বিপর্যস্ত জিয়া পরিবার।
লিখেছেন লিখেছেন মহি১১মাসুম ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১১:৩২:৩৭ রাত
Click this link
বাংলাদেশের পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতিতে ঘুরে ফিরে দুটি পরিবার দ্বারাই শাসিত হয়ে আসছে, জেনারেল এরশাদ সামরিক-বেসামরিক আইন দিয়ে দীর্ঘ নয়টি বছর শাসন করলেও তার পরিবারকে ঐ দুই পরিবারের কাছা-কাছি পর্যায়েও আনতে পারেননি । এছাড়া পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির বাহিরের দলগুলিও সেভাবে জনসমর্থণ ও রাজনৈতিক শক্তি অর্জনে সফল হয়নি, একাত্তর পরবর্তী সময়ে জাসদ এবং বর্তমানে জামাত সাংগঠনিক শক্তিতে দৃঢ়তা দেখাতে পারলেও ব্যাপক জনসমর্থণ অর্জনে সফলতা আনতে সক্ষম হয়নি । তাই ঘুরে-ফিরে ঐ দুটি পরিবার নিয়ন্ত্রিত দলের ছায়াতলে এসে অন্যসব ছোটখাটো দলগুলি জোট-মহাজোট গঠন করে দেশ শাসনের স্বাদ আস্বাদন করতে হচ্ছে ।
ওয়ান এলিভেন সরকারের দুই বছরকে বাদ দিয়ে হিসেব করলে নব্বই পরবর্তী সময় থেকে বর্তমান সরকারের বিগত আমল পর্যন্ত দুটি পরিবার পালাক্রমে ক্ষমতায় আসা-যাওয়ার মধ্যেই ছিল । এবারই প্রথম ব্যতয় ঘটলো, খালেদা জিয়ার নেত্রিত্বাধীন বিএনপির সাংগঠনিক দূর্বলতার কারনে রাজপথে শেখ হাসিনার সরকারকে নতি স্বীকারে সফল হয়নি, অন্যভাবে দেখলে দেখা যায় শেখ হাসিনার নেত্রিত্বাধীন আওয়ামীলীগের বিভিন্ন কৌশল, ষড়যন্ত্র এবং রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনী দিয়ে দমন-পীড়নের মাধ্যমে পরপর দু-বারের শাসন আমলে প্রবেশ করেছে শেখ পরিবার । শেখ পরিবারের এই প্রশ্নবিদ্য সফলতা ও জিয়া পরিবারের এই সীমাহীন ব্যর্থতার বিভিন্ন কারন বিভিন্ন জন বিভিন্ন ভাবে দেখাতে পারবেন । আমার বিবেচনায় ওয়ান এলিভেন সরকারের দুই বছরই জিয়া পরিবারকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল আর ঐ বিচ্ছিন্নতাকে ষোল আনা কাজে লাগিয়ে শেখ হাসিনা জিয়া পরিবারকে নিঃশেষ করার দিকেই নিয়ে যাচ্ছে । রাজনীতির গতি প্রকৃতি দেখে মনে হচ্ছে শেখ হাসিনা ইরাকের সাদ্দাম হোসেন এবং লিবিয়ার গাদ্দাফীর পদাংক অনুসরন করে বিরুদ্ধ মতানুসারীদের অব্যাহত ভাবে দমন পীড়ন ও তথাকথিত নির্বাচন করে শাসনামলকে দীর্ঘায়ু করার চেষ্টা করবেন, যদিও বাংলাদেশে মাটি মানুষ আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রগামী, যা ইরাক ও লিবিয়ার বাস্তবতা থেকে ভীন্নতর । চূড়ান্ত বিবেচনায় বাংলাদেশের মানুষকে জোরজবরদস্তির শাসনে রাখা অসম্ভব প্রায় ।
দোদন্ড প্রতাপশালী দল বিএনপির ব্যাপক জনসমর্থণ থাকলেও সাংগঠনিক শক্তি ও কৌশলের খেলায় মৃয়মান ও শক্তিহীন পর্যায়ে এসে ঠেকেছে । ক্ষেত্র বিশেষ শরীক দল জামাতের চাইতে বিএনপিকে রাজপথের দূর্বল দল বলেই মনে হয় ।
দুই শাসক পরিবারের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দলের মধ্যে রাজনীতির তত্ত্বগত বা রাষ্ট্র পরিচালনায় নীতিগত মৌলিক বিরোধ না থাকলেও রাষ্ট্র ক্ষমতায় নিজ দলের নিরংকুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে প্রতিপক্ষ দলের মূল নেতাকে হত্যার মত জঘণ্য অনৈতিক কর্মকান্ডেও পিছপা হন না । ১৫ আগষ্ট ও ২১ আগষ্টের নির্মমতা তারই জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত । এই নির্মমতা গুলোর সাথে জিয়া পরিবারের দূরতম বা নিকটতম কোন না কোন প্রকার সংশ্রবকে অস্বীকার করার উপায় নেই । শেখ পরিবারের নেতৃত্বাধীন সংগঠন আওয়ামীলীগের দক্ষ অভীজ্ঞ ও ত্যাগী নেতা-কর্মীদের রক্তের বিনিময়ে শেখ পরিবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে ।
প্রেসিডেন্ট জিয়া হত্যাকান্ডের পর জিয়া পরিবার যতটা বিপর্যয়ে পড়েন এবারকার পরিস্থিতি তার চেয়ে অনেক বেশী জটিল । জিয়া পরিবার শুধুই আট বছর যাবত ক্ষমতার বাহিরে তা নয়, জিয়া পরিবারের সবাই বিভিন্ন ধরনের মামলার খর্গ নিয়ে দেশে বিদেশে বিপর্যস্ত অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন । জিয়া পরিবারের প্রধান কর্ণধার বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা, বড় ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে সতেরটি মামলা এবং ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কেকোর বিরুদ্ধে সাতটি মামলা, এমনকি তারেক জিয়ার স্ত্রীর বিরুদ্ধে একটি মামলা ঝুলছে । খালেদা জিয়ার দুই ছেলেই মামলার ভয়ে বিদেশে অবস্থান করছে এবং খালেদা জিয়া দেশে একাকী নিঃসঙ্গ জীবন কাটাচ্ছেন ।
বিএনপি তথা জিয়া পরিবার ছন্নছাড়া অসহায় অবস্থায় পড়েছে, বর্তমান সরকারের বিগত আমলে শেখ হাসিনার সরকার খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে বের করে দেয়, বাড়ী থেকে উচ্ছেদ পরবর্তীতে খালেদা জিয়া সাংবাদিক সম্মেলনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন অথচ নেত্রীর অহেন অবস্থাতেও সংগঠন সেভাবে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখাতে পারেনি । বিএনপির মার্চ ফর ডেমোক্রেসীর প্রোগ্রামকে ঠেকাতে খালেদা জিয়ার বাড়ীর সামনে বালির ট্রাকের ব্যারিকেড দিলেও নেতা-কর্মীরা ব্যারিকেড ভাঙ্গার ন্যূনতম সাহস উদ্যোগ দেখাননি । সারাদেশে লক্ষ-কোটি জিয়া ভক্ত অনুরাগী এবং বিএনপির নেতা-কর্মী থাকার পরও দলের প্রথম সারির নেতাদের এহেন নিস্পৃহ পলায়নপর মনোবৃত্তি দলটির অসহায়ত্বকে আরো দীর্ঘতর করছে ।
মূলতঃ দলের এহেন বিপর্যয়ের মূল কারন বিএনপির শাসনামলে তারেক জিয়াসহ কতিপয় জুনিয়র নেতাদের দ্বারা পরিচালিত হাওয়া ভবন, এদের কারনে বি. চৌধুরী ও কর্ণেল অলিরা ভীন্ন দল তৈরীতে বাধ্য হন এবং দলের সিনিয়র নেতাদের সাথে দূরত্ব তৈরী হয় এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্বরত সরকারী আমলারাও বিএনপিকে ব্যাপকভাবে অপছন্দ করতে শুরু করেন । সেই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে ওয়ান এলিভেন সরকার হাওয়া ভবন ও তারেক জিয়াকে তছনচ করে দেয় ।
তারপরও রাজনীতির নির্মম বাস্তবতা হচ্ছে তারেক জিয়াই বিএনপি তথা জিয়া পরিবারের রাজনীতি অন্যতম প্রধান প্রেরনার উৎস । তারেক জিয়াই পারবেন দলকে চাঙ্গা করতে, তারেক জিয়া তার অতীত ভূল-ত্রুটির জন্য ক্ষমা চেয়ে দেশ-জাতির সামনে ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরলে, জনগন অতীতকে অতীতে রেখে ভবিষ্যতের জন্য তারেক জিয়াকে সমর্থন সহযোগীতা দিতেও পারেন । তবে হাল আমলে তারেক জিয়া লন্ডনে বসে যে প্রক্রীয়ায় ভিডিও কনফারেন্সের রাজনীতি করছেন, এতে বিএনপি রাজনীতির মাঠে আলোচনায় থাকতে পারবে সত্য কিন্তু সফল আন্দোলন তৈরীতে সম্ভব হবে না । আর তারেক জিয়া বিদেশ থাকা অবস্থায় যদি খালেদা জিয়া বার্ধক্যজনিত কারনে মাঠের রাজনীতিতে শারীরিক উপস্থিতিতে অক্ষম হন, এই দলটিকে রক্ষা করাও কষ্টকর হবে । তাই তারেক জিয়ার উচিত শত-সহস্র ভয়-ভীতি মামলা হামলার খর্গকে মাথায় নিয়েই দেশে প্রবেশ করা । নেতা-কর্মীরা আন্দোলন করে বিএনপিকে ক্ষমতায় আনবেন, অতঃপর তারেক জিয়া দেশে আসবেন, তা কল্পনাতেই সম্ভব, বাস্তবে নয় ।
বিষয়: রাজনীতি
১২৮৭ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন