আত্মরক্ষায় নাগরিক প্রতিরোধ গড়ে তুলুন

লিখেছেন লিখেছেন মহি১১মাসুম ০১ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৬:২৮:৩৯ সন্ধ্যা

















আত্মরক্ষায় নাগরিক প্রতিরোধ গড়ে তুলুন ।

ন্যায় নীতি ও আদর্শ বিবর্জিত ক্ষমতালিপ্সু রাজনীতিতে নতুন উপদ্রূপ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে ভাড়াটে ক্যাডার নামক হায়েনা, এই হায়েনাদের রক্তাক্ত ছোবলে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে নাগরিক জীবন । ক্ষমতা ধরে রাখা ও ক্ষমতায় যাওয়াকে কেন্দ্র করে রাজপথের অনৈতিক উত্তালতায় হায়েনাদের ছোঁড়া পেট্রোল বোমার আগুনে পুড়ছে যানবাহন-ধনসম্পদ, মরছে মানুষ, বেড়েই চলছে লাশের মিছিল । এই লাশের মিছিলে যুক্ত হচ্ছেন কারা ? গান পাউডার আর পেট্রোল বোমার আগুনে পুড়ে দগদগে শরীরে বার্ণ ইউনিটে কাতরাচ্ছেন কারা ? এদের দোষ কী ? এদের পুড়িয়ে মেরে কী অর্জন করবো আমরা ? আর এইভাবে পুড়িয়ে মেরে যদি কিছু অর্জিতও হয়, তা কাদের ভাগ্য পরিবর্তন ঘটাবে ? যারা মরছেন, বিকলাঙ্গ হচ্ছেন, তাদের ভাগ্যোন্নয়নে কী ন্যূনতম ভূমিকা রাখবে এই পরিবর্তন ?

প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর কমবেশী সবার জানা । বার্ণ ইউনিউটের দগদগে শরীর নিয়ে অসহ্য কষ্টে কাতরানোদের সবাই অসহায় সাধারন নাগরিক, এর মধ্যে একজনও রাজনৈতিক দলের সক্রীয় নেতা-কর্মী খুঁজে পাবেন না । জীবন্ত দগ্ধ নাগরিকদের সারিতে শিশু কিশোর নারী ও নিন্মবৃত্য কর্মজীবি মানুষই বেশী । এরই মাঝে ঝরে গেছে অনেকগুলো তাজা প্রাণ । অবরোধ কর্মসূচীর দিন রক্তাক্ত আনোয়ারা বেগমের ছবি একনজরের বেশী দেখা কষ্টকর । আনোয়ারা বেগম একজন কর্মজীবি মা, ব্যাংক স্টাফদের রান্না করে পরিবারের অন্নের সংস্থান করতেন, অবরোধের দিন পেটের তাগিদে কর্মস্থলের উদ্দ্যেশে ফুটপাত ধরে হাঁটছিলেন, কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই পেট্রোল বোমার আঘাতে মাথার খুলি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে মগজ বেরিয়ে পড়ল ফুটপাতে । বাসযাত্রী বাবার কোলে পুড়ে ছাই হয়েছেন শিশু ও বাবা-দুজনই । বাবা পারেননি শিশু ও নিজকে বাঁচাতে । পুড়ে ছাই হওয়া শিশুটি পুড়ে কংকাল হয়েও বাবার কংকালের কোলজুড়েই আঁকড়ে ধরে আছে, এই দৃশ্যগুলো দেখার মত মানুসিক শক্তি কয়জন রাখেন, কিন্তু তথাকথিত রাজনীতির ভাড়াটে হায়েনার দল তা ঘটিয়েই যাচ্ছে । ঢাকা শহরের সৌন্দর্য্য দেখার আগেই শিশু মনির দেখেছে আমাদের রাজনীতির বিভৎস্য রূপ, শেষোবধি ঢাকার সৌন্দর্য্য দেখা হয়নি মনিরের, ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিট থেকে লাশ হয়ে ফিরেছে মায়ের কালে । এইতো সেই দিন শাহবাগে ১৯ জন বাসযাত্রী গান পাউডার ও পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হলেন, ইতিমধ্যে দুই তরুন নাহিদ ও রবীন বার্ণ ইউনিউটের ডাক্তার ও নার্সদের শত-সহস্র চেষ্টাকে ব্যর্থ করে চলে গেলেন পরপারে । ওদের দগ্ধ শরীরের কষ্ট-যাতনায় মন কাঁদেনি, এমন মানুষ বার্ণ ইউনিটে দেখা যায়নি । যেসব হায়েনারা এভাবে পুড়িয়ে মারছে অসহায় মানুষদের, ওদের অন্ততঃ একবার বার্ণ ইউনিটের অসহায় মানুষগুলোকে দেখাতে পারলে, আমি নিশ্চিত ওদের হাত কাঁপবে, মন কাঁদবে, দ্বিতীয়বার এই নির্মম পেট্রোলবোমা ও গান পাউডার হাতে তুলে নিবে না ।

রাজনীতিকরা কেন ভাবেন না, এদের কেউ হরতাল অবরোধ পালন বা ভাঙ্গার প্রত্যয় নিয়ে রাস্তায় আসেননি । এসেছে নিতান্তই জীবন-জীবিকা ও বাঁচার তাগিদে অন্নের সংস্থান, রোগব্যাধির ঔষধ সংগ্রহে, বাচ্চাদের স্কুলে আনা-নেয়া সহ ইত্যকার প্রয়োজনে । এদের পুড়িয়ে মেরে লাভটা কী ? এতে কী ক্ষমতাসীনরা আন্দোলনকারীদের দাবী মেনে নিবেন নাকী আন্দোলনকারী দলটির জনমত বাড়বে ! সম্ভবতঃ ক্ষমতার মাদকতায় এদের বিবেক বোধ-বুদ্ধি সবই লোপ পেয়েছে । ঘৃনা লাগে যখন দেখি, মানুষ পুড়িয়ে মারার দায় -একদল অন্যদলের উপর চাপিয়ে দেয়ার তর্কযুদ্ধে লিপ্ত হয় । বিবিসি সংলাপে দেখলাম কোন দলই এই হত্যাকান্ডের দায় নিতে রাজী নয় । সরকারীদল ও বিরোধীদল যদি হত্যাকান্ডের দায় নাই নেন, আর জনগন যদি তাদের জীবন রক্ষায় লাঠি হাতে ঘুরে দাঁড়ায়, রাজনীতিবিদরা মুখ লুকাবেন কোথায় ! আর রাষ্ট্রের আইন-শৃংখলা ! এতো কিছুর পরও এক শ্রেণীর সুশীল নামক জ্ঞান পাপী চাটুকারের দল অতীত বর্তমানের হিসেব কষে পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি দেখায় ।

এভাবে কোন কালে, কোন দেশেই মানবতা বেশী দিন নিঃগৃহিত ও লাঞ্চিত হতে পারেনি, সময়ের শ্রেষ্ট সন্তানরা এগিয়ে এসেছে, দাঁড়িয়েছে মানবতার পাশে । মানুষ, মানবতা ও মানব শিশু রক্ষায় শিল্পী কবি সাহিত্যিক ও বিবেকবান বুদ্ধিজীবিদের গনজাগরন ঘটবেই-ঘটবে । এই বাংলায় অহেতুক জুলুম নির্যাতন নিপীড়ন কোন কালেই বেশীদিন চলতে পারেনি, মানবতা রুখে দাঁড়িয়েছে আর হায়েনার দল পশ্চাদপসারনে বাধ্য হয়েছে । কেউ একজন বজ্রকন্ঠে সুর তুলুক ঢাকার কোন এক গলিপথে, লক্ষ-কোটি মানুষ অতন্ত্র প্রহরীর ন্যায় মুষ্টিবদ্ধ হাতে পাশে দাঁড়াবেই, গনপ্রতিরোধের জোয়ারে হায়েনারা সব পালাবে ।

বিষয়: রাজনীতি

২৮৪৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File