হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র হাদীছ সম্পর্কে মাওলানা মওদুদী বলেছেন

লিখেছেন লিখেছেন সেলিম জাহাঙ্গীর ২৯ মার্চ, ২০১৩, ১২:২৬:৫৮ রাত

হাদীস কিছু লোক থেকে কিছু লোক পর্যন্ত অর্থাৎ মানুষের মুখে মুখে বর্ণিত হয়ে আসছে। এসব বড়জোর সঠিক বলে ধারণা করা যায়; কিন্তু' দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা যায় না। আর একথা স্পষ্ট যে, আল্লাহর ধর্মের যেসব বিষয় এতো গুরুত্বপূর্ণ, যেগুলোর দ্বারা ঈমান ও কাফিরের পার্থক্য পরিষ্কার হয়ে যায়, সেগুলো কয়েকজন লোকের বর্ণনা নির্ভর করে মানুষকে বিপদাপন্ন করা আল্লাহ তায়ালা তিনি কখনো পছন্দ করতে পারেন না।” [রাসায়েল ও মাসায়েল, পৃষ্ঠা ৬৭]

মওদুদী বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে যা বলেছেন মর্মে অভিযোগ:

১। সাহাবায়ে কেরাম সমলোচনার বাহিরে নন। তাদের দোষ বর্ণনা করা যায়। সাহাবাদের সম্মান করার জন্য যদি ইহা জরুরী মনে করা হয় যে, কোনভাবেই তাদের দোষ বর্ণনা করা যাবে না তবে আমার (মওদুদী) দৃষ্টিতে ইহা সম্মান নয় বরং মূর্তি পূজা। (তরজুমানুল কুরআন ৩৫শ’ সংখ্যা, পৃষ্ঠা ৩২৭)

২। সাহাবাদের মধ্যে জাহেলিয়াতের বদ-স্বভাবের পুনরাবৃত্তি ঘটে।”

(তাফহীমাত ২য় খণ্ড, ১৫৫ পৃষ্ঠা)

৩। হযরত আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু খিলাফতের দায়িত্ব পালনে সম্পুর্ণ অযোগ্য ছিলেন”।

(তাজদীদ ও ইয়াহইয়ায়ে দীন: পৃষ্ঠা ২২,)

৪। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ওফাতের সময় ব্যাক্তিসম্মানের কু-মনোবৃত্তি হযরত উমর (রঃ)কে পরাভূত করেছিল।

(তরজুমানুল কুরআন, রবিউস সানি ৩৫৭ হিজরী)।

৫। একদিকে ইসলামী রাষ্ট্র সমপ্রসারণের দরুন কাজ দিন দিন কঠিনতর হচ্ছিল, অপরদিকে হযরত ওসমান যার উপর এই বিরাট কাজের বোঝা ন্যস্ত করা হয়েছিলো, তিনি ততটা যোগত্যা ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন না যা তার পূর্বসূরিদের ছিলো। এজন্য জাহিলিয়াত ইসলামী সমাজব্যবস্থায় অনুপ্রবেশের পথ পেয়ে যায়।” [তাজদীদ ও এহইয়ায়ে দ্বীন, ৩৩ পৃষ্ঠা]

“হযরত উসমান রাযিয়াল্লাহু আনহু এর মাঝে সজন-প্রীতির বদগুণ বিদ্যমান ছিল।

(খেলাফত ও মুলকিয়াত, পৃষ্ঠা ৯৯)

৬। হযরত আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু স্বীয় খেলাফতকালে এমন কিছু কাজ করেছেন যাকে অন্যায় বলা ছাড়া উপায় নেই। (খেলাফত ও মুলকিয়াত, পৃষ্ঠা ১৪৬/১৪৩)

৭। হযরত মুয়াবিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহু স্বার্থবাদী, গনিমতের মাল আত্মসাৎকারী, মিথ্যা সাক্ষ্যগ্রহকারী ও অত্যাচারী ছিলেন”।

(খেলাফত ও মুলকিয়াত, পৃষ্ঠা ১৭৩)

৮। মুজাদ্দিদ সম্পর্কে বক্তব্যঃ

মুজাদ্দিদের আগমন সম্পর্কে জনাব মওদুদীর বক্তব্য হচ্ছে, “ইতিহাসের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে জানা যায়, এ পর্যন্ত কোন ‘কামেল মুজাদ্দিদের’ আবির্ভাব হয়নি। ওমর ইবনে আব্দুল আজিজের এই মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো। কিন্তু তিনি কামিয়াব বা সফল হতে পারেননি। তারপর যত মুজাদ্দিদের আগমন হয়েছে, তাদের প্রত্যেকে কোন না কোন একটা বিশেষ বিভাগ কিংবা কয়েকটি বিভাগে কাজ করেছেন। কামেল মুজাদ্দিদ বা পরিপূর্ণ সংস্কারকের স্থান এখনো শূন্য রয়েছে।” [তাজদীদ ও এহইয়ায়ে দ্বীন, ৩১ পৃষ্ঠা]

৯। হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের সম্পর্কে বক্তব্যঃ

হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সমালোচনা প্রসঙ্গে মওদুদী বলেছে, “ইমাম গাজ্জালীর সংস্কারমূলক কাজে জ্ঞানগত ও চিন্তাগত দিক থেকে কয়েকটি ত্রুটিও ছিলো। এগুলো তিনটি শিরোনামে বিভক্ত করা যেতে পারে। প্রথমত ইলমে হাদীসে দুর্বলতার দরুন তাঁর গবেষণায় কতকগুলো ত্রুটি দেখা দেয়। দ্বিতীয়ত, তাঁর মধ্যে দর্শনের প্রাধান্য থাকায় কতকগুলো গবেষণায় ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখা দেয়। তৃতীয়ত তাসাউফ বা আধ্যাত্মবাদের প্রতি তাঁর প্রয়োজনাতিরিক্ত আকর্ষণ থাকার দরুন সৃষ্ট ত্রুটি-বিচ্যুতি।” [তাজদীদ ও এহইয়ায়ে দ্বীন, ৪৫ পৃষ্ঠা]

হযরত ইমাম আবু হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রসঙ্গে, “ইমাম আবু হানিফার ‘ফিকাহ’ ইসলামকে একটি স্থিতিশীল হিন্দু শাস্ত্রে রূপান্তরিত করেছে।” [তরজমানুল কোরআন, ১ম খণ্ড, ১৩৬ পৃষ্ঠা]

১০। ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে বক্তব্য:

“ইসলাম ধর্ম কেবল অস্ত্রবল প্রয়োগ করে মানুষকে মুসলমান বানায় একথা বলা যেমন ভুল, ঠিক তেমনি ইসলামের প্রচার ও প্রসারে অস্ত্রের কোন ভুমিকা নেই” একথা বলাও সঠিক নয়। প্রকৃত সত্য এই দুয়ের মাঝামাঝি অবস্থিত। আর তা হলো, অন্য সত্যতার ক্ষেত্রে যা ঘটেছে ইসলামের প্রচারে ও প্রসারে ঠিক একইভাবে মৌখিক তাবলীগ ও অস্ত্রের প্রয়োগ উভয়েরই ভূমিকা ছিল। তবলিগ বীজ বপনের কাজ করে আর তরবারি নিড়ানি দেয়। প্রথমে তরবারি মাটি নরম করে যেন এতে বীজ উৎগমের পরিবেশ সৃষ্টি হয়, এরপর তবলিগের জিহাদ ফিল ইসলাম, ১৭৪-১৭৫ পৃষ্ঠা]

১১। সত্য-মিথ্যা বলা সম্পর্কে বক্তব্য:

“বাস্তব জীবনে এমন কিছু চাহিদা রয়েছে যেগুলোর খাতিরে মিথ্যা বলা কেবল জায়েজই নয় বরং ওয়াজেব।” [তরজুমানুল কোরআন, ৫০তম খণ্ড, ২য় সংখ্যা, ১১৮ পৃষ্ঠা, শাবান ১৩৭৭ হিজরী]

১২। নিজের জীবন-ভিক্ষা করে ফাঁসির রশি এড়াতে পেরেছিলেন। রাওয়ারপিন্ডি জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা গোলামউল্লাহ খান এক বিবৃতিতে বলেন: “কোরআনের অপ-ব্যাখ্যা করা বইগুলো মওদুদী সাহেব প্রত্যাহার করে নেবেন বলে ওয়াদা করেছিলেন। কিন্তু তিনি তার কথা রাখেননি।"

১৩। জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য- মুসলমান হিসাবে আমি এ নীতির সমর্থক নই।”

(মুওদুদীর চিন্তাধারা/ মাওলানা আবদুল আওয়াল, প্রকাশ ১৯৬৯)

১৪। মওদুদী তার প্রচারিত আদর্শে এ কথাই বারবার প্রকাশ করেছেন, যে, তলোয়ারের জোরেই ইসলাম দুনিয়াতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, দাওয়াতে নয়...।”

(ড. মোহাম্মদ হাননান/ বাংলাদেশ ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস, ৪র্থ খন্ড)

ইসলামী রীতিনীতি

“পোশাক পরিচ্ছদ, চাল-চলন, আকৃতি-প্রকৃতি চুল কার্টিং ইত্যাদির ব্যাপারে বিধর্মীদের অনুকরণ করতে কোন দোষ নেই”। (তরজুমানুল কুরআন, ছফর সংখ্যা, ১৩৬৯ হিজরী)

১৫। প্রসঙ্গঃ দাড়ি কাটা ও রাখা

“দাড়ি কাটা ছাঁটা জায়িয। কেটে ছেঁটে এক মুষ্টির কম হলেও ক্ষতি নেই। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে পরিমাণ দাড়ি রেখেছেন সে পরিমাণ দাড়ি রাখাকে সুন্নত বলা এবং এর অনুসরণে জোর দেয়া আমার মতে মারাত্মক অন্যায়”। (রাছায়েল মাছায়েল, ১ম খণ্ড, ২৪৭ পৃষ্ঠা)

বিষয়: বিবিধ

১৪৩৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File