বিবেক যখন রাজনীতির দাস।।
লিখেছেন লিখেছেন মহি১১মাসুম ১৪ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৫:২৬:১৩ বিকাল
মায়ের কোলে আতংকিত শিশুটিকে দেখে অথবা কনকনে শীতের রাতে পনর দিনের বাচ্চাকে পানির উপর তুলে ধরে মা নদী সাঁতরিয়ে এপার থেকে ওপারে যাচ্ছে । এ যেন মনুষ্যরূপী হায়েনাদের জিওগ্রাফী চ্যানেলের প্রতিচ্ছবি, জিওগ্রাফী চ্যানেলে যেমনি দেখা যায় শক্তিশালী হিংস্র জানোয়ারের হাত থেকে নীরিহ প্রানীটি আত্মরক্ষার জন্য মরিয়া হয়ে ঝোপ-ঝাড় পাড়ি দিয়ে খাল-বিল নদী-নালা সাঁতরিয়ে বাঁচতে চায় । যশোরের মালোপাড়ার অভয়নগর তার চেয়ে ব্যতিক্রম কী ! ভাবতে কষ্ট হয়, একি মানুষের উপর মানুষের আক্রমন নাকী মানুষের উপর মনুষ্যরূপী দানবদের আস্ফালন ।
এই দৃশ্য কী স্বাধীন বাংলাদেশ দেখার কথা ছিল ? মুক্তিকামী বীর বাঙ্গালীরা এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনার ধর্ম নিরপেক্ষ বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটিয়েছিল । সেই বাংলাদেশের রক্তখচিত পতাকায় এখনো কেন সাম্প্রদায়িকতার রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে ? এতে কী গৌরবোজ্জল স্বাধীনতা, স্বাধীনতার চেতনা ও স্বাধীনতার প্রতীক জাতীয় পতাকা অপমানিত হয় না, এতে কী আমার আপনার বিবেককে পীড়া দেয় না ?
সরকারে অধীষ্ট আওয়ামীলীগ ও রাষ্ট্রযন্ত্রের নিরাপত্তা বাহিনী রহস্যজনক ভাবে নীরবতা পালন করছে । অসহায় মানুষগুলোর ভোট ও সম্পদই যেন ওদের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে । ভোট ও সম্পদ দখলের নামে যে রাজনীতি চলছে, এতে বিবেক, নীতি- নৈতিকতা ও মূল্যবোধের কোন স্থান নেই, আমরা পরিণত হয়েছি বিবেকহীন রাজনীতির দাসে ।
৭১, এ স্বাধীনতা অর্জনের সময়ে, ৭৫ এ বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী সময়ে, এবং প্রতিটি নির্বাচনের আগে-পরে, তাছাড়া গুজরাট, বাবরী মসজিদ, যুদ্ধাপরাধীদের রায় পরবর্তী সময়ে হিন্দু ধর্মালম্বীরা আক্রান্ত হয়েছে । এই ঘৃণ্য হামলাগুলোর কারন বহুবিধ, এর মধ্যে রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক ও মনস্তাত্ত্বিক কারন ছাড়াও ভোট ও সম্পত্তি দখলও অন্যতম কারন বলে সর্বজন স্বীকৃত । তবে বেশীর ভাগ আক্রমনই ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দলের ঘৃণ্য রাজনীতির ফসল, যা সম্পূর্ণ রূপে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের চেতনা পরিপন্থী । শুধু যে জামাত-শিবির ও বিএনপি দ্বারা সংগঠিত হয়, তা নয় । অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির বুলি আওড়ানো আওয়ামীলীগ নেতারাও অনেক ক্ষেত্রে হিন্দু ধর্মালম্বীদের সম্পদ দখলের লোভে হিন্দুদের আক্রমন করে । এই জন্যই একটি কথা প্রচলিত আছে-সংখ্যালঘুরা দেশে থাকলে ভোট পাব এবং চলে গেলে সম্পদ পাব ।
প্রতিবারই আক্রমন পরবর্তী সময়ে সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে । কিন্তু চূড়ান্ত পর্যায়ে ঘৃণ্য পাপীষ্ট হামলাকারী দুর্বৃত্তরা আইনী শাস্তির মুখোমুখি হতে হয় না । যা হয়, তা হয় নোংরা রাজনীতির কাঁদা ছোড়াছুড়ি এবং এভাবে কিছুদিন চলার পর আমরা ভুলে যাই সবই ।
কিন্তু আক্রমনের শিকার হওয়া সংখ্যালঘু মানুষটি কী ভুলতে পারে তার হৃদয়ে সৃষ্ট হওয়া গভীর ক্ষতের স্মৃতি । প্রাপ্ত বয়স্ক সংখ্যালঘু মানুষদের কথা বাদই দিন, আমরা জানি এবং বিশ্বাস করি,আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যত । তাহলে আমরা আমাদের আগামীর ভবিষ্যতদের কী ধরনের অভিজ্ঞতা দিয়ে তৈরী করছি । আগামীর বাংলাদেশ হবে যে শিশুটি, সে যখন দেখে সকাল-দুপুরের খেলার সাথীদের বাবা-চাচারা তাদের সবার উপর সংঘবদ্ধভাবে হামলে পড়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মেরে-ধরে তাড়িয়ে দিচ্ছে । তার সামনে তার বাবাকে বেদড়ক পেটাচ্ছে, মাকে লাঞ্ছিত করছে এবং অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করছে । এই শিশু এসব নোংরামীর কার্যকারন না বুঝলেও এতটুকু বুঝতে সক্ষম- মুসলমান আংকেলরা তাদের হিন্দু পাড়ার সবাইকে মারছে । এই শিশুর মনে মুসলিম সমাজ ও ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কী ধরনের ধারনা তৈরী হবে তা সহজে অনুমেয় । ইসলাম ধর্মকে- শান্তির ধর্ম, সাম্য ও সংহতির ধর্ম বললে, ঐ শিশুদের মধ্যে কী ঘৃণা ও বিদ্রুপের উদ্রেক করবে না ! এই হিন্দু শিশুদের কাছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জাতীয়তাবাদী আচরন প্রত্যাশা করা কতটা ন্যায় সঙ্গত হবে ?
ইসলামের দৃষ্টিতে 'সংখ্যালঘুগণে'র সমান সুযোগ-সুবিধা লাভ ও দায়িত্বপালনের অধিকার রয়েছে । ধর্ম পালনে 'ইসলাম' প্রত্যেক নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয় । মহান আল্লাহ্ বলেন "ধর্মের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি নেই" (বাকারা:২৫৬) । অন্যদিকে বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর সুস্পষ্ট ঘোষণা "যে লোক অমুসলিম নাগরিককে কোনরূপ কষ্ট দেবে, আমি নিজেই কিয়ামতের দিন তার বিপক্ষে দাঁড়াবো" (জামে' সাগীর: ২য় খঃ পৃঃ৪৭৩) । এছাড়াও রাসুলে করিম হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) অন্যত্র বলেছিলেন, "যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মানুষ নিরাপদ সেই সত্যিকারের মুসলমান"।
তাহলে আজকে যারা ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতির নামে এই হীন কৃতকর্ম করছেন, তার সাথে ইসলাম ধর্মের ন্যূনতম সম্মতি বা স্বীকৃতি যে নাই, তা উপরোল্লিখিত ধর্মের বাণীগুলো থেকে স্পষ্ট ।
এই ধরনের নোংরা ও বর্বর কর্মকান্ডের সাথে জড়িতরা রাজনীতির নামে শুধু যে ধর্মকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্য করছেন তা নয়, স্বাধীনতার চেতনাকেও ভূলন্ঠিত করছেন ।
আসুন, রাষ্ট্রের স্বাধীনতার চেতনাকে হৃদয়াঙ্গম করে আমার আপনার সম্প্রদায় ভূক্ত ধর্মালম্বীর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু ধর্মালম্বীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে পাশে দাঁড়িয়ে সাহস ও শক্তি যোগাই, এর পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, সম্পদ দখলের রাজনীতির বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলি এবং এযাবত সংগঠিত প্রতিটি সাম্প্রদায়িক হামলার বিচার বিভাগীয় তদন্ত সাপেক্ষে দোষী ব্যক্তিদের সনাক্ত করে শাস্তি নিশ্চিত করি ।
বিষয়: রাজনীতি
৩২৬৬ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তাহলে স্বাধীনতার চেতনা ও ইসলাম ধর্মের মূল্যবোধ কী রাজনৈতিক দলগুলির শুধু রাজনৈতিক বক্তৃতাতেই সীমাবদ্ধ, যা ওনারা অন্তরে ধারন করেন না। না হয় এর শেষ হয়না কেন?
ধন্যবাদ ।
অবশ্য-অবশ্যই আপনার সাথে মতামত বিনিময় করব।
অবশ্যই আপনার সাথে সহমত পোষণ করছি। তবে সাতক্ষীরাতে জামাতশিবির দমনের নামে আওয়ামী সরকার যা' করেছে সে ব্যপারেও কিছু বলুন। পত্রিকান্তরে প্রকাশ সাতক্ষীরাতে বিরোধী দমনের জন্য ভিনদেশী সেনাবাহিনীর সাহায্য নেওয়া হয়েছে এবং তারা যা' করেছে তা' কতটুকুন যুক্তিগ্রাহ্য হয়েছে তা' প্রশ্নের দাবী রাখে। ধন্যবাদ।
আপনি যেই বিষয়টার প্রতি আমার দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন,বিষয়টা অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর । প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত ছাড়া এ ধরনের বিষয়ে লিখাটা ঠিক মনে করছিনা। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়,যেখানে আমাদের পুলিশ বিজিবি র্যাব ও আর্মি সরকারের নির্দেশ পালনে শতভাগ অনুকূলে,সেখানে সরকার কেন বিদেশী সামরিক শক্তি ব্যবহার করবে।
আমার ছাত্রকালীন সময়ে দেখেছি একটি রাজনৈতিক দলের ক্যাডার(ছাত্রনেতা -হল পর্যায়ের)পুলিশের পোষাক পড়ে বড় হেলমেটে মুখ ঢেকে পুলিশের সাথে হল রেইড করছে। পরে জেনেছি দলীয় সরকারের অধীন পুলিশকে প্রধান দুটি দল কমবেশী এভাবে ব্যবহার করে। কিন্তু তাই বলে বিদেশী সামরিক শক্তি ব্যবহার করবে!আর তা করলে দেশীয় সামরিক শক্তি প্রতিবাদী হওয়ার কথা নয় কী ? তারপরও সত্য অনুসন্ধানের চেষ্টা করব।
সত্যতা পেলে অবশ্য-অবশ্যই মতামত নিয়ে ব্লগে হাজির হবো।
ধন্যবাদ।।
আর ফ্যাক্সবার্তা গুলো দেখেছি,প্রযুক্তিগত ক্রাইম কিনা তা ভাববার দাবী রাখে। যেক্ষেত্রে পুলিশ বিজিবি র্যাব যৌথ বাহিনী ও আর্মি যেখানে শতভাগ অনুগত এবং ক্ষেত্র বিশেষ পুলিশ দলীয় ক্যাডারসূলভ আচরণ করছে, সেক্ষেত্রে সরকার বিদেশী বাহিনীর সদস্য ব্যবহার করতে হবে কেন? এমনিতেই সরকারীদলের ভারত সখ্যতা নিয়ে সমালোচিত। তাই আওয়ামীলীগকে বেকায়দায় ফেলতে যারা একাজটা করেছেন,তারা পক্ষান্তরে আমাদের জাতিগত সার্বভৌমত্বের চেতনাকে প্রশ্নবিদ্য করাচ্ছেন।
যাহোক,এ ধরনের ঘটনার সত্যতা যদি ৫/১০ বৎসর পরেও উদঘাটিত হয় আওয়ামীলীগকে সর্বোতভাবে সবাই মিলে পরিত্যাগ করাই উচিত।
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানবেন।
তবে যেই হোক,দল নির্মোহ চরম শাস্তি দেয়া উচিত।
কৃতজ্ঞতা জানবেন।
বিষয়টি ভাল লাগলো। ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন।
ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন