আগামী নির্বাচনে জামাতই কী আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য ট্রাম্পকার্ড !
লিখেছেন লিখেছেন মহি১১মাসুম ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৩:১৬:০১ রাত
আগামী নির্বাচনে জামাতই কী আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য ট্রাম্পকার্ড !
বাংলাদেশে আবহাওয়ার পূর্বাভাস আর ক্ষমতার রাজনীতিতে কোন দল কোন দলের সাথে জোট বেঁধে নির্বাচনী লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবে, তা শত ভাগ নিশ্চিত করে বলা কষ্টসাধ্য বিষয় । তারপরও আবহাওয়ার পূর্বাভাসের মত করে কিঞ্চিত ভবিষ্যত গণনার চেষ্টা করব । যদি ঠাডায় বক মরার মত আমার ভবিষ্যত বাণীর কেরামতি ফলে যায় ।
আমাদের দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতার অংশীদারিত্বের প্রশ্নে নিজেদের দলীয় বৈশিষ্ঠ্যের তোয়াক্কা করে না, ফলে ডান বাম মধ্যপন্থী উদারপন্থী এমনকি কট্টরপন্থী মৌলবাদী দলের সমন্বয়ে জোট গঠনের সমীকরন দেখে কারো কাছে অবাক ঠেকে না । এখানে দলীয় বৈশিষ্ঠ্য অর্থাৎ জাত-ফাঁত বিষয় নয়, ক্ষমতার হালুয়া রুটিই আসল বিষয় । আর বর্তমান সংসদেতো বিরোধীদলও সরকারে আছে । এইসব আমাদের দেশে ঋতু বৈচিত্রের ন্যায় রাজনৈতিক বৈচিত্র্য ।
যা বলছিলাম, ক্ষমতার অংশীদারিত্বের প্রশ্নে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী দল সমূহ নিয়ে গঠিত জোটের কোন একটি শরীক দলকে এই ধরনের জোটে ডুকার কারন জিজ্ঞেস করলে, একটা কমন উত্তর আসবে- এইটা আমাদের কৌশলগত অবস্থান । এই কৌশলগত অবস্থানের ছলে দলগুলো ডানে বামে যে যার মত ছুটছে । বর্তমানে যারা ক্ষমতার স্বাদ পাননি, তারা কেউই আগামীরটা মিস্ করতে চান না । আবার যারা ক্ষমতায় আছেন, তারা ক্ষমতা ছাড়তেও চান না । তাই পর্দার অন্তরালে সবাই হিসেব মিলাতে ব্যস্ত, কেমন করে কাদের নিয়ে ক্ষমতার সিঁড়িতে পা রাখবেন বা ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করবেন, আর এ নিয়ে চলছে কৌশলের নামে অপকৌশলের ছলাকলা ।
যাহোক, সামনের দিনগুলোতে বিএনপির আন্দোলনকে দূর্বল করা এবং পরবর্তী সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামীলীগ তাদের ক্ষমতাকে ধরে রাখতে বা দীর্ঘায়িত করতে কৌশলিক পার্টনার হিসেবে জামাতে ইসলামের সাথে পর্দার অন্তরালে সম্পর্ক গড়লে খুব বেশী অবাক হবেন কী ? হয়তঃ এই কথাটা শুনতে অবিশ্বাস্য অসম্ভব মনে হতে পারে । সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী সাপে-নেউলে সম্পর্কের দল দুটির সন্ধি কী আদৈ সম্ভব ! এটাও ঠিক বিপদে পড়লে বাঘে-মোষেও এক ঘাটে পানি খায় । আওয়ামীলীগ যেমনি বিরোধী দলে গিয়ে প্রতিশোধ পরায়ন বিএনপির রোষানলে পড়তে চায় না, আর ক্ষমতার লোভতো আছেই । তেমনি জামাতও তাদের নেতাদের বাঁচাতে চায় । তাছাড়া ইতিমধ্যে প্রমানীত সত্য- সাংগঠনিক ভাবে দূর্বল বিএনপিকে নিয়ে আন্দোলন করে আওয়ামী সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব নয়, যা জামাত বিগত সরকারের সময়ের আন্দোলনে হাড়ে-হাড়ে টের পেয়েছে । উপরন্ত কাদের মোল্লাকেও হারিয়েছে । তাই জামাতের কিছুটা হলেও বিএনপির প্রতি নির্ভরতার মোহভঙ্গ ঘটেছে ।
বর্তমান রাজনীতির হালচাল যুদ্ধাপরাধের বিচার গনজাগরণ মঞ্চের সাথে সরকারের আচরন ও বিএনপি জোটে জামাতের নিষ্কৃীয় অবস্থানকে বিবেচনায় নিয়ে বিশ্লেষন করলে কিছুটা হলেও বাস্তবতা খুঁজে পাবেন । জামাতে ইসলাম ঠিক জাতীয় পার্টির মত করে ব্যবহৃত হবে, তা বলছি না । জামাত তাদের স্বার্থে আগামীতেও আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় থাকার মত পরিস্থিতি তৈরী করে দিবে । এতে জামাতের একাধীক স্বার্থ হাসিল হবে । প্রথমতঃ জামাত তাদের ফাঁসীর দন্ড প্রাপ্ত এবং বিচারাধীন নেতাদের জীবন রক্ষা করতে পারবে, দ্বিতীয়তঃ জাতীয় রাজনীতিতে তাদের দলীয় অবস্থান দ্বিতীয় স্থানে উন্নীতকরন ক্ষেত্র তৈরী করতে পারবে অর্থাৎ এ্যান্টি আওয়ামী ভোটারদের প্রধান ধারক-বাহকে পরিণত হওয়ার সুযোগ তৈরী হবে ।
আওয়ামীলীগের ক্ষমতার লোভ, বিএনপির রোষানল থেকে মুক্তি এবং প্রধান প্রতিদ্বন্ধী বিএনপিকে নিঃশেষ করে দেয়ার কৌশল হিসেবে জামাতের সাথে গোপন আঁতাতের মাধ্যমে জামাতকে সেই সুযোগটুকু দিতে পারে । দেখা যাবে, জামাতে ইসলাম ছোটখাটো কোন অজুহাতে বিতর্ক তৈরী করে বিএনপি জোট থেকে বের হয়ে একক ভাবে অথবা আরো কিছু ইসলামিক দল নিয়ে জোট গঠন করবে অথবা জাতীয় পার্টির সাথে নির্বাচনী জোট গঠন করবে । আর ঐ নির্বাচনে বিএনপি জোট অংশ গ্রহন না করলে আওয়ামী সরকার মোটামুটি ফেয়ার নির্বাচন করাবে আর বিএনপি জোট অংশ গ্রহন করলে যেনতেন প্রকারের জবরদস্তিমূলক নির্বাচনী নাটকের মাধ্যমে ক্ষমতাকে আবারো দীর্ঘায়িত করবে । জামাত বিহীন বিএনপি পারবেনা ঐ তথাকথিত নির্বাচনী সরকারের বিরুদ্ধে সক্ষম আন্দোলন গড়তে এবং এভাবে পরপর তিনবার ক্ষমতার বাহিরে থাকলে বিএনপির কোটি-কোটি মাঠকর্মী সমর্থক শুভান্যূধায়ী থাকবে সত্য কিন্তু সাংগাঠনিক ভীত রক্ষা করতে পারবেনা এবং অস্তিত্বের সংকটে পড়বে । আর বিএনপির মত দল অস্তিত্বের সংকটে পড়লে জামাতেরই লাভ । জামাত তার সাংগঠনিক চেইন অব কমান্ডকে ব্যবহার করে এ্যান্টি আওয়ামী ভোটারদের প্রধান আশ্রয় স্থলে পরিণত হওয়ার চেষ্টা করবে । যতদিন বিএনপি কার্যকর দল হিসেবে রাজনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারবে, ততোদিন এ্যান্টি আওয়ামী ভোটারদের প্রধান ঘর বিএনপিই হবে এবং জামাতের অবস্থান তিন নাম্বারেই থাকবে । তাই বিএনপিকে ধ্বংশ করার প্রক্রীয়ায় আওয়ামীলীগের ক্রীড়নক হিসেবে জামাত অবতীর্ণ হওয়াটা অসম্ভব কিছু নয় ।
ঠিক যোগসূত্র আছে, এমনটা বলা কষ্টকর, তবে সম্প্রতি লন্ডনে তারেক জিয়া বলেছেন-‘ধর্ম কখনও রাজনীতির উপাদান হতে পারে না’। আবার চাপাইনবাবগঞ্জে বিএনপি নেত্রী সাবেক সংসদ সদস্য সাইয়্যেদা আসিফা আশরাফ পাপিয়া জামাত-শিবিরকে সরাসরি তীব্র ভাষায় বিশোদগার করেছেন । অন্যদিকে ঢাকায় বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোটের নেতারা জামাতকে আগের মত মাঠে সক্রীয় করাতে পারছেন না । তাই কমবেশী গুঞ্জন আছে- জামাত কী সত্যিই আওয়ামীলীগের সাথে গোপন আঁতাতে যুক্ত হয়েছে ।
এটাও ঠিক ইতিমধ্যে জামাত একলা চলার মত সাহস ও শক্তি অর্জন করেছে । বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে জামাত তার প্রমানও রেখেছে । আওয়ামীলীগের মত সরকারী দলকেই রাজপথে নাকানি চুবানি খাইয়ে ছেড়েছে আর বিএনপিতো এক্ষেত্রে নস্যি মাত্র । তাই জামাতের বর্তমান নেতাকর্মীরা মনে করেন তারা একক ভাবেই আওয়ামীলীগ-বিএনপির মত দলকে ফেইস করতে সক্ষম । অতীতে জামাতের এই ধারনা ছিল না, তাই বিএনপির সাথে জোট বেঁধে চললে নিজেদের নিরাপদ ভাবতো ।
ভবিষ্যতে যদি সত্যি-সত্যিই জামাত-আওয়ামীলীগের গোপন আঁতাত প্রকাশ্য রূপ পায়, দুই দলেরই মাঠ পর্যায়ের সাধারণ কর্মী সমর্থক ও শুভান্যুধায়ীরা প্রচন্ড ভাবে মানুষিক আঘাত পাবে এবং ক্ষেত্র বিশেষ নেতাদের প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রীয়াও দেখাতে পারে ।
বিষয়: রাজনীতি
২৫৪০ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তবুও দেশকে ভালবাসেন বলেই ভাল একটা কিছু হোক এ প্রত্যাশায় বিশ্লেষন করার জন্য ধন্যবাদ।
আপনার এ বিশ্লেষন সত্যি হলে - বাংগালীর কপালে দুঃখ কষ্ট চিরস্থায়ী আসন গাড়বে বলেই মনে হয় - যদি না অন্য কোন ম্যাসেল ম্যান টাইপের দেশ ঐ আসন টলমলিয়ে না দেন।
জামায়াতের সাথে আওয়ামী লীগের যে যোগ সাজোশ হয় তাতে লাভবান হয় আওয়ামী লীগই । জামায়াতের উল্টো ক্ষতিই হয় ।
বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে , মুখে যতই ইসলামী কথা বলুক না কেন ক্ষমতার জন্য জামায়াত অনেক অনৈসলামিক বিষয়ের সাথে আপোষ করে । ফলে সংখ্যা গরিষ্ট ধর্মপ্রান মুসলমানরা ইসলামী নাম নেওয়া সত্ত্বেও জামায়াতকে পছন্দ করে না । তার উপর তারা মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বিরোধিতা করেছে ।
আওয়ামী লীগের এবারের ক্ষমতা লাভ কিন্তু সেই ২০০৮ এর নির্বাচনেরই ধারাবাহিকতা যেখানে তারা ব্রুট মেজরিটি পেয়ে প্রথম রাতেই বিড়াল মেরেছিল । আর সারাটা টেনিউর জামায়াত নেতাদের আটক করে তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ধরে রাখছিল ।
কাদের মোল্লার যাবতজীবনকে ফাঁসি করিয়ে নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে তারা তাদের ইশতেহারেরই প্রতিফলন ঘটাচ্ছিল ।
হয়ত স্ট্রেটিজিকাল কারণে নেতাদের সিন্ধান্তই এখন মেনে নিতে হবে শিবিরদের যারা চিনির বলদের মত খেটে গেছে । নেতাদের জন্য তাদের এই আত্মদান সাধারণ মানুষদেরকেও সমব্যথিত করেছে । ফ্লোটিং ভোটাররা জামায়াত তথা জোটের প্রতি ঝুঁকেও গেছে যার ফল ৫ই জানুয়ারীর ৫% ভোট ।
কিন্তু , যে নেতাদের জন্য শিবিররা এত খাটলো তারা যদি আপোষ করে এমন একটি দলের সাথে তাহলে তাদের এত আত্মদান হাস্যকর বিষয়েই পরিনত হবে । ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী একটা দলের প্রায় বিপরীত আদর্শের একটি দলের সাথে পুনঃ পুনঃ সমঝোতা জামায়াতকে আরও পেছনে ঠেলে দেবে গত ৫-৬ বছরে এত সিমপ্যাথী অর্জনের পরেও ।
পরিস্থিতি এখন এমন এক পর্যায়ে চলে গেছে যে , আওয়ামী লীগের রাজনীতি হল মুক্তিযুদ্ধ ও জামায়াতকে নিয়ে - যার ফলে গত এই ৫-৬ বছরে। এ দুটি বিষয় নিয়ে এখনও তারা পলিটিক্স করে যাচ্ছে। ব্যাপারটা সাপে-নেউলে সম্পর্কে দাঁড়িয়েছে । এখন যদি এরা একে অন্যকে আবার কাছে টানে তাহলে এটা উভয়ের জন্যই হিতে বিপরীত হবে । কারণ ইসলাম মনষ্ক যারা জামায়াতকে তাদের নীতির জন্য কিছুটা হলেও পছন্দ করত বা করতে শুরু করেছিল তারা অনেকেই এতে মুখ ফিরিয়ে নেবে জামায়াত থেকে , আর চেতনাবাজরা যারা মনে করে যে একমাত্র আওয়ামী লীগকে দিয়েই সম্ভব যুদ্ধাপরাধিদের বিচার করা তারাও আওয়ামী লীগকে আর বিশ্বাস করতে চাইবে না ।
জামায়াত সরে যাবার ফলে এতদিন বিএনপির কাঁধে যে সিন্দবাদের ভূতটি চেপে ছিল তা সরে যাবে - এটা হবে একটা লাভ । আরেকটা লাভ হবে যারা নিজেদের মুক্তিযু্দ্ধের সোল এজেন্ট বলে নিজেদের দাবী করে তারা যদি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীদের সাথে হাত মেলায় - সেটা হবে একটা বিশাল ফাও লাভ ।
তবে , বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে শক্ত হতে হবে , অন্যের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে । তাদের প্রতি যে জন সমর্থন আছে তা ৫ই জানুয়ারী বোঝা গেছে ।
চার পাশে রাশি রাশি খাবার থাকলেও হাত - মুখ না ব্যবহার করলে কোন লাভ হবে না ।
বিএনপির হাতে পায়ে মুখে প্যারালাইসসে আক্রান্ত তাই চার পাশে রাশি রাশি খাবার থাকলেও হাত - মুখ ব্যবহার করতে পারছে না ।
ধন্যবাদ।
যে আশংকাগুলো করছেন আপনি তা সত্য হতেও পারে।কেননা আপনি যে বিষয়গুলো বুঝতে সক্ষম হয়েছেন সেই বিষয়গুলো বি এন পি নেতা কর্মী বুঝতে রাজি নয়। তাই অনেক সময় তাদের কথা ও আচরনে মনে তাদেরকে এই লাত্তিটা দেয়া দরকার।
ধন্যবাদ । তবে রাগ কমান। দরকার কষ্ট করে লাথি দেয়ার।
অনেক ধন্যবাদ ।।
মন্তব্য করতে লগইন করুন