একটা নিদিষ্ট সময়ে সরব হন এই .....!
লিখেছেন লিখেছেন গরমিল ১৮ মার্চ, ২০১৩, ১১:২৫:৫৭ সকাল
অন্তর্বতীকালীন জাতীয় সরকারই সংকটের সমাধান
শনিবার, ১৬ মার্চ ২০১৩
ফেরদৌস আহমদ কোরেশী: সা¤প্রতিককালে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু বাড়ীঘর ও মন্দিরে হামলার ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। লক্ষ্য করলে দেখা যায় এই সব মানুষ দরিদ্র ও নির্বিরোধ খেটে খাওয়া মানুষ। যারা ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে তৎকালীন মুসলিম লীগকে সমর্থন দিয়েছে এবং এই দীর্ঘ ৬৫ বছর মাতৃভূমির মাটি কামড়ে পড়ে আছে। তাদের প্রতি যে কোন অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে দেশের বৃহত্তর জনসমষ্টিকে রুখে দাঁড়াবার আহ্বান জানাচ্ছি। বাংলাদেশ ধর্মের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়নি । জাতি ধর্ম নির্বিশেষে আমরা সবাই এদেশের সমনাগরিক। অতএব বাংলাদেশে কোন সংখ্যালঘু নেই। রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রতিনিয়তই অনেক মানুষ প্রতিপক্ষের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন। যাদের অধিকাংশই মুসলমান। পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও নির্যাাতনের শিকার হচ্ছেন। এসব নির্যাতন বা হত্যাকান্ড ‘রাজনৈতিক’ কারণে ঘটছে। ‘সাম্প্রদায়িক’ কারণে নয়। হিন্দু সম্প্রদায়কে সাধারণভাবে একটি বিশেষ দলের ‘ভোট ব্যাংক’ বিবেচনা করা হয় বিধায় তারা অনেক সময় প্রতিপক্ষ দলের আক্রোশের শিকার হয়। ধর্মবিশ্বাসের কারণে এ সব আক্রমন হয় না। আক্রমন হয় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে। এ বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে। বিশেষ বিশেষ মহল বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে বিভাজন ও নৈরাজ্য সৃষ্টির অশুভ উদ্দেশ্যে এসব রাজনৈতিক সংঘাতকে ‘ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক’ রূপ দিতে সদা সচেষ্ট। আমরা এই অপতৎপরতার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং এর বিরুদ্ধে দেশের সর্বস্তরের ও সর্বধর্মের মানুষকে সজাগ ও সর্তক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। এটা দুঃখজনক যে, কিছু মিডিয়া হিন্দুদের বাড়ীঘরে বা মন্দিরে হামলার সংবাদ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বারংবার প্রচার করে চলেছে। কিছু চিহ্নিত সাম্প্রদায়িক সংগঠন এ নিয়ে মিটিং মিছিল করে বিবৃতি দিয়ে চলেছে। দেশে ‘সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা’ সৃষ্টির প্রয়াস অতীতেও হয়েছে। কিন্তু বৃহত্তর জনগণের অংশ গ্রহণ না থাকায় এবং শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের প্রতিরোধের মুখে তা’ কখনই সফল হয়নি। এবারও হয়নি। আমরা বিশ্বাস করি আগামীতেও এদেশে ‘ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক’ উত্তেজনা সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের যে কোন প্রয়াস ব্যর্থ হবে। দুই নেত্রীকে একত্রে বসাবার জন্য আমাদের কিছু বুদ্ধিজীবি ও কিছু পেশাজীবি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ আকুল আবেদন জানিয়ে চলেছেন। হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশনও দায়ের হয়েছে। কিন্তু শুভবুদ্ধি সম্পন্ন দেশপ্রেমিক মানুষেরা যতই প্রত্যাশা করুন না কেন, এই দুই নেত্রীকে একত্রে বসানো বা তাঁদের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে চলমান সংকট নিরসনের কোন সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। আমাদের শাসকরা গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি পদে পদে লংঘন করে পালাক্রমে স্বৈরাচারী শাসন চালিয়ে গেলেও বাংলাদেশে সাংবিধানিক গণতন্ত্র এখনও অটুট আছে। লক্ষ্য করার বিষয় শত সংঘাত-সংঘর্ষ, আন্দোলন-সংগ্রাম, বিক্ষোভ-হরতাল সত্ত্বেও গত তিন মেয়াদে সব ক’টি সরকারই তার মেয়াদ পূর্ণ করতে পেরেছে। ১৭৩ দিন হরতাল দিয়েও সরকারকে তার মেয়াদপূর্তির একদিন পূর্বেও পদত্যাগে বাধ্য করা যায়নি। একে আমরা বাংলাদেশের সাংবিধানিক গণতন্ত্রের ইতিবাচক দিক বলে মনে করি। পিডিপি হরতাল-অবরোধ বা সন্ত্রাসের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানোর কোন প্রয়াস সমর্থন করে না। আমরা চাই নিয়মতান্ত্রিকভাবে যথাসময়ে যথারীতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক এবং সেই নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয়, তার নিশ্চয়তা বিধান করা হোক। এই সরকার বিরোধী ১৮ দলীয় জোটের দাবী অনুযায়ী ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ পূর্নবহাল করতে রাজী নয়। নিজেরা ক্ষমতায় থেকে নিজেদের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু বর্তমান শাসকদের আচরণ ও বিভিন্ন পদক্ষেপ দৃষ্টে এই সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কোন সম্ভাবনা আছে বলে আমরা মনে করতে পারছি না। এমতাবস্থায় পিডিপি’র পক্ষ থেকে আমরা গত ১৫/১১/২০১১তারিখে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য ‘অন্তর্বতীকালীন জাতীয় সরকার’ গঠনের যে প্রস্তাব তুলে ধরেছিলাম, পুনরায় সেই দাবী জাতির সামনে তুলে ধরছি। আমরা মনে করি ‘অরাজনৈতিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ জাতীয় রাজনীতির ধারাবাহিকতা বিনষ্ট করে। অপরদিকে নির্বাচনকালীন সময়ে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের নিরপেক্ষতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত না হলে যথাযথ নির্বাচন কিছুতেই সম্ভব নয়।
নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য ‘অন্তর্বতীকালীন জাতীয় সরকার’ গঠন করাই এই উভয়-সংকটের উপযুক্ত সমাধান। এতে বিরোধী পক্ষের ‘নিরপেক্ষ তত্ত্ব¡াবধায়ক সরকার’ এর দাবী পূরণ হয়, অপরদিকে জাতীয় জীবনে রাজনৈতিক ধারাবাহিকতাও অক্ষুন্ন থাকে।
প্রস্তাবিত ‘অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার’ এর রূপরেখা ঃ
ক্সবর্তমান সংসদের মেয়াদ পূর্তির কমপক্ষে তিন মাস পূর্বে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়ে পদত্যাগ করবেন।
ক্সপ্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেংগে দেবেন এবং বিদায়ী সংসদের সদস্যদের মধ্যে যাঁরা পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নেবেন না তেমন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি সরকার গঠন করবেন, যা ‘অন্তর্বতীকালীন জাতীয় সরকার’ হিসেবে অভিহিত হবে। এই জাতীয় সরকারের মেয়াদ হবে সর্বাধিক ৩ মাস। এই সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদের নির্বাচন সম্পন্ন হবে এবং নতুন সংসদ শপথ গ্রহণ করবে। এই জাতীয় সরকারে বিদায়ী সরকারী দল ও জোট থেকে প্রধানমন্ত্রীসহ ৫জন মন্ত্রী থাকবেন এবং বিরোধী দল থেকেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ৫জন মন্ত্রী থাকবেন। এজন্যে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হবে বলে মনে হয় না।
ক্সএই জাতীয় সরকারকে ভারসাম্যময় করার জন্য প্রয়োজনে প্রাক্তন সংসদ সদস্য, অন্যান্য নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল এবং বিশেষজ্ঞজনদের মধ্য থেকে যাঁরা নির্বাচনে অংশ নেবেন না তেমন কয়েকজন অতিরিক্ত সদস্যও নেয়া যেতে পারে। এজন্যে অবশ্য জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দেওয়ার পূর্বেই বিল পাস করে নিতে হবে।
আমরা সরকার পক্ষ ও বিরোধী পক্ষকে সমঝোতার মাধ্যমে এই জাতীয় সরকার গঠনে উদ্যোগী হয়ে দেশকে বর্তমানের সংঘাত- সংঘর্ষ ও রক্তক্ষয় থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য আহবান জানাচ্ছি।
‘শাহবাগে’র সবাই ‘নাস্তিক’ হতে পারে না
বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মন্তব্য করেছেন, শাহবাগের তরুণরা সবাই নাস্তিক। শাহবাগের সব ছেলেমেয়েরা ‘নাস্তিক’ এই বক্তব্যের সাথে একমত হওয়া যায় না। বাংলাদেশে এত ‘নাস্তিক’ থাকলে তো ইসলাম ও মুসলমানের জন্যই ঘোরতর দু:সংবাদ। ব¬গার রাজীবের মত দু’একজন নোংরা মনের তরুণের কারণে সব ব¬গার বা শাহবাগের তরুণদের সবাইকে ‘নাস্তিক’ বা ‘ইসলাম বিরোধী’ আখ্যা দেওয়া দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক নয়। এমন ঢালাও মন্তব্য থেকে বিরত থাকার জন্য সংশি¬ষ্টদের অনুরোধ জানাচ্ছি।
ফেরদৌস আহমদ কোরেশী, চেয়ারম্যান, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি)
বিষয়: বিবিধ
১০১১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন