পাক বর্বরদের জাতীয় সংসদে শিষ্ঠাচার বহির্ভূত দাম্ভিকতা

লিখেছেন লিখেছেন মহি১১মাসুম ২২ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৬:৪৭:৩০ সন্ধ্যা

মুক্তিযুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচারে গঠিত ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করায় আঁতে ঘা লাগে রাজাকারদের হরিহরের আত্মা ও অস্থিমর্জায়, এটা অবশ্য জামাতের প্রতি পাক হানাদারদের কৃতজ্ঞতার নিদর্শনও বটে । বিয়াল্লিশ বছরের বিচ্ছিন্ন অবস্থানও ওদের পারষ্পরিক সম্পর্ক, চিন্তা-চেতনা, রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক ভাবনায় এতোটুকু ছেদ পরেনি, তারই বহিঃপ্রকাশ-গতকাল সোমবার পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করে ।

প্রস্তাবটিতে বলা হয়, বাংলাদেশের উচিত হবে ৪২ বছর আগের পুরোনো ক্ষতকে নতুন করে জাগিয়ে না তোলা । এতে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত সব ধরনের মামলা ‘পারস্পরিক সমঝোতা’র ভিত্তিতে প্রত্যাহার করে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয় ।

যাহোক, বাংলাদেশ যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে কলংক ও দায়মুক্তির পথে হাঁটছে ঐ সময়ে পাকিস্তান তাদের জাতীয় সংসদে আমাদের আভ্যন্তরীন বিষয়ে নিন্দা প্রস্তাব তোলার মত যে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছে, তাদের ঔদ্ধত্যের বিরুদ্ধে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠেছে বাংলার প্রতিটি স্বাধীনচেতা মানুষের হৃদয়ে, তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে সোস্যাল মিডিয়ার প্রতিটি স্তরে । পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি তাদের ক্ষত জিঁইয়ে রেখে রাজনীতি এবং বিশ্বজঙ্গীবাদের চর্চার কারনে একটি অকার্যকর ক্ষত-বিক্ষত রাষ্ট্রে পরিনত হয়েছে, সে তুলনায় বাংলাদেশ সর্বক্ষেত্রে অগ্রসরমান । তাই বলছি, পাকিস্তানের মত বর্বর ও অকার্যকর রাষ্ট্রের নিন্দা প্রস্তাবটি তাদের একাত্তরে পরাজয়ের গ্লানি ভুলতে না পারারই নামান্তর মাত্র ।

অন্যদিকে, পাকিস্তানের জাতীয় সংসদে কাদের মোল্লার প্রতি আন্তরিকতা দেখিয়ে নিন্দা প্রস্তাবটি পাসের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালের রায়ের সঠিকতাকে বাড়িয়ে দিয়েছে । ট্রাইব্যুনালে কাদের মোল্লার বিচার চলাকালিন সময়ে জামাত বিতর্ক তুলেছিল এই কাদের মোল্লা সেই রাজাকার কাদের মোল্লা নয় । কিন্তু পাকিস্থানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিসার আলীর বক্তব্যে জামাত এখন কোথায় মুখ লুকাবেন !

মোটকথা, একাত্তরের ব্যর্থতা ও পরাজয়ের অন্তরজ্বালা পাকিস্তান ও তাদের এদেশীয় দোসর উভয়ের মধ্যে এখনও যে সুপ্ত আগ্নেয়গিরির ন্যায় জ্বলছে, তারই বহিঃপ্রকাশ কাদের মোল্লার শাস্তির পর দেশের অভ্যন্তরে জামাত-শিবিরের সহিংসতা এবং পাকিস্তান জাতীয় সংসদে নিন্দা প্রস্তাব পাসের বিষয়টি ।

পাকিস্তান আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম আত্ম-মর্যাদায় আঘাত হানার মত ঔদ্ধত্য প্রকাশের পরও বিএনপির নীরবতা বিএনপিকে কোথায় দাঁড় করাবে, তা বিএনপি নেতৃত্বকেই ভাবতে হবে । তবে বিএনপির এহেন নীরবতা পরিহার না করলে বিএনপিকে মুক্তিযুদ্ধাদের দল ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বলাটা রীতিমত প্রশ্নবিদ্য হবে ।

সরকার পাকিস্তানের নিন্দনীয় ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভূমিকার জন্য তাদের কূটনীতিককে ঢেকে বাংলাদেশের তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার কথা জানিয়েছেন । জানিনা, এতে পাকিস্তানের কতটা বোধদোয় হবে । তবে, বাংলাদেশের উচিত হবে পাকিস্তান তাদের মানুসিকতার পরিবর্তন না ঘটালে, বিবৃতি দিয়ে দুঃখ প্রকাশ না করলে পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সকল কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং সচেতন নাগরিকদের উচিত হবে সকল ধরনের পাকিস্তানী পণ্য বর্জন করে নাগরিক পর্যায়ে জাতীয়তাবোধের চেতনাকে জাগ্রত করা ।

এছাড়া একাত্তরে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে ত্রিদেশীয় সিমলাচুক্তি হয়েছিল, তা কার্যকর করনে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জোরদাবী করা । একাত্তরে সিমলা চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তান তাদের দেশীয় ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে নিজ দেশে বিচার করবেন বলে ছাড়িয়ে নিয়েছিল, অথচ অদ্যবদি পাকিস্তান ওদের বিচার করেনি । এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে পাকিস্তানকে চুক্তি ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত করা । এছাড়া চু্ক্তিতে স্বাক্ষরকারী অপরদেশ ভারতকে সাথে নিয়ে জাতিসংঘের আওতায় ঐ ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে বিচারের জোরদাবী তোলা । না হয়, ঐ বর্বরগোষ্টী উচিৎ শিক্ষাও পাবে না এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরনের লাগামও টানবে না । বর্বর বর্বরই থেকে যাবে, ভদ্রতা ও রাষ্ট্রীয় শিষ্টাচার কী তা বুঝতে চাইবে না ।

সম্প্রতি ভারতের একজন কূটনীতিককে আমেরিকান বিমান বন্দরে আমেরিকান পুলিশ হ্যান্ডক্যাপ পরিয়ে হেনস্তা করেছে, আর এনিয়ে ভারত সরকার ও ভারতের প্রতিটি রাজনৈতিক দল ভেদাভেদ ভুলে রাষ্ট্রের সন্মান বাঁচাতে রাজপথে সামিল হয়েছেন । এনিয়ে ভারত সরকার শুধু জোর প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েই ক্ষান্ত হননি, ভারতের অভ্যন্তরে আমেরিকান দূতাবাসের নিরাপত্তা তুলে নিয়েছেন এবং আমেরিকান নাগরিকদের চলাচলে সতর্কতা জারী করেছেন । দুঃখ হয়, এর চাইতে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাদের দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় কার্যকর করায় পাকিস্তান সরকার নিন্দা প্রস্তাব আনে এবং মোড়ল সূলভ সমঝোতার প্রস্তাব ও অতীত ভুলে যাবার পরামর্শ দেয় । অথচ এনিয়ে আমাদের প্রধান বিরোধীদল মুখে কুলুপ এঁটে জাতীয় চেতনাকে জলাঞ্জলী দিচ্ছেন । জানিনা, কবে কীভাবে কতটা বিসর্জন গেলে আমাদের রাজনীতিকরা জাতীয় সন্মান রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হবেন !

বিষয়: রাজনীতি

১৯৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File