জয় বাংলার কেরামতি
লিখেছেন লিখেছেন প্রেসিডেন্ট ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০৮:১৩ দুপুর
(কিঞ্চিৎ ২০+, নিজ দায়িত্বে পড়িবেন)
রমিজ সরকার উঠতি যুব নেতা। তিনবারের চেষ্টায়ও এসএসসি’র গন্ডি পেরুতে না পারিয়া সরকারি দলের রাজনীতিতেই নাম উঠাইলো। প্লেবয় চরিত্রের রমিজ ক্লাস টেনে পড়িবার সময়ই মেয়েঘটিত কারণে দুইবার শাস্তি পাইয়াছিল। প্রথমবার স্কুলের মেয়েদের কমনরুমের বাথরুমে গোপন ক্যামেরা লাগানোর সময় হাতেনাতে ধরা পড়িলো। শাস্তি হিসেবে প্রধান শিক্ষক স্কুলের দপ্তরিকে দিয়ে জুতা পড়িয়ে মাঠময় ঘুরালেন। কুকুরের বাঁকা লেজ কি সহজে সোজা হয়? এই ঘটনার দুই মাস অতিবাহিত হওয়ার পরই আর একটি ঘটনায় তার ব্যাপক উত্তম মধ্যম জুটিল। স্কুলের মধ্যাহ্নভোজনের বিরতিতে ক্লাসের সুন্দরী মেয়েটিকে ক্লাসরুমে একা পাইয়া রমিজ জড়াইয়া ধরিল। মেয়ে হতচকিত হইয়া চিৎকার করিবার পূর্বেই ক্লাসে আরো কয়েকজন ছেলেমেয়ের প্রবেশ। এবার আর যায় কোথায়! সকলে মিলিয়া এমন কিলানি দিলে যে সেই কিলানির চোটে রমিজকে মাসখানেক বিছানায় কাটাইতে হইলো। মাইর খাওয়ার কারণে ঘটনার শিকার মেয়ে দয়াপরবশ হইয়া প্রধান শিক্ষকের কাছে আর অভিযোগ জানাইনি বলিয়া রমিজের সে যাত্রা রক্ষা। নইলে স্কুল হইতে বহিষ্কার হইতে হইতো।
রমিজ সরকার স্থানীয় নেতা খোকন ভাইয়ের খুব আস্থাভাজন। যে কোন হাঙ্গামায় সে সবার আগে। জয় বাংলা তার রক্ষাকবচ। নেতাও খুবই খুশি রমিজ এর পারফরম্যান্সে। রমিজকে টাকা পয়সা দিতে হয় না বরং রমিজ থেকেই তিনি মাসিক একটা মাসোহারা পান। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ হতে রমিজ তার দলবল নিয়ে সপ্তাহ ভিত্তিতে টাকা তোলে। সিএনজি স্ট্যান্ড ও বাসস্ট্যান্ড হতে চাঁদা আসে দৈনিক ভিত্তিতে। এছাড়া কেউ দালান তুলিবে, নতুন ব্যবসা শুরু করিবে কিংবা কেউ প্রবাস হতে আসিয়াছে- কারো রেহাই নেই। রমিজ বাহিনীকে তাদের মোটা অংকের চাঁদা দিতে হয়। বড় পার্টির সন্ধান পেলে মাঝে মাঝে ডাকাতি, ছিনতাই, কিডন্যাপ এর কাজও করে রমিজ বাহিনী। পুলিশের কাছে অভিযোগ করে অনেকের হীতে বিপরীত হয়েছে। স্থানীয় ওসিকে নিয়মিত মাসিক মাসোহারা দেয় রমিজ। দলের নেতা, থানার ওসি’র কৃপাদৃষ্টি রমিজের উপর তাই আছেই। রমিজের কার্যক্রম এগিয়ে যায় দুর্দান্ত গতিতে।
ইদানীং নেতার বাড়িতে রমিজের আগমন বাড়িয়া যায়। যতটা না রাজনীতির কারণে তারচেয়ে বেশি নেতার সুন্দরী বউয়ের টানে। নেতার চরিত্র সম্পর্কেও রমিজ জানে। তার মতোই এরশাদীয় চরিত্র। নেতার বাগান বাড়িতে নিয়মিতই আসে দেহপসরাণিরা। সেখানে রমিজও ভাগ বসায়। তবে নেতার বউয়ের রূপ তাকে পাগল বানিয়ে দেয়। নেতার বয়সের তুলনায় বউটাকে বালিকাই বলা যায়। রমিজ ফন্দি আঁটে।
এলাকার মন্ত্রীর বাড়িতে মাসিক বৈঠক হয়। খোকন সেখানে যোগ দিতে ঢাকায় যায়। ফিরতে রাত হয়। রমিজ এর দলের ছেলেরা জায়গামত তৈরি থাকে। কোপাকুপিতে নেতার পা একটি প্রায় বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এক হাতের রগ কেটে দেয়। কিছুক্ষণ পর আরো কয়েকজন নিয়ে রমিজ আসে ঘটনাস্থলে উপকারীর ভূমিকা নিয়ে। সবই ছকে আঁকা। নেতাকে হাসপাতালে নেয়। ছোট শহরে দ্রুত খবর ছড়িয়ে পড়ে।
রমিজের নেতৃত্বে প্রতিবাদী মিছিল বের হয় সকাল বেলায়। স্থানীয় রেলস্টেশন ব্যাপক ভাংচুর হয়। ভাঙ্গা হয় দোকানপাট, গাড়ি। মন্ত্রীকে প্রধান অতিথি করে পরদিন প্রতিবাদ সভার আয়োজন হয়। জাতীয় পত্রিকায়ও জামাত শিবির আর বিএনপিকে দায়ী করে নিউজ হয়। এত নিশ্চিত করে খবর ছাপা হয় যেন সাংবাদিকের সামনেই কোপানো হইয়াছিল। পোস্টারে পোস্টারে ছেঁয়ে যায় পুরো শহর।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
“জামাত শিবির রাজাকার
এই মুহুর্তে বাংলা ছাড়।”
“খোকন ভাইয়ের কিছু হলে,
জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে।”
“রগ কাটা জামাত শিবির,
ক্ষমা নাই, রেহাই নাই।”
থানার ওসি ব্যাপক তৎপর। ঘটনা ঘটার ১২ ঘন্টার মাঝেই জামাত বিএনপি’র থানা পর্যায়ের ৭/৮ জন নেতাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসলো। সাধারণ সমর্থক ও অরাজনৈতিক লোক মিলে গ্রেপ্তার করিলো আরো জনা পঞ্চাশেক যাদের অনেককেই মামলার ভয় দেখিয়ে লাঠির বাড়ি দিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায় করিয়া পরে ছাড়িয়া দেয়।
রমিজও তাহার দায়িত্ব পালনে ত্রুটি করে না। নেতার বাড়িতে তাহার ঘন ঘন যোগাযোগ বাড়িয়া যায়। দৈনিক কয়েকবার করিয়া। নেতার সুন্দরী বউ একাই বাড়িতে.............
(চলিবে---------চাঞ্চল্যকর ও উত্তেজনাকর কাহিনী বর্ণনা করিয়া পরের পর্বেই সমাপ্ত হইবে)।
বিষয়: রাজনীতি
১০৩৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন