জনি ভাই, আমরা জেগে আছি
লিখেছেন লিখেছেন প্রেসিডেন্ট ২১ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৪:৩৯:৪৫ বিকাল
লক্ষ কন্ঠের গগন বিদারী শ্লোগান-
ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই,
খুনি জঙ্গি দেশদ্রোহীদের ফাঁসি চাই।
বিভিন্ন প্লেকার্ডে, ব্যানারে শোভা পাচ্ছে খুনীদের ছবি, নাম ও তথ্য প্রমাণ। খুনীদের উস্কানিদাতা ও নির্দেশদাতাদের বিরুদ্ধেও শ্লোগান হচ্ছে। বড় স্ত্রীন লাগিয়ে সেইসব খুন, ধর্ষণ ও নৈরাজ্যের ঘটনাগুলির প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হচ্ছিল।
ক্রিমিনালদের নানা নামঃ কানা মিজান, মইত্যা দালাল, মালু হনুমান, কুত্তা ইনু, টাক্কু কামলা, চুলটানা চক্রবর্তী, মখা পিলার, ঝাপড় ষাঁড়, কৃষ্ঞপদ রায়, কালিদাস, শুয়েরেন্দ্র কে, চুন্নী রাহা, প্রদীপ কুমার সাহা, বিপ্লব কুমারসহ শত শত খুনী।
ছয় বছরে এরা খালি করেছে লাখো মায়ের বুক। বাবার কাঁধে তুলে দিয়েছে সন্তানের লাশ, অকাল বিধবা করেছে হাজারো তরুণীকে, সন্তান হারিয়েছে প্রিয় বাবাকে। হাজার হাজার নারী নির্যাতন এর ঘটনাও ঘটেছিল।
স্বজন হারানো লোকেরা নির্মম হত্যার শিকার স্বজনদের ছবি নিয়ে বিচার দাবি করে মিছিল দিচ্ছেন।
লোকে লোকারণ্য চারিদিক। মূল মঞ্চ প্রেস ক্লাব চত্ত্বর এ চলছে বিশিষ্ট জনদের বক্তৃতা বিবৃতি আর স্বজনহারানো লোকরা পালাক্রমে স্বজন হারানোর সে বিভীষিকাময় দিনগুলির কথা বর্ণনা করে যাচ্ছে। তাঁদের সকলের চোখে অশ্রু-এ অশ্রু বেদনার, এ অশ্রু বিচারের আর্তি, এ অশ্রু প্রতিশোধ নেশার। কেউ হাউমাউ করেও কাঁদছেন।
লোকের মিছিল প্রেসক্লাব পেরিয়ে শাপলা চত্বর, গুলিস্তান, নয়াপল্টন, শাহবাগ গিয়ে মিশেছে।
মুনিয়া পারভীন মণীষাও এসেছে তিনবছরের একমাত্র সন্তান কামুরজ্জামান রনি কে নিয়ে। এসেছে স্বামী হত্যার বিচার নিয়ে।
মাত্র কয়দিন আগের কথা। রনি সবে কথা বলতে শিখেছে।
বলেঃ আম্মি, আমাল বাবা কই?
মণীষাঃ বাবা আল্লাহর কাছে চলে গেছেন।
রনিঃ আমিও আল্লাহর কাছে তাবো। বাবাল কাছে তাবো।
ছেলেকে বুকে চেপে ধরে হুহু করে কেঁদে ওঠে মণীষা। সেই বীভৎষতার কথাটি এতটুকুন শিশুকে বলতে পারে না মণীষা।
সেই অরাজকতার শেষ হয়েছে অবশেষে। নতুন নির্বাচন, নতুন সরকার। কিন্তু মণীষার হৃদয়ে দগদগে ক্ষত রয়ে গেছে। এই অকাল বৈধব্যের যন্ত্রণা সইতে যত কষ্ট তার চেয়েও বেশি কষ্ট স্বামী হত্যার বিচার না পাওয়া। নতুন সরকারেরও এসব অত্যাচারের বিচারের প্রতি খুব আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
স্বজন হারানো লোকেরা একসময় বিচারের দাবিতে বিক্ষোভের ডাক দিল। গত এক সপ্তাহ ধরে চলছে বিক্ষোভ। মণীষার হৃদয়ে তুষের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। আজ বিক্ষোভে সেও যোগ দিয়েছে। মঞ্চে চলছে জ্বালাময়ী ভাষণ। স্বজনহারাদের আর্তনাদ।
শাপলা চত্ত্বরে যেসব আলেমদের হত্যা করা হয়েছে তাঁদের স্বজনরাও বর্ণনা করছেন স্বজন হারানোর বেদনা।
সাতক্ষীরা হতে এসেছেন এক মধ্যবয়সী এক মহিলা।
তিনি মাইকে বর্ণনা করছেনঃ “ দুই কন্যার পর ছিল আমার একমাত্র ছেলে। অল্প বয়সে বিধবা হওয়ার পর এই ছেলেকে অনেক কষ্টে বড় করেছি। অনেক মেধাবী ছিল আমার ছেলে। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তো বুয়েটে। ছুটি নিয়ে বাড়ি এসেছিল। তার আর পড়তে যাওয়া হলো না। যৌথবাহিনী তুলে নিয়ে ক্রসফায়ার.......”। মহিলার হৃদয়বিদারক কান্নায় বাকি কথাগুলি আর বোঝা যাচ্ছিল না।
চট্টগ্রাম হতে এসেছেন এক ভদ্রলোক। তাঁর ছেলেকে কিভাবে দুই চোখ উপড়ে ফেলে হত্যা করা হয়েছে বর্ণনা করতে গিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ফেললেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ হতে আগত এক ব্যক্তি বললেনঃ “আমার ছেলের মুখে দাঁড়ি ছিল। এটা নাকি তার অপরাধ। হিন্দু পুলিশ সেই দাঁড়ি চেপে ধরে ছেলেকে মাটিতে ফেলে আমার চোখের সামনে দশটি গুলি করেছে। আমার চোখের সামনেই ছটফট করতে করতে মারা গেল ছেলেটি। ঐ অবস্থাতেই বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিল পুলিশ আর স্থানীয় গুন্ডারা। আমি কেন সেদিন মরলাম না...........।”
ছেলেকে নিয়ে মণীষাও একসময় স্টেজে ওঠে। প্রতিশোধের আগুন তাঁর চোখেমুখে। গুছিয়ে কথা বলার সময় নয় এটা। শুধু খুনির নামটা বলে যাবে আজ।
শুরু করেঃ “কেন ওরা আমার স্বামীকে হত্যা করলো? কি অপরাধ ছিল আমার স্বামীর? আমি অন্তঃসত্ত্বা ছিলাম। গ্রেপ্তারকৃত ছোট ভাইকে দেখতে সেদিন সকালে কেন্দ্রীয় কারাগারে যান আমার স্বামী নুরুজ্জামান জনি। ফিরে এসে আমাকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু তার আর ফেরা হয়নি। ফেরা হবে না আর কোন দিন। তার এই সন্তানকে দেখে যেতে পারেনি জনি। সন্তান দেখেনি তার বাবার মুখ। একটি দুইটি নয়, ১৬ টি গুলির দাগ ছিল আমার স্বামীর শরীরে। হে আল্লাহ তুমি এই জানোয়ারদের বিচার করো। আমার স্বামীর খুনীর নাম কৃষ্ঞপদ রায়। আমি তার ফাঁসি চাই.........”
আর বলতে পারে না মণীষা। হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। তিন বছরের শিশু রনিও এতক্ষণে বুঝে গেছে তার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে।
দুই হাত উঁচিয়ে বড়দের মতো খুব দৃঢ়ভাবে বলে- “খুনীদের ফাঁসিচাই।”
(নুরুজ্জামার জনি ভাইকে আল্লাহ শাহাদাতের মর্যাদা দিন। তাঁর স্ত্রী, বাবা মা ও স্বজনদের ধৈর্য্য ধরার তাওফিক দিন। আমীন।)।
বিষয়: রাজনীতি
২২০৯ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
হত্যাকারিদের কোন মানচিত্র থাকেনা,নেই।
ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই খুনি জঙ্গি দেশদ্রোহীদের ফাঁসি চাই।
ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই খুনি জঙ্গি দেশদ্রোহীদের ফাঁসি চাই।
মন্তব্য করতে লগইন করুন