একটি রায়, এক ঢিলে অনেক পাখি ।
লিখেছেন লিখেছেন মহি১১মাসুম ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০২:২৮:৪৫ রাত
একটি রায়, এক ঢিলে অনেক পাখি ।
আপীল বিভাগ সাঈদীর ফাঁসির রায় পরিবর্তন করে আমৃত্যু কারাবাস দিয়েছে, তা নিয়ে গুঞ্জন চলছে সমাজের সর্বত্র । রায়ে সাধারনতঃ এক পক্ষ খুশী এবং অন্যপক্ষ নাখোশ হয় । ব্যতিক্রম হচ্ছে এই রায়ে দু-পক্ষই নাখোশ । তবে প্রতিক্রীয়া ব্যক্ত করছেন খুবই সতর্কতার সাথে, পাছে আদালত যদি আইন-আদালতকে অসন্মানে দায়ে ডেকে বসে । এইতো গেল সরকারী আইন-আদালতের ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত বাদী-বিবাদীর কৌশলিক জবাবের কথা । অন্যদিকে বাদী-বিবাদী উভয়ের দিকেই তাকিয়ে আছে মহাপরাক্রমশালী জনগন (প্রকৃত অর্থে তবে-----),জনগন টের পেলে খবর আছে, আইন-আদালত ও বাদী-বিবাদী সবারই ইজ্জত যাবে । তাই বাদী বিবাদীর মেকি ক্ষোভ প্রকাশের অন্ত নেই । সব পক্ষই কৌশলিক শব্দে দক্ষ ভাবেই সামলাচ্ছেন, সবাই দক্ষ অভিনেতা, অভিনয় ক্যারিশমার জুড়ি মেলা ভার । দেখে শুনে মনে হচ্ছে রাজনীতিবিদরা (বাদী-বিবাদী) ছাড়িয়ে গেছেন পুরোদস্তর দক্ষ অভিনেতাদেরকেও ।
তবে এই রায়টি আসল অনেক দেরীতে, তাই অনেকদিন যাবত কানাঘুষা হচ্ছিল সরকারীদল পর্দার অন্তরালে নিশ্চয় কোন দরকষাকষিতে ব্যস্ত, না হয় শুনানী শেষ হওয়ার পর এত লম্বা সময় অপেক্ষা কেন ? যাহোক, জনমনে এই সন্দেহ বাতিক জন্ম নেয়ার কারন আমাদের দেশে আইন-আদালত স্বাধীন হলেও রায়ের ক্ষেত্রে সরকারীদলের মেজাজ-মর্জির প্রভাবকে অস্বীকার করা যায় না । সেই ইতিহাস দীর্ঘদিনের, বিভিন্ন সময়কার সরকারীদলের এহেন ভুরিভুরি দৃষ্টান্ত আছে ।
কথা না বাড়িয়ে রায়টি মেনে নিয়ে আদালতের উপর পূর্ণ আস্থা-বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা রেখেই বলছি-এই রায়ে রাজনীতি সচেতন জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা ঝড় ওঠেছে, এক কথায় জনগন রাজনৈতিক সমঝোতা বা আঁতাতের গন্ধ পাচ্ছে । তবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট জনেরা ভীন্ন-ভীন্ন কথা বলছেন- বিএনপি যথারীতি আগের মতই নীরব তবে জোটমিত্রের এহেন কথিত আঁতাতের সন্দেহে কিছুটা উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় ভূগছে, আর জামাত-শিবির নাখোশ হলেও আগের মত যুদ্ধাংদেহী মনোবৃত্তি অনুপস্থিত, তবে নিন্দুকেরা বলছেন আঁতাতের গন্ধ তাড়ানোর জন্য জামাত নাকী নিয়ম রক্ষার হরতাল নামক স্প্রে কর্মসূচী দিয়েছে । তাছাড়া পত্রিকায় এসেছে সাঈদীর ছেলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মামলা রিভিওয়ের কথা বললেও মুখের কোনে নাকী মুচকী হাসির আভা সাংবাদিকদের দৃষ্টি এড়ায়নি আর বিভিন্ন শ্রেনী পেশার ব্যক্তিত্বদের মধ্যে দলকানারা দলীয় নেতাদের মতই মন্তব্য দিয়েছেন তবে দল নিরপেক্ষরা খুবই মর্মাহত হয়েছেন এবং ভবিষ্যত মামলাগুলো নিয়ে শংকা ও ক্ষুব্ধতাও প্রকাশ করেছেন । তাছাড়া অনেকে মনে করেন জামাত তাদের যুদ্ধাপরাধী নেতাদের বাঁচানো এবং ভবিষ্যত রাজনীতিকে ধরে রাখার স্বার্থে এক পা ধানের শীষে এবং অন্য পা নৌকায় রেখেছেন ।
ও হ্যাঁ, একটি রায়; এক ঢিলে অনেক পাখি । এই আসল বিষয়টাই বলা হয়নি । আসুন দেখি, কীভাবে এই পাখি শিকার হচ্ছে তা বুঝার চেষ্টা করি । এই রায়টি থেকে সরকারীদল কী কী ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করছে তা বিবেচনায় আনলে এক ঢিলে অনেক পাখি শিকারের বিষয়টা পরিস্কার হবে ।
এই একটি রায় থেকে সরকারী দলের ফায়দা সমূহঃ-
এক) সরকারী দল আওয়ামীলীগ তাদের রাজনৈতিক কমিটমেন্ট পূর্ণ করেছে, যুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে সাঈদীর বিচারকার্য সম্পন্ন করেছে এবং সাঈদীকে কারাগারে রেখে রায় কার্যকর করাচ্ছে । আদালত শাস্তির মাত্রা কমিয়ে দিলে সরকারের করার কী আছে, আদালত স্বাধীন প্রতিষ্ঠান । এর মাধ্যমে আওয়ামীলীগ তাদের রাজনৈতিক অঙ্গীকার পূর্ণ করতে পেরেছে । যা ভবিষ্যত রাজনীতির সম্বল হবে ।
দুই) এই রায়টি বিএনপি-জামাত জোটের মধ্যে সন্দেহ অবিশ্বাস তৈরীতে ভূমিকা রাখছে ।
তিন) দল এবং দলের বাহিরে ব্যক্তি সাঈদীর ইমেজ জামাতের অন্য যে কোন নেতার বেশী, যা ব্যবহার করে জামাত-শিবির ইতিপূর্বে সারাদেশে ম্যাচাকার করতে সক্ষম হয়েছিল । লঘু রায় দিয়ে সরকার জামাতকে সাঈদীর ইমেজ ব্যবহার করে আন্দোলন গড়ে তোলা থেকে বঞ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে ।
চার) কিছু ধর্ম ভিত্তিক ও ডানপন্থী দলের প্রচারনা-প্রপাগান্ডার কারনে কম শিক্ষিত সাধারন নাগরিক ও আলেম-ওলামাদের কিয়দংশের মধ্যে একটি ধারনা তৈরী হয়ে আছে তা হচ্ছে আওয়ামীলীগ মাদ্রাসায় শিক্ষিত অর্থাৎ হুজুর শ্রেনীর মানুষকে গুরুত্ব দেয় না । ধরে নিন, কাদের মোল্লার মত সাঈদীকে ফাঁসি কার্যকর করালো, দেখা যাবে সাঈদীর ফাঁসির পর প্রতিপক্ষ দল সাঈদীর ওয়াজের ক্যাসেট বাজিয়ে এক ধরনের হায়-আফসোস পরিবেশ তৈরী করতো, যা আওয়ামীলীগের ইমেজকে দীর্ঘমেয়াদী ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতো, এই রায়ের ফলে প্রতিপক্ষরা সুরেলা কন্ঠের ওয়াজীন সাঈদীর ইমেজকে আওয়ামীলীগের বিপক্ষে ততোটা কার্যকর ভাবে ব্যবহার করতে পারবেনা ।
পাঁচ) আপীল বিভাগ সাঈদীকে আমৃত্যু কারাবাস দিয়েছে, অন্যদিকে সরকার সংবিধানে রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমার সেই সুযোগটি রেখেই দিয়েছেন । গনজাগরণের দাবী থাকা সত্ত্বেও সরকার অদ্যবধি সংশোধনীটি আনেননি । এতে করে কখনও বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় আসলে এবং সাঈদী জীবিত থাকলে জামাত বিএনপিকে বাধ্য করাবে সাঈদীকে রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমার মাধ্যমে মুক্ত করতে । বিএনপি সাঈদীকে মুক্ত করতে সম্মত না হলে জোটগত সম্পর্কে ফাঁটল ধরবে আর মুক্ত করলে আওয়ামীলীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভিত্তিক আন্দোলনের ইস্যু পাবে ।
ছয়) মামলাগুলিকে বিভিন্নভাবে ম্যানিপুলেট করে জামাতকে বিএনপি জোটে নিষ্ক্রীয় অবস্থায় রাখার চেষ্টা করা এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে জামাতকে প্রধান বিরোধী দলের লোভ দেখিয়ে বিএনপি জোট থেকে বের করে সরকার আবারো পাঁচ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করবে । তবে এই দল দুটির মধ্যকার সম্পর্ক হলে তা থাকবে অপ্রকাশ্য আর প্রকাশ্যে বিরোধী-বিরোধী নাটক চালাবে । কারন দল দুটির নেতারা ক্ষমতা এবং সুযোগ সুবিধার লোভে আঁতাত করলেও কর্মী-সমর্থকরা তা পছন্দ করেন না ।
যাহোক, এহেন ক্ষমতার সংকীর্ণ স্বার্থে আওয়ামীলীগ সাময়িক ভাবে লাভবান হলেও চূড়ান্ত বিবেচনায় বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে । মোটকথা অনেক পাখি মারতে গিয়ে আমরা যেন সেই মূল পাখিটি অর্থাৎ আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের চাওয়া, যুদ্ধে আত্মাহুতি দেয়া শহীদদের আত্মা, মুক্তিযুদ্ধে স্বজন হারাদের আকুতি, অঙ্গ হারানো যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও সম্ভ্রম হারানো মা-বোনদের ৪৩ বছরে বয়ে বেড়ানো স্বপ্ন-যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে হত্যা না করি ।
বিষয়: রাজনীতি
২৭৮৩ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যাহোক নুর রহিম---!,
কী হবে জানিনা,তবে ভালো কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
(আওয়ামী সেন্টিমেন্টের প্রতি আপনার মূল্যায়নের সাথে মোটেও একমত নই!)আমি এই রায় নিয়ে আওয়ামীলীগের অপরাজনীতিকে উন্মোচনের চেষ্টা করেছি মাত্র।
আওয়ামীলীগ ক্ষমতার জন্য মুক্তিযুদ্ধের সেন্টিমেন্টের অপব্যবহার করার পথেই হাঁটছে । যা থেকে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়াই উচিত। বদরুল থেকে অন্যান্য বিষয়ে আপনার সাথে প্রায় একমত।
ধন্যবাদ ভিশু ভাই।
মারিয়া
পরীবানু
মরুর মুসাফির
পরীবানু ,সততার আলো
অশ্বথমা
অপ্রতিরোধ্য স্বাধীন সমালোচক
পরমা ,নীলমণীলতা
বিলকিস লায়লা
দস্তার
রুপবান
মুক্তিযুদ্ধ ৭১
দ্রাবীড় বাঙাল
লেয়লা ইসলাম
বিলকিস
বাংলা ৭১
ভিক্টোরিয়া
হেলেনা
পল্লব প্রভাতে
খালেদ
রুশো তামজিদ
বারাংগনা
মধুবালা
সখি
ফয়সাল১
মাঝি-মাল্লা, ,
লায়লার
লায়লা০০৭
রাতুল দাস
চকো চকো
সায়েদ-রিয়াদ
বিভ্রান্ত নাবিক
ফাজিল
অপ্রতিরোধ্য স্বাধীন সমালোচক
মুক্তিযুদ্ধ ৭২
দ্রাবীড় বাঙাল
পিচ্চি পোলা
কাওসাইন হক
চাষা
jahed_ullah
নীরু
সাদা মন
সাদা মন
চোথাবাজ
আমি বিপ্লবী
সততার আলো সকাল সন্ধ্যা
এই নেরিকুত্র এত নিক । ব্যাংকের টেইলর না।
আপনার মন্তব্যে বিস্মিত। আপনি কেন এধরনের অশালীন আক্রমনাত্মক মন্তব্য দিলেন,তা আপনিই ভালো জানেন। আমার লিখা পছন্দ না হলে যুক্তি দিয়ে শালীন ভাষায় লিখতে পারেন অথবা এড়িয়ে যেতে পারেন ।
এ মন্তব্যটি প্রত্যাহার করে নেয়ার অনুরোধ রইলো।
ধন্যবাদ।।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন