কপি পেস্ট, তারপরও একটু নজর মারুন
লিখেছেন লিখেছেন গরমিল ২০ মার্চ, ২০১৩, ১১:৫৪:৫২ সকাল
মাওলানা মাসউদের সমাবেশে লোক সমাগমে সরকারের নানা উদ্যোগ : বিভিন্ন মাদরাসা ছাত্রদের চাপ দেয়া হচ্ছে
20 Mar, 2013
আওয়ামীপন্থী আলেম হিসেবে চিহ্নিত মাওলানা ফরিদউদ্দিন মাসউদ ঘোষিত ২৩ মার্চ রাজধানীর মতিঝিলের মহাসমাবেশে লোকসমাগমের ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। সরকারপন্থী বিভিন্ন সংগঠনের পরোক্ষ সহযোগিতায় চলছে নানা তত্পরতা। প্রশাসনের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ছাড়াও সরকারি প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশনও এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে জানা গেছে। ফরিদউদ্দিন মাসউদ ও তার অনুসারীদের বিভিন্ন মাদরাসা মকতবের ছাত্র-শিক্ষকদের বাধ্যতামূলকভাবে ওই সমাবেশে আনা হবে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে নাস্তিকদের বিরুদ্ধে আলেম-ওলামাদের চলমান আন্দোলন বানচালে এবং নাস্তিকদের রক্ষার্থেই ফরিদউদ্দিন মাসউদ সমাবেশ ডেকেছেন অভিযোগ করে যে কোনো মূল্যে তা বানচালের ঘোষণা দিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তারা।
জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ, নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলন থেকে ২৩ মার্চ রাজধানীর মতিঝিলে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দেন শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম মাওলানা ফরিদউদ্দিন মাসউদ। ওলামা-মাশায়েখ তৌহিদি জনতার ব্যানারে এই সমাবেশ ডাকা হয়। এই ঘোষণার পর থেকেই দেশের আলেম সমাজের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নাস্তিকদের রক্ষার জন্য ঘোষিত এ সমাবেশ প্রতিহত করারও ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
২৩ মার্চের মহাসমাবেশ প্রতিহত করতে বিভিন্ন মহলের হুশিয়ারির পরিপ্রেক্ষিতে তা বাস্তবায়ন নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। তবে এই সমাবেশে ব্যাপক লোকসমাগমের জন্য জোর তত্পরতা চালিয়ে যাচ্ছেন ফরিদউদ্দিন মাসউদসহ তার সংগঠনের অন্য নেতাকর্মীরা। অভিযোগ মতে, ২৩ মার্চের সমাবেশে যোগ দেয়ার জন্য রাজধানী ও আশপাশের বিভিন্ন কওমি মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের মৌখিকভাবে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। সমাবেশে যোগ না দিলে মাদরাসা থেকে বহিষ্কারসহ নানা হুমকিও দেয়া হচ্ছে। রাজধানীর নতুনবাজারের নুরেরচালা আশরাফিয়া মাদরাসার ছাত্ররা জানায়, ফরিদউদ্দিন মাসউদের সমাবেশে যোগ দেয়ার জন্য তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এতে সাধারণ ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক কর্মকর্তা জানান, ফরিদউদ্দিন মাসউদ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জাকাত বোর্ডের সদস্য। এই প্রভাবে ২৩ তারিখের সমাবেশে ফাউন্ডেশনের জনশক্তিকে কাজে লাগানো হতে পারে। তিনি বলেন, ২২ মার্চ বাংলাদেশ-চীন মৈত্রীসম্মেলন কেন্দ্রে ইমাম সম্মেলনের আয়োজন করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথি থাকবেন। ফাউন্ডেশন পরিচালিত মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের ইমাম ও শিক্ষকদের এ সম্মেলনে যোগ দেয়ার জন্য সারাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঢাকায় আগত এসব ইমামদের পরদিন মতিঝিলের সমাবেশে যোগ দিতে বলা হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এদিকে কওমি মাদরাসা বোর্ডের প্রচার বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ফরিদউদ্দিন মাসউদ পরিচালিত ঢাকায় ইকরা নামের একটি মাদরাসা ছাড়াও ইসলাহুল মুসলেমীন নামের একটি এনজিও আছে। এই এনজিওর অর্থায়নে গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, রংপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় মকতব মাদরাসা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকেও ঢাকার সমাবেশে লোকজন আনা হতে পারে। সর্বোপরি সরকারদলীয় লোকজনও এ সমাবেশে যোগ দিতে পারে বলে জানিয়েছেন অনেকে।
প্রতিহত করার ঘোষণা : ২৩ মার্চ ফরিদউদ্দিন মাসউদের মহাসমাবেশ প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে ইমাম-খতিব-ঐক্য পরিষদ, খেলাফত যুব আন্দোলন, সচেতন ইমাম সমাজ, জাতীয় ইমাম-ওলামা পরিষদ, ৩৩টি ইসলামি সংগঠনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের আলেমরা।
ফরিদউদ্দিন মাসউদের মহাসমাবেশ প্রতিহত করার জন্য ব্যাপক তত্পরতা চালাচ্ছে ইমাম-খতিব-ঐক্য পরিষদ। এজন্য সারাদেশে গণসংযোগ করছে সংগঠনটি। গতকাল এক বৈঠকে সংগঠনের সভাপতি মুফতি সুলতান আহমদ ও মহাসচিব মাওলানা আবদুল আউয়ালসহ নেতারা বলেন, নাস্তিকদের মঞ্চে গিয়ে বক্তব্য দেয়ার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে ফরিদউদ্দিন মাসউদ জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের নামে নাস্তিকদের রক্ষা করতে চায়। তারা ৬ এপ্রিল লংমার্চের আগেই শাহরিয়ার কবিরের গ্রেফতার ও বিচার প্রক্রিয়ার দাবি জানান। এছাড়া আল্লামা আহমদ শফীর বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়ায় জামেয়া আহমদীয়ার নেতাদের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
এই সমাবেশ প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে খেলাফত যুব আন্দোলনের সভাপতি মুফতি ফখরুল ইসলাম বলেছেন, ফরিদউদ্দিন মাসউদের মহাসমাবেশে চার স্তরের নিরাপত্তার প্রস্তুতি নিয়ে সরকার প্রমাণ করল ২৩ তারিখের সমাবেশ ফরিদউদ্দীন মাসউদের নয়, এটা আওয়ামী সরকার ও নাস্তিক ব্লগারদের সমাবেশ। শুনতে পেয়েছি সরকার ২৩ তারিখে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে ফরিদউদ্দিন মাসউদকে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে। খেলাফত যুব আন্দোলনও ২৩ তারিখে সমাবেশের জন্য দরখাস্ত জমা দিয়েছে। সরকার আমাদেরও মতিঝিলে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়ে দেখুক, কে, কত লোক জমা করতে পারে, তিনি ফরিদউদ্দিন মাসউদকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, নাস্তিক ব্লগারদের পক্ষের শক্তি ফরিদউদ্দিন মাসউদ বেশি লোক জমা করতে পারে, না কি ইসলাম ও মুসলমানদের পক্ষে খেলাফত যুব আন্দোলন বেশি লোক জমা করতে পারে—ইনশাআল্লাহ অনুমতি পেলে আমরাই ধর্মপ্রাণ মুসলিম যুবকদের দিয়ে মতিঝিলসহ আশপাশের এলাকা লোকে লোকারণ্য করে দেব। তিনি বলেন, ফরিদউদ্দিন মাসউদের সমাবেশ করার মতো কোনো জনশক্তি নেই। মনে হয়, নাস্তিক ব্লগার এবং সরকার ছাত্রলীগ ও যুবলীগের লোক দিয়ে ফরিদউদ্দিন মাসউদের মাধ্যমে সমাবেশ করাচ্ছে। নাস্তিকদের এ সমাবেশ সফল করতে দেয়া হবে না। তিনি সকালে খেলাফত যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় দফতর লালবাগে ২৩ মার্চে মতিঝিলের সমাবেশ উপলক্ষে মহানগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে আগত আলেম-ওলামা ও পেশাজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন। আজ এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ২৩ মার্চের পাল্টা সমাবেশ বিষয়ে জানানো হবে।
৩৩টি ইসলামি সংগঠনের নেতারা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তি দাবিতে ২৩ মার্চ শাপলা চত্বরে যুব মহাসমাবেশ সফল করুন। ঈমানী তাগিদেই ২৩ মার্চ ওলামায়ে-ছু- গংদের সমাবেশ প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে যুব আন্দোলন যে ঈমানদারের সমাবেশ ডেকেছে তাতে আমরা পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি এবং তা সফল করতে সব ঈমানদার মুসলমানকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। বিবৃতিদাতা সংগঠনগুলো হলো—হক্কানী পীর মাশায়েখ পরিষদ, তাহরিকে খতমে নবুয়ত, নাস্তিক-মুরতাদ প্রতিরোধ কমিটি, জাতীয় ফতোয়া বোর্ড, আইম্মাহ পরিষদ, জমিয়াতে ওলামা দেওবন্দ, জমিয়তুল মুফাসসিরিন, ইসলাহুল মুসলিলিমিন, ইসলাহুল উম্মাহ প্রভৃতি।
দেশের ২০ হাজার ওলামা কেরাম এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, শান্তির ধর্ম ইসলামকে ধ্বংস করতে বর্তমান সরকার বিভিন্ন নাস্তিক-মুরতাদদের লালন-পালন করছে। শাহবাগসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি করে ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। আমরা সরকারকে হুশিয়ার উচ্চারণ করে বলে দিতে চাই এদেশের মানুষ ইসলামপ্রিয়। ইসলামের বিপক্ষে অবস্থান বাংলার তৌহিদি জনতা কখনও সহ্য করবে না। যেখানে নাস্তিক-মুরতাদদের সমাবেশ ডাকবে সেখানেই প্রতিহত করব। প্রয়োজনে কাফনের কাপড় পড়ে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ব শাহাদাতবরণ করব তবুও পিছপা হব না ইনশাআল্লাহ।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন, মাওলানা লুত্ফর রহমান, মুফতি মিজানুর রহমান, মাওলানা মুয়াজ্জেম হুসাইন, মাওলানা আবু মুহাম্মদ বজলুর রহমান, মাওলানা সাইদুল ইসলাম, মাওলানা মাহতাব উদ্দিন, মাওলানা সালমান, মাওলানা আবুল হাসান মুহাম্মদ ইব্রাহিম, মাওলানা নুরুল হক, মাওলানা মহিব্বুর রহমান, মাওলানা নুরুল আমিন প্রমুখ।
এদিকে ২৩ মার্চ শাপলা চত্বরে ওলামা-মাশায়েখ তৌহিদি জনতার মহাসমাবেশকে বানচাল করতে এক শ্রেণীর শেকড়হীন আলেম ধূম্রজাল ছড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা। মুফতি মুহাম্মদ আলী, মাওলানা আবদুর রহিম, মাওলানা রহুল আমিন সিরাজীসহ ফরিদউদ্দিন মাসউদের পক্ষে ৬১ আলেম এক যুক্ত বিবৃতিতে আরও বলেন, ২৩ তারিখের মহাসমাবেশ নাস্তিক মুরতাদ এবং জামায়াত-শিবিরের অপরাজনীতির বিরুদ্ধে সমাবেশ। অতএব যে বা যারা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে বা সমাবেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে জাতি বুঝে নেবে তারা কোন শক্তির উেস এ কাজ করেছে।
বিষয়: বিবিধ
১১৭৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন