তিক্ত বচন

লিখেছেন লিখেছেন সর্বহারা ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৯:৩৮:২৭ রাত



পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন মুহুর্ত পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ।” আমাদের দেশের নোংরা রাজনীতির কারণে প্রায়শই পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ লক্ষণীয় মাত্রায় বাড়ছে। মায়ের প্রিয় সন্তান হারানো বেদনার আহাজারি চলে অহর্নিশি। প্রতিদিনই হর-হামেশাই হত্যা চলছে- যেন জীবনটা বড়ই অর্থহীন। খুব ইচ্ছে করছে নোংরা রাজনীতির কবলে পড়ে নিহত হওয়া সন্তানের জন্য পিতা-মাতার আহাজারি নিয়ে দু’কলম লিখতে।

এটা সহজাত প্রবৃত্তি যে, সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার ভালোবাসা অনন্ত অসীম। । সেই প্রিয় সন্তান আজ নোংরা রাজনীতির বুলি হয়ে পিতার কাঁধে উঠছে লাশ হয়ে। এ দুঃখের কোন সীমা নেই সেটা একমাত্র ভুক্তভোগীরাই হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছে। আমাদের বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার সন্তানের প্রতি যেমন মায়া বোধকরি সব মায়েরই সন্তানের প্রতি ঠিক সেই একই মায়া বিদ্যমান। প্রায়ই প্রধান মন্ত্রী তার বুকের ধন সন্তানকে দেখতে আমেরিকা যান এবং নিশ্চয় ভালোবাসার পরশ দিয়ে সন্তানের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন যেমনটি দেন আর দশটি মা। প্রধান বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া, তারও সন্তান আছে এবং আমরা তাকে কাঁদতে দেখেছি তার সন্তান তারেক এবং কোকোর জন্য। সন্তানের কষ্ট আর যাই হোক মা কখনোই সহ্য করতে পারেনা। তিনিও পারেননি।

এবার আসি হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের দিকে, তার ছেলের নাম শাদ এরশাদ। এরশাদ সাহেবের ছেলেকে যখন পুলিশ ধরে নিয়ে যায় তখন তিনি হন্তদন্ত হয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন সারা দেশময়। কারণ যেভাবেই হোক ছেলেকে মুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে। নিশ্চয় ছেলে জেল থেকে বের হওয়ার পর পিতার আদরের পরশ দিয়ে পুত্রের মাথায় হাত দিয়ে বলেছিলো-‘কষ্ট হয়নিতো খোকা’। মতিউর রহমান নিজামী কিংবা গোলাম আযমের কথাই ধরি, তাদের সন্তান কি অবস্থায় আছে জানিনা। তবে এতটুকু জানি, তাদের অধিকাংশ সন্তানই দেশের বাইরে থাকেন। তাদেরও নিশ্চয় সন্তানের প্রতি সমান মায়া আছে অতঃপর ঝামেলা এড়াতে আগেভাগেই সন্তানদেরকে বিদেশে পাঠিয়েছেন।

এতো গেলো দেশের শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদ’দের কথা। পরিসংখ্যানমতে, দেশের প্রায় সব রাজনীতিবিদ’দের সন্তান দেশের বাইরে অবস্থান করেন। তাহলে রাজনীতিবিদ’দের সন্তান’রা কি অসাধারণ সন্তান, নাকি টাকার জোরে বিদেশে গমন? নির্দিধায় বলা যায়, তাদের সন্তানরা ভালো আছে! কিন্তু ভালো নেই আমরা, আমাদের ভাই, আমাদের সন্তানেরা।

এই কথাগুলো বলার একমাত্র কারণ হলো- দেশের এই বৈরী ছাত্ররাজনীতির কারনে জীবন বিনাশ হচ্ছে সাধারণ মানুষদের। সাধারণ বাবা-মা’র আসাধারণ ছেলেদের। যে মা নিজে না খেয়ে তার বাচ্চাদের খাওয়ায়, যে মা বৃষ্টিতে ভিজে আঁচল দিয়ে আড়াল করে সন্তানকে, ছেলের অসুখে যে মা সারারাত থাকে ছেলের শয্যাপাশে, প্রসবের অবর্ণনীয় বেদনা কেবল আর একজন পেটে ধারন করা মা’ই জানে।

আর বড় হয়ে যাওয়া সে সন্তানটিকে লেখাপড়া করতে গিয়ে ছাত্ররাজনীতি নামক অক্টোপাসের কবলে পড়ে অকালে প্রাণ হারাতে হয়। এ পর্যন্ত কতজন মায়ের বুক খালি হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে তার কি কেউ খোঁজ রেখেছে? যে রক্তে পা ভিজিয়ে খালেদা ক্ষমতায় এসেছেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসেছেন- সে রক্তের কথা কি তারা মনে রেখেছেন? যদি সন্তান হারানো সব মায়েরা তাদের কাছে এসে বিচার চাই- কি জবাব দেবেন তারা? নিজ সন্তানকে নিরাপদে রেখে আমাদের সন্তানের রক্তে ভেজা বাংলাদেশে তারা শাসক হয়ে শোষন চালিয়ে যাচ্ছেন গত ৪০ বছর ধরে। সন্তানহারা এক মায়ের বুকের যে জালা একবারও কি বুঝেছেন তারা? আর কত মায়ের বুক খালি করবেন আপনারা? আপনারা যে আমাদের সন্তান নিয়ে খেলছেন- এ খেলার শেষ কোথায়? আর কত সন্তানকে লাশ হয়ে পিতার কাঁধে উঠতে হবে?

একবার যদি নিজের সন্তানটি মিছিলে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরে আসতো তাহলে নিশ্চয় আপনাদের বোধদয় হতো। আমরা সাধারন মানুষেরা আপনাদের বোধদয়ের অপেক্ষায় আছি।

মাঝে মাঝে একলা চিত্তে ভাবি, আমাদের বাংলাদেশে কি কখনোই শুভক্ষণ আসবে না!

নাকি আজীবন পরাজিত হয়ে বিজয়ীর ভান করে সব সহ্য করে যাবো?

আমরা আকালে মেধার প্রয়াণ চাইনা।

আকলে জীবন সাঙ্গ চাইনা।

আমরা চাই- আমাদের নিরাপত্তা।

আমাদের সন্তানের নিরাপত্তা।

পাদটিকাঃ জীবনের চরম বাস্তবতা এবং সত্য কথা কিঞ্চিৎ তিতা হয়। সেই তিতা কথার ফসল “তিক্ত বচন”।

বিষয়: বিবিধ

১৫৪৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File