এই খেলায় হারবে কে ? বিএনপি নাকী জামাত !
লিখেছেন লিখেছেন মহি১১মাসুম ০৪ মে, ২০১৪, ১১:৩০:২৮ সকাল
((যৌক্তিক কারনে দ্বিমত বা ভীন্ন পর্যবেক্ষণ থাকলে অবশ্য-অবশ্যই ব্যাখাসহ তুলে ধরবেন । ))
শিরোনাম দেখে প্রশ্ন জাগতে পারে, বিএনপি-জামাতের মধ্যে কোন প্রীতি ফুটবল বা ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন করা হয়েছে ! নাকী সামনে কোন নির্বাচনী লড়াই আছে ! না, খেলা-ধূলা নয়; আর অদূর ভবিষ্যতে কোন নির্বাচনও নেই । তাহলে হারজিতের প্রশ্ন আসবে কেন ? ঠিক হারজিৎ নয়, তা হচ্ছে এই দুই দলের সাথে ক্ষমতাশীন আওয়ামীলীগ যে কৌশলের খেলা খেলছে এতে দিন-দিন রাজনীতির দৃশ্যপট পাল্টে নতুন দিগন্তের উন্মেষ ঘটতে যাচ্ছে । আর তারই আদ্যোপান্ত বিশ্লেষনের চেষ্টা করব এ-পর্যায়ে ।
রাজনৈতিক দলের উত্থান-পতনের ইতিহাস কমবেশী সবারই জানা । ৬৪/৬৫ সালে কেউ ভাবেনি আওয়ামীলীগ ৭১ এ আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বে দিবে এবং ৭৬/৭৭ এ বিএনপিকে কেউ ভাবেনি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান দলের মর্যাদা লাভ করবে আবার ৮২ তে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক স্বৈরাচার এরশাদ নয় বছর টিকতে পারবে, এমনটা ছিল কল্পনাতীত বিষয় । অন্যদিকে মুসলিমলীগ ও ভাসানীর ন্যাপের মত দল হারিয়ে যাবে আবার স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচারনকারী দল হিসেবে জামাত বহাল তবিয়তে উত্থানের ধারায় থাকবে । এই সবই রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্থান-পতনের নির্মম বাস্তবতা ।
কোন রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে আদর্শিক লড়াইয়ের ঘাটতি থাকলে বা একাধিক দলের মধ্যে জনগনের আস্থা অর্জনের প্রতিযোগীতায় পিছিয়ে পড়লে ধীরে-ধীরে ঐ দলটি তার হারিয়ে যাওয়াকে নিশ্চিত করে । দমন-পীড়ন ও সুবিধা দিয়ে রাজনৈতিক দলের ধ্বংস ও বিকাশ সম্ভব নয়, বর্তমান সময়ে জামাত ও জাতীয় পার্টি তারই অন্যতম নিদর্শন ।
যাহোক, বর্তমান জাতীয় রাজনীতির নিরুত্তাপ পরিবেশ সত্যিই কী অলস ভাবে কাটছে, নাকী ধীরে-ধীরে নতুন কোন রাজনৈতিক সমীকরনের দিকে মোড় নিচ্ছে । বর্তমান রাজনীতির চালচিত্র বিবেচনায় রেখে একটি কাল্পনিক দৃশ্যপট তুলে ধরব ।
এখন পর্যন্ত দেশের অন্যতম প্রধান দুটি দল হচ্ছে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি আর উপজেলা নির্বাচনের পূর্বে তৃতীয় প্রধান দলের স্বীকৃতি ছিল জাতীয় পার্টির, যা এখন জামাতে ইসলামের দখলে এবং বামপন্থী দলগুলোর মধ্যে একমাত্র বাসদ(খালেকুজ্জামান) ছাড়া অন্যরা ক্ষয়িঞ্চু পর্যায়ে অথবা কোনভাবে টিকে আছে, তাছাড়া ড.কামাল হোসেন,ডাঃ বদরুদ্দৌজা চৌধুরী, কর্ণেল অলি আহমদ ও বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীদের মত নেতা কেন্দ্রিক দলগুলি বড় জোড় উনাদের জীবদ্দশা পর্যন্ত টিকে থাকবে, এমনটা জ্যোতিষী না হলেও বলা সম্ভব । এর বাহিরে পীর মাশায়েক বা মাদ্রাসা কেন্দ্রিক দলগুলি হয়তঃ টিকে থাকবে কিন্তু মূলধারায় প্রভাব রাখার মত দলে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা নাই বললে অত্যুক্তি হবে না ।
যাহোক, দৃশ্যপটটি আঁকবো আওয়ামীলীগ বিএনপি ও জামাতকে ঘিরে । দেশের প্রাচীনতম দল হিসেবে আওয়ামীলীগ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক অর্জনে নেতৃত্ব দানের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ দল যার তৃণমূল পর্যায়েও সংগঠন বিস্তৃত আর ঐ বিবেচনায় স্বাধীনাত্তোর দল হিসেবে বিএনপির সংগঠন তৃণমূলে বিস্তৃত থাকলেও সফল আন্দোলনের অভিজ্ঞতা একমাত্র স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন, তাও আবার একক আন্দোলন নয়, জোটগত আন্দোলনেই স্বৈরাচারের পতন হয় । আর জামাতে ইসলামী স্বাধীনতা যুদ্ধে কলংকজনক ভূমিকার কারনে স্বাধীন দেশে নিষিদ্ধ ছিল, যা ৭৫ পরবর্তী সময়ে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান হাত ধরে রাজনীতিতে পূনর্জন্ম লাভ করে, ইতিমধ্যে সংগঠনটি ত্যাগী কর্মী বাহিনীর উপর ভর করে সারাদেশে কমবেশী প্রসার লাভ করেছে এবং সংগঠন সম্পৃক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শক্তিশালী ভীত গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে, যা অন্যান্য সংগঠনের ক্ষেত্রে অনুপস্থিত ।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর যুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধে বিচারে গঠিত ট্রাইব্যুনালের কারনে জামাত ব্যাপক চাপে পড়ে, জামাতের প্রথম শ্রেনীর প্রায় সব নেতৃত্বই ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন হয়ে জেলে আছেন এবং এরই মাঝে আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসিও কার্যকর হয়েছে । এছাড়া অন্য একটি আইনী মামলায় সংগঠনটির নিবন্ধনও বাতিল হয়েছে এবং ৭১ এ সংগঠনগত অপরাধের দায়ে সংগঠনটি নিষিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনাও আছে । ইতিমধ্যে জামাত পরিস্থিতি মোকাবেলায় তার সর্বশক্তি নিয়োগ করে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে । অথচ ২০০৯/১০ সালে জামাতের ধারনা ছিল বিএনপির সহযোগীতা ব্যতিত সরকারীদল আওয়ামীলীগকে রাজপথে মোকাবেলা সম্ভব নয়, যা গোলাম আযমের এ্যারেষ্ট পূর্ববর্তী সময়ে উনার বিভিন্ন টিভি সাক্ষাৎকারে প্রকাশ পেয়েছে । জামাতের থিংক ট্যান্ক অধ্যাপক গোলাম আযম বিভিন্ন সমীকরন দেখিয়ে বলার চেষ্টা করেছেন বিএনপি ও জামাতের জোটগত অবস্থান আওয়ামীলীগের জন্য হুমকী, তাই আওয়ামীলীগ জামাতকে বিএনপি থেকে বিচ্ছিন্নকরন এবং জামাতকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র হিসেবে যুদ্ধাপরাধের বিচারকে সামনে এনেছে ।
এটাও সত্য আওয়ামীলীগ ক্ষমতাশীন হয়ে প্রথমে জামাতকে চতুর্মুখী চাপে ফেলে আর এই চাপ মোকাবেলায় জামাত প্রত্যাশানুযায়ী বিএনপিকে পাশে পায়নি, এমনকি সরকার বিরোধী আন্দোলনেও বিএনপি তাদের সংগঠনকে মাঠে নামাতে পারেনি । মূলতঃ জামাত নিজ দলের কর্মসূচী ও জোটের কর্মসূচীতে রাজপথে প্রধান শক্তি হয়ে লড়েছে । ফলে জামাত যে একক ভাবে যে কোন সরকারীদলকে মোকাবেলায় সক্ষম, তা এখন জামাত-শিবির কর্মীরা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে
অতীতে সরকারীদল বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় জামাতকে বিএনপি জোট থেকে বের করার চেষ্টা করেও সফল হয়নি । তার কারন জামাত তার একক শক্তি সম্পর্কে তখনও সন্দিহান ছিল, তাই বিএনপির সাথে থাকাটাকে স্বস্তিদায়ক মনে করতো । কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় জামাত যে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে, তাতে বিএনপি ছাড়াও একক শক্তিতে জামাত যথেষ্ট কনফিডেন্ট ।
এইতো রাজপথে শক্তিমত্তার হিসেব, কিন্তু রাজপথের রাজনীতি যখন ভোটের স্বীকৃতির দরকার পড়ে, তখন ভোটের মেরুকরনই নির্ধারন করে দেয় কোন দলটি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব অর্জন করবে । ভোটের রাজনীতিতে সারাদেশে এখনও আওয়ামী ও এ্যান্টি আওয়ামী ভোটের হিসাবটাই প্রধান বিবেচ্য বিষয় । এর বাহিরে বামপন্থী ও ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতির আদর্শগত কর্মী সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীর ভোট আছে, যার পরিমান এখনও উল্লেখযোগ্য নয় । এখন পর্যন্ত এ্যান্টি আওয়ামী ভোটের অন্যতম প্রধান দাবীদার বিএনপি এবং এ্যান্টি আওয়ামী রাজনীতির অন্যদলগুলি বিএনপিকে ঘিরেই পরিচালিত হয়, তার মধ্যে জামাত দ্বিতীয় প্রধান শক্তিতে পরিণত হয়েছে ।
সরকারীদলের প্রধান প্রতিদ্বন্ধী বিএনপির জোট থেকে জামাত এই পর্যায়ে সরে দাঁড়ালে বা নিষ্কৃীয়ভাব দেখালে লাভ-ক্ষতির হিসেবটা কেমন হবে । এরই মাঝে প্রমান হয়েছে রাজপথে জামাতই জোটের অন্যতম প্রধান শক্তি অথচ নির্বাচনী রাজনীতির ফসল তুলে বিএনপি । স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসবে রাজপথের শক্তিহীন বিএনপি এ্যান্টি আওয়ামী ভোটারদের আস্থা এভাবে কতদিন ধরে রাখতে পারবে ? রাজপথের শক্তিহীন বিএনপি জনগনের আস্থা হারালে তা কোন দলের পক্ষে যাবে ? স্বাভাবিকভাবে এখন পর্যন্ত এ্যান্টি আওয়ামী রাজনীতিতে জামাতই একমাত্র পরীক্ষিত বিকল্প শক্তি । এভাবে বিএনপির অসাড়তায় এ্যান্টি আওয়ামী ভোটে জামাতের উত্থান ঘটলে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না ।
তাই এখন বিএনপির সামনে কঠিন প্রশ্ন জামাত বিহীন বিএনপি বা নিষ্কৃীয় জামাতকে নিয়ে বিএনপি কী পারবে রাজপথ উত্তপ্ত রাখতে ? বিএনপি কী পারবে তার নেতা-কর্মীদের রাজপথে নামাতে ? নাকী জামাত ধীরে-ধীরে দখল নিবে এ্যান্টি আওয়ামী ভোট ব্যাংকের হিসেব-নিকেশে ।
সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক অঙ্গনের কিছু ঘটনা বিএনপিকে জামাত সম্পর্কে ভাববার ক্ষেত্র তৈরী করে দিয়েছে । লক্ষ্যণীয় বিষয়গুলো হচ্ছে- এক) সরকারীদল গণজাগরনকে ধ্বংস করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে । দুই) দীর্ঘদিন ধরে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম মন্থরগতিতে এগুচ্ছে । তিন) জামাত-শিবিরের উপর পরিচালিত সরকারের স্টীম রোলার পরিবর্তীত হয়ে বিএনপির উপর ভর করেছে । চার) সরকারীদল উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীদের জয় ছিনিয়ে নিলেও জামাত প্রার্থীদের ছাড় দিয়েছে, তা না হলে মাঃ দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ছেলের জয় সরকার অবশ্যই ছিনিয়ে নিত । তাছাড়া সর্বত্র আলোচিত হচ্ছে- উল্লেখযোগ্য আসনে সরকারীদল চেয়ারম্যান পদে পাস করলেও ভাইস চেয়ারম্যান পেয়েছে জামাত । পাঁচ) এতবড় বিজয়ের পরও জামাত সরকার বিরোধী বক্তৃতা-বিবৃতিতে রহস্যজনক নীরবতা পালন করছে । এমনকী জোটের তিস্তা অভিমুখের লংমার্চেও জামাত অংশ নেয়নি ।
রাজনীতি বিশ্লেষকদের মধ্যে অনেকে মনে করেন জামাত ও সরকারের মধ্যে পর্দার অন্তরালে কোন ধরনের সমঝোতায় হয়েছে । এক্ষেত্রে জামাত হয়তঃ বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব গ্রহন না করে যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল তার হিসাব-নিকাশকে বিবেচনায় রেখেছে । তাছাড়া বিএনপিসহ আন্দোলন করে সামনের দিনগুলোতে এই সরকারের পতন ঘটাতে পারবে তারও সম্ভাবনা কম, সেহেতু সরকারের সাথে পর্দার অন্তরালে সম্পর্ক রেখে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা নিতে চাইবে । এতে জামাত নিষিদ্ধ হলেও সমঝোতার কারনে নতুন নামে লাইসেন্স প্রাপ্তী সহজ হবে এবং নতুন জামাতের রাজনৈতিক কর্মসূচী পালনে সরকার বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে না এবং সরকার যতোটা সম্ভব ট্রাইব্যুনালকে নমনীয় রাখবে এবং বিনিময়ে জামাত সরকার বিরোধী আন্দোলনে নিষ্কৃীয় এবং নমনীয় ভাব দেখাবে, এতে সরকার নির্ধিদ্ধায় পাঁচটি বছর কাটিয়ে দিতে পারবে । কিন্তু সার্বিক রাজনীতি এবং স্ব-স্ব দলের কর্মী শুভান্যুধায়ীদের আস্থা-বিশ্বাস ধরে রাখার স্বার্থে উভয় দলই পর্দার অন্তরালের সমঝোতাকে অস্বীকার করবে ।
স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসবে- বিএনপি যদি বর্তমান মেয়াদেও তত্ত্বাবধায়কের দাবী আদায় করতে না পারে এবং আগামী নির্বাচনে জামাতকে পাশে না পায় এবং সরকার যদিও ছয়-নয় করে তৃতীয়বার ক্ষমতা ধরে রাখে, এই দীর্ঘ বিরতীতে বিএনপি কী তার রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে ? আর বিএনপি অস্তিত্বের সংকটে পড়লে এ্যান্টি আওয়ামী ভোটাররা কমবেশী জামাতের দিকেই ঝুঁকবে এবং অদূর ভবিষ্যতে জামাতই এ্যান্টি আওয়ামী ভোটারদের মূল আশ্রয়স্থলে পরিণত হবে । আর এই পরিকল্পনা মাথায় রেখে জামাত তার ভবিষ্যত সাংগঠনিক কর্মকৌশল নির্ধারন করলে বিএনপি কী তার অস্তিত্বের সংকট ঠেকাতে পারবে ?
বিষয়: রাজনীতি
৪৪৩৫ বার পঠিত, ৩৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তাহলেই বিএনপির পতনের সুফল ঘরে নেয়া যাবে।
ইসলামী বিপ্লবের গ্রাফিক্যাল মডেল পড়ুন এবং মন্তব্য করুন।
জানার ইচ্ছা-সত্যিই কী জামাত বিএনপিকে কৌশলী ল্যাং মেরে ধরাশায়ী করে নিজেদের ক্ষেত্র তৈরী করছে?
ধন্যবাদ,জানাবেন কিন্তু।।
কারন বিএনপির স্থানটি জামাতের দখলে গেলে সারাদেশে আওয়ামীলীগ বনাম জামাতের স্বভাবসূলভ রাজনীতিতে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে ।
এমনকী জোটের তিস্তা অভিমুখের লংমার্চেও জামাত অংশ নেয়নি ।
এটা বিএনপির একক কর্মসূচী ছিল। জামায়াতের সাথে নয় কারোর সাথে কোন আলোচনা করা হয়নি।
আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনার বস্তুনিষ্ট মন্তব্য চাই।
আর ভুলটি ধরিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ ।
ভুলে গেছেন! নাকী ব্যস্ত। পড়ে আপনার মূল্যবান মতামতের দিবেন কিন্তু।
প্যারিসী ভাই থ্যান্কস,অপেক্ষায় আছি।
জানার ইচ্ছা-সত্যিই কী জামাত বিএনপিকে কৌশলী ল্যাং মেরে ধরাশায়ী করে নিজেদের ক্ষেত্র তৈরী করছে?
ধন্যবাদ,জানাবেন কিন্তু।।
বিএনপি জামায়াতের সম্পর্কে চির ধরেছিল ২০০৭ সালের আগেই। সেই চির ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। যুদ্ধাপরাধ বিচার শুরু হলে এটা আরও বিস্তৃিত হয়ে শহীদ আবদুল কাদের মোল্লার শাহাদাতের মাধ্যমে সেটা ফাঁটলে রুপান্তরিত হয়ে যায় যা আর কখনো জোড়া লাগবে না বলেই মনে হয়। আর এই ফাঁটল থেকেই যে ভাঙগন শুরু হলো, তা চলবে এবং এক সময় এমন হলেও আমি আশ্চর্য হবোনা যখন আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি কেবল জামায়াতকে ঠেকা্তে ঐক্য বদ্ধ হবে।
তবে সত্যি-সত্যিই কী জামাতের কৌশলী রাজনীতির বলি হবে বিএনপি? জানাবেন কিন্তু।
আমার লিখায় এটাই সম্ভবতঃ আপনার প্রথম উপস্থিতি। হয়তঃ মতাদর্শগত ভীন্নতার কারনে অনেক ক্ষেত্রেই মতামতে মিল হবেনা । তবুও আপনার উপস্থিতি কামনা করছি।
এক) সরকারীদল গণজাগরনকে ধ্বংস করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে এখানে মনে হয় হেফাযত সহ অন্যান্ন ইসলামিক দল গুলোকে কাছে নেয়া এবং আরো ৫ বছর ক্ষমতায় ঠিকে থাকতে তাদের পাশে পাওয়াই সরকারের মুল লক্ষ। আরেকটা বিষয়ও থাকতে পারে,আর তাহলো ভাগবাটোয়ারায় ছাত্রলীগের সাথে জাগরনের দ্ধন্ধ সৃষ্টি হওয়া।
দুই) দীর্ঘদিন ধরে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম মন্থরগতিতে এগুচ্ছে এখানে মনে হয় আওয়ামীলিগ নির্বাচন পরবর্তি পরিস্হিতি হজম করার জন্য সময় নিচ্ছে।
তিন) জামাত-শিবিরের উপর পরিচালিত সরকারের স্টীম রোলার পরিবর্তীত হয়ে বিএনপির উপর ভর করেছে জামাতকে ধরার যায়গা না পেয়েই হয়তো বি এন পি কে। কেননা জামাতের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী হয় জেলে,না হয় পলাতক। তাছাড়া জামাতের কোন কর্মসুচিও নেই এই মুহুর্তে। তবে এখমো মরছে কিন্তু জামাত শিবির।
চার) সরকারীদল উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীদের জয় ছিনিয়ে নিলেও জামাত প্রার্থীদের ছাড় দিয়েছে, তা না হলে মাঃ দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ছেলের জয় সরকার অবশ্যই ছিনিয়ে নিত । তাছাড়া সর্বত্র আলোচিত হচ্ছে- উল্লেখযোগ্য আসনে সরকারীদল চেয়ারম্যান পদে পাস করলেও ভাইস চেয়ারম্যান পেয়েছে জামাতএটার জন্য অন্য কোন পোষ্ট দেয়া দরকার।দেখি সময় করতে পারলে দেব ইনশা আল্লাহ।
পাঁচ) এতবড় বিজয়ের পরও জামাত সরকার বিরোধী বক্তৃতা-বিবৃতিতে রহস্যজনক নীরবতা পালন করছে । এমনকী জোটের তিস্তা অভিমুখের লংমার্চেও জামাত অংশ নেয়নি এখানেও জামাত হয়তো হিসাব নিকাশ করছে।বিজয়ীদের হয়তো কোন মুশকিলে ফেলতে চাচ্ছেনা।কেননা শপথ অনুষ্টান থেকেও গ্রেফতার চলছে।
লং মার্চ ছিলো বি এন পির দলীয় কর্মসুচী তাই জামাত অনুপস্হিত।
আরেকটা বিষয়,জামাতের নিরবতার জন্য বি এন পি দায়ী।জামাতের আন্দোলন কর্মসুচীতে সরকার খড়গহস্হে বাধা প্রদান করে,তখন স্বভাবতই মারামারি হয়।তার দায় কিন্তু বি এন পি নিতে রাজি নয় বলে সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন বি এন পির নেতারা। আর জামাত নিরব থেকে নিজেদের সংগঠিত করার,সাংগঠনিক শক্তি সঞ্চয়ের চেষ্টা করলে তা হয় আতাত, এটা বড়ই সেক্যুলাস।
সংগঠন সম্পৃক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শক্তিশালী ভীত গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে, হা, সব কিছুই সংগঠন সম্পৃক্ত। যদিও তা অন্য দলের এক একজন নেতার সম্পদের থেকেও মনে হয় কম হবে।
ধন্যবাদ।
আপনার কাছে জিজ্ঞাস্য-জামাত আওয়ামীলীগ পরষ্পর পর্দার অন্তরালে সম্পর্ক তৈরীর পটভূমি তৈরী করছে,এর সম্ভাবনা আছে কী?
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানবেন ।
কষ্ট করে ধৈর্য্য ও গুরুত্বসহকারে আমার পর্যালোচনাটি পড়ে উত্তর জন্য কৃতজ্ঞতা জানবেন।
ভালো থাকবেন।
যাইহোক আজকের লিখাটির কৌশলী উপস্থাপনা আমাকে চমৎকৃত করেছে। এবং মনে হয়েছে আপনার লিখার মূল থিম অথবা মূল কোয়ারী তে অনেকেই আলোকপাত করেন নি - অথবা বলা যায় আলোকপাত করতে চান নি।
আপনার লিখার আলোকে ওভারঅল বাংলাদেশের পলিটিক্সকে আমার কাছে এমন মনে হচ্ছে - ধর্মনিরপেক্ষ, ধর্মহীন, স্যেকুলার, বৈষয়িক ও সাম্রায্যবাদী রাজনীতির প্রতিভূরা - বাংলাদেশকে পাশ্চাত্যের ধ্যানধারনায় উজ্জীবিত একটি উদীয়মান ধনী দেশে রূপান্তর করতে গিয়েছে এবং এ কাজ করতে গিয়ে তারা তাদের সামনে যা কিছু করে তা এ্যাচিভ করা যাবে মনে করেছে - তাই করেছে এবং তা ডেসপারেটলী করেছে - ঠিক যেমনটা দেখেছিলাম - ২০০০ সালের ইলেকশান পরবর্তীতে কনজারবেটিভ ইন্ফ্লুয়েন্স এ তাড়িত জর্জ বুশ ডেসপারেটলী ওয়ার্ল্ড অর্ডারকে স্ট্রেইট করতে গিয়েছিল - তাদের ধ্যান ধারনা মত।
বুশের সেকেন্ড টার্ম ও তার শেষ ভাগে এসে বুশ ও বুশ প্রশাসন যেমন অবাক হয়ে দেখছিল চারদিক হতে পৃথিবীটা তাদের জন্য বড় বেশী ছোট হয়ে তাদের উপর ছেপে বসছে - আমার কাছে মনে হচ্ছে আওয়ামীলীগের উপর ও বাংলাদেশ সহ পৃথিবীটা বড় বেশী বোঝা হয়ে ছেপে বসছে।
আওয়ামীলীগ যখন ডেসপারেটলী তাদের এজেন্ডায় তাড়িত হয়ে এগুচ্ছিল - তখন স্বভাবতঃই তার বিরুদ্ধ শক্তি চিহ্নিত হবে তথা বিকশিত হবে। আর তার স্বাভাবিক পরিনতিতেই জামাত বা জামায়াতে ইসলামী চিহ্নিত হয়েছে এবং বিকশিত হচ্ছে এবং তার অনুসংগ হিসাবে অন্যান্য ইসলামিক দল ও মত ও চিহ্নিত হয়েছে এবং বিকশিত হয়েছে এবং আরো হবে। এটাই হল আগামীর বাংলাদেশের বাস্তবতা।
আপনি আপনার লিখায় জামাত ও আওয়ামী মিত্রতার যে রূপকল্প বোঝাতে চেয়েছেন এবং সেখানে জামাত বিএনপির মাথায় পাড়া দিয়ে ক্ষমতার দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে যে ফলস্ এ্যালার্ম বেল বাজাতে চেয়েছেন - তা আমার কাছে পুরোটাই অস্বাভাবিক এবং আনাড়ী মনে হয়েছে। কারন জামাত অমন কিছু করলে বা ইভেন কোন ভাবে কম্প্রোমাইজ করলেও - জামাত রাতারাতি কর্মী সমর্থক শূন্য বাম দলগুলোর ন্যায় একটি ইয়াতিম দলে পরিনত হবে।
অন্যদিকে জামাতকে কাউন্টার দেবার জন্য আওয়ামীলীগ এর দরকার জনগনকে এটা বোঝানো যে - তাদের সাথে জামাতের একটা নেগোশিয়েশান হয়েছে বা হচ্ছে - তাতে করে মানুষ এক্সট্রিম আওয়ামী ফিলিংস হতে সরে গিয়ে মধ্যবর্তি ধ্যানধারনার বশঃবর্তি হয়ে মধ্যপন্থি বিএনপির দিকে সাপোর্ট ধরে রাখবে - যাকে আওয়ামীলীগ সহজেই রাজনীতির মাঠে খেলতে ও খেলাতে পারবে।
আর আজকের রাজনীতির বিশ্লেষনে বিএনপি ইস্যু হিসাবে কোন অবস্থানেই নেই - বিএনপি যে জন্য আছে এবং থাকবে এবং থাকতে হবে - তা হল নামে মাত্র মুসলিম অনুভূতির ধারক কোটি কোটি বাংলাদেশীরা যারা আকন্ঠ দুইনাম্বারীতে জড়িত - তারা তাদের দুই নাম্বারী কাজ কর্ম চালিয়ে যেতে চায় বলে এবং প্যারালালী মুসলিম আইডেন্টিটি ধরে রাখতে চায় বলে বিএনপিকে ভোট দিয়ে বাচিয়ে রাখবে - এবং সেই জন্য বিএনপি থাকবে বেচে।
( জামাত অমন কিছু করলে বা ইভেন কোন ভাবে কম্প্রোমাইজ করলেও - জামাত রাতারাতি কর্মী সমর্থক শূন্য বাম দলগুলোর ন্যায় একটি ইয়াতিম দলে পরিনত হবে।)-জামাত তাদের স্বার্থে অতীতে বিএনপির বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগের সাথে যুগপৎ আন্দোলন করেছিল এবং ঐ আন্দোলনে বিএনপি নতি স্বীকারে বাধ্য হয়েছিল। ঐ আন্দোলনে জামাত এতিম হয়নি। কারন জামাত নেতারা কর্মীদের বুঝাতে সক্ষম হয়েছিল তত্ত্বাবধায়কের অধীনে ভোট হলে জামাতের কর্মী সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের ভোটকে অন্যরা ক্ষমতার কলাকৌশল দিয়ে কুক্ষিগত করতে পারবেনা। আরেকটা কারন আওয়ামীলীগের স্বাধীনতা আর রাজাকার কেন্দ্রিক রাজনীতিকে প্রশ্নবিদ্য করে নৈতিক ভাবে দূর্বল করা।
আর এখন জামাত দেশের দ্বিতীয় প্রধান দলে পরিণত হওয়ার স্বার্থে বিএনপিকে কৌশলী ল্যাং মারলে এবং পর্দার অন্তরালে সম্পর্ক স্থাপন করে বিএনপির অস্তিত্বের সংকটকে ত্বরান্বিত করলে কর্মীরা অখুশী হবেন না। আপনি অন্য সবার মন্তব্য পড়ে দেখুন কিছুটা আভাস পাবেন।
যদিও আমি চাইনা জামাত বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান দলে পরিণত হউক। কিন্তু বাস্তবতায় ২য় স্থানে যাওয়ার ক্ষেত্র তৈরী হয়েছে। কোন দল তার কী ধরনের স্ট্র্যাটেজিতে ক্ষমতারোহনের স্বপ্ন দেখে,তা একান্তভাবে ঐ দলটির বিষয়।
যাহোক সুদৃষ্টির প্রত্যাশা রাখছি,ভালো থাকবেন।
একজন নির্যাতিতা কাশ্মীরী মুসলিম বোনের হৃদয় বিদারক চিঠি:-
Click this link
সাতক্ষীরা থেকে নির্যাতিত এক বোনের চিঠি পড়ুন
Click this link
ধন্যবাদ।
আওয়ামীলীগ ও জামাতের স্ব-স্ব স্বার্থে গোপন শর্ত সাপেক্ষে আঁতাতের সম্ভাবনা আছে কী? জানতে চাই। অপেক্ষা করছি আপনার বিশ্লেষন ও ব্যাখ্যা সমেত উত্তরের।
গুম খুনের কারন অনুসন্ধানে একটি বিশ্লেষনধর্মী লিখা দিয়েছি। আপনার কাছে এই লিখাটিরও সমালোচনা প্রত্যাশা রাখছি।
আপনার সাথে সহমত পোষন করছি-একমাত্র যোগ্যতমরাই টিকে থাকবে এবং বিএনপিকে টিকে থাকতে হলে সেই যোগ্যতাই অর্জন করতে হবে।
ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন