সংকট নিরশনে মেনে নেয়া বা মানিয়ে নেয়ার কৌশলগত ফর্মুলা । -আপনার মতামত/পরামর্শ কাম্য।
লিখেছেন লিখেছেন মহি১১মাসুম ১৪ এপ্রিল, ২০১৩, ০১:০৪:৫৫ রাত
জনমনে উদ্বেগ উৎকন্ঠা, শেষোবধি কোথায় গিয়ে থামবে এই অস্থিরতা । নাকি বরাবরের মত অন্য কোন অরাজনৈতিক শক্তি আবারো আমাদের ভাগ্য নির্ধারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে । তবে দেশের সুশীল সমাজ ও সাধারণ নাগরিক মাত্রই চান, অনির্বাচিত স্বেচ্ছাচারী শক্তি যেন না আসে । এটা বর্তমান বাস্তবতায় অভিমত । কিন্তু চলমান রাজনীতির সহিংসতা আরো ব্যাপক ও বিধ্বংসী আকার পরিগ্রহ করলে অনির্বাচিত স্বেচ্ছাচারী শক্তির আগমণও চাইতে পারে জনগণ । মূলতঃ জনগণ চায় রাজনীতিবিদরাই ধারাবাহিক ভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করুক । জনগণ রাজনীতিবিদদের ওপর বিশ্বাস রাখে এবং সর্বদাই রাখতে চায় ।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে জনগণ রাজনীতিবিদদের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখলেও রাজনীতিবিদ ও দলগুলি পরষ্পরকে আস্থাও বিশ্বাসে রাখতে পারেন না । অথচ দলগুলির রাজনৈতিক আদর্শ ও চরিত্রে কাছাকাছি অবস্থান করেন । তাহলে প্রশ্ন ওঠতে পারে, পরষ্পরের প্রতি এই আস্থা বিশ্বাসের সংকটের কারন কি ?
সংকটের কারন বিভিন্ন জন বিভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করবেন, কিন্তু খেয়াল করে দেখুন স্বাধীনতা পরবর্তী থেকে অদ্যাবধি আমাদের সরকার গুলি ও জনগণ কখনই আন্দোলনের সফলতাকে ধরে রাখতে পারেননি, বিতর্কিত করেছেন বারংবার এবং পরবর্তী আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরী করেছেন । স্থায়ী সমাধান এখনও আসেনি, আংশিক সমাধান হিসেবে এসেছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিন্তু এখন তাও অকার্যকর । আবার যতদিন ছিল রাজনৈতিক দলগুলি এটাকে ধারাবাহিকভাবে দলীয়করন করে বিতর্কিত করেছেন ।
রাজনীতির এই মহাগ্রাসী সংকট থেকে উত্তরণের কৌশল নির্ধারনে সুধীজন, সুশীল সমাজ, বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ, জাতিয় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা থেকে ফর্মুলা দিচ্ছেন । আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মনে হয় এসব ফর্মুলা বা মতামত গুলি গৃহীত হলে পরবর্তী সংসদ নির্বাচনকে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহনযোগ্য হবে হয়ত । কিন্তু এতে স্থায়ী সমাধান আসবেনা, অতীতেও আসেনি । যা এসেছে তা হচ্ছে নির্বাচিত সরকারটি ৫ বৎসরের মধ্যে ৪ বৎসর ঠেলে ঠুলে চলার মত সমাধান । বাকী ১টি বৎসর জাতি ভোগ করে অসহনীয় জ্বালাও পোঁড়াও ভাংচুর সহ জীবনহরণ ও অর্থনীতি ধবংস করার এক অদ্ভূত গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রাম । বাস্তবতা হচ্ছে সংকটের স্থায়ী সমাধান আসেনি ।
তাহলে আমরা কি সমস্যা নির্ধারণে ভুল করছি যার কারনে সংকটের স্থায়ী সমাধান আসছে না । আমারও তাই মনে হচ্ছে সমস্যা অন্য জায়গায় যা হচ্ছে প্রাগৈতিহাসিক আমল থেকে আমরা জমিদার রাজা শাসিত মানুষিকতা থেকে ওঠে আসতে পারিনি । রাজা বাদশার আমলে একক শক্তির অধীন ছিলাম কিন্তু এখন অবস্থান করছি বহু দলীয় শাসনে । বহু দলীয় শাসনে আমরা অনেকটা বহু রাজার (দলীয়) আনুগত্যে বিশ্বাসী । তাই দেখা যায় নিরপেক্ষ নির্বাচনে ক্ষমতা প্রাপ্তদেরকেও আমরা ৫ বৎসরও মেনে নিতে পারিনা । আমাদের মানুষিকতার পরিবর্তন যেহেতু হুট করে আসবেনা । সেহেতু নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা এবং একই সাথে ক্ষমতার বিভাজন বা ক্ষমতার বহু দলীয়করণ করা অনিবার্য্য । এতে স্থায়ী সমাধান আসতে পারে । যদিও প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকার থেকে ভিন্নতর এবং জাতীয় সরকারের সাথে কিঞ্চিত সাদৃশ্যপূর্ণ পরিলক্ষিত হবে । ব্যাতিক্রম হলেও আমাদের ব্যাতিক্রম মানুষিকতাকে বিবেচনায় রেখে একটি নতুন আউট লাইন উপস্থাপন করব, যা রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্র বিজ্ঞানীরা সমৃদ্ধ করবেন ।
দুইটি ধাপে আমি খসরা ফর্মুলাটি উপস্থাপন করব । প্রথম ধাপে থাকবে নিরপেক্ষ সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন কেন্দ্রিক এবং দ্বিতীয় ধাপে থাকবে ক্ষমতার বিভাজন বা ক্ষমতার বহু দলীয় করণ কেন্দ্রিক ।
প্রথম ধাপ (নির্বাচন প্রসঙ্গ)-
এক) নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালীকরণ অর্থাৎ নির্বাচন কালিন সময়ে নির্বাচন কমিশনকে সংস্থাপন ও সশস্র বাহিনীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট দপ্তর সমূহের ওপর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা প্রদান ।
দুই) নির্বাচন কালিন সরকার পরিচালনার জন্য দল গুলির প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে দলগুলি থেকে ১১ জন সদস্য নির্ধারণ করা এবং ১১ জনের সরকারটির প্রধান হবেন সংখ্যাগরিষ্টের ভিত্তিতে ।
তিন) দপ্তর বন্টনে দ্বিতীয় প্রধান দল গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর দিয়ে ক্ষমতার ব্যালেন্স করতে হবে ।
চার) অস্থায়ী সরকারের সিলেক্টেড ১১ জন সদস্যের নির্বাচন করবে সরাসরি প্রেসিডেন্ট ও নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় এবং ঐ সদস্যদের নির্বাচন হবে অস্থায়ী সরকারের সিলেকশনের ৭ দিনের মধ্যে । যিনি নির্বাচনে হেরে যাবেন ঐ আসনের সদ্য নির্বাচিত সদস্যটি অস্থায়ী সরকারে স্থলাভিষক্ত হবেন ।
এতে যে সমাধানটি আসবে বা অতীতেও এসেছিল তা ৪ বৎসরের । বাকী ১টি বৎসর আমরা রাজনৈতিক হট্টগোলে পড়ি । আর বাকী ১টি বৎসরকেও স্থিতিশীল করা অর্থাৎ সরকারের ৫টি বৎসরকে শান্তিপূর্ণ করার জন্য আরেকটি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করছি ।
দ্বিতীয় ধাপ (ক্ষমতা বিভাজন)-
পূর্বেই উল্লেখ করেছি আমরা সংসদীয় গণতন্ত্রের এক দলীয় শাসনে মানুষিক স্বস্থি পাই না । আমার দলকে অর্থাৎ আমাকে আমি ক্ষমতাহীন মেনে নিতে বা মানিয়ে নিতে পারি না, এটা দল সমর্থিত জনগণ ও দলের নেতৃত্ব উভয়ের জন্য সত্য । এটা দলগুলি স্বীকার করুক আর না করুক, বাস্তবতাকে মেনে নিত পারলে সরকারকে শেষ বৎসরটাতে অনাকাংখিত পরিস্থিতিতে বিরোধী দল বারবার ফেলতেন না ।তাহলে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় কি ? জাতীয় সরকারের আদলে একটি সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে । যাতে প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দলকেও ক্ষমতার অংশীদার করতে হবে ।
যাহোক, প্রস্তাবনাটি হাস্যকর ও পৃথিবীর কোথাও অস্থিত্বহীন মনে হলেও হতে পারে । মনে রাখবেন আমাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থাটি আমরাই প্রথম গ্রহন করেছিলাম । এখন আমরা পরিত্যাগ করলেও পাকিস্থান ও নেপাল অনুকরণ করছে । ইতিপূর্বে উল্লেখিত অস্থায়ী সরকার দ্বারা নির্বাচিত সরকারটি নিন্মরূপে গঠিত হলে সবাই অংশীদারিত্ব অনুভব করবেন হয়ত ।
এক) সংখ্যাগরিষ্ট আসন প্রাপ্ত দলটি সরকার গঠন করবে এবং সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী নির্ধারণ করবেন ।
দুই) প্রধান বিরোধী দল থেকে প্রেসিডেন্ট দিতে হবে । প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্যতা হবে ক) বিরোধী দলের প্রধান অথবা খ) বিরোধী দলের সদস্য যিনি ৫৫ বৎসরের অধীক এবং কমপক্ষে ৫ বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য হতে হবে।
তিন) প্রথম সহকারী স্পীকারের পদটি প্রধান বিরোধী দলকে দিতে হবে এবং দ্বিতীয় সহকারী স্পীকারের পদটি তৃতীয় প্রধান দল থেকে দিতে হবে ।
চার) প্রধান বিরোধী দল চাইলে ১ জন পূর্ণমন্ত্রী ১ জন প্রতিমন্ত্রী নিতে পারবেন সেক্ষেত্রে দপ্তর পছন্দ অপছন্দ থাকবে না । দ্বিতীয় প্রধান বিরোধী দল থেকে ১ জন প্রতিমন্ত্রী দিতে হবে এক্ষেত্রেও পছন্দ অপছন্দ থাকবে না ।
পাঁচ) সংসদীয় কমিটির সভাপতি হিসেবে সরকারী দল থেকে ৬৫ শতাংশ, প্রধান বিরোধী দল থেকে ২৫ শতাংশ এবং অন্যান্য দল থেকে ১০ শতাংশ দিতে হবে ।
স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন ওঠতে পারে এই ধরনের সরকার কেন ? উত্তর একটাই তা হচ্ছে আমরা আমাদেরকে ক্ষমতাহীন অবস্থায় দেখতে চাইনা, ক্ষমতা হীনতাকে মেনে নিতে বা মানিয়ে নিতে পারছি না দলের সর্বস্তর থেকে । মেনে নেয়া বা মানিয়ে নেয়ার মাধ্যমে স্থিতিশীল রাষ্ট্র বা সরকার গঠন করে রাষ্ট্রের ধারাবাহিক উন্নয়ণই এই ফর্মুলার বাস্তবতা । অন্য দিকে সব দলই সুষ্ঠু সুন্দর সুনিপুন ভাবে স্ব-স্ব দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে ভবিষ্যতের স্বপ্ন তৈরীতে সক্ষম হবেন ।
বিষয়: রাজনীতি
১১৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন