জানতে চাই ??? শাহবাগ কাদের জন্য হুমকী ।
লিখেছেন লিখেছেন মহি১১মাসুম ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০১:৪৩:৪২ রাত
শাহবাগ সকল শাসক গোষ্টীর জন্য হুমকীস্বরূপ কী ?
শাহবাগের সেদিনকার উত্তাল জনসমুদ্র শাসকদল আওয়ামীলীগকে বাধ্য করেছিল কাদের মোল্লার প্রকৃত শাস্তি নিশ্চিতকরনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে । আর তখনকার প্রধান বিরোধীদল বিএনপি জোটমিত্রের নেতা কাদের মোল্লাকে রক্ষা করতে গনজাগরণের বিরুদ্ধে প্রচারনা চালিয়েছিল । এক বিবেচনায় শাসক শ্রেনীর প্রধান দল আওয়ামীলীগ এবং বিএনপির প্রতি গনমানুষের দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভেরই বিস্ফোরিত রূপ শাহবাগ আন্দোলনের প্রথমাবস্থা । স্বীকার করি আর নাইবা করি, যুদ্ধাপরাধীদেরকে রাজনীতিতে পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে এই প্রধান দল দুটির অপরাজনীতিকে অস্বীকার করা যাবে না, পার্থক্য এইটুকু কেউ বেশী করেছেন কেউ কম করেছেন । রাজনীতি বিশ্লষকদের অনেকেই মনে করেন জন-আকাংখার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ক্ষুদ্র ব্যক্তি গোষ্ঠী বা দলীয় স্বার্থে শাসন কার্য্য ও রাজনীতিকে পরিচালনার কারনে জামাত রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে ।
যাহোক, শাহবাগের গনজাগরণ সৃষ্টির প্রেক্ষাপট এতো দ্রুত স্মৃতি থেকে হারিয়ে যাওয়ার কথা নয়, পুলিশী তৎপরতার কারনে জামাত ঢাকা শহরে প্রকাশ্যে মিছিল মিটিং করতে পারছিলোনা, হঠাৎ কাদের মোল্লার রায়ের আগের দিন জামাত-শিবির শাপলা চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে এবং ঐ সমাবেশ থেকে কাদের মোল্লা সহ যুদ্ধাপরাধে বিচারাধীন অপরাপর জামাত নেতাদের মুক্তি দাবী করে, নচেৎ গৃহযুদ্ধের হুমকী দেন এবং ঐ মিছিল-সমাবেশ থেকে জামাত-শিবির কর্মীরা পুলিশের সাথে রজনীগন্ধার স্টিক বিনিময় করে । এসব দেখে রাজনীতি সচেতন জনগোষ্টীর মাঝে সন্দেহ দানা বাঁধে, নিশ্চয় জামাতের সাথে সরকারের কোন একটা আপোষরফা হয়েছে, নচেৎ পুলিশ কেন ফুলের শুভেচ্ছা বিনিময় করবে কেনইবা জামাতকে এতোটা নির্বিগ্নে সমাবেশ করতে দিবে । নাগরিকদের মধ্যকার এই ভাবনার রেশ কাটতে না কাটতেই পরদিন একাত্তরের গনহত্যার কুখ্যাত আসামী কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদন্ডের রায় আসে । কাদের মোল্লার মত একজন জঘণ্য যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি না হয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের রায় এবং আগের দিনকার শাপলা চত্বরের চিত্র, নাগরিকদের সরকারের উপর বিক্ষুব্ধ করে, অতঃপর প্রতিবাদে রাস্তায় নামে, তারই চূড়ান্ত রূপ শাহবাগের গনজাগরণ, যা সবারই জানা আছে ।
এটা ঠিক, শাহবাগের জন্মাবস্থা প্রধান দুটি দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপিকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে, যদিও সরকার তাদের প্রতি অবিশ্বাস থেকে জন্ম নেয়া গনজাগরণে সুকৌশলে অবস্থান গ্রহন করে । এই অবস্থান গ্রহনের প্রথম অবস্থায় সরকার দলীয় কয়েকজন নেতা লাঞ্ছিতও হন, এই লাঞ্ছনাকে নীরবে হজম করে সরকারীদল গনজাগরণে ঢুকে পড়ে । আর প্রধান বিরোধীদল এই গনজাগরণকে ব্যর্থ করার বিভিন্ন কৌশল গ্রহন করেও সফলতা পাননি । সরকারীদল গনজাগরণে ঢুকে প্রথম থেকেই নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে পরিচালনার কৌশল গ্রহন করে । এই লক্ষ্যে সরকারীদল তাদের ছাত্র সংগঠন এবং তাদের সমর্থনকারী সুশীল বুদ্ধিজীবি ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের ব্যবহার করেন । কিন্তু সিপিবি-বাসদের ছাত্র সংগঠন ও দল নিরপেক্ষ সুশীল বুদ্ধিজীবিরা গনজাগরণকে সরকারী বলয়মুক্ত রাখার নিরলস প্রচেষ্টা চালায় । মূলতঃ এই সচেতন শিক্ষিত তরুণরা গনমানুষের আকাংখাকে ধারন করতে পেরেছিল বিধায় এবং ওদের কাছে আওয়ামীলীগ বিএনপির স্বার্থান্বেষী রাজনীতির চিত্রটা পরিস্কার থাকার কারনে কোন দলই পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হননি ।
সরকারীদল গনজাগরণকে পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারায় এটিকে ধ্বংস করে দেয়ার মিশন গ্রহন করে । কারন নিয়ন্ত্রণহীন এই ধরনের প্রতিবাদী জনতা যে কোন সময় সরকারের অপরাজনীতি অনিয়ম দূর্ণীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেলে সরকারকে তা মোকাবেলা করা কষ্টকর হতে পারে । তাই কাদের মোল্লার রায়ের প্রক্ষাপট শেষ হওয়ার পর থেকেই গনজাগরণকে ধ্বংস করার জন্য সরকারীদল ওঠে-পড়ে লাগে । আর এক্ষেত্রে সরকারীদল নিজেদের ছাত্র সংগঠন ও সরকারী জোটভূক্ত বাম সংগঠনের ছাত্র সংগঠনকে ব্যবহার করে এবং নগ্নভাবে গনজাগরণের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারকে বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে সংগঠনটিকে দুই/তিন ভাগে বিভক্ত করে ফেলে ।
গনজাগরণের এই বিভক্ত অবস্থায় আপীল বিভাগ সাঈদীর ফাঁসির রায়কে বাতিল করে আমৃত্যু কারাবাসের রায় দেন, এই রায় নিয়ে গনজাগরণ তিনটি অংশই প্রতিবাদে শাহবাগে আসে কিন্তু দুটি অংশ নির্বিগ্নে তাদের প্রতিবাদ জানাতে পারলেও মূল অংশের প্রতি নেমে আসে বর্বর পুলিশী নিপীড়ন । গনজাগরণকে বিভক্ত করা, ওদের উপর পুলিশী নির্যাতন-নিপীড়ন এবং সাঈদীর রায়ের প্রতিক্রীয়ায় সরকারীদলের নেতা-মন্ত্রী ও সরকার সমর্থিত সুশীল বুদ্ধিজীবিদের সমসুরের নমণীয় কথাবার্তায় স্পষ্ট সরকার তাদের ক্ষমতাকে নির্বিগ্ন এবং দীর্ঘস্থায়ী করার লক্ষ্যে জামাতের সাথে কোন ধরনের অনৈতিক সমঝোতার পথে হাঁটছেন । আর তা বাস্তব হলে, শাহবাগের আসা লক্ষ-কোটি জনতার কাছে আওয়ামীলীগের স্বাধীনতার চেতনা হাস্যকর বিষয়ে পরিণত হবে ।
শাহবাগকে ইতিহাসের বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে করা ঠিক হবে না । আমরা আমাদের রক্তস্নাত অর্জন গুলির কোনটাকে ধরে রাখতে পেরেছি ? ৭১ এর পরাজিত শক্তিরা স্বমূর্তিতে বর্তমান, ৯০ এর পরাজিত শক্তি দেশ শাসনের অংশীদারিত্ব নিয়ে বহাল তবিয়তে আছে । ৭১-এ ৩০ লক্ষ শহীদ আর ২ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত, ৯০-এ সেলিম দেলোয়ার নূর হোসেন ও ডাঃ মিলনদের রক্তের কী কোন মূল্য নেই ! শাসক শ্রেনী তাদের সংকীর্ণ ক্ষমতার স্বার্থে জনগনের সকল রক্তস্নাত অর্জনকে পায়ে মাড়াবে, তুচ্ছজ্ঞান করবে, আত্মাহুতি দেয়া মানুষগুলোর রক্তের সাথে বেঈমানী করবে আর জনগন প্রতিটা অর্জনের জন্য জীবন দিয়েই যাবে ! এর শেষ কোথায় ?
বিষয়: রাজনীতি
১৬০২ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মানবতার জন্য হুমকি
সভ্যতার জন্যও
"মানুষ"এর জন্য
ধন্যবাদ, উত্তরের প্রত্যাশা করছি।
আর এখন পিটিয়ে যা করলো তা-ও উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য- এবং এটাও অন্যায়
মন্দ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ভালোকাজ করলেও সেটা অন্যায় হওয়া থেকে আলাদা কিছু হয়না!!
পড়লাম। তবে সরকার তার নিজ স্বার্থে শাহবাগকে ব্যবহার করেছে। এখন স্বার্থ ফুরিয়েছে, শাহবাগী চেতনাকেও দরকার নেই। তবে একটা প্রশ্ন মনের ভিতর জাগছে, যে জনতার স্বতঃস্ফূর্ত ঢল আমরা তখন দেখেছিলাম, সব শেষে সেই সংখ্যা কেন শ'খানিকে নেমে এলো? যদি সেই মানুষগুলো চেতনায় ১০০% সঠিক এবং দৃঢ় মনোবলের হতো, তবে তাঁরা সবসময়েই তো একই থাকার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে কি তা দেখলাম?
শুভেচ্ছা আপনার জন্য।
উপস্থিতি বিষয়ক প্রশ্ন কেন শ'খানিকে নেমে এলো? উত্তরটা এককথায় বলা কষ্টকর। ঐখানে যারা গিয়েছিল তারা অবশ্যই আছে-চেতনাও আছে,আর ঐখানে যারা গিয়েছিল তারা একটা অরাজনৈতিক ব্যানারের অধীনে বিভিন্ন দলমতের মানুষ ছিল, নিরাপদ পরিবেশ থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়েছিল,
এখন সরকার দ্বিধাবিভক্ত করে হামলা করছে,মূলতঃ নিরাপত্তাহীন পরিবেশে নির্দলীয় ব্যানারের অধীন মানুষ যাবে কেন? দলের ব্যানারে দলের আদর্শানুসারীরা রিস্ক নেয়,সেই বিবেচনায় শাহবাগের জন্য সাধারন মানুষ রিস্ক নিয়ে বের হচ্ছে না।
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।
আপনার জন্য করুণা।
আপনি আপনার মত ভাবছেন। ঐ মানুষগুলো একটা কমন বিষয়ে গিয়েছিল । আর ঐখানে ইস্যুর বিস্তৃতি অযৌক্তিক। কারন ঐ মানুষগুলো বিভিন্ন দল ও মতের। তার পছন্দের দলের ক্ষতি হয় এমন ইস্যু হাতে নিলে সে থাকবেনা বা যাবেনা,যেমনি বিএনপির অনেক সমর্থক যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও দলের ক্ষতি হবে বিধায় যায়নি।
এই ধরনের ইস্যু ভিত্তিক জাগরনের ইতিহাস বিভিন্ন দেশে আছে। যা একটা কমন বিষয়ে হয়েছে।
আবারো ধন্যবাদ।
শাহবাগ আন্দেলনের নামে যে কোটি কোটি টাকা আপনার খেয়েছেন তার হিসেব একদিন সুদে-আসলে শোধ করতে হবে মানে রাখবেন।
রাজনীতিতে এই ধরনের অপবাদ আজকের নয়। পুরানো কথায় বললেন।
ভালো থাকবেন।
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।
সভ্যতা-মানবতা-নৈতিকতা সহ দেশ ও দেশের জন্যেই হুমকী এই শাহবাগ। কিছু বিকৃত মানুষের মিথ্যা ফানুস উড়ানোতে যোগ দিয়েছিল নাবুঝা/স্বার্থবাদী লোক। মোহ কেটে যাওয়ায় পিছুটান হয়েছে তাদের।
কিছু উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেনির নারি-পুরুষ কর্পোরেট প্রশ্রয় এ মিডিয়ার সহায়তায় এই তথাকথিত আন্দোলন গড়ে তুলেছিল।
সাধারন মানুষের জন্য এই আন্দোলন এর কোন অবদান আছে কি?
বরং এই আন্দোলন তো ফ্যাসিজম কে প্রমোট করেছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন