আইএসের মতাদর্শের সাথে ন্যূনতম সম্পর্কধারী ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল সমূহের সাথে বিশ্বাসযোগ্য নিরাপদ দূরত্ব তৈরী করে পশ্চিমা বিশ্বের আস্থা অর্জন করতে হবে । দুই) ভারত বিরোধী উগ্রতা পরিহার করে ভারতের আস্থা অর্জনমূলক রাজনীতিকে প্রাধান্য দিতে হবে । তিন) নাগরিক জীবনের সমস্যাকে নিয়ে রাজপথের আন্দোলনে সক্রীয় হতে হবে । চার) বিশেষতঃ নতুন প্রজন্মের ভোটারদের আকৃষ্ট করার মত ভবিষ্যত বাংলাদেশের মডেল স্ববিস্তারে তুলে ধরতে হবে । পাঁচ) যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে নীরবতা পরিহার করে সক্রীয় ও স্বচ্ছ মতামত প্রকাশ করতে হবে । যুদ্ধাপরাধীদের বিপক্ষে গঠনমূলক অবস্থান নিলে বিএনপি জামাতকে হারাবে সত্য, পক্ষান্তরে অর্জন করবে নতুন প্রজন্ম ও প্রগতিশীল গনমানুষের আস্থা । তাছাড়া এতে আওয়ামীলীগের রাজনীতির ক্ষেত্রও সংকুচীত হবে । আওয়ামীলীগের একতরফা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কেন্দ্রিক রাজনীতির বিপরীতে বিএনপিও সমঅংশীদারিত্বের ক্ষেত্র তৈরীতে সক্ষম হবে । মোটকথা বিএনপিকে নীরবতা বলয়ে ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে হবে এবং জনগনকে দিতে আস্থা অর্জনমূলক কমিটমেন্ট ।
বিষয়: রাজনীতি
৩৩৬৭ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তহুরা আপনিতো দেখছি ওনাদের ভিক্ষার ঝুলি ধরাতে চাইছেন। এতোটাই অকর্মণ্য ব্যক্তি নাকী ওনারা ।
ধন্যবাদ।
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 7238
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 764
অনেক বিনোদন পেয়েছি।
যাহোক,৭৫ যাদের প্রান গেছে এবং এর বিচারে যাদের প্রান গেছে। এমনকী ৭১ এ যাদের প্রান গেছে এবং এখন বিচারে যাদের প্রান গেছে-যাবে,কোন পক্ষের কাছে এইটা বিনোদন নয়।
ধন্যবাদ।।
বিচার পক্রিয়া(Judicial Process set by fasciest regime): জাতীয় ও আন্তরজাতিক ভাবে অস্বীকৃত ও অগ্রহণ যোগ্য। আদালতের গ্রহণ যোগ্যতা নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার organization প্রশ্ন তোলে ও পতিবাদ জানায়। ফ্যাসিস্ট রেজীম নিজেদের খুশী মত ঘন ঘন আইন পরিবতন(ament the law, which is not cxceptable in any sence), চোর-বাটপারকে সাক্ষী হিসাবে আনয়ন , আদালত থেকে সাক্ষী গায়েব ও নির্যাতন (the list is very big) ইত্যাদি ঘটনার জন্ম দিয়ে বস্তুত আদালতকে হাস্য রসে পরিণত করে এবং শুধু আইনবিদদের কাছেই নয় বরং আম জনতারও কাছে তার গ্রহণ যোগ্যতা হারায়।
but you want to tell us :এই কথা সত্য শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও শেখ হাসিনা সরকার দীর্ঘ ৪৩ বছর পর চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের ট্রাইব্যুনালে বিচারের মুখোমুখী করাতে সক্ষম হয়েছেন ।
in one words you try to put the TRUTH" Upside down" Is not is?
আমি আপনার বিপরীতে অবস্থান করি,জামাত-শিবিরের বর্তমান অতীত কোনটাই আমার পছন্দ নয়। তাই বলে অযৌক্তিকভাবে দমনেও বিশ্বাসী নই।
যাহোক,মোটাদাগেই বলছি-যুদ্ধাপরাধ/মানবতা বিরোধী অপরাধ/গণহত্যার বিচার আমাদের সাধারন আদালতের মতন নয়,আর সাঃ আদালতে এই ধরনের অপরাধীদের অপরাধ প্রমানও সম্ভব নয়। তাই বলে কী অপরাধীদের বিচার হবে না। তাই বিশেষ আদালত। আপনাকে বলে রাখছি এই ট্রাইব্যুনালের অনুকরনে অন্য দেশেও বিচারের কথা ভাবছে। বাঙ্গালীরা সর্বক্ষেত্রেই অগ্রগামী,ভাষার জন্য জীবন দেয়া,যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করা,আর আমাদের তত্ত্বাবধায়ক তত্ত্বতো অন্যরা অনুকরন করছে ।
এই আদালত পেপার পত্রিকা বই-পুস্তকে সন্নিবেশিত ইতিহাসকে আমলে নেয়,যা সাঃ আদালতে অসম্ভব। ৭১ পরবর্তী সময়ে এই লোকগুলোর বিরুদ্ধে অসংখ্য লিখালিখি হয়েছে,যা এখন আদালতে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ধন্যবাদ।
firstly <যাদের বিরুদ্ধে আমি বলছি, তাদের সাথে আপনার বর্তমানের সম্পর্কের কারনে উনাদের অতীতকে ঢাকতে চান> i reject you allegation because I did not hate anybody. As a social worker in New Zealland I work with Tarak who was ex-Sattro leauge VC of Mymensing Medical college. But most important is that i always uphold the justice even it goes against my close relative, eveny myself.
That is why i am up holding my pen in favour of them. Because i want justice, i want not even a single innocent should be perceutate because their thinking/way of life is different from present fasciest regime. i do not care how close they are. i up hold my pen to established the truth according my intelect. Thanks again for your opinion.
please give a post about this subject matter.so that we can understand actually what is going on.
আর জামাতকে আওয়ামীলীগ ডুবাতে চাইছে। এই দুই সংগঠনের মধ্যে যারা মাথার ব্যবহারে ক্যারিশমা দেখাবে,তারা আগামীর রাজনীতি এ্যান্টি আওয়ামী ভোটারদের নেতৃত্ব দিবে।
ধন্যবাদ।
জনগন যে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাবে,সেই নির্বাচনটাও বিএনপিকে আদায় করতে হবে।
ধন্যবাদ।
নিরেট সত্য কথা বলেছেন। বিশ্লেষনটা সুন্দর ও যুক্তিসঙ্গত। ধন্যবাদ।
প্রবাসী আপনার কোন এক লিখা থেকে জেনেছি আপনি চিওড়া অঞ্চলের,আমি মিয়াবাজার অঞ্চলের।
আপনার নিকের ছবির হাসিটা জটিল-প্রান খোলা,বিদ্রুপাত্মক,উপহাসের,দুষ্টুমির-যে যার মত দেখার সুযোগ আছে।
সরি,ব্যক্তিগত বিষয়ে নাক গলানোর জন্য।
ভালো থাকবেন।
আমার ছোটভাইটা আপনাদের কলেজেই পড়তো। পরবর্তীতে চৌদ্দগ্রাম কলেজ সংসদের ভিপি হয়েছিল--নাম মাহবুব।
ও হ্যাঁ আপনার এলাকার কাজী কাদের(চিওড়া কাজী বাড়ী) আমরা কাছাকাছি এলাকায় থাকি।
ধন্যবাদ ভালো লাগলো পরিচিত হয়ে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন