গুম খুন বাড়ছে এবং বাড়বে অতঃপর বাংলাদেশ ঢুকবে মাফিয়া সাম্রাজ্যে....
লিখেছেন লিখেছেন মহি১১মাসুম ১০ মে, ২০১৪, ১১:২৭:৪২ সকাল
সর্বাঙ্গে ব্যথা, ঔষধ দেবো কোথা ! সর্বত্র একই কথা দেশ জুড়ে গুম খুন ও লাশের ছড়াছড়ি আর পত্রিকা জুড়ে স্বজনদের আহাজারী । কে কোথায় কখন শিকারে পরিণত হবেন, এ নিয়ে নাগরিক সমাজে রীতিমত আতংক বিরাজ করছে । অথচ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বললেন এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই । স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর এই উক্তিতে সমালোচনার ঝড় ওঠেছে । কতজন মানুষ গুম খুন হলে মন্ত্রী-বাহাদুর উদ্বিগ্ন হবেন ? দায়িত্বশীল লোকদের এহেন দায়িত্বহীন কথাবার্তা কেন, কার স্বার্থে ? নাগরিকরা সরকার বানায় তাদের জান-মালের নিরাপত্তা বিধানের জন্য নাকী খুনী সন্ত্রাসীদের লালন করার জন্য !
সাম্প্রতি নারায়নগঞ্জ সহ সারাদেশে গুম খুনের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় রাতের টিভি টকশোগুলো বেশ জমে ওঠেছে । সরকারীদল ও বিরোধীদলের সমর্থক আলোচকরা উত্তেজিত বাকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন, কার আমলে বেশী হয়েছে, কে বিচার করেছেন বা করেননি, এসব নিয়ে । তাছাড়া এই গুম খুনের দায় একদল অন্যদলের ওপর চাপিয়ে দেয়ার মত যুক্তিতর্কের অভাব নেই । আবার সুশীল বুদ্ধিজীবীরাও পরিসংখ্যান ভিত্তিক দোষ চাপা-চাপির সংস্কৃতিমুক্ত নয় । দেখা যায়, এই সব বিচ্ছিন্ন কথাবার্তা ও পরষ্পরের প্রতি দোষ চাপা-চাপি করতে-করতে টকশোর সময় শেষ হয়ে যায় । এইসব দেখে মনে হয় টকশো মানে একদল অন্যদলকে দোষ চাপানোর প্রতিযোগীতা । কিন্তু বস্তুনিষ্ট আলোচনা অর্থাৎ কেন এসব ঘটছে এবং সমাধানের উপায় কী ? এ নিয়ে কথা বলা হয়না ।
দেখা যায় সন্ত্রাসের ব্যাপকতা বেড়ে গেলে প্রতিটা সরকারই ক্রসফায়ারে দু/চারজন সন্ত্রাসীকে হত্যা করে সাময়িক ভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন । কেন গুম খুনের মত জঘণ্য অপরাধগুলি সংগঠিত হয় এবং কোন ধরনের উদ্যোগের ফলে এই অপরাধ প্রবণতা সমাজ থেকে নির্মূল করা সম্ভব হবে । এই বিষয়ে সরকার ও প্রধান-প্রধান রাজনৈতিক দলগুলি উদাসীন ।
সমাধান কেন্দ্রিক পদক্ষেপ না থাকায় সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলছে গুম খুন । এই গুম খুন বহুমুখীরূপ ধারন করেছে, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আইন প্রয়োগকারী সদস্যরাও আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে সন্ত্রাস দমনের নামে সন্ত্রাসীকে ক্রসফায়ারে হত্যা করছে এবং শাসক দলের গোপন নির্দেশে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদেরকেও গুম ও ক্রসফায়ারে হত্যা করছে । তাছাড়া এক সন্ত্রাসীগোষ্টী প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীগোষ্টীকে এবং বিভিন্ন শ্রেনী পেশার বিভিন্ন বয়সী নিরীহ মানুষকে অপহরণ, মুক্তিপণ দাবী ও খুন করছে । এক রাজনৈতিক দলের কর্মী অন্য দলের কর্মীকে এবং কোথাও কোথাও নিজ দলের প্রতিদ্বন্ধী কর্মীও গুম খুনের শিকার হচ্ছে ।
কেন এমনটা হচ্ছে, কেন আমরা অসহিঞ্চু হয়ে পড়ছি এবং ক্রমান্বয়ে গুম খুনের দিকে ঝুঁকছি । এইসব জানতে বড় পন্ডিত হওয়ার দরকার নেই, সাধারন জ্ঞানের মানুষও বুঝতে সক্ষম । সমাজ বিজ্ঞানী ও অপরাধ বিজ্ঞানের গবেষকরা হয়তঃ তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা- বিশ্লেষন দিতে পারবেন কিন্তু সাধারন দৃষ্টিতে খোলা চোখে দৃশ্যমান দু/চারটি বিষয়ে আলোকপাত করব ।
প্রধানতঃ আমাদের রুগ্ন রাজনীতি ও বৈষম্যমূলক অর্থনীতিরই অনিবার্য ফল এই গুম খুন । শাসক গোষ্টীর প্রধান দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপি ক্ষমতায় যেতে এবং ক্ষমতা ধরে রাখতে নিয়মতান্ত্রিকতার ধার ধারেন না এবং জনগনের মুখাপেক্ষীও হতে চান না, এক্ষেত্রে দলীয় আর্মস্ ক্যাডার ও আইন শৃংখলা বাহিনীকে ব্যবহার করেন । ফলে দল ক্ষমতাশীন হওয়ার পর ঐ দলের সন্ত্রাসীরা নিজের ক্ষমতা অর্থবৃত্ত ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধিতে লাগামহীন ও বেপোরোয়া হয়ে পড়েন । ক্ষমতাশীন এমপি/মন্ত্রীরা লুটে কলমের খোঁচায় আর সন্ত্রাসী লুটে লাঠি-বন্দুকের ক্ষমতায় । তাছাড়া শাসকগোষ্টী বিরোধীদলের আন্দোলন ঠেকাতে অন্যায়ভাবে আইন-শৃংখলা বাহিনী ও নিজ দলীয় সন্ত্রাসীদেরকে ব্যবহার করে । ফলে আইন-শৃংখলা বাহিনী ও সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের লুটপাট ও গুম খুনকে দায়িত্বশীল নেতা-মন্ত্রীরা দেখেও না দেখার ভান করতে হয় । এই সবই আমাদের রুগ্ন রাজনীতির ফল ।
আর বৈষম্যমূলক অর্থনীতি কীভাবে সমাজকে অপরাধ প্রবণ করে তুলছে, তা আমরা ভাবিনা । সাধারন দৃষ্টিতে মনে হবে সুস্থ্য ধারার রাজনীতি ও আইনের শাসন থাকলে সমাজে অপরাধ ঘটত না । কিন্তু রাষ্ট্রে বৈষম্যেমূলক অর্থনীতির ধারা চালু রেখে সমাজকে শান্ত-সুস্থির রাখার যতই স্বপ্ন দেখিনা কেন, তা বাস্তবে সম্ভব নয় । এই রকম চিন্তা-ভাবনা আকাশ-কুসুম কল্পনা বৈ কিছুই নয় ।
বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় এক শ্রেনীর মানুষ সম্পদের পাহাড় গড়ছে আর বেশীর ভাগ মানুষ দিন-দিন নিঃস্ব হচ্ছে । সম্পদশালী মানুষরা বিলাসী জীবন-যাপন করছে আর নিরাপদ আয়েসী জীবনের লক্ষ্যে উন্নত দেশে টাকা পাচার করে বাড়ী-গাড়ী গড়ে তুলছেন, নিজ দেশে লুটের টাকায় কলকারখানাও গড়ছেন না । ফলে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রও তৈরী হচ্ছে না । এই চলমান অর্থনীতির বাস্তবস্থায় নিঃস্ব পরিবারে জন্ম নেয়া শিশুটি ৫/৭ বছর পর্যন্ত রাস্তার ধারে ভিক্ষা করে অখাদ্য-কুখাদ্য খেয়ে বাঁচতে পারলে বয়স বেড়ে ১০/১১ দিকে গড়ালে তার চাহিদা বাড়ে কিন্তু ঐ বয়সে সে পারেনা ভিক্ষা করতে, পায়না কর্মের সুযোগ । ফলে শিক্ষা বঞ্চিত এই তরুণ ছেলেটি বাঁচার তাগিদে ছোটখাট চুরি ছিনতাই রাহাজানীর মাধ্যমে অপরাধ জগতে প্রবেশ করলেও ধাপে-ধাপে পরিণত হয় ভয়ন্কর অপরাধীতে ।
এভাবে গরীব পরিবারের সন্তানকে শিক্ষাদীক্ষা ও কর্মসংস্থান বঞ্চিত করে আমরা নিরাপদে জীবন-যাপন করবো, আমাদের ছেলে-সন্তানরা মুক্তিপণের দাবীতে অপহৃত হবেনা, আমি-আপনি ছিনতাই-রাহাজানীর শিকার হবো না, এমনটা ভাববার অবকাশ নেই । আজ বা কাল আমি আপনি শিকার হবোই ।
অন্যদিকে, এই অপরাধী চক্র যখন রাজনীতির আশ্রয়-প্রশ্রয় লাভ করে এবং মাদকের ছোঁয়া পায়, তখন এমন কাজ নেই যা তার দ্বারা সম্ভব নয়, খুন-খারাবী এমনকী লাশকে টুকরো টুকরো করতেও বিবেকে বাঁধে না । স্বাভাবিক ভাবেই বলা যায় বর্তমান ধারার রাজনীতি-অর্থনীতি বজায় থাকলে প্রথমদিকে রাষ্ট্র নীতিহীন দূর্বল চিত্তের রাজনীতিবিদ ও লুটেরা ব্যবসায়ীদের হাতে থাকলেও ধীরে-ধীরে তা দুর্নীতিবাজ লুটেরা ব্যবসায়ী ও মাফিয়া চক্রের হাতে চলে যেতে বাধ্য ।
বর্তমান আর্থ-সামাজিক বাস্তবতার কারনে আমাদের সমাজে সন্ত্রাস এখন রাষ্ট্রীয় ক্যান্সারে পরিণত হয়েছে । শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়লে যেমনি নিরাময় সম্ভব হয়না বড়জোড় চিকিৎসা দিয়ে একটা নির্দিৃষ্ট সময় পর্যন্ত দমিয়ে রাখা সম্ভব । তেমনি সন্ত্রাস নামক ক্যান্সারের উৎপাত মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে গেলে র্যাব-পুলিশ দিয়ে ক্রসফায়ারে হত্যা করে সাময়িক ভাবে দমিয়ে রাখছি ।
কী নির্মম সমাজ-রাষ্ট্র তৈরী করছি, একদিকে হতঃ দরিদ্র মানব সন্তানকে আর্থ-সামাজিক ও রাজনীতির মারপ্যাচে সন্ত্রাসী হতে বাধ্য করছি আবার সংখ্যায় বেড়ে গেলে ওকে ক্রসফায়ার নামক নাটকে মেরে ফেলছি আর এই বাস্তবতায় ঐ সন্ত্রাসীর স্বজনরা লাশ নিয়ে আহাজারী করে আর আমরা মিষ্টি বিতড়ন করে সন্ত্রাসীর মৃত্যুকে অভিনন্দিত করি ।
আসুন, এই নির্মম অমানবিক সংস্কৃতির স্বমূল উৎপাটনে স্বাধীনতার আকাংখা ভিত্তিক গনতান্ত্রিক, ন্যায়-ভিত্তিক আইনের শাসন ও বৈষম্যমূক্ত অর্থনীতির ভিত্তিতে সকল মানুষের জন্য মানবিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার নাগরিক আন্দোলন গড়ে তুলি ।
বিষয়: রাজনীতি
৩৪৪৭ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আসুন, এই নির্মম অমানবিক সংস্কৃতির স্বমূল উৎপাটনে স্বাধীনতার আকাংখা ভিত্তিক গনতান্ত্রিক, ন্যায়-ভিত্তিক আইনের শাসন ও বৈষম্যমূক্ত অর্থনীতির ভিত্তিতে সকল মানুষের জন্য মানবিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার নাগরিক আন্দোলন গড়ে তুলি ।
ধন্যবাদ।
নারীর সম্ভ্রম কেড়ে নেয়া ইসলাম ধর্মে বৈধ..... লিখেছেন " খেলাঘর বাধঁতে এসেছি " ২৯ এপ্রিল, ২০১৪,
লিখেছেন আল্লাহর সন্তুষ্টি ১২ মে, ২০১৪, ০৫:৫৫ বিকাল
http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/5409/dhaka2012/45001#.U3C8H3bZ4gs
সবই রাজনীতির মারপ্যাচ,আসুন প্রতিরোধ গড়ি।
মানুষ বাঁচাই নিজে বাঁচি।
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।
মানুষ বাঁচাই, নিজে বাঁচি।
ধন্যবাদ আপনাকে।।
আমাদের রাজনীতিবিদরা আমাদের পণ্য বানিয়ে পুরো দেশটাকে বিপন্ন করে তুলেছেন ।
নিলজ্জ রাজনীতিবিদদের ধিক্,শত ধিক্-----
ধন্যবাদ আপনাকে- সমাজ রাজনীতির বাস্তব উপলব্দিটি তুলে আনার জন্য।
ধন্যবাদ।।
আমি তো মনে করি বাংলাদেশ এখন পারফেক্টলী আইডিয়াল উন্নয়নের সোপানে ধাবমান চমৎকার একটি স্যেকুলার দেশে পরিনত হয়েছে। যেখানে স্যেকুলার গণতন্ত্র আছে, স্যেকুলার কোর্ট কাচারী ও পুলিশ আছে, যেখানে অবাধ যৌনাচার আছে, সমকামিতা আছে, যেখানে গুম, খুন ও প্রতারনা আছে, যেখানে মানুষ রাতারাতি ভাগ্য ফেরাতে পারছে, যেখানে স্রষ্টাকে চারদেয়ালে বন্দী করে টাকা পয়সা, নারী, মদ ও জুয়াকে দূর্গা ও প্রতিমার পাশাপাশি এ্যানজয় করা হয়েছে, যেখানে একটি স্থিতিশীল সরকার আছে, বিরোধী দলের জন্য কোন এজেন্ডা পয্যন্ত নেই।
আর কি চাই? জয় বাংলাদেশ। সঠিক লাইনেই আছে। হতাশ হবেন না।
ধন্যবাদ লিখার জন্য।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন