ভয়ে মরে কাপুরুষ, লড়ে যায় বীর
লিখেছেন লিখেছেন প্রেসিডেন্ট ১০ মে, ২০১৬, ০৪:১৪:০২ বিকাল
শাহবাগের নাস্তিক নেতা ইমরান সরকারের দম্ভোক্তিটি খুব কানে বাজছে, “নিজামীর ফাঁসির মাধ্যমে জামায়াতের রাজনীতির কবর রচনা হলো”। করুণাও হয় না, শুধুই আফসোস এদের জন্য। এদের হৃদয়ে মোহর পড়ে গিয়েছে। হেদায়াত এদের নসীবে নেই।
মুমিনের প্রকৃত সফলতাতো আখিরাতেই বরাদ্দ রেখেছেন সর্বশক্তিমান মহানস্রষ্টা আল্লাহপাক। ফাঁসি দিয়ে দাবিয়ে রাখা যাবে? এক এক জন কাদের মোল্লা, নিজামী, সাঈদী, মুজাহিদ, কামারুজ্জামান আরো লক্ষ লক্ষ সিপাহশালার তৈরি করে গিয়েছেন। মহানস্রষ্টার সান্নিধ্যে হাসিমুখে যেতে তাদের কোন দ্বিধা নেই, সংকোচ নেই। মৃত্যুদন্ড মাথায় নিয়েও তাই তারা নির্ভীক ভাবে শির উঁচু করে বলতে পারেন, “আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না”।
অসত্যের কাছে কভু নত নহে শির,
ভয়ে মরে কাপুরুষ, লড়ে যায় বীর।
শাহবাগী নাস্তিকদের কথা আর বলাই বাহুল্য। কিন্তু তাজ্জব হয়ে যাই, যখন আলেম দাবিদার পোশাকী লেবাস ব্যক্তিদের নির্লিপ্ততা দেখে। কেউ কেউ তো আবার মওদূদী ফির্কা বলে খুশীতে বাকবাকুম। এরা আল্লাহর কাছে পরকালে কী জবাব দিবে। দেওবন্দী আলেমরা মওদূদীর (রহ)একটি ভুল আবিষ্কার করলেন, তিনি নাকি হযরত মুআবিয়া(রাঃ) এর যথাযথ মর্যাদা দেন নি। সেই হযরত মুআবিয়ার (রাঃ) জীবনী হতে একটি ঘটনা বলি।যখন হযরত আলী ও হযরত মুয়াবিয়া (রা.) এর মধ্যে যুদ্ধের ময়দান গরম ছিল, তখন রোমের খৃষ্টান রাজার পক্ষ থেকে হযরত মুয়াবিয়া (রা.) কে তাদের দলে যোগ দেয়ার জন্য ও তাঁকে সাহায্য সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তাব দেয়া হল।
রোম সম্রাট হযরত মুয়াবিয়ার নিকট এ মর্মে চিঠি লিখল,
“হযরত আলী (রা.) আপনাকে কষ্ট দিচ্ছেন আপনার জন্য সৈন্য পাঠাতে প্রস্তুত আছি।” রোম সম্রাটের চিঠির উত্তরে হযরত মুয়াবিয়া (রা.) লিখলেন,
“হে কুকুর! আমার ও হযরত আলী (রা.) এর মধ্যে যে মতভেদ দ্বারা তুই ফায়দা লুটতে চাচ্ছিস? মনে রাখিস, তুই যদি হযরত আলী (রা.) এর দিকে বাঁকা নজরে তাকাস, তাহলে হযরত আলী (রা.) এর বাহিনীর সৈনিক হয়ে, সর্বপ্রথম আমি মুয়াবিয়া তোর চোখ ছিদ্র করে দিব।”
তোমরা যারা নিজেদের মুসলিম পরিচয় দিতে লজ্জা পাও, সালাফীত্বে তৃপ্তি পাও তারা কী পারবে এ সহীহ হাদীস অস্বীকার করতেঃ عن أبي سعيد الخدري رضي الله عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول "من رأى منكم منكرا فليغيره بيده. فإن لم يستطع فبلسانه. ومن لم يستطع فبقلبه. وذلك أضعف الإيمان
তোমরা যদি কোন গর্হিত কাজ হতে দেখ তবে প্রথমে শক্তি প্রয়োগ করে প্রতিরোধ কর, যদি তা সম্ভব না হয় তবে মুখ দ্বারা প্রতিরোধ কর, যদি তাও সম্ভব না হয় তবে অন্তর দিয়ে প্রতিরোধ কর । আর এটা হল ঈমানের সর্বশেষ স্তর ।
যারা বলছে, জামায়াত ব্যর্থ তাদের কাছে আমার প্রশ্ন সফলতা ব্যর্থতা পরিমাপ করেছেন আপনি কোন আঙ্গিকে? আল্লাহ কি পরকালে আপনাকে দুনিয়াতে সফলতা/ব্যর্থতার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করবেন নাকি আল্লাহর দ্বীন আল্লাহর জমিনে কায়েমের চেষ্টা করেছেন কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে? সে প্রশ্নের কী জবাব আছে আপনাদের কাছে সম্মানিত নিরপেক্ষ নির্লিপ্ত আলেমগণ?
আসুন, এবার এক নজরে দেখে নিই জামায়াতে ইসলামীর সাফল্যগুলিঃ
১। ধর্মহীন শিক্ষাব্যবস্থার মাঝে হাবুডুবু খাওয়া মুসলমানের সন্তানেরা যখন কম্যুনিজমের গালভরা বুলিতে বিভ্রান্ত হয়ে ধাবিত হচ্ছিল, তখন জামায়াত শিবির তাদের মাঝে জ্বেলে দেয় ইসলামের অতি উজ্জ্বল আলোটা। কোন দেওবন্দী, কোন সালাফী কিংবা কোন পীর আওলিয়া তখন স্কুল/কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে দ্বীনের দাওয়াত পৌছায় নি। সে আলোয় আলোকিত হয়েছে লক্ষ লক্ষ তরুণ। বিপদগামী হওয়া লক্ষ তরুণও পেয়েছে আলোর দিশা। বিভ্রান্ত হয়ে কম্যুনিজমের পতাকাতলে ভিড় করা লক্ষ তরুণও ফিরে এসেছিল সঠিক পথেই।
২। পবিত্র কুরআনের বাণী-“নিশ্চয়ই আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল এবং সুদকে হারাম করেছেন”। হাদীসে সুদের পাপ যে কত বড় গুনাহ সেটা সুস্পষ্ট করা হয়েছে। এত বড় পাপ হতে মুসলমানদের হেফাজত করার কোন মিশন নেয় নি আজকে জামায়াতকে গালি দেয়া সে আলেমরা। জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোক্তারাই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ইসলামী ব্যাংক-ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড।
৩। নানা ছলে নানা রূপে পৌত্তলিকতার এক প্রচন্ড স্রোতে বিলীন হয়ে যাচ্ছিল দেশের সংস্কৃতি, সাহিত্য আর শিক্ষাব্যবস্থা। জামায়াত শিবির এ বিষয়ে শুরু হতেই জাতিকে সচেতন করার কাজ করেছিল বক্তৃতায়, লেখনীতে। এছাড়া ইসলামকে প্রায়োরিটি দিয়ে প্রচুর শিশু কিশোর সংগঠন তারা গড়ে তুলেছিল। ইসলামী সাহিত্যের এক বিশাল সমাহার হয়েছে এ দেশে জামায়াতে ইসলামীর একঝাঁক দক্ষ, ত্যাগী ও মেধাবী নেতা কর্মীর মেহনতেই।
৪। ইসলাম ও মুসলমানদের ইতিহাস হচ্ছে আলো ঝলমল এক গৌরবোজ্জ্বল স্বর্ণালী ইতিহাস। ইংরেজ আর ব্রাহ্মণ্যবাদ এর ষড়যন্ত্র করে সে মুসলমানদের গন্ডি “মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত” সীমাবদ্ধ করে দেয়। এ সীমাবদ্ধতা হতে মুসলমানদের আবার জাগিয়ে তোলে যে সংগঠন সে সংগঠনের নাম জামায়াতে ইসলামী।
৫। দেশে চিকিৎসা, শিক্ষা, সামাজিক সংগঠন সহ অগণিত সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে জামায়াতে ইসলামীর নেতা কর্মীদের দক্ষ হাতে।
৬। ইসলামের বিকৃত রূপকে চিহ্নিত করে আধুনিক শিক্ষিতদের মাঝে পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের চর্চার মাধ্যমে ইসলামের সঠিক রূপ তুলে ধরেছে জামায়াতে ইসলামী।
এভাবে পয়েন্ট আকারে লিখলে সারাদিনেও লিখে শেষ করা যাবে না। কয়েকটি পয়েন্ট তুলে ধরলাম মাত্র।
পবিত্র কুরআনে বর্ণিত শনিবারের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন ও এ সংক্রান্ত শাস্তির ঘটনাটা বলে এ লেখার ইতি টানছি। হযরত দাউদ (আঃ) আল্লাহর নির্দেশে বনী ইসরাঈলীদের শনিবার মাছ শিকার করতে নিষেধ করেছিলেন। বনী ইসরাঈলীদের একটি অংশ চতুরতা অবলম্বন করলো। তারা শনিবার বাঁধ দিয়ে মাছগুলি আটকিয়ে রাখতো এবং পরদিন সেসব শিকার করতো। আবার এক দল নিষেধাজ্ঞা মান্য করেছিল কিন্তু যারা অমান্য করেছিল তাদের নিষেধ করে নি। আর একদল তাদের এ কাজের প্রতিবাদ করেছিল এবং তাদের এটি করতে বারণ করেছিল। একসময় আল্লাহর আযাব এল। তাদের বাঁদরামির শাস্তি তারা পেয়ে গেল। সবাই হয়ে গেল ঘৃণিত বানর শুধুমাত্র শেষোক্ত দল ছাড়া যারা এ নিষিদ্ধ কাজে বাধা দিয়েছিল, নিষেধ করেছিল কিংবা প্রতিবাদ করেছিল।
পবিত্র কুরআনের এ ঘটনা হতে এ শিক্ষাই আমরা পাই যে, শুধু অপরাধ বা অন্যায় করা নয়; অন্যায়, জুলুম দেখে নির্লিপ্ত কিংবা নিরপেক্ষ থাকাও মহাঅপরাধ।
وَلَقَدْ عَلِمْتُمُ الَّذِيْنَ اعْتَدَوْا مِنْكُمْ فِي السَّبْتِ فَقُلْنَا لَهُمْ كُوْنُوْا قِرَدَةً خَاسِئِيْنَ- فَجَعَلْنَاهَا نَكَالاً لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهَا وَمَا خَلْفَهَا وَمَوْعِظَةً لِّلْمُتَّقِيْنَ (بقره ৬৫-৬৬)-
‘তোমরা তাদেরকে ভালভাবে জানো, যারা শনিবারের ব্যাপারে সীমালংঘন করেছিল। আমরা তাদের বলেছিলাম, তোমরা নিকৃষ্ট বানর হয়ে যাও’। ‘অতঃপর আমরা এ ঘটনাকে তাদের সমসাময়িক ও পরবর্তীদের জন্য দৃষ্টান্ত হিসাবে এবং আল্লাহভীরুদের জন্য উপদেশ হিসাবে রেখে দিলাম’ (বাক্বারাহ ২/৬৫-৬৬)।
وَإِذَ قَالَتْ أُمَّةٌ مِّنْهُمْ لِمَ تَعِظُونَ قَوْماً اللّهُ مُهْلِكُهُمْ أَوْ مُعَذِّبُهُمْ عَذَاباً شَدِيداً قَالُوْا مَعْذِرَةً إِلَى رَبِّكُمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ- فَلَمَّا نَسُوْا مَا ذُكِّرُوْا بِهِ أَنجَيْنَا الَّذِينَ يَنْهَوْنَ عَنِ السُّوءِ وَأَخَذْنَا الَّذِينَ ظَلَمُوْا بِعَذَابٍ بَئِيسٍ بِمَا كَانُوْا يَفْسُقُونَ- (الأعراف ১৬৪-১৬৫)-
‘আর যখন তাদের মধ্যকার একদল বলল, কেন আপনারা ঐ লোকদের উপদেশ দিচ্ছেন, যাদেরকে আল্লাহ ধ্বংস করে দিতে চান কিংবা তদের আযাব দিতে চান কঠিন আযাব? তারা বলল, তোমাদের পালনকর্তার নিকট ওযর পেশ করার জন্য এবং এজন্য যাতে অবাধ্যরা সতর্ক হয়’। ‘অতঃপর তারা যখন উপদেশ ভুলে গেল, যা তাদেরকে দেওয়া হয়েছিল, তখন আমরা সেসব লোকদের মুক্তি দিলাম, যারা মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করত এবং পাকড়াও করলাম যালেমদেরকে নিকৃষ্ট আযাবের মাধ্যমে তাদের পাপাচারের কারণে’ (আ‘রাফ ১৬৪-৬৫)।
এতে স্পষ্ট বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধকারীদের পক্ষাবলম্বন না করে নিরপেক্ষতা অবলম্বনকারী ব্যক্তিগণ যালেম ও ফাসেকদের সাথেই আল্লাহর গযবে ধ্বংস হবে।
অতএব হকপন্থীদের জন্য জীবনের সর্বক্ষেত্রে আমর বিল মা‘রূফ ও নাহি ‘আনিল মুনকার ব্যতীত অন্য কোন পথ খোলা নেই।
বিষয়: বিবিধ
২২৭২ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন