প্রকৃত মুসলিম সে-ই, যার হাত ও মুখ থেকে সবাই নিরাপদ
লিখেছেন লিখেছেন সেলিম জাহাঙ্গীর ১০ মার্চ, ২০১৩, ০৬:১৮:২৮ সন্ধ্যা
হায় জাতি কি শিক্ষা নিলে এই ১৪ শত বছর ধরে? মুসলমানরা কোরআনের জন্য জীবন দিতে রাজি অথচ সেই কোরআনের আলোয় জীবন গড়তে তারা নারাজ।
ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ হিসাবে যেকোন ইসলামী চিন্তা চেতনা সমৃদ্ধ দেশ আজ তেমন একটা চোখে পড়ে না। সকল জাতির মৌলবাদ, ধর্মীয় গোড়ামী, অযাচিত সাম্প্রদায়িকতা, ধর্ম ব্যবসা ও রাজনীতির নামে প্রতারণা, যাবতীয় বিষয়ের কারণ বলে অবিহিত। “মানুষের জন্যেই ধর্ম, ধর্মের জন্যে মানুষ নয়“। তবে ধর্ম নিরপেক্ষ বলতে নানান মত আর পথের অনুসরণ করে থাকেন স্ব স্ব ধর্মের আলেম-ওলামা, ধর্ম পুরহিত, ধর্ম জাজক ও ধর্ম গুরুরা। আমাদের দেশের সনামধন্য খ্যাতনামা অনেক আলেমকে যখন বলতে শুনি যে, ধর্ম নিরপেক্ষ বলতে কেবলী ইসলাম ধর্মকেই বলা হয়েছে, পৃথিবীতে কেবল ইসলাম ধর্ম;ই থাকবে আর কোন অন্য ধর্ম নয়; তখন ভাবতে হয় এমন বয়ান আসলো কোত্থেকে। যখন বড় বড় ডিগ্রীধারী বক্তাদের ডিগ্রী অনুপাতে প্রধান বক্তা হিসাবে এমন বক্তব্য পাওয়া যায়, তখন ভাবতে হয় প্রকৃত শিক্ষার আলো ছুয়ে যেতে পারেনি সেই সব স্ব ঘোষিত টাইটেলধারী আলেম ওলামাদের অন্তর। অনেক ওলামায়ে কেরামদের বয়ান শেষে মোনাজাত (প্রার্থনা) করতেও শুনেছি ঠিক এইভাবেঃ “হে আল্লাাহ্ তুমি ইহুদি খ্রীষ্টিয়ানদের ধ্বংস করে দাও”। জানিনা তারা এমন সাহস পায় কি ভাবে। এক ধর্মের অনুসারী হয়ে অন্য ধর্মের মানুষদের জন্য সরাসরী আল্লাহ্র কাছে ধ্বংস কামনা করা দেখে বোঝা যায় তারা উপ কিতাবগুলি বেশী পড়েছে বা সেই কিতাবের চর্চা করে। অভিসম্পাত করে এমন প্রার্থনা ইসলাম স্বীকৃত নয় তা কোরআন পড়লেই স্পষ্ট বোঝা যায়। অবশ্য যাদের অন্তরে আল্লাহ্ শীল মোহর মেরে দিয়েছে কিংবা চোখে পর্দা দিয়েছে তারা কোরআনের সেইসব আয়াতগুলি চোখে দেখবেন না। যে ধর্মের প্রবর্তক আজ থেকে ১৪ শত বছর পূর্বে মক্কার মরু প্রান্তরে তার সুচারু দৃষ্টি দিয়ে মাবুদকে দেখেছেন এবং অন্যকে তার দৃষ্টি দিয়ে সৃষ্টি কর্তাকে দেখাতে চেয়েছেন; বলে দিয়েছেন কোন সে পথে চললে তাঁকে দেখা যায়, কোন পথে চললে মানব জীবনে কল্যাণ বয়ে আসে, কোন সে শান্তি পথ। সেই সহজ সরল মানুষটিকে অনুসরণ করতে হলে আগে ভালো করে বুজতে হবে মুহাম্মাদ (সাঃ) আসলে কে, কেন ও কি কারনে তাঁর আবির্ভাব। মুহাম্মাদ (সাঃ) যাকে চেনাতে যে বিষয় নিয়ে লড়েছে, সংগ্রাম করেছে আমরা আসলে তাঁকে চিনেছিকি? এই "তাঁকে" চিনতে ও চেনাতে পৃথিবীর শুরু থেকে লড়ছে হাজার হাজার আল্লাহ্ প্রেরিত নবী-রাসুল, গাউস কুতুব। এই পৃথিবীতে আমরা না জেনে না বুঝে কান কথা শুনে অনেক ঘনাটা ঘটিয়ে থাকি যার জন্য কে কাকে দায়ী করবে সমাপ্তিতে সেটা আলোচনার বিষয়ে মানুষ ঝড় তোলে চায়ের স্টলে, বিভিন্ন গল্প আড্ডায়। কেন এটা হলো কেনইবা ওটা হলো না, নানান কথা গুঞ্জনে পৃথিবীর আদীথেকে চলে আসছে সত্য-মিথ্যা, ভালো-মন্দ, সাদা-কালোর লড়াই। কেন এলড়াই তার গোড়ার খবর কেউ না নিয়েই ছুটেছে চিলে কান নিলো বলে। এই পৃথিবীতে যখনি কোন পাগোল, বুদ্ধিহীন মানুষ, মুহাম্মাদ (সাঃ) কে নিয়ে ব্যঙ্গ কার্টুণ, ব্যঙ্গ চিত্র ও কুরুচি পূর্ণ মন্তব্য করেছে সাথে সাথে পৃথিবী জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে । ঝড় উঠাটাই কিসাভাকি? যদি বলেন হ্যাঁ তবে বলতে হয়, কেন আপনার কি ধারনা তাদের এই সব কারণে ইসলাম বিনিষ্ট হবে? কখনো নয়। যখন কেউ কোরআন কে হেউ করেছে কিংবা পুড়িয়েছে সঙ্গে সঙ্গে রাজপথে নেমেছে এই পাগোলপারা ধর্মান্ধ মানুষগুলো। কেন ধর্মান্ধ মানুষ বললাম? এই কারনে বললাম যে কোরআন রক্ষার জন্য তুমি জীবন বাজি রেখে মরতে রাজি আছো, অথচ সেই কোরআন কে তুমি কতটা মানছো? কেন কোরআন কে মানছো না, জানছো না। কোরআন যদি তোমার রক্ষা কবজ হয়; ভালো লাগা ও ভালো বাসার কিতাব হয়, তাহলে তাকে আঁকড়ে ধরছো না কেন? তুমি কোরআনের জন্য মরবে অথচ কোরআন মানবে না এটা কেমন মুসলমান তুমি ভাবতে হবে। কোন পাগোল আমার এবং তোমার ধর্ম নিয়ে পাগলামী করলো আর তুমি সেই পাগোলের সাথে ঝাপিয়ে পড়লে, নিজের ধর্ম রক্ষা করতে। তোমাদের কি ধারনা কোন পাগোল কারো ধর্ম বিনাশ করতে পারে? পাগোলের প্রতি তোমার ক্ষোভ প্রাকাশ করতে নিজের দেশের সম্পদকে ভাংচুর করলে, জ্বালাউ-পোড়াউ করলে এটা কি তোমার ধর্মের আকিদা? এটা কোন ধর্মের‘ই শিক্ষা হতে পারে না। কোন দেশে যদি কেউ পাগলামী করে, কোন ধর্মকে কটাক্ষ্য করে সেটা সেই দেশের ভক্তদের দায়ীত্ব প্রতিবাদ করা গণতান্ত্রিক উপায়ে। কোন পাগোলের পলাপে ধর্ম বিনাশ হয় না। ধর্মের শিকড় ভূগর্ভের হার্টপয়েন্ট থেকে উঠে আসে বলেই তাকে ছিড়ে ফেলা যায় না। জ্বালাউ-পোড়াও হত্যা ও লুটতরাজ করে স্ব-ধর্মের প্রতি ভালো বাসা জাহির করা যায় না, এটা নিতান্ত্যই অনুধাবনের বিষয়। ভালো বাসতে হলে আগে নিজকে চেনো, ধর্মকে জানো তারপর সেই ধর্মকে দেহে লালন করো, তারপর তাকে দেহে ধারন করে পালন করো। কোরআন ও নবী-রাসুল রক্ষার জন্য মরবে অথচ কোরআন মানবে না? এটা একটা মূর্খের মত কাজ বইতোনয়। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)। তিনি বলতেন: “আদ-দীন আন-নাসীহা”; অর্থাৎ কল্যাণকামনাই ধর্ম। মানবপ্রেম আর দয়ার আদর্শ প্রচার’ই ছিলো তার মূল লক্ষ্য। তিনি কেবলী বলতেন, “শ্রেষ্ঠ মানুষ ওই ব্যক্তি, যে মানুষের কল্যাণ করে।” আর “প্রকৃত মুসলিম সে-ই, যার হাত ও মুখ থেকে সবাই নিরাপদ”। কোরআন ও রাসুল (সাঃ) যদি তোমার মূল আকিদা হয় তাহলে তাকে দেহে ধারন কর। কে কি বললো তা নিয়ে তুমি তোমার নিজের ক্ষতি ডেকে আনবা না। একটি অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে আর দশটি অন্যায় তোমরা করোনা। নিজ দেহে হৃদয়ের সাথে মহব্বত স্থাপন করো, জাগ্রত করো বিবেক; আমরা যেন প্রতিবাদ করি ধর্যের সাথে।
মহব্বত সব সময় ধর্য ধরে, দয়া করে, হিংসা করে না, গর্ব করে না,অহংকার করে না, খারাপ ব্যবহার করে না, নিজের সুবিধার চেষ্টা করে না, রাগ করে না, কারও খারাপ ব্যবহারের কথা মনে রাখে না,খারপ কিছু নিয়ে আনন্দ করে না বরং যা সত্য তাতে আনন্দ করে। মহব্বত সব কিছইু সহ্য করে, সকলকেই বিশ্বাস করতে আগ্রহী, সব কিছুতে আশা রাখে আর সব অবস্থায় স্থির থাকে। এই মহব্বত কখনও শেষ হয় না।
#
বিষয়: বিবিধ
১৩০৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন