ঊনারা কয়েকজন মিলে নাগরিক সামাজ, আমরা, আপনারা ........?
লিখেছেন লিখেছেন গরমিল ১৭ মার্চ, ২০১৩, ১১:৫২:৫০ সকাল
জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ চাইল নাগরিক সমাজ
16 Mar, 2013
জামায়াত-শিবিরের বর্তমান দুর্বৃত্তায়নের জন্য প্রধান দুই দলকেই দায়ী করলেন দেশের বিশিষ্টজনেরা।
তারা বলেছেন, নিজেদের স্বার্থে সাম্প্রাদায়িক শক্তি জামায়াতকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। তাদের ছত্রছায়ায় আজ তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সাম্প্রাদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হলে এই মুহূর্তে তাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বাজেয়াপ্ত করতে হবে। না হয় তাদের মূল উৎপাটন করা সম্ভব নয়।
শনিবার দুপুরে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রের কার্নিভাল হলে নাগরিক সমাজের মহাসম্মেলনে বিশিষ্টজনেরা এ মন্তব্য করেন।
তারা বলেন, “জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি তাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাজেয়াপ্ত করতে হবে, না হলে তারা অন্যভাবে ফিরে আসবে। নতুন আইন প্রণয়ন করে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দরকার হবে না। এর জন্য প্রচলিত আইন ও আন্তর্জাতিক আইনেই তা সম্ভব।”
সম্মেলনে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, “যুদ্ধাপরাধ বিচারের রায় শুরু হওয়ার পর গৃহযুদ্ধের হুমকি দিয়ে মাঠে নেমেছে তারা। তারা হাঁটছে সে পথেই। মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা যে নৃশংস গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটিয়েছিল ৪২ বছর পরও তারা সহিংসতা অব্যাহত রেখেছে। তাদের সহিংসতার হাত থেকে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরাও মুক্তি পাচ্ছেন না। তাদের বাড়িতে আগুন দেওয়া হচ্ছে। এসব সহিংসতায় বিএনপিকে পাশে পেয়ে আরো সাহস পাচ্ছে তারা।”
তিনি বলেন, “গত কয়েকদিনে খালেদা জিয়ার বক্তব্য শুনলে মাথা হেঁট হয়ে যায়। তিনি যেভাবে স্বাধীনতাবিরোধীদের পক্ষ নিয়েছেন তা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে চলে যাচ্ছে।”
শাহবাগে তরুণরা রাতদিন কষ্ট করে আন্দোলন করছে তা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যারা শাহবাগের আন্দোলনে ভিন্ন উদ্দেশ্য দেখতে পান তারা এখনও পাকিস্তানমুখি। তারা বিকৃত রাজনৈতিক চিন্তা চেতনা ধারণ করে শাহবাগের আন্দোলনে দলীয় গন্ধ পান।”
তিনি বলেন, “জামায়াত-শিবিরের আর্থিক ক্ষমতার উৎস বন্ধ করতে না পারলে তারা অন্যভাবে ফিরে আসবে।”
মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলেন, “সময় এসেছে জামায়াতকে রাজনীতি-সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে নিষিদ্ধ করার। তাদের যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দেখছি, তা ৭১ সালেরই পুনারাবৃত্তি।”
তিনি বলেন, “৭১ সালে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের শাস্তি না দিতে পারলে এটা আমাদের সভ্যতার সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজ হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আজ সভ্যতা, গণতন্ত্র ও শান্তিকামী মানুষের দাবি।”
সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সার্বিক পর্যালোচনা করলে খুব সহজেই সন্ত্রাসবিরোধী আইন দিয়ে তাদের নিষিদ্ধ করা সম্ভব। আজ সকলের দাবি, জামায়াত-শিবির এ দেশের মাটি থেকে উৎখাত করতেই হবে।”
আলোচনায় অংশ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, “গত কয়েক মাসে জামায়াত-শিবির নিজেদের বর্ণবাদী, ঘৃণাবাদী, হত্যাকারী হিসেবে প্রমাণ করেছে। তাই এ ইস্যুতে তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে।”
বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২০ ধারা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তাদের আত্মসর্মপণের সুযোগ দিয়ে নিষিদ্ধ করা যেতে পারে। এছাড়া সাম্প্রাতিক সময়ে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পর্যালোচনা করে ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮ ধারা অনুযায়ীও তাদের নিষিদ্ধ করা যেতে পারে।”
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান বলেন, “সারা দেশে সংঘাতের রাজনীতি শুরু হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাম্প্রাদায়িক রাজনীতি। তারা আজ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। এ নিয়ে সারা দেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। এটি দূর করতে হলে সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে।”
তিনি বলেন, “সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি বিনিষ্ট হচ্ছে। এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি সাম্প্রাদায়িক শক্তির বীজও উৎপাটন করতে হবে।”
দেশের প্রচলিত আইনেই জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সম্ভব উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এটি না করতে পারলে তারা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। তখন তাদের আর সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না।”
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিপক্ষে যারা অবস্থান নিয়েছেন তারা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বে বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন উল্লেখ করে আকবর আলি খান বলেন, “স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে রাজনীতি করার ফল ভালো হবে না। গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে এই মুহূর্তে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই। মুক্তিযুদ্ধের আর্দশ বাস্তবায়ন করতে হলে গণতন্ত্রকে সুসংহত করতেই হবে। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে বির্তক তৈরি হয়েছে তা নিরসনের জন্য সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পাশাপাশি নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, “যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে জামায়াত-শিবির রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা আবারও ৭১ সালের পুরনো চেহারায় ফিরে গেছে। জামায়াত-শিবির চত্রু সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গভীর শেকড় গড়ে তুলেছে। শুধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়। তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। তারা বিভিন্ন পরিচয়ে বিভিন্ন সংগঠনের বানারে তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। জামায়াত-শিবিরের অর্থের যোগানদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও নিষিদ্ধ করতে হবে।”
অর্থনীতিবিদ কাজী খলিকুজ্জামান বলেন, “শাহবাগের আন্দোলন আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। তরুণ প্রজন্ম আবারও আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফিরিয়ে দিয়েছে। দেশে নবজাগরণ তৈরি করেছে। যা দিয়ে মানুষ স্বাধীনতাবিরোধীদের আরো তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করেছে।”
তিনি বলেন, “সাম্প্রাদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের এখনই সোচ্চার হতে হবে। আমরা যদি নিশ্চুপ হয়ে থাকি, তবে তারা আরো মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।”
ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম বলেন, “সারাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার পরও সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এ নির্যাতনের ওপর সরকার একটি প্রেস নোটও দেয়নি।”
তিনি বলেন, “সাম্প্রাদায়িক শক্তিরা দেশকে একটি গুজব ও পাগলের দেশ বানাতে চায়। চাঁদে সাঈদীর প্রতিকৃতি দেখা গেছে এ অপপ্রচার চালিয়ে যারা তাণ্ডব চালায় তারাই মূলত দেশকে গুজব ও পাগলের রাষ্ট্র বানাতে চায়।”
মেজর জেনারেল (অব আমিন আহমেদ চৌধুরী বীর বিক্রম বলেন, “বড় দুটি দল জামায়াতকে দুধ কলা দিয়ে পোষণ করেছে। সেই সাপের ফনার সামনে দুই দলই দাঁড়িয়ে আছে। বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া জামায়াতের পক্ষে যে স্ট্যান্ড নিয়েছে তা হবে আত্মঘাতী। তিনি যুদ্ধপরাধীদের জন্য যে মায়াকান্না করছেন তা অত্যন্ত দুঃখজনক, অপ্রত্যাশিত। কারণ তার স্বামীর অধীনে মুক্তিযুদ্ধ করেছি।”
সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাবিদ অজয় রায়, সাংবাদিক আবেদ খান, সেলিনা হোসেন, আবু ওসমান চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এমএম আকাশ, সুজনের সভাপতি বদিউল আলম মজুমদার, ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুন, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির, ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, অধ্যাপিকা পান্না কায়সার, ইমদাদুল হক মিলন, অভিনেতা আলী যাকের, মামুনুর রশিদ, মিতা হক, সুবর্ণা মুস্তাফা, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, শমী কায়সার, রোকেয়া প্রাচী, নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুসহ বিভিন্ন সংগঠনের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
উৎসঃ বাংলানিউজ
বিষয়: বিবিধ
১২৫০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন