ইতিহাস নিয়ে তারেক রহমানের বালখিল্যতা।
লিখেছেন লিখেছেন মহি১১মাসুম ২৭ এপ্রিল, ২০১৪, ০৪:৪৬:৪৪ রাত
বিএনপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট তারেক জিয়ার ইতিহাস চর্চার গবেষনাগার থেকে আবিস্কৃত ইতিহাসের প্রথম বিতর্কিত ডিনামাইডটির ঝড় থামতে না থামতে ৮ এপ্রিল ২০১৪ ইং লন্ডন থেকে দলীয় নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে আবারো বিস্ময়কর দ্বিতীয় আবিস্কারটি উত্থাপন করলেন । তারেক জিয়া তার ভূমিকা বক্তব্যে উনারই মাতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ বিএনপির অন্যান্য সিনিয়র নেতাদের সমর্থন সূচক বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেছেন । আরো বলেছেন শেখ হাসিনাসহ আওয়ামীলীগ নেতারা যেহেতু উনার ছুঁড়ে দেওয়া প্রশ্নের উত্তর দেননি । তা প্রমান করে শেখ মুজিব নয় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট ও স্বাধীনতার ঘোষক । এরপর উপস্থিত দলীয় নেতাকর্মীদের হাততালিতে উজ্জীবিত হয়ে দ্বিতীয় আবিস্কারটি তুলে ধরেন ।
তারেক জিয়া নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে আহব্বান রাখলেন ৪৩ বছর ধরে দেশ-জাতি যে মিথ্যা বিভ্রান্তিকর ইতিহাস জেনে আসছে উনি ঐতিহাসিক দলিলের ভিত্তিতে সেই সব বিভ্রান্তি দূর করে সত্য প্রতিষ্ঠা করবেন এবং জাতিয়তাবাদী দলের কর্মীরা যেন এই সত্য ইতিহাস জনগনের মাঝে ছড়িয়ে দেয় । বিভ্রান্তি দূর করার নামে যে নাতিদীর্ঘ বক্তব্যটি দিলেন তাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিভিন্ন প্রসঙ্গে কোড করতে গিয়ে অনেকটা শ্লেষ মিশ্রিত ভাষায় শেখ মুজিব, শেখ হাসিনার বাপ, সে, সেই ব্যাক্তি ও আলফা ইন্স্যুরেন্সের দালাল শেখ মুজিব ইত্যাদি ভাষায় আক্রমন করেছেন, এছাড়াও মুজিবনগর সরকারে থাকা জাতীয় নেতাদেরকেও কোন সন্মানসূচক বিশেষন ছাড়াই সৈয়দ নজরুল, তাজউদ্দীন ও সে তারা ইত্যাদি শব্দে উপস্থাপন করেছেন, যা শুনতে দৃষ্টিকটু শুনিয়েছে এবং তাতে ভব্যতা সভ্যতা লেশমাত্র ছিলনা । প্রকারান্তরে নিজের বাবা-মাকে কোড করার ক্ষেত্রে বিশেষনের ঘাটতি রাখেননি ।
তারেক জিয়া যেভাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে টেনে হেঁচড়ে নীচে নামিয়ে নিজের বাবা তথা বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে টেনে উপরে তোলার চেষ্টা করেছেন, তা রীতিমত অসভ্য যুগে রাজ্য দখলের ন্যায় মনে হয়েছে । দখলদার রাজা যেমনি রাজ্য দখলের মাধ্যমে রাজ্যের সব ভোগের অধিকার পেয়ে যান, তারেক জিয়া অনেকটা সেরকমই মুখের সামনে মাইক ও তথ্য প্রযুক্তির সুবিধা পেয়ে ইতিহাস চর্চার নামে যা-তা বলার সুবিধা ভোগ করলেন ।
এখনো তারেক জিয়ার দ্বিতীয় আবিস্কারটির কথা বলাই হলো না । শুনলে ভাববেন, এই কথাতো পরিচিত মনে হচ্ছে, অনেক আগে কারা যেন বলেছিল, হ্যাঁ ঠিকই ভাবছেন, তৎকালিন পশ্চিম পাকিস্থানী সরকার মুজিব নগর সরকারকে অবৈধ বলেছিল, সাথে সাথে আকুন্ঠ সমর্থন দিয়ে প্রচারে এনেছিল ওদের এদেশীয় দোসঢ় রাজাকার আলবদর ও আলসামস্ বাহিনীর প্রেতাত্মারা । কিন্তু স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর মুক্তিযুদ্ধের বীর উত্তম খেতাবধারী সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়কের বড় সন্তান তারেক জিয়া ঐ পাক প্রেতাত্মাদের অনুকরনে বললেন-শেখ মুজিব স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অবৈধ প্রধানমন্ত্রী ।
পাকিস্তানী ও ওদের এদেশীয় প্রেতাত্মারা আমাদের স্বাধীনতাকে ব্যর্থ করতে আন্তর্জাতিক মহলকে আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর জন্য বার-বার মুজিব নগর সরকারকে অবৈধ সরকার বলে আসছিল । দীর্ঘ ৪৩ বছর পর তারেক জিয়া ঐ একই সুরের প্রতিধ্বনী করলেন কাদের স্বার্থে । তার জবাব তারেক জিয়া এবং বিএনপিকেই দিতে হবে । এই পর্যন্ত সমালোচনা পড়ে মনে হতেই পারে আমি তারেক জিয়াকে কল্পিত ভাবে পাক প্রেতাত্মার অনুচর বানিয়ে অন্যায়ভাবে উনার ভাবমূর্তির ক্ষুন্ন করছি । তারেক জিয়ার গবেষনাগার থেকে বিস্ময়কর উদ্ভবনা এবং তথাকথিত সত্য ইতিহাস (!) সম্পর্কে তথ্য উপাত্ত দিয়ে ভুল বা অযৌক্তিক প্রমান করিনি, অথচ ভীন্ন প্রক্রিয়ায় সমালোচনাকে একপেশে এবং উদ্দেশ্যমূলক ভাবতেই পারেন ।
যাহোক আসুন দেখি, তারেক জিয়ার কথার সাথে তৎকালিন বাস্তবতা কী বলে, তারেক জিয়া ১০ এপ্রিল গঠিত মুজিব নগর সরকারের প্রক্লেমেশন থেকে পড়ে যা বলেছেন তা সংক্ষেপ করলে দাঁড়ায়-সংবিধান গৃহিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন এবং শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন । তারেক জিয়া এই প্রক্লেমেশনের আলোকে বললেন- শেখ মুজিব দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১০ জানুয়ারী দেশে ফিরে ১২ জানুয়ারী রাষ্ট্রপতি না হয়ে প্রধানমন্ত্রীর হয়ে গেলেন, তখনও সংবিধান প্রনয়ন হয়নি । সংবিধান প্রনয়নের পূর্বে শেখ মুজিব এভাবে রাষ্ট্রপতি না হয়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়াটা অবৈধ । তাই শেখ মুজিবকে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অবৈধ প্রধানমন্ত্রী বলা যায় । আরো বললেন এখন শেখ মুজিবের মত শেখ মুজিবের মেয়ে শেখ হাসিনাও অবৈধ প্রধানমন্ত্রী ।
তারেক জিয়ার উপস্থাপনা শুনলে বঙ্গবন্ধুকে অবৈধ প্রধানমন্ত্রীই মনে হবে । কিন্তু বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধুর সাথে থাকা আইনবিদ ডঃ কামাল হোসেন, ব্যারিষ্টার আমিরুল ইসলাম সহ অন্যান্য বিজ্ঞ আইনবিদ ও রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব তাজউদ্দিন ও সৈয়দ নজরুল ইসলাম সহ অন্যরা এতোটা কাঁচা কাজ করেছেন, এমনটা ভাবলেন কেন ? নাকী তারেক জিয়া জেনেও সুকৌশলে এঁড়িয়ে গেছেন । তারেক জিয়ার অজানা থাকার কথা নয়- ঐ প্রক্লেমেশনে বঙ্গবন্ধুকে কতটুকু ক্ষমতা দেয়া ছিল । তারেক জিয়া যতটুকু পড়েছেন ঠিক তার নিচেই লিখা ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রয়োজনে গনপ্রজাতন্ত্রের সরকার গঠন থেকে শুরু করে বিচারক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ প্রত্যাহার ও সংবিধান রচনা সহ রাষ্ট্রের যাবতীয় বিষয়ে পরিবর্তন পরিমার্জন আনতে পারবেন । বঙ্গবন্ধু ঐ প্রক্লেমেশনের আলোকে ১১ জানুয়ারী অর্ডিন্যান্স জারী করে পরিবর্তন আনেন, যাতে উল্লেখ ছিল রাষ্ট্রপতির সমস্ত দায়িত্ব ও ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর বলে বিবেচিত হবে । তাছাড়া ঐদিন মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিনের বাসায় সংসদ বসিয়ে সম্মিলিত সিদ্ধান্ত উপনীত হন বাংলাদেশ সংসদীয় সরকার দ্বারা পরিচালিত হবে । আর ১২ জানুয়ারী সংসদ বসে এবং সাংসদরা বঙ্গবন্ধুকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেন । এ থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রপতি থেকে প্রধানমন্ত্রী হওয়া সবই বৈধ ও আইনানুগ । এরপর কী বলবেন, তারেক জিয়া ইতিহাসের সত্য অনুসন্ধান করেছেন নাকী উদ্দেশ্যমূলক ভাবে বঙ্গবন্ধু ও মুজিবনগর সরকারকে নিয়ে পাক কায়দায় কালিমালিপ্ত করার অপচেষ্টা করেছেন ।
এরপর অভিযোগ আনলেন শেখ মুজিব জাতিসংঘের ট্রাভেল ডক্যুমেন্ট না নিয়ে পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে ফিরেছে । শেখ মুজিব স্বাধীন বাংলাদেশ চাইলে পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়ে দেশে আসত না । তারেক জিয়া জানেন কিনা জানিনা, একমাত্র ভীনদেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা মানুষ এবং কারো নাগরিকত্ব বাতিল হলে ঐ ব্যাক্তিটি জাতিসংঘের ট্রাভেল ডক্যুমেন্ট পেয়ে থাকেন । বঙ্গবন্ধু যেহেতু পাকিস্তানী কারাগারে বন্দী ছিলেন এবং রাজনৈতিক আশ্রয় বা নাগরিত্ব বাতিল-এই বিষয়গুলোর সাথে সম্পর্কিত নয়, সেহেতু বঙ্গবন্ধুর ট্রাভেল ডক্যুমেন্ট পাওয়ার সুযোগই ছিল না । তারেক জিয়া এসব বলে বঙ্গবন্ধুকে খাটো করতে গিয়ে নিজের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট করেছেন ।
একটা দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে বা সাথে-সাথেই ঐ দেশের সবকিছু একদিনেই পরিবর্তন করে নতুন ভাবে চালু করা সম্ভব নয়, কল্পিত আলাদিনের চেরাগ রাজনীতিবিদদের হাতে থাকে না, পরিবর্তনের জন্য সময়ের প্রয়োজন । তারেক জিয়া জানেন কিনা জানিনা, আমাদের নিজস্ব মুদ্রা ব্যবস্থা গড়ে ওঠার পূর্ব পর্যন্ত অর্থাৎ ৭২ সালের মাঝা-মাঝি সময় পর্যন্ত পাকিস্তানী আমলের মুদ্রায় লেনদেন হয়েছে, তাতে প্রমান করেনা, আমরা পাকিস্তান রয়ে গেছি, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি । তাছাড়া যদি রণাঙ্গনের শহীদ মুক্তিযোদ্ধার ঘরে পাকিস্তানী পাসপোর্ট পাওয়া যায়, আমরা ঐ শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে পাকিস্তানের চর বা পাকিস্তানী বলতে পারি কী ? নিশ্চয়, তা পারি না । তারেক জিয়া নিশ্চয় জানতেন উনার বাবা তৎকালিন মেজর জিয়া পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জীবনবাজী রেখে লড়েছেন কিন্তু ঘরে পাকিস্তানী পাসপোর্ট রক্ষিত ছিলো । এইটা ঐ সময়ের বাস্তবতা । এইটা নিয়ে সমালোচনা রাজনৈতিক অর্বাচীনদের মুখেই মানায়, কোন সাধারন মানের বুদ্ধির মানুষও এই ধরনের কথা তুলবেন না ।
তাছাড়া বঙ্গবন্ধুর একটি পুরনো ভিডিও-ক্লীপ দেখালেন, যা মার্চ মাসে উত্তাল দিনগুলোর কোন এক সময় ধারন করেছিল বিদেশী সাংবাদিকরা, যাতে বঙ্গবন্ধু ছয়-দফার ভিত্তিতে স্বায়ত্বশাসনের কথাই বলেছিলেন । এখানে উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষন এমনভাবে দিয়েছিলেন, যাতে পাকিস্তানী শাসকগোষ্টী দেশদ্রোহীতার অভিযোগে বঙ্গবন্ধু ঝুলিয়ে দিতে না পারেন, আবার জনগনও স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেন । এ থেকে কেউ যদি বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা চাইতেন না, চান না, স্বাধীনতার কথা জীবনে চিন্তাও করেননি । আবার পক্ষান্তরে, মেজর জিয়া স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতেন, জনগনের মনের কথা বুঝতে পারতেন, পড়তে পারতেন । এইভাবে তুলনা করাটা একদিনে যেমনি হাস্যকর, অন্যদিকে বিব্রতকরও বটে অর্থাৎ এই তুলনায় রাজনীতি বিশ্লেষকরা দেশের প্রধান বিরোধীদলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্টের চিন্তার দৈনতা দেখে লজ্জার হাসি হাসবেন আর জিয়াউর রহমান জীবিত থাকলে ছেলের আদিখ্যেতায় নিশ্চিত বিব্রতবোধ করতেন ।
তারেক জিয়া কেন বুঝেন না, ২৬ মার্চ চট্রগ্রামে আর্মি ক্র্যাকডাউনের আগে জনগন মেজর জিয়াকে কখনও চিনতেন না, জানতেন না । রাজনীতিকরা জনগনকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন, জনগনকে তৈরী করেছেন । এই রাজনীতিকদের বক্তব্য বিবৃতি আন্দোলন সংগ্রামের উত্তাপে মেজর জিয়াসহ অসংখ্য সামরিক বাহিনীর অফিসার-জোয়ানরা স্বাধীনতার স্বপ্ন তৈরী করেছেন, লালন করেছেন এবং যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছেন ।
তারপরও তারেক জিয়ার উত্থাপিত বিতর্কটি যদি ইতিহাসের তথ্য উপাত্তের আলোকে সত্য বলে বিবেচিত হতো, দেশ-জাতি উনার প্রতি কৃতজ্ঞ হতো । কিন্তু তারেক জিয়া যেভাবে বিভ্রান্তিকর যুক্তি দিয়ে একটি প্রতিষ্ঠিত সত্যকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন, তা উনার নিজের পড়া-শুনা ও জ্ঞান-গরীমার সীমাবদ্ধতাকে জানান দিয়েছেন । আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী মা খালেদা জিয়া হয়তঃ ছেলের গবেষনামূলক পড়াশুনাকে উৎসাহিত করার জন্য সমর্থন দিয়েছেন, এতে দোষের কিছু ছিলনা-যদি তারেক জিয়ার বয়সটা শিশু পর্যায়ে থাকতো । আর বিএনপির বিজ্ঞ বর্ষিয়ান নেতারা তারেক জিয়াকে সমর্থন দিয়ে প্রমান করলেন জ্বী হুজুরের রাজনীতিই উনাদের নেতা হওয়ার যোগ্যতা । নচেৎ জেনে শুনে উচ্চ শিক্ষিত জ্ঞানী নেতারা সমর্থন দিবেন কেন ? উনারা ইতিহাসের সত্যতা জানেন না, এমনটা ভাববার কোন অবকাশ নেই ।
তারেক জিয়া নিশ্চয় জানেন ইতিহাসখ্যাত কোন রাজনীতিবিদের জীবনই কুসুমাস্তীর্ণ ছিলনা, সর্বক্ষেত্রে সফলতা এবং অনুকূল পরিবেশ, এমনটাও নয় । রাজনীতিকরা তাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে ভুলের মাশুল গুনতে হয়, আবার ভুল না করেও প্রতিপক্ষের চক্রান্তের শিকার হতে হয় । তারেক জিয়া ভুলের মাশুল গুনছেন নাকী চক্রান্তের শিকার, তা আলোচনায় আনছি না । বলার বিষয় হচ্ছে উনি যে বয়সে দাঁড়িয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলীকে নিয়ে বিতর্ক তুললেন, সেই বয়সে বঙ্গবন্ধু ইতিহাসের জন্ম দিয়েছেন । ইতিহাসের জন্ম দেয়াই রাজনীতিকদের কাজ আর ইতিহাসবিদরা বের করে আনবেন ঐ ইতিহাসে কোন রাজনীতিবিদের কী ভূমিকা ছিল । তারেক জিয়া ইতিহাসের ছাত্র হইতে চাইলে বা নিজেকে একাধারে ইতিহাসবিদ ও রাজনীতিক ভাবলে ভীন্ন কথা । আর তা না হলে ইতিহাসের দায়িত্ব ইতিহাসবিদদের হাতে ছেড়ে দেয়াই বাঞ্চনীয় । তাছাড়া নিজের ফেরারী জীবনের অবসান ঘটিয়ে সব কিছুকে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলা করে পরিস্থিতি জয়ের ইতিহাস তৈরী করা, এতে অন্ততঃপক্ষে বিএনপির দৈনদশা কেটে চাঙ্গাভাব আসবে ।
বিষয়: রাজনীতি
৫২৪৮ বার পঠিত, ৩৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
নিরপেক্ষ ওঝা পাওয়া দুস্কর।
ধন্যবাদ- সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
তারেক জিয়াকে উৎসাহ দেয়াই উচিত। যাইহোক একটু আধটু পড়াশুনাতো করছে। প্রথম প্রথম ভুল করতেই পারে। ইনশাল্লাহ পরে ঠিক হয়ে যাবে।
উনাকে দোয়া করবেন।
ধন্যবাদ ।
হাওয়া ভবনের বদ হাওয়ায় ছেলেটার সর্বনাশ হয়েছে।
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।
তোফায়েল সাহেব নিশ্চয়ই মহি১১মাসুম সাহেবের চেয়ে বয়সেও বড় এবং রাজনীতিবিদ হিসেবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষীও।
তোফায়েল আহমেদ নাকি জীবন্ত ইতিহাস !
তোফায়েলরা থাকতে মহিদেরকে কেন জবাব দেওয়া লাগে , যেখানে মহিরা ঐ সময়ে জন্মাওনি এবং তোফায়েলরা সেই ঘটনার চাক্ষুষ সাক্ষী ?
উনি কেন তারেককে ''আহাম্মক'' বলে , জিয়া তাকে ''স্যার স্যার বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলত'' - এরকম কথার মাধ্যম নিয়েছিলেন তারেকের কথার জবাব দিতে ?
তাদের কোন নেতাকেই তো দেখলাম না তারেকের কথার শক্ত ও যুক্তিযুক্ত জবাব দিতে ।
যে জবাব তোফায়েলদেরই সবচেয়ে ভালভাবে দিতে পারার কথা তা না করে তারা সদলবলে নোংরা কথার কোরাস গাইলো আর আপনি মহি১১ মাসুম তোফায়েলদের পক্ষে কি সুন্দরই না যুক্তি দিলেন তারেকের এগেনইস্টে ?
কেন , তোফায়েলরা কি মহিদের মত প্রজ্ঞা রাখেন না ?
যারা জিনিসটির প্রত্যক্ষ সাক্ষী হয়েও প্রতিপক্ষের ইটের যুতসই পাল্টা জবাব দিতে পারে না এবং কেন পারে না তা না খতিয়ে দেখেই তাদের পক্ষে এমন কিছু লোক যুক্তি এনে দাঁড় করায় যারা সে সময়ে জন্মায়ও নি - এরকম লোকদেরকে বলতে ইচ্ছে করে '' বার হাত কাকুড়ের তের হাত বিচি ''
তোফায়েলরা এসব কথার কোন যুক্তিযুক্ত জবাবের ধারে কাছেও যাবে না থলের বেড়াল বের হয়ে আসবে বলে । আর এখন তো রিমির বোন শারমিনও তারেকের পথ ধরেছে । তাকেও কাউন্টার দেন তোফায়েলদের পক্ষ থেকে !
এই নিন আপনার পেমেন্ট , আশা করি সামনে আরও ভাল লিখা পাব তারেকের/শারমিনের প্রশ্নের/লিখার জবাবে
তবে এইটা ঠিক হয়নি। ধৈর্য্য ধারন করাই উচিত ছিল।
ধন্যবাদ, '' বার হাত কাকুড়ের তের হাত বিচি '' উপাধী দেয়ার জন্য।
ভাল খারাপ যাইহোক, আপনিওবা কেন তোফায়েল টাইপ আচরন দেখালেন আমার প্রতি।
শান্ত হউন- ভাইজান।
হয়তো শেখ মুজিব কিছুটা তা আচ করতে পেরেছিলেন। একারণেই তিনি স্বাধীনতা না চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রীয় ফেডারেল রাষ্ট্র ব্যবস্থার মাধ্যমে পূর্নাঙ্গ শায়িত্বশাসন চেয়েছিলেন। কিন্তু ততকালীন আন্তর্জাতিক খেলোয়ারদের ডাবার গুটি হিসেবে ব্যবহার হয়েছে তাজউদ্দীন আহমদসহ মস্কোপন্থী বামঘেষা ছাত্র নেতারা। একটি দেশের স্বাধীনতা চাওয়ার মতো মেকানিজমের দায়িত্ব নিয়েছিল ততকালীন ছাত্র নেতারা যাদের বয়স কিনা ২১-২৮ বছরের মধ্যে!!!
একাত্তুরের স্বাধীনতা যুদ্ধে যে পরিমাণ নিরাপরাধ মানুষ খুন হয়েছে, যে পরিমাণ ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে যদি নিরেপেক্ষ ট্রাইবুনালে এসবের বিচার করা যেত তবে আজকে যারা বড় গলায় কথা বলে মুক্তিযোদ্ধের চ্যাতনা ব্যবসা করে ফেরি করে বেড়ায় তাদের সবাই যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হতো।
মহি১১মাসুম! আপনি তো খুবই চালাকীর মাধ্যমে নিজের রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের পক্ষ হয়ে তারেক জিয়ার কথার উত্তর দিতে আধা জ্বল খেয়ে নেমেছেন।
জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং শেখ মুজিবের নামের শুরুতে যথাক্রমে শহীদ এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বলে নিরপেক্ষতার ভান ধরার প্রয়োজন কি?
যদি নবাব সলিমুল্লাহ এবং শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক বেচে থাকতেন না জানি পায়ের জুতো খুলেই শেখ মুজিবকে পিঠাইতেন কিনা।
বৃটিশের বিরুদ্ধে ১৯০ বছরের আন্দোলন সংগ্রামের গতি প্রকৃতি নিয়ে আওয়ামী মহলে কোন আলোচনা হয়না। তারা শুধু আমাদের ইতিহাস গেলাতে চায় ১৯৭১ সালের। পাকিস্তান পিরিয়ডের ২৩ বছরের শাসন আমলে বাংগালীদের উপর কোন কোন ক্রাইটেরিয়ার ভিত্তিতে শোষণ ও জুলুম করেছিল এবং তার সমাধন কোন পথে হওয়া উচিত ছিল তার নিরপেক্ষ যুক্তির বিচারে বিশ্লেষণ আওয়মী মহল অত্যন্ত সযত্নে এড়িয়ে যায়।
আপনি যাদেরকে পাকিস্তনী এবং তাদের এদেশীয় প্রেতাত্মা বলে ঘৃণা করছেন তারাই এদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জনে দীর্ঘ ১৯০ বছর বৃটিশের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করে বুকের তরুজাতা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল। প্রায় দু"শত বছরের আন্দোলন সংগ্রামের বিনিময়ে অর্জিত পৃথিবীর বুকে একটি শক্তিশালী জাতি হিসেবে মাথা উচু করে ঠিকে থাকুক তারা সেটাই চেয়েছিল। দূর্ভাগ্যের ব্যাপার হচ্ছে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা তাদের হাতে ছিল না। তৎকালীন পাকিস্তানের পূর্ব-পশ্চিম উভয় পাশেই দু'দল নিকৃষ্ট তথাকথিত সেকুলারপন্থীরাই জনগনের ভাগ্য নিয়ে টানাটানি করতেছিল। ১৯৭১ সালে ত্রিশ লক্ষ মানুষের খুন এবং দু'লক্ষ নারীর ইজ্জত হরণের (আওয়ামী লীগের দাবী অনুযায়ী) পেচনে কারা দায়ী? এতোগুলো মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের সীমানায় ফেলানীদের ঝুলন্ত লাশ নিয়ে উপহাস করার জন্যই কি স্বাধীনতা? প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অঙ্গ্যরাজ্যের চেয়েও অসহায়ভাবে রাষ্ট্রীয় পলিসি নির্ধারণের নামই স্বাধীনতা? বিমানবন্দর থেকে পাকড়াও করে ইন্ডিয়াতে নিয়ে যাওয়ার নামই কি স্বাধীনতা? শান্তিবাহিনীর নামে পার্বত্য অঞ্চলকে দিখন্ডিত করে বাংলাদেশ থেকে বিচ্চিন্ন করার ষড়যন্ত্রের নামই কি স্বাধীনতা?
যদি এসবই আমাদের স্বাধীনতার অর্থ হয় তাহলে সেই স্বাধীনতার তথাকথিত মেকানিক্যাল ইঞ্চিয়িার তথাকথিত জাতির জনকদের ঘৃণা করা উচিত।
গ্যাঞ্জাম ভাই আপনার এই সরলীকরন উপস্থাপনা অনেকটা খিঁচুরী সদৃশ।
স্বাধীনতাকে অন্যদের উস্কানীর ফল বলতে চেষ্টা করাটা রীতিমত অবমাননাকর। আপনার মতই অতীতে একটি গোষ্টী এমনটা বলেছিল ।
অন্য বিষয়গুলিতেও আমার দ্বিমত ও ব্যাখ্যা আছে,পরে অন্য একদিন উত্তর দিব।
ভালো থাকবেন। চোট্ট একটা তথ্য জেনে নিন-জামাতের স্বপ্নদ্রষ্টা মওদূদী ৪৭ স্বাধীন পাকিস্থান চায়নি আর ৭১ এ বাংলাদেশী *(পূর্ব পাকিঃ)অনুসারীরা স্বাধীন বাংলাদেশ চায়নি। কিন্তু কখনই জনগন ওদের ঠিক মনে করেনি।
ও হ্যাঁ,বর্তমানে ভারতের বড় ভাই সূলভ এবং আগ্রাসী ভূমিকা অবশ্যই নিন্দনীয়।
তারেক জিয়া যখন পড়া-শুনা করার দরকার ছিল তখন পড়েনি।
কিন্তু বয়স্ক শিক্ষার স্কুলে ভর্তি হয়েই ভুল পড়ছে,তাই একটু শুধরে দিলাম।
কথাটি নিরেট সত্যও বটে। কারণ প্রথমত শেখ মুজিব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্যই রাতের অন্ধকারে পাড়ি জমিয়েছে। পাকিস্তানিরা আমাদের উপর হামলা করবে জেনেও তার কোন দিক নির্দেশনা ছিলনা।
দ্বিতীয়ত ফিরে এসে সব দলকে না নিয়ে শূধূ আওয়ামীলীগ লোকদের নিয়ে সরকার বানিয়েছে যারা যুদ্ধের সময় ইন্ডিয়াতে লন্ডিয়ামী করেছে। সুতরায় রক্কক্ষয়ী যুদ্ধে আহত মানুষদের সমর্থনহীন শেখ মুজিব অবৈধ প্রধানমন্ত্রী।
মন্ত্রি হওয়ার পর ৭৪-৭৫ এর ব্যর্থতা, জাতির সাথে মশকারী ক্ষমতার দাহে অন্ধত্ব বৈ কিছুই নয়। আমি ১৯৭৪-৭৫ দেখেছি। দেখেছি ভুভুক্ষ মানুষের কিভাবে অভিশাপ দিয়েছিল এ মানুষটিকে। আমার দেখা জীবন্ত ইতিহাস আজও তাড়িয়ে বেড়ায়।
আমার লিখাটির কোন সুনির্দৃিষ্ট অংশে আপনার দ্বিমত থাকলে অবশ্য-অবশ্যই আমি তথ্য উপাত্ত দিয়ে আমার পক্ষের সত্যতা প্রমান করব,না হয় আপনারটা মেনে নিব। কিন্তু তথ্যহীন ক্ষোভ মিশ্রিত মতামতের সাথে হ্যাঁ বা না বলাটা কষ্টকর।
ধন্যবাদ।
আর মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন সাহেবের ২৫ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষনাপত্রে ঐ সময়ে বঙ্গবন্ধু দ্বিমত করেছেন তা ঠিক নয়, উনি পাকিস্থানীদের হাতে তথ্য দিয়ে দেশদ্রোহীর মামলায় ঝুঁলতে চাননি বলেছেন। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু অর্থাৎ আওয়ামীলীগের কার্যক্রমে ক্ষীপ্ত হয়ে পাক বর্বররাই ২৫ মার্চ রাতে পিলখানা সহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আক্রমন আমাদের স্বাধীনতা বিষয়টা ত্বরান্বিত করেছিল।
আর বঙ্গবন্ধু ঐ সময়ে তাজউদ্দীনকে ফিরিয়ে দিলেও এ্যারেষ্টের পূর্বে তাজউদ্দীনের পরামর্শটিকে মাথায় নিয়ে স্বাধীনতা ঘোষনার ওয়ারলেস ম্যাসেজটি দিয়েছিলেন ।
এই নিয়ে বিতর্ক করার কী আছে,তাজউদ্দীন একজন বুদ্ধিমান দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে একটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন আর বঙ্গবন্ধু সিদ্ধান্তগ্রহনকারী নেতা হিসেবে শেষ মুহূর্তে তা কাজে লাগিয়েছেন। দুজনতো একই দলের কাছাকাছি পর্যায়ের নেতাই ছিলেন,এই নিয়ে ওনাদের জীবদ্দশায় বা এখনো দুই মেরুতে নেয়ার কী কোন সুযোগ আছে।
আর দলের সব বিষয়ে বঙ্গবন্ধু একেবারে শতভাগ সঠিক ভূমিকা রাখতে পারবেন,এমন ভাবনা অযৌক্তিক,বঙ্গবন্ধু মহামানব ছিলেন না-যে ওনার কোন ভুল হবেনা বা ওনার চাইতে অন্য কেউ বেশী বুঝার ক্ষমতা রাখেন না।
ধন্যবাদ।
৭ই মার্চ স্বাধীনতার সংগ্রামের ঘোষনা দিয়েও উনি ৮-২৫ মার্চ আলাপ আলোচনা করে ইয়াহইয়া-ভুট্টোদের নিজের অজান্তেই সুযোগ করে দেন পাকিস্তানীদের এই ২ সপ্তাহে ভারী ভারী সমরাস্ত্র দেশে আনার জন্য ।
অরক্ষিত বাংলাদেশীরা শুরুতেই হকচকিয়ে যায় এই অপ্রস্তুত অবস্থায় থেকে। ৭ ই মার্চ স্বাধীনতার সংগ্রামের ঘোষনা দেবার পরও যখন ভূট্টোদের সাথে আলাপ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তখন দেশবাসী কনফিউজড হয়ে পড়ে , স্বাধীন বাংলাদেশ নাকি স্বায়ত্ব শাসন ? মুজিব কি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধান হবে , না কি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ? পাকিস্তানীরা কিন্তু ঠিকই বুঝে ফেলে তাদের কর্তব্য এবং সে অনুযায়ী কাজেও নেমে পড়ে বঙ্গবন্ধু তথা বাংলাদেশীদের আলাপ-আলোচনায় ব্যস্ত রেখে ।
তাহলে কিসের দূরর্দর্শিতা , কিসের কৌশলী অবস্থান ?
স্বাধীনতার ঘোষনা দিলে দেশদ্রোহ মামলায় ফেঁসে যাবার ভয়ে থাকার মত নেতা তো উনাকে মনে করতে চাই না ।
আর সবাই যখন চলে গেল উনি কার সহায়তা নিয়ে ওয়ারলেসে স্বাধীনতার ম্যাসেজ পাঠালেন । তাজুদ্দিনের মত উনার এত কাছের নেতারাও ব্যাপারটি জানলেন না !
বঙ্গবন্ধুর মত হিমালয়সম নেতার কেন ওয়ারলেসের মাধ্যম নিতে হবে এত রাতে ? উনার এক ডাকেই তো উনার বাড়ির সামনেই এত রাতেও তো লাখ খানেক লোক এসে পড়তো ।
ভাইরে, সত্য বের হয়ে আসতেছে । কখনও শত্রুর মুখ থেকে আবার কখনও নিজেদের ঘরেরই লোকের কাছ থেকে । কত দিন আর তা চাপা দিয়ে রাখবেন ?
ব্রাজিল - আর্জেন্টিনার খেলাতো ! মেসি গোল দিয়েছে তো কি হয়েছে ! নেইমারদেরকেই শোধ করতে দেই আমরা যারা সাধারণ দর্শক/সমর্থকরা আছি ? আমরা শুধু সমর্থন দিয়েই যেতে পারি । গোল কিন্তু দিতে হবে প্লেয়ারদেরই ।
ধন্যবাদ প্যারিসী ভাই।
ধন্যবাদ।
Click this link
আপনার কথা অনুযায়ী একটি দেশের ইলেক্টেড প্রাইম মিনিস্টারের আলোচনাকালীন ৭ই মার্চের ভাষন যদি ঐ দেশটিরই ব্যবচ্ছেদের নামে কৌশলী স্বাধীনতার ঘোষনা হয় - তবে কি আপনি ঐ পারটিকুলার ব্যাক্তিটিকে নৈতিকতার দৃষ্টিকোন হতে 'চুড়ান্ত গালি' না দিয়ে - অন্য কোন সম্ভাষনে সম্ভোধন করবেন? চিন্তা করুন একটি কোম্পানী আমাকে সিইও হিসাবে নির্বাচিত করলো। আমার এ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার প্রসেস হচ্ছে - অমনি সময়ে আমি কোম্পানীটিকে দ্বিখন্ডিত করার নিমিত্তে আমার কৌশলী ইংগিত দিলাম আমার চাপোষা লোকদের। এটা নেতার গুন নয়। এটা প্রতারকের গুন, এটা ক্লাইভের গুন, মীরজাফরের গুন, এটা বন্য পশুর গুন।
২। ১৯৬৫ সালে পাকিস্থান ও ভারত এর যুদ্ধ হল। যুদ্ধের মাত্র ৩ বছরের মাথায় ১৯৬৮ তে পাকিস্থানের 'আগামী প্রধানমন্ত্রী ইলেক্টেড' মানুষটি তার সাংগপাংগকে আগরতলায় তার শত্রুদেশের স্পাই এজেন্সীর সাথে তার দেশকে দ্বিখন্ডিত করতে সাহায্যের জন্য মিটিং করতে পাঠায়। আর ধরা খেলে আইনকে ফেইস না করে, আন্দোলনের নামে আইনকে কাঁচকলা দেখালে - সে মানুষটিকে আইন প্রনয়নকারী বলা যায়না, আইনের রক্ষক বলা যায়না। বরং একজন ফেরারী, জাত ক্রিমিনাল বলা যেতে পারে। বিস্তারিত
Click this link
Confession by conspirators[edit]
In 2010, and on the anniversary of the withdrawal on 22 February 2011, surviving conspirator and Deputy Speaker of the Parliament Shawkat Ali confessed to the parliament at a point of order that the charges read out to them were accurate, stating that they formed a Shangram Parishad under Sheikh Mujib for the secession of East Pakistan.[1][4]
Parliamentarian Tofael Ahmed added that had the case not been filed, the plot would have culminated in the secession of East Pakistan without bloodshed, and credit the Deputy Speaker for planning the liberation of the nation.[1]
৩। স্বাধীনতা প্রত্যাশী একজন রাজনৈতিক নেতা স্বাধীনতার ডকুমেন্টে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করলেন, ঘোষনা দিতে অস্বীকার করলেন, তার সাথে হাইডিং প্লেইস এ চলে যেতেও অস্বীকার করলেন - তার খাস রাজনৈতিক সংগীর শত অনুরোধ স্বত্তেও - এই যুক্তিতে যে - অমন একটি ঘোষনা - ওনার বিরুদ্ধে পাকিস্থানী সরকারের কাছে ইভিডেন্স হয়ে থাকবে। ঠিক তার একঘন্টা পরে সেই মানুষটি ইপিআর এর ওয়ারল্যেস এ (আওয়ামীলীগের নয়) স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়ে হাইডিং এ না গিয়ে - পাকিস্থানী আর্মীর সথে গেলেন ক্যাম্পে - এই ভেবে যে ইপিআর এ দেওয়া স্বাধীনতার ঘোষনা ওনার বিরুদ্ধে প্রমানিত হবে না। মাহি ভাই, আপনার মত স্মার্ট ও পড়ালিখা জানা যুক্তিবাদী মানুষ এমন একটা যুক্তি আমাদেরকে গিলতে বলছেন দেখলে কেমন যেন শুন্য শুন্য মনে হয়।
৪। যে নেতা স্বাধীনতার ঘোষনা দিতে ভয় পায় এই জন্য যে 'ঘোষনাটি ওনাকে ফাঁসিয়ে' দিবে। সেই নেতা যখন ওনার কথিত দেশটাকে ভালবাসার কথা বলে, কথিত দেশবাসীকে ভালবাসার কথা বলে নিরংকুশ ভোট আদায় করে নিজের জন্য নিরাপদ, আইনের আশ্রয়ে রাজবন্দীর মর্যাদার জন্য প্রস্তুতি নেয় আর দেশ ও দেশবাসীর ৩০ লক্ষ মানুষকে উন্মত্ত খুনীর বেয়নেট ও গুলির সামনে ঠেলে দেয়, ২ লক্ষ মা বোনকে চিবলে খুবলে খেতে দেয় - সে আর যাই হোক মনস্তাত্বিক ভাবে অসুস্থ্য / ডিস অর্ডার ড সিরিয়াল কিলার এর চেয়েও ধ্বংশাত্মক খুনী, হিউম্যানিটির জন্য অভিশাপ তুল্য ছাড়া আর কি হতে পারে?
৫। উপরের কথা গুলো আপনার কথার অবতারনার জন্য বললাম বা বলতে বাধ্য হলাম। আপনাকে হার্ট করার জন্য নয়। আপনার নেতাকে অমর্যাদা করতে নয়। একজন মৃত ব্যক্তিকে আল্লাহ ভাল বিচার করবেন। কিন্তু আমরা বাংলাদেশীরা মিথ্যাচার নিয়ে বিরক্ত। আপনি নিশ্চয়ই বিরক্ত হবেন যদি দেখেন বাংলার কোন লোক মীরজাফরকে আইডল বানাতে দেবতা বানাতে সব অখাদ্য কুখাদ্য দিয়ে টিভি হতে পত্র পত্রিকা হয়ে ইন্টারনেট ভরিয়ে ফেলে।
এ্যানিওয়ে ভাল থাকবেন। আপনার লিখা অলোয়েজ স্পেশাল এ্যাটেনশান দিয়ে পড়ি - সো লিখা চলুক। ধন্যবাদ।
বঙ্গবন্ধুর নের্তৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে সত্য। বঙ্গবন্ধুর আগে ভাসানী পাকিস্তানকে বিদায়ী সালাম দিয়েছিলেন,আপনি নিশ্চয় তা জানেন। হয়তঃ ভাসানীর সুযোগ হয়নি স্বাধীনতার নের্তৃত্বদানের তবে উনি মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন।
যাহোক,আপনি পাকিস্তান থেকে আলাদা হওয়াটাকে যৌক্তিক মনে না করলে আপনাকে আমি যাই বলি আপনি মানতে পারবেন না। তারপরও ১নং সমালোচনার জবাব দিলা্ম,বাকীটা পরে দিব।
১। আপনারটা ধারনা মাত্র চার প্রদেশ আর এক প্রদেশ----- নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিষয়টা। ঐ সময়কার পাকিঃ সংবিধানের বাস্তবতা ছিল-সব প্রদেশ মিলে যার আসন বেশী সেই প্রধানমন্ত্রী হবে/ এখানে আপনার বাকী চার প্রদেশে ভূট্টোর বিষয়টা ধর্তব্যে আসেনা। পাকিরা অন্যায় ভাবে বঙ্গবন্ধুকে প্রধানমন্ত্রীত্ব দেয়ার বিষয়টা নিয়ে তামাশা করছিল। দুঃখ পেয়েছি আপনার যুক্তি ভুট্টোর পক্ষে,যদিও তার কোন সাংবিধানিক ভিত্তি নেই।
ভালো থাকবেন। আমার যুক্তি আবেগ তাড়িত ন্ কথার পক্ষে দালিলীক প্রমান আছে।
ধন্যবাদ।
৩নংঃ ও ৪নংঃ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা চেয়েছেন নাকি চাননি, এই প্রসঙ্গে বিতর্ক না করেও বলা যায় পাকিস্তানীদের আক্রমনাত্বক আচরন আমাদের স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করেছিল। আপনার যুক্তি মেনে নিয়েই বলছি বঙ্গবন্ধু ঐ সময়ে তাজউদ্দীন সাহেবের কথামত স্বাধীনতার ঘোষনাপত্রে স্বাক্ষর করলে ভালো করতেন কিন্তু শেষমুহূর্তে হয়তঃ তাজউদ্দীনের পরামর্শটির বাস্তবায়ন করেছেন আর গোপন স্থানে না যাওয়াটাকে আমি যৌক্তিক মনে করি। কারন লুকিয়ে থাকা নেতার চাইতে এ্যারেষ্ট হয়ে শত্রু পক্ষের হাতে থাকলে কর্মীদের ত্যাগী ম্যান্টালিটি অনেকগুন বেশী চাঙ্গা থাকে।
বাংলাদেশে তখন পাকিদের নিয়ন্ত্রণ ছিলনা। বঙ্গবন্ধুর সাথে আর্মি ব্যতিত সকল সিভিল প্রশাসনের যোগাযোগ ও নিয়ন্ত্রণ ছিল। তাই এ্যারেষ্টের পূর্ব ওয়ারলেস ম্যাসেজ পাঠানো অসম্ভব কিছুনা।
বঙ্গবন্ধু বাহিরে লুকিয়ে থাকলে কী পাকিরা বর্বরতা কম করত। আগেও বলেছি পাকিদের অত্যাচারী মনোবৃত্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করেছিল।
কি করলে কি হতো অথবা এটা কেন করলে্ন,কেন ঐটা করলেন না,এরকম বিতর্ক থাকবেই। তবে যে যাই বলুক এই মানুষটিকে ঘিরেই আমাদের স্বাধীনতা এসেছে আর পাশাপাশি অন্যরাও তাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছেন। আর বিরোধীতাকারীরা ইতিহাসের পাতায় অভিসপ্ত হয়ে আছেন। তবে স্বাধীন না হলে ওল্টোচিত্র হতো , মুক্তিযোদ্ধারা হতেন দেশদ্রোহী আর রাজাকাররা হতো দেশপ্রেমিক বীরপুরুষ।
ভালো থাকবেন আর আমার লিখার প্রতি মনোযোগের জন্য কৃতজ্ঞতা জানবেন।
আমার পয়েন্ট '১' এ, আমি নিজেই লিখেছি শেখ মুজিব প্রাইমমিনিস্টার ইলেক্টেড। তার মানে হল উনি লেজিটিমেইট আপকামিং প্রাইম মিনিস্টার। এ পয়েন্টেতো কোন বিতর্ক আমি করিনি।
আমার পয়েন্ট টা ছিল '৭ই মার্চ এর ভাষন' সম্পর্কিত। যেখানে বলা হয় শেখ মুজিব ৭ই মার্চ কৌশলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। আমার প্রশ্ন ছিল, যদি একটা দেশের একজন প্রাইম মিনস্টার ইলেক্টেড - ওনার আপকামিং সরকারের গঠন নিয়ে আলোচনার টেবিলে থাকা অবস্থায় সত্যিই কৌশলী স্বাধীনতার ডাক দেবেন - তবে তিনি তো চুড়ান্ত রকমের স্যাবোটাইজার, চুড়ান্ত রকমের অসৎ একজন প্রাইমমিনিস্টার ইলেক্টেড হিসাবে ইতিহাসে কলংকিত হয়ে থাকবেন।
আর আপনি নিশ্চয়ই জানেন - ইয়াহিয়া কিংবা অপোজিশান লিডার ইলেক্টেড 'ভুট্টো' বরাবরই 'শেখ মুজিব'কে প্রাইম মিনিস্টার ইলেক্টেড হিসাবেই ট্রিট করেছিলেন ইলেকশান রেজাল্ট এর পর হতে।
৩/৪ নং এর বিপরীতে আপনি বললেন, 'কিন্তু শেষমুহূর্তে হয়তঃ তাজউদ্দীনের পরামর্শটির বাস্তবায়ন করেছেন'
>>> আপনি নিজেই বলছেন 'হয়তো'। তার মানে আপনি নিশ্চিত নন।
* কিন্তু এটা নিশ্চিত ও প্রমানিত যে, শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষনা রেকর্ড করেননি তাজউদ্দীন বার বার আর্গুমেন্ট উপস্থাপনের পরও।
* আর এটাও নিশ্চিত যে, পাকিস্থানের আদালতে মিঃ ব্রোহীর আর্গুমেন্ট ও শেখ মুজিব এর 'সেল্প ডিফেন্সে' এ দেওয়া স্টেইটমেন্ট এ তিনি বলেছেন তিনি সেপারেটিস্ট একটিভিটিতে জড়িত নন। বরং তিনি জনগনের রাইটস এর জন্য আন্দোলনরত একজন রাজনৈতিক নেতা মাত্র।
* আদালতে পাকিস্থান সরকার শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে 'ইপিআর এর ঘোষনা' নামক কোন কিছু ইভিডেন্স আকারে উপস্থাপন করেন নি।
এই তিনটি পয়েন্ট কি প্রমান করে? শেখ মুজিব মেহমানখানায় যাবার আগে স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েছেন? তারপর ও যদি আপনি 'ইমাজিনেশান' এর আওতায় 'হয়তো' বলেন - তবে আমার চুপ করাটাই শ্রেয়।
আর 'গোপন স্থানে' যাওয়া না যাওয়া নিয়ে আমার যুক্তি ছিলনা। আমি বলেছি - তিনি ঘোষনা না দিয়ে, লুকিয়ে না গিয়ে পাকিস্থানীদের বলতে চেয়েছেন - তিনি 'ইননোসেন্ট' তিনি সেপারেটিস্ট নন। তিনি পাকিস্থানের, পাকিস্থানপন্থী এবং তিনি জনগনের মৌলিক রাইটস এর জন্য আন্দোলনরত একজন জনপ্রিয় ব্যাক্তিত্ব এবং পাকিস্থানের ইলেকটেড প্রাইমমিনিস্টার। তিনি নিজের জন্য পাকিস্থানী খুনী হানাদারদের সামনে এ স্ট্যান্ড নিলেন - আর জনগনকে (যাদের কাধে ভর দিয়ে উনি নেতা হলেন) পাকিস্থানী খুনী হানাদারের সামনে এক একজন 'সেপারেটিস্ট' এক একজন 'ভারতের এজেন্ট' এক একজন 'দেশ দ্রোহী' হিসাবে তুলে দিলেন যাতে ঐ হানাদার রা এ জনমানুষকে 'খুন করতে পারে' 'ধর্ষন করতে পারে'। এটাই আমি বলতে চেয়েছি।
পাকিরা নির্বাচনের রেজাল্টের পর থেকে টালবাহানা শুরু করেছিল এবং চুড়ান্ত পর্যায়ে ইয়াহিয়া এসেও ব্যর্থ হয়ে ফিরে গিয়েছিলেন এবং এসবের কারন পাকি ভুট্টো ইয়াহিয়া অর্থাৎ পাকিদের দম্ভসম মানুষিকতা ।
যে আমার ন্যার্য্য পাওনা বুঝিয়ে দিবেনা তার সাথে কেউ কী থাকে,এজন্য বাঙ্গালী নেতাদের সেপারেশনের যৌক্তিকতা শতগুন বৃদ্ধি যা ৭ই মার্চের ভাষনে ওঠে আসে।
নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা না দিয়ে দমন পীড়ন ও মার্শাল ল এর দিকে পাকিরা অগ্রসর হচ্ছিল,এতোটা জ্বী হুজুরের জাতি বাঙ্গালীরা নয়!
কষ্ট করে মুজিব কে নিয়ে লিখার জন্য ধন্যবাদ। তবে, আপনার লিখায় তথ্য উপাত্তের চাইতে বিশ্লেষণ অনেক বেশী।
বিশ্লেষণ, লিখকের একান্ত ধারনা আর অভিজ্ঞতা কে তুলে ধরে। আশা করি, পেচাল না করে তারেক জিয়ার মত কিছু ঐতিহাসিক
তথ্য তুলে ধরবেন।
মানুষ এখন আর ৭ই মার্চের ভাষণ খায় না।
"তারেক জিয়া কেন বুঝেন না, ২৬ মার্চ চট্রগ্রামে আর্মি ক্র্যাকডাউনের আগে জনগন মেজর জিয়াকে কখনও চিনতেন না, জানতেন না । "
এই রকম মন্তব্য করতেই পারেন। আপনি। কিন্তু, এই অজানা লোকটি পাকিস্তানের সরকারি আমলা হয়ে ক্র্যাকডাউন করলেন, তখন জাতিও নেতা মুজিব কি করলেন ???
পাকিস্তানের জেলে বইসা আপনারে কল করলেন আর আপনাকে বললেন--"কারন লুকিয়ে থাকা নেতার চাইতে এ্যারেষ্ট হয়ে শত্রু পক্ষের হাতে থাকলে কর্মীদের ত্যাগী ম্যান্টালিটি অনেকগুন বেশী চাঙ্গা থাকে।"
তাই আমি পাকিস্তানের জেলে ভর্তি হয়ে গেলাম। দেশ স্বাধীন হলে আমি আবার আসব। অকে। বাই...
বর্তমান বালের পররাষ্ট্র নীতি দেখলে/// কোন দেশ প্রেমিক যুবক যদি আওয়ামীলীগের পক্ষে একটি কোথাও বলে, তারে দালাল ছাড়া কিছু মনে হয় না। আর তাগও ইতিহাস
বাপ চাচা থাইকা হুইনা লইছি...কারন পাথ-পুস্তক তো মেইড ইন ইন্ডিয়া।
তারেক জিয়ার বক্তব্যটি বিচার বিবেচনা ছাড়া স্ট্রেইটলি শুনলে খুব বেশী ভুল বলে মনে হবে না । তবে একটু অতিরিক্ত সরলীকরন ও সাদামাটা টাইপের । উনার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে অনেক প্রশ্নের উদ্রেক করবে, আমরা জানি, ৩রা নভেম্বর ছাত্র নেতারা স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছেন, জাতীয় সংগীত গেয়েছেন এবং স্বাধীনতার ঘোষনাপত্র পাঠ করেছেন । কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে মেজর জিয়ার পূর্বে চট্রগ্রাম আওয়ামীলীগ নেতা হান্নান সাহেবও স্বাধীনতার ঘোষনা পত্র পাঠ করেছেন । কেউ যদি ঐ ছাত্রনেতাদের ও হান্নান সাহেবকে ঘোষক বলেন, তা কতটা যৌক্তিক হবে ? রাষ্ট্রের জন্মে ঐ ঘোষনাগুলির ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনস্বীকার্য্য, তবে ইতিহাসবিদরা এই ঘোষনা গুলির ঐতিহাসিক গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিলেও বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন । ছাত্রনেতারা ছাত্রদের প্রতিনিধি, হান্নান সাহেব একজন স্থানীয় নেতা এবং মেজর জিয়া একজন সামরিক অফিসার, উনারা কেউ জাতির বৈধ প্রতিনিধি নয় । একমাত্র আওয়ামীলীগ ৭০ এর নির্বাচনের মাধ্যমে জাতির প্রতিনিধিত্ব করার বৈধ স্বীকৃতি অর্জন করেছিল । তাই আমরা ছাত্র নেতাদের, হান্নান সাহেব ও মেজর জিয়াকে স্বাধীনতা ঘোষনার বৈধ দাবীদার বলতে পারি না । তাছাড়া তারেক জিয়ার কাছে জানতে চাই, মেজর জিয়া ২৭ তারিখ ঘোষনা দিলেন অথচ স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ কেন ? তারেক জিয়া স্বীকার করুক না করুক, ইতিহাস বলে বঙ্গবন্ধু যেহেতু ২৫ তারিখ রাত ১২ টার পর অর্থাৎ ২৬ তারিখ ওয়ারলেস ম্যাসেজে স্বাধীনতার বার্তাটি দেন, সেহেতু আমাদের স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ ।
তারেক জিয়া উনার আলোচনার বেশীর ভাগ জুড়ে প্রমানের চেষ্টা করেছেন আওয়ামীলীগ ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষনকে স্বাধীনতার ঘোষনা দাবী করে, যা যৌক্তিক নয় । আওয়ামীলীগ ৭ মার্চের ভাষনকে স্বাধীনতার ঘোষনা দাবী করে, এই কথাটি ঐভাবে কখনও শুনেনি । জানিনা, তারেক জিয়া এইটাকে ব্যাসিস করে কেন এই নাতিদীর্ঘ আলোচনাটি করলেন । তবে এইটা জানি, আওয়ামীলীগ সহ রাজনীতি বিশ্লেষকদের অনেকে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষনকে স্বাধীনতার ইঙ্গিত বলে মনে করেন । এমনকী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানও সাপ্তাহিক বিচিত্রায় উনার এক প্রবন্ধে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষনকে স্বাধীনতার সুষ্পষ্ট ইঙ্গিত বলেছেন, যা বাঙ্গালীদের স্বাধীনতার প্রস্তুতি গ্রহনে উদ্দীপ্ত করেছিল । অন্যদিকে, মেজর জিয়া ২৭ মার্চ স্বহস্তে লিখিত ঘোষনায় নিজেকে প্রভিন্সের হেড অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করে ঘোষনা দিলেও চার/পাঁচ ঘন্টার ব্যবধানে সংশোধন করে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে আবার স্বাধীনতার ঘোষনাটি দিলেন, ঐ রেকর্ডকৃত ঘোষনাটি পরবর্তীতে অনেকবার প্রচার করা হয় । প্রথম ঘোষনাটির বৈধতাজনক অসাড়তার কারনে দ্রুত সংশোধন করে দ্বিতীয় ঘোষনাটি দেন । শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান জীবদ্দশায় কখনো নিজেকে ঘোষক এবং প্রথম প্রেসিডেন্ট বলে দাবী করেননি, অথচ বিএনপি ৯১তে ক্ষমতাশীন হয়ে স্বাধীনতার দলিল-দস্তাবেজে পরিবর্তন আনেন অর্থাৎ শহীদ জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে উল্লেখ করেন ।
প্রশ্ন আসতে পারে, কেউ যদি হুট করে নিজেকে প্রেসিডেন্ট বলে ঘোষনা করেন, তিনি কী প্রেসিডেন্ট হয়ে যান ? তা হয় না, একমাত্র জনগনের স্বীকৃত প্রতিনিধিরা তা গঠনের বৈধতা পায় । কারন তারা জাতির স্বীকৃত প্রতিনিধি । খেয়াল করুন, মুজিবনগর সরকার যুদ্ধ পরিচালনায় কর্ণেল ওসমানীর নেতৃত্বে ১১টি সেক্টর গঠন করে যুদ্ধ পরিচালনা করেছে । আর মেজর জিয়া ঐ ১১ টি সেক্টরের মধ্যে ১টির নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাও মুজিবনগর সরকারের অনুমোদনক্রমে । মেজর জিয়া প্রেসিডেন্ট হলে এতোটা নীচে নেমে কর্ণেল ওসমানীর অধীনস্ত হয়ে ১টি সেক্টরের কমান্ডার হলেন কেন এবং স্বাধীন বাংলাদেশে প্রেসিডেন্ট সাহেব সামরিক বাহিনীর দ্বিতীয় প্রধানের চাকুরীইবা করতে গেলেন কেন ? যাহোক, এতোটা জটিল না করে আরো হালকা ভাবে বলি, ধরুন বঙ্গবন্ধু বা প্রেসিডেন্ট জিয়া হত্যার পরপর কেউ একজন স্বপ্রণোদিত হয়ে ঘোষনা দিলেন- আমি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট, তখন আমরা কী বলবো ঐ স্বঘোষিত ব্যাক্তিটি দেশের প্রেসিডেন্ট হয়ে গেছেন ? এভাবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ থাকলে দেখা যেত যে কেউ রেডিও বা টিভি স্টেশন দখল করে নিজেকে প্রেসিডেন্ট বানিয়ে ফেলতেন । দরকার কী ভোটাভোটি শপথ-টপথের ঝামেলা করা । আর বর্তমানে অসংখ্য বেসরকারী টিভি রেডিওর বদৌলতে প্রেসিডেন্ট হওয়াটা অনেক সহজ হতো ।
বিষয়টা পরিস্কার করার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতের একটি মামলার কথাও বলতে পারি, কসোভোর স্বাধীনতার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সার্বিয়া আন্তর্জাতিক আদালতের স্মরনাপন্ন হন । অনেক যুক্তিতর্কের পর আদালত সিদ্ধান্ত দেন কসোভোর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যেহেতু স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে স্বাধীন করেছেন, তাই কসোভোর স্বাধীনতা বৈধ । এখানে বৈধতার স্বীকৃতি হচ্ছে কসোভোর জনগনের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যেহেতু সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন ।
মেজর জিয়াসহ অন্যান্যদের ঘোষনার ঐতিহাসিক গুরুত্ব থাকলেও বৈধতা নাই। নির্বাচিত প্রতিনিধির স্বীকৃতি আওয়ামীলীগ তথা বঙ্গবন্ধুর।
ধন্যবাদ আপনাকে।
পাকিদের আত্মসমর্পণের সময় মুজিব কাকু উপস্থিত ছিলো !!!!! (ভাস্কর্যটা মেহেরপুরের মুজিবনগরে আছে)
আর কি ইতিহাস শিখাইবেন আমগরে...কইন তো ?? জয় বাংলা, লুঙ্গি সামলা।
আপনার ইতিহাস চর্চায় লুঙ্গি আসলো কেন!!
তবু থ্যান্কস্ আপনাকে।।
বিএনপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জনাব তারেক রহমান কর্তৃক ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারী শেখ মুজিবুর রহমান এর প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহনকে অবৈধ দাবী করে দেয়া যৌক্তিক বক্তব্যের প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রথম আলোর সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান যথারীতি স্ববিরোধী যুক্তি উপস্থাপন করে সরল মানুষকে গরল হলাহল পান করানোর মত একটি নিবন্ধ লিখেছেন গত ২২ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে।
নিবন্ধের শুরুতেই তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা শারমিন আহমদ এর সাম্প্রতিক বইয়ের দু’টি লাইনের রেফারেন্স দিয়েছেন (মুজিব কাকুর পাশেই আনন্দ-উদ্বেলিত আব্বু দাঁড়িয়ে রয়েছেন। হঠাৎ মুজিব কাকু আব্বুর কানের কাছে মুখ নামিয়ে বললেন, ‘তাজউদ্দীন, আমি কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হব।)। মাত্র দু’টি লাইন দিয়ে শারমিন আহমেদের বক্তব্য বোঝা মুশকিল বলে এখানে ঐ বই থেকে আরো কিছু অংশ তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছি। শারমিন আহমেদ তার বইতে লিখেছেন-
“পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৫ মার্চের ভয়াল কালো রাতে আব্বু গেলেন মুজিব কাকুকে নিতে। মুজিব কাকু আব্বুর সঙ্গে আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করবেন সেই ব্যাপারে আব্বু মুজিব কাকুর সাথে আলোচনা করেছিলেন। মুজিব কাকু সে ব্যাপারে সম্মতিও দিয়েছিলেন। সেই অনুযায়ী আত্মগোপনের জন্য পুরান ঢাকায় একটি বাসাও ঠিক করে রাখা হয়েছিল। বড় কোনো সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আব্বুর উপদেশ গ্রহণে মুজিব কাকু এর আগে দ্বিধা করেননি। আব্বুর, সে কারণে বিশ্বাস ছিল যে, ইতিহাসের এই যুগসন্ধিক্ষণে মুজিব কাকু কথা রাখবেন। মুজিব কাকু, আব্বুর সাথেই যাবেন অথচ শেষ মুহূর্তে মুজিব কাকু অনড় রয়ে গেলেন। তিনি আব্বুকে বললেন, ‘বাড়ি গিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে থাকো, পরশুদিন (২৭ মার্চ) হরতাল ডেকেছি’। মুজিব কাকুর তাৎক্ষণিক এই উক্তিতে আব্বু বিস্ময় ও বেদনায় বিমূঢ় হয়ে পড়লেন। এদিকে বেগম মুজিব ঐ শোবার ঘরেই সুটকেসে মুজিব কাকুর জামাকাপড় ভাঁজ করে রাখতে শুরু করলেন। ঢোলা পায়জামায় ফিতা ভরলেন।
পাকিস্তানি সেনার হাতে মুজিব কাকুর স্বেচ্ছাবন্দি হওয়ার এইসব প্রস্তুতি দেখার পরও আব্বু হাল না ছেড়ে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বিভিন্ন ঐতিহাসিক উদাহরণ টেনে মুজিব কাকুকে বোঝাবার চেষ্টা করলেন। তিনি কিংবদন্তি সমতুল্য বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উদাহরণ তুলে ধরলেন, যাঁরা আত্মগোপন করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন। কিন্তু মুজিব কাকু তাঁর এই সিদ্ধান্তে অনড় হয়ে রইলেন। আব্বু বললেন যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মূল লক্ষ্য হলো পূর্ব বাংলাকে সম্পূর্ণ রূপেই নেতৃত্ব-শূন্য করে দেওয়া। এই অবস্থায় মুজিব কাকুর ধরা দেওয়ার অর্থ হলো আত্মহত্যার শামিল।
তিনি বললেন, ‘মুজিব ভাই, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হলেন আপনি। আপনার নেতৃত্বের ওপরই তারা সম্পূর্ণ ভরসা করে রয়েছে’। মুজিব কাকু বললেন, ‘তোমরা যা করবার কর। আমি কোথাও যাব না’। আব্বু বললেন, ‘আপনার অবর্তমানে দ্বিতীয় কে নেতৃত্ব দেবে এমন ঘোষণা তো আপনি দিয়ে যাননি। নেতার অনুপস্থিতিতে দ্বিতীয় ব্যক্তি কে হবে, দলকে তো তা জানানো হয়নি। ফলে দ্বিতীয় কারো নেতৃত্ব প্রদান দুরূহ হবে এবং মুক্তিযুদ্ধকে এক অনিশ্চিত ও জটিল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেওয়া হবে’। আব্বুর সেদিনের এই উক্তিটি ছিল এক নির্মম সত্য ভবিষ্যদ্বাণী।
পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী আব্বু স্বাধীনতার ঘোষণা লিখে নিয়ে এসেছিলেন এবং টেপ রেকর্ডারও নিয়ে এসেছিলেন। টেপে বিবৃতি দিতে বা স্বাধীনতার ঘোষণায় স্বাক্ষর প্রদানে মুজিব কাকু অস্বীকৃতি জানান। কথা ছিল যে, মুজিব কাকুর স্বাক্ষরকৃত স্বাধীনতার ঘোষণা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে (বর্তমানে শেরাটন) অবস্থিত বিদেশি সাংবাদিকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে এবং তাঁরা আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে স্বাধীনতাযুদ্ধ পরিচালনা করবেন।
আব্বু বলেছিলেন, ‘মুজিব ভাই, এটা আপনাকে বলে যেতেই হবে, কারণ কালকে কী হবে, আমাদের সবাইকে যদি গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়, তাহলে কেউ জানবে না, কী তাদের করতে হবে। এই ঘোষণা কোনো-না- কোনো জায়গা থেকে কপি করে আমরা জানাব। যদি বেতার মারফত কিছু করা যায়, তাহলে সেটাই করা হবে’। মুজিব কাকু তখন উত্তর দিয়েছিলেন, ‘এটা আমার বিরুদ্ধে দলিল হয়ে থাকবে। এর জন্য পাকিস্তানিরা আমাকে দেশদ্রোহের জন্য বিচার করতে পারবে’। [শারমিন আহমেদ, ‘তাজউদ্দীন আহমদ : নেতা ও পিতা’। পৃষ্ঠা ৫৯]
তাহলে দেখা যাচ্ছে মিজানুর রহমান খান সাহেব যে বইটির রেফারেন্স দিয়ে তার লেখা শুরু করেছেন, সেই বইটিতেই স্বাধীনতার ঘোষনা দেয়া ও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়া বিষয়ে শেখ মুজিবের অনাগ্রহের প্রমান রয়েছে। শুধু তাই নয়, তিনি যে স্বেচ্ছায় পাকিস্তানীদের কাছে আত্মসমর্পন করার জন্য কাপড়-চোপড় গোছগাছ করে রেখেছিলেন, তার প্রমানও ঐ বইটি বহন করছে!
এরপর আমাদের জানা প্রয়োজন যুদ্ধের নয় মাস শেখ মুজিব পাকিস্তানে কী ভাবে ছিলেন, কী করেছেন। যাঁকে রাষ্ট্রীয়ভাবে আইন করে ‘জাতির জনক’ ঘোষনা করা হয়েছে, যুদ্ধের ৯ মাস ‘শেখ মুজিব পাকিস্তানে বন্দী ছিলেন’ বললেই বাংলাদেশের নাগরিকদের সেই ‘জাতির জনক’-কে জানা ও বোঝার উৎসুকতা সম্পূর্ণ পরিতৃপ্ত হয় না। অনাগত ভবিষ্যতের সব শিশু জানতে চাইবে, তিনি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে বিদেশি পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী ছিলেন? নাকি, তিনি পাকিস্তানের নাগরিক হিসেবে স্বদেশি পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী ছিলেন?
প্রথমে দেখি ও বিশ্লেষণ করি আওয়ামী ঘরানার লেখক মঈদুল হাসান তার ‘মূলধারা :’৭১’ বইতে কী লিখেছেন-
৩রা আগস্টে ইয়াহিয়া খান যখন ঘোষণা করে যে দেশদ্রোহিতার অপরাধে শীঘ্রই শেখ মুজিবের বিচার ও উপযুক্ত শাস্তি বিধান করা হবে [পৃ:২০৭]।
৫ই আগস্টে সামরিক জান্তার যে তথাকথিত ‘শ্বেতপত্র’ প্রকাশিত হয়, তাতে ‘সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে বিদ্রোহ সংঘটনের মাধ্যমে’ পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা অর্জনের জন্য আওয়ামী লীগের ‘ষড়যন্ত্রের’ আয়োজন সবিস্তারে উল্লেখ করা হয় [পৃ:২০৮]।
৭ই আগস্টে আওয়ামী লীগের যে ৭৯-জনের নাম জাতীয় পরিষদের সদস্যপদ থেকে বাতিল করা হয়, তাদের মধ্যে শেখ মুজিবের নাম অন্তর্ভূক্ত ছিল [পৃ:২০৯]।
৯ই আগষ্ট মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে ‘দ্রুত ব্যবস্থা’ (summary action) গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য পাকিস্তানকে সতর্ক করে দেয় [পৃ:২১১]। ফলে পূর্ববর্তী ঘোষণা অনুযায়ী ১১ই আগস্টে লায়ালপুরে বিশেষ সামরিক আদালতে রুদ্ধদ্বার বিচার শুরু হলেও ঐ দিনই তা মুলতবী ঘোষণা করা হয়।
৭ই সেপ্টেম্বর যখন পুনরায় বিচার শুরু হয়, তখন শেখ মুজিবের পক্ষ সমর্থনের জন্য এ, কে, ব্রোহী এবং তাঁর তিন জন সহকারী আইনজীবীকে নিযুক্ত থাকতে দেখা যায় [পৃ:২১২]।
২রা অক্টোবরে পাকিস্তানের সামরিক আদালত শেখ মুজিবকে ‘অপরাধী’ সাব্যস্ত করে ‘মৃত্যুদণ্ডের সুপারিশ’ করেছে বলে একটি কূটনৈতিক সূত্রে প্রকাশ পায়; অবশ্য একই সূত্র থেকে বলা হয় যে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রবর্গকে এই নিশ্চয়তাও দেওয়া হয়েছে যে সামরিক আদালতের এই রায় কার্যকর করা থেকে তারা বিরত থাকবে [পৃ:২১৩]।
এই তথ্যের পরোক্ষ সমর্থন পাওয়া যায় ১০ই অক্টোবরে, যখন জাতীয় পরিষদের সদস্যপদ থেকে বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগপন্থীদের পূর্ববর্তী তালিকা ঈষৎ পরিবর্তিতভাবে প্রকাশিত হয়। এই তালিকা থেকে শেখ মুজিবের নাম বাদ পড়ে [পৃ:২১৪]। অর্থাৎ ‘মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত’ শেখ মুজিব তার নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ আসনে কার্যত: পুনর্বহাল হন। লক্ষ্য করুন, সৈয়দ নজরুল ইসলাম-তাজউদ্দীন আহমেদ প্রমুখরা যখন পাকিস্তানি শাসকদের দৃষ্টিতে ‘পলাতক আসামী’ তখন শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের সম্মানিত জাতীয় পরিষদ সদস্য হিসেবে পুন:বিবেচিত! বিষয়টি যথেষ্ট পরিমাণে কৌতুহল উদ্দীপক!
অক্টোবরের শেষে ‘নিউজ উইক’ পত্রিকার প্রতিনিধির কাছে ইয়াহিয়া খান ঘোষণা করেন, শেখ মুজিবকে তিনি খেয়ালখুশী মত ছেড়ে দিতে অসমর্থ হলেও, ‘জাতি যদি তার মুক্তি চায়’ তবে ইয়াহিয়া তা পূরণ করবেন [পৃ:২১৫]। পরবর্তীতে কিসিঞ্জারের বিবরণ থেকেও দেখা যায়, ৩রা নভেম্বরে পাকিস্তানী রাষ্ট্রদূত কিসিঞ্জারকে অবহিত করেন, ‘ইয়াহিয়া শেখ মুজিবের মনোনীত কোন প্রতিনিধির সাথে আলোচনা করার বিষয়ে বিবেচনা করতে রাজী আছে’ [পৃ:২১৬]।
এখানে লক্ষ্য করার বিষয় মঈদুল হাসান শেখ মুজিবের কোন বক্তব্য সরাসরি উল্লেখ করেননি। আদালত বা জেলখানায় বন্দী শেখ মুজিব কী বলেছিলেন এ বিষয়ে আমরা কিছু জানতে পারছি না। রাজনৈতিক বন্দীরা আদালত বা জেলখানায় নানা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেন। আমাদের দেশে মাষ্টারদা সূর্যসেন থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময়ে মজলুম সাংবাদিক মাহামুদুর রহমান পর্যন্ত বহু রাজনৈতিক নেতার বন্দী জীবনের কথা নানা বইয়ে পাওয়া যায়।
কেবলমাত্র আওয়ামী লীগ নেতা মোনায়েম সরকার সম্পাদিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : জীবন ও রাজনীতি’ বইতে বিচার চলাকালিন কিছু বক্তব্য পাওয়া যায়-
....সপ্তম দিনের বিচারকার্য আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ার ঠিক আগে উকিল এগিয়ে এসে মুজিবের কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন, “আপনি কি নিজের পক্ষে কোনোই অবস্থান নেবেন না?”
‘না’-ছিল শেখ মুজিবের অনুচ্চ কিন্তু দৃঢ় উত্তর। উকিল বললেন, “আমার কাজ জটিল করে তুলছেন আপনি”। বঙ্গবন্ধু বললেন, “তা জানি। তবে আমি কি করতে পারি? আমি নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। আমাকে অথবা আমার জনগণকে বিচার করার কোনো অধিকার এদের নেই। আইনের দিক দিয়ে কোনো বৈধতা এই আদালতের নেই” [পৃ:৫৩৬]।
তাহলে ১৯৭১ সালে সেপ্টেম্বর মাসে শেখ মুজিব নিজেকে ‘নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী’ দাবি করেছিলেন! প্রশ্ন হচ্ছে ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শেখ মুজিব নিজেকে ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’ এর নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বলে দাবি করেছিলেন? নাকি ‘পাকিস্তান’ এর নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বলে দাবি করেছিলেন? শেখ মুজিব কোন দিন থেকে পাকিস্তানের নাগরিকতা পরিত্যাগ করেছিলেন? এ প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব মিজানুর রহমান খানের দেয়া উচিত।
মিজানুর রহমান খানের নিবন্ধটি স্ববিরোধী একারণে যে, এই নিবন্ধে তিনি নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন শেখ মুজিবুর রহমানের প্রধানমন্ত্রীত্বের বৈধ্যতা নিয়ে এক ধরণের বিতর্ক সব সময়ই ছিলো এবং সেটার মীমাংসা হয়েছিলো আদালতে। প্রশাসনিক নিয়ম ও বিধি মেনে না চলা শেখ মুজিবুর রহমান ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তায় এবং রাজনৈতিক পদবীর বলে অনেক স্বেচ্ছাচারী কাজই করেছেন। আর সেসব কাজের বৈধ্যতা দিতে আইনের শব্দ বাক্যের ফাঁক-ফোকর খুঁজতে জেরবার হতে হয়েছে দুঁদে উকিলদের। একটি পুরাঘটিত অতীত, যার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীরা এখনো জীবিত, তার সত্যতা বিলোপ করে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করতে যে আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়েছিলো, এই বিষয়টা স্বীকার করার জন্য মিজানুর রহমান খান অবশ্যই ধন্যবাদ পেতে পারেন।
মিজানুর রহমান খানের আশ্চর্যজনক স্ববিরোধিতার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে, তিনি সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীকে অবৈধ মনে করেন অথচ স্বাধীনতার ঘোষনাপত্রে বর্নিত বিধানের বিপরীতে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক গোটা সরকার পদ্ধতিই বদলে দেওয়ার মতো সাংবিধানিক বিধান তৈরির মত অসামঞ্জস্যকে তার নিবন্ধে সমর্থন করছেন। স্বাধীনতার সনদের এই লঙ্ঘনকে সমর্থন করলে তিনি কেন ঐ সনদে রেট্রোস্পেক্টিভ ইফেক্টে রাষ্ট্রপতি নিয়োগের বিষয়কে সমর্থন করছেন? আইন কী এতই খেলো বিষয় যে সেটিকে তিনি যখন যেভাবে খুশি সেভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
মিজানুর রহমান খান শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষমতাগ্রহনের অবৈধ্যতাকে ডক্ট্রিন অফ নেসেসিটি দিয়ে বৈধ্য বলে মেনে নেন, অথচ ডক্ট্রিন ওফ নেসিসিটি তত্ত্ব দিয়ে জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের শাসনক্ষমতা গ্রহনকে মানতে তার বেজায় আপত্তি! অথচ বাস্তবতা হচ্ছে-
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম সামরিক আইন জারী করা হয় ১৯৭৫ সালের ৬ নভেম্বর। সেই সময় উপ সামরিক আইন প্রশাসক ও সেনা প্রধান ছিলেন খালেদ মোশারফ এবং রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে সামরিক আইন জারী করেছিলেন শেখ মুজিবেরই নিয়োগকৃত প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম। জিয়াউর রহমান তখন গৃহবন্দি।
যে আদালতের রেফারেন্স মিজানুর রহমান খান সাহেব বারবার দিয়ে বিভিন্ন অবৈধতাকে বৈধ এবং বৈধতাকে অবৈধ প্রমানের চেষ্টা করেন সেই আদালত কখনোই ১৯৭১ এ গণহত্যার বিরুদ্ধে কোন রূল জারি করতে পারে নাই। বাংলাদেশের স্বাধীনতা কোন আদালতের আদেশে আসে নাই। এমন কী ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষনাপত্র এবং ১৭ এপ্রিল প্রবাসী সরকারগঠন কখনোই সম্ভব হতো না যদি না জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের মত সৈনিকরা আদালত-সংবিধান এসবের দিকে তাঁকিয়ে থেকে অস্ত্র হাতে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু না করতেন, নিজ দায়িত্বে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে স্বাধীনতা ঘোষনা না করতেন এবং যুদ্ধ করে দেশের বিরাট একটি অংশ দখল করে না রাখতেন।
এবার একটি সত্য ইতিহাস জানুন। জিয়াউর রহমান বীর উত্তম যেমন বাংলাদেশের জন্মের সময় তাঁর দায়িত্বটা পালন করেছিলেন, ঠিক তেমনি বাংলাদেশের জন্মের পরও আরেকবার এই দেশকে পাকিস্তানের সাথে কনফেডারেশন করার ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করেছিলেন। ১৯৭৬ সালের ৭ মার্চ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মুসলিম লীগ এবং তৎকালীন নিষিদ্ধ জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ এয়ার ভাইস মার্শাল তোয়াবের নেতৃত্বে একটা ইসলামী মাহফিল কাম জনসভা হয়েছিলো; ৮ মার্চ ১৯৭৬-এর ইত্তেফাকে সেই সভার রিপোর্ট পাওয়া যাবে। সেই সভায় বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানের সাথে কনফেডারেশনে যোগ দেবার দাবি উঠেছিলো! দাবী উত্থাপনকারীদের পেছনে ছিলো মধ্যপ্রাচ্যসহ ওআইসির সমর্থন। আওয়ামী লীগ তখন এই ঔদ্ধত্য প্রতিরোধে এগিয়ে আসে নাই, কোন আদালত এই রাষ্ট্রদ্রোহিতার বিরুদ্ধে রূল জারি করে নাই। পাকিস্তানপন্থীদের সেই তীব্র চাপের সময়, যখন দেশ রক্ষায় কাউকে পাওয়া যায় নাই, সেই টালমাটাল সময়ে পাকিস্তানপন্থীদের কঠোরভাবে দমন করেছিলেন জিয়াউর রহমান বীর উত্তম। তোয়াবকে জার্মানীতে ফেরত পাঠিয়ে অন্যদের গোয়েন্দা নজরদারীতে এনে পরিস্থিতি ঠাণ্ডা করেছিলেন! জ্বি হ্যাঁ, জিয়াউর রহমানই সেই ব্যক্তি যাঁর কারণে বাংলাদেশ আবারো পাকিস্তান হয়ে যায় নাই।
মিজানুর রহমান সাহেব, সংবিধান বা আদালত নয়; ইতিহাস কথা কয়!
মন্তব্য করতে লগইন করুন