বিদআত (পর্ব ২)

লিখেছেন লিখেছেন প্রেসিডেন্ট ২২ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৩:০৯:৫৪ দুপুর

পূর্ববর্তী পর্বের লিংকঃ বিদআত (পর্ব এক)

ধারবাহিকভাবে আমাদের সমাজে জেঁকে বসা বিদআতসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করবো ইনশাল্লাহ। এ পর্বে ‌আমাদের দেশে সবচেয়ে ভয়ংকর বিদআত 'পীর মুরীদি' সম্পর্কে আংশিক আলোচনা করবো। এ বিষয়টি বিস্তারিত ব্যাখ্যায় আরো কয়েকটি পর্বের প্রয়োজন আছে। প্রিয় পাঠকদের ধৈর্য্য সহকারে অপেক্ষা করার বিনীত অনুরোধ করছি।



পীর মুরীদি বিদআতঃ


শেখ সাদীর বাণীঃ ‘জ্ঞানী ব্যক্তি গাছের পত্ররাজির সবুজ বর্ণ দেখেও খোদার অস্তিত্ব বুঝতে পারেন’।

এ বাণীটি শুরুতেই উল্লেখ করলাম এ কারণে যে- শিক্ষিত অশিক্ষিত নির্বিশেষে সাধারণ মুসলমানদের অধিকাংশের ধারণা ইসলাম কিছু অলৌকিক ও কারামতি বিষয়ের সমাহার। মূলত কারামতির ওপর অতি নির্ভরশীলতা ও অন্ধবিশ্বাস হতেই সাধারণ মানুষ ভন্ড পীরদের মুরীদ বনে যায় এবং পীরকে তাদের ইহকালে ও পরকালের মুক্তির মাধ্যম মনে করে শিরকে নিমজ্জিত হয়ে থাকে।

সৃষ্টির শুরু হতেই যুগে যুগে মহান আল্লাহ তায়ালা মানব জাতিকে হেদায়াতের জন্য নবী রাসূলদের প্রেরণ করেছেন এবং বিভিন্ন সময় সেই সব নবী রাসূলদের মাধ্যমে অনেক মোযেজার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। কুরআন ও সহীহ হাদীসে উল্লেখিত সেইসব মোযেজার বা অলৌকিক ঘটনার প্রতি বিশ্বাস করা অবশ্যই জরুরী এবং সে বিশ্বাস ঈমানের অংশ। কিন্তু লক্ষ্য করুন- রাসূল (সা) যখন চাঁদকে দ্বিখন্ডিত করে দিলেন তখন আবু জেহেল সহ কাফেররা বললো, মুহাম্মদ (সা) মস্ত বড় জাদুকর। মূসা (আ) এর হাতের লাঠি সাপ হয়ে যখন ফেরাউন এর নিযুক্ত সকল জাদুকরের সৃষ্ট সাপ বিচ্ছুকে বিনাশ করে দিল, তখনও ফিরাউন ঈমান আনে নি। বললো-মূসা (আ) জাদুকর। আবার বিপরীতে হযরত খাদিজা(রা), হযরত আলী(রা), হযরত আবু বকর(রা) দের ঈমান আনার জন্য কোন মোযেজার প্রয়োজন হয় নি।

অনুরূপভাবে, আল্লাহ তাঁর ‘অলীদের’ ও কিছু বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করতে পারেন যেটাকে আলেমরা কারামত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে সেই সব কারামত এর ওপর বিশ্বাস স্থাপন মুমিনদের ইচ্ছাধীন, জরুরী নয়। কারামতের নামে প্রতারণা, ধর্মব্যবসাই বেশি ঘটে। পীর নামধারী ধর্মব্যবসায়ীরা কারামতের নামে বিভিন্ন আলেম, ইমাম এর নামে এমন সব অর্থহীন ও বেহুদা কথাবর্তার প্রকাশ করে চলেছেন যেগুলি শিরক বৈ আর কিছু নয়।

যেমনঃ অনেকে দাবি করে থাকেন হযরত ইমাম আবু হানীফা (রহ) আল্লাহকে ১০০ বার স্বপ্নে দেখেছেন। (নাউজুবিল্লাহ)। এসব বলে তারা আবু হানীফার(রহ) মর্যাদা বৃদ্ধি করছেন না, মূলত বড় ধরনের শিরক করছেন। স্বয়ং রাসূল (সা) নিজেও এমন দাবি করেন নি। এমনকি মিরাজ এ যখন রাসূল (সা) গমন করেছেন তখনও সরাসরি আল্লাহর সাথে চর্মচক্ষে দেখা হয়েছে এমন কথা কোন সহীহ হাদীসে বলা হয় নি। রাসূল (সা) সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত গমন করেছেন। আল্লাহর আরশ পর্যন্ত গিয়েছেন এমন কথা কোন সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয় নি।

এখানে আরও একটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, উক্ত কারামত ‘অলী’ দের নিজস্ব ক্ষমতা বলে বিশ্বাস করা সরাসরি শিরক। এমনিভাবে মোজেযাক্ষমতা নবী রাসূলদের নিজস্ব বলে বিশ্বাস করাও শিরক। মূলত মোজেযা হচ্ছে নবী রাসূলদের প্রতি প্রদত্ত আল্লাহর কুদরতী চিহ্ন।

আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের এ ধরনের কিছু কিছু কাজ করার অনুমতি দেন কখনো কখনো, যে ধরনের কাজকে আমরা ‘অলৌকিক কাজ’ বলে থাকি। এর কতগুলো কাজ এমন যেগুলো নবী রাসূলগণ কর্তৃক অনুষ্ঠিত হয়। এগুলোকেই ইসলামী পরিভাষায় বলে ‘মুজিযা’। নবী রাসূলগণের মুজিযা সত্য। নবীর নব্যুয়তী সত্যতা প্রমাণের জন্য তা হয় অকাট্য দলীল। কিন্তু এ ‘মুজিযা’ অনুষ্ঠিত হয় সৃষ্টির কল্যাণ সাধনের জন্য, কোনো কোনো বিশেষ ফায়দা পৌঁছাবার জন্য এবং তা হয় স্বয়ং আল্লাহর কুদরতে ও ইচ্ছায়, নবী-রাসূলের ইচ্ছায় নয়। তা করার ক্ষমতা নবী-রাসূলের নিজস্ব নয়, কেবল মাত্র আল্লাহরই দেয়া ক্ষমতা।

আল্লাহ তা‘আলা অন্যান্য নবী ও রাসূলগণকে যেমন মুজিযা ও অকাট্য প্রমাণাদি দিয়েছেন তাঁদের নব্যুয়তের অকাট্যতার প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে, তেমনি হযরত ঈসা(আ) কেও বহু অস্বাভাবিক কর্মকান্ড ঘটানোর শক্তি দান করেছিলেন। কিন্তু খ্রিস্টানরা সেসব নিদর্শন দেখে মনে করে নিয়েছে যে, এসব করার ক্ষমতা স্বয়ং হযরত ঈসা(আ) এর নিজস্ব এবং এই ক্ষমতা ও শক্তি ঠিক আল্লাহর ক্ষমতা ও শক্তি। এই কারণে সেই মূর্খরা মনে করে নিয়েছে যে-মহান আল্লাহই বুঝি হযরত ঈসার মধ্যে লীন হয়ে গেছেন। এক্ষণে আল্লাহ ও ঈসা অভিন্ন সত্তায় পরিণত, আল্লাহ ঈসা একাকার।(নাউজুবিল্লাহ)। আর এ-ই হচ্ছে খ্রিস্টানদের শিরকী আকীদা গ্রহণের মূলতত্ত্ব।

উপমহাদেশে খ্যাতনামা আলেম মাওলানা আবদুর রহীম বিখ্যতা গ্রন্থ ‘সুন্নাত ও বিদআত’ হতে আবারো উদ্ধৃতি টানছি-

‘‘মুসলমানদের মধ্যে অলী-আল্লাহ নামে পরিচিত ব্যক্তিদের সম্পর্কেও ভক্তির আতিশয্যে- চরম মূর্খতার কারণে- মনে করেছে যে, আল্লাহ বুঝি তাদের মুঠোর মধ্যে এসে গেছেন; কিংবা তারা আল্লাহ হয়ে গেছেন (নাউজুবিল্লাহ) বলেইতো তারা অসাধ্য সাধন করতে ও অস্বাভাবিক-অলৌকিক ঘটনাবলী ঘটাবার ক্ষমতার অধিকারী হয়ে বসেছেন। এও ঠিক শিরকে নিমজ্জিত খ্রিস্টানদের মতো চরম মূর্খতারই পরিণতি। খ্রিস্টানরা যেমন বুঝেনি যে, হযরত ঈসা(আ) এর যা কিছু ক্ষমতা, তা নবী হিসেবেই আল্লাহর দেয়া, তার নিজের কিছুই নয়, তেমনি মুসলমানদের মাঝে এই মূর্খ লোকেরাও বুঝেনা- বুঝতে প্রস্তুতই নয় যে, তারা যাদেরকে অলী-আল্লাহ বলে মনে করে প্রকৃতপক্ষে তারা আল্লাহর অলী নাও হতে পারে। আর হলেও অলৌকিক কিছু করার, আল্লাহর চলমান ও সদা কার্য্কর স্বাভাবিক নিয়ম বিধান দর-বদল করার কোনো ক্ষমতাই তাদের নেই। ওরাও ঠিক এই কারণেই খ্রিস্টানদের মতোই চরম শিরকের মধ্যে ডুবে আছে।

কিন্তু নবী-রাসূল ছাড়া অন্য মানুষের দ্বারা যদি অস্বাভাবিক কর্মকান্ড হয় তবে তা তিন প্রকারের হতে পারে।

এক. তা দ্বারা যদি কোনে দ্বীনী ফায়দা হয়, তবে তা নেক আমলসমূহের মধ্যে গণ্য।

দুই. যদি তা থেকে কোনো বৈধ ব্যাপার ঘটে, তবে তা আল্লাহর দেয়া এক বৈষয়িক নেয়ামত। সে জন্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উচিত আল্লাহর শোকর করা।

তিন. অস্বাভাবিক ঘটনা যদি এমন কিছু ঘটে বা হারামের পর্যায়ে পড়ে যায়, তবে তা হবে আল্লাহর আযাবের কারণ। তার ফলে আল্লাহর অসন্তুষ্টি ফেটে পড়ে।

মনে রাখতে হবে, অস্বাভাবিক ঘটনা যেমন দুনিয়ার নেক বান্দাদের কেন্দ্র করে সংঘটিত হয় তেমনি সংঘটিত হতে পারে অন্যান্য বান্দাদের কেন্দ্র করেও। অতএব তা যেমন দ্বীনের দৃষ্টিতে ভালোও নয়, তেমনি মন্দও নয়। কিন্তু এমনও হয়, যা না ভালো, না মন্দ।’’

দ্বিতীয় খলিফা আমিরুল মোমিনীন হযরত উমর ফারুক (রা) এর একটি কারামত এর কথা এখানে উল্লেখযোগ্য। তাঁর খিলাফতের সময় ২৩ হিজরীর প্রথম দিকে একবার সারিয়া ইবনু যুনাইম পারস্যের এক যুদ্ধক্ষেত্রে সেনাপতি হিসেবে যুদ্ধ করেছিলেন এবং যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী পরাজয়ের উপক্রম হয়েছিল। উমর (রা) ছিলেন হাজার মাইল দূরে মসজিদে নববীতে খুতবা প্রদান রত। আল্লাহর ইচ্ছায় উমর (রা) এর সামনে যুদ্ধক্ষেত্রের চিত্র ফুটে উঠল। তিনি চিৎকার করে বললেন- ‘হে সারিয়া, পাহাড়ে যাও।’ সেনাপতিও উমরের (রা) আওয়াজ শুনলেন এবং পাহাড়ের আশ্রয়ে যুদ্ধ করে জয়লাভ করলেন।

কিন্তু এর মানে এটা নয় যে, হাজার মাইল দূরের দৃশ্যাবলী অবলোকন করার অলৌকিক ক্ষমতা হযরত উমর (রা) এর ছিল। এটি ছিল একমাত্র আল্লাহর ক্ষমতা এবং আল্লাহর ইচ্ছাতেই এটি ঘটেছে। খলিফার ক্ষমতা নয় এটি এবং তাঁর ইচ্ছায়ও সেটি ঘটেনি।



হযরত উমর (রা) শহীদী মৃত্যু হয়েছিল নামাযরত অবস্থায় আবু লুলু নামক এক ইয়াহুদীর আঘাতে। যে উমর (রা) হাজার মাইল দূরের যুদ্ধক্ষেত্রের চিত্র দেখেছিলেন একই উমর এত নিকটের শত্রুকে তখন দেখেন নি। এটাও ছিল আল্লাহর ইচ্ছা।


মূলত কোন মানুষেরই এমনকি সর্বশ্রেষ্ট মহামানব রাসূলে করীম (সা) এরও নিজস্ব কোন গায়েবী ক্ষমতা নেই।

মুল্লা আলী আল কারী লিখেছেনঃ হানাফী ইমামগণ স্পষ্ট ভাষায় বলেছেনঃ নবী করীম(স) গায়েব জানেন-এরূপ আকীদা যে রাখে, সে কাফির। কেননা এরূপ আকীদা আল্লাহর ঘোষণা ‘আল্লাহ ছাড়া আসমান জমিনের কেউ ই গায়েব জানেনা’ এর বিপরীত।( قُل لَّا يَعْلَمُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ الْغَيْبَ إِلَّا اللَّهُ ۚ আয়াতের অর্থ হলোঃ যে সব বিষয়ে মানুষের অনুভূতি শক্তি ও বিদ্যাবুদ্ধির বাইরে অবস্থিত গায়েব, তা আসমান-জমিনের গোটা সৃষ্টিলোকের মধ্যে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ ই জানেনা।

ইমাম ইবনে কাসীর এ আয়াতের তাফসীরে লিখেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তিনি সমগ্র সৃষ্টিলোকের শিক্ষাদান প্রসঙ্গে যেন বলে দেন যে, আসমান-জমিনের অধিবাসীদের মধ্যে কেউ-ই গায়েব জানেননা-জানেন কেবলমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। অতঃপর লিখেছেনঃ আল্লাহর কথা-‘আল্লাহ ছাড়া’ পূর্ব কথা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে আলাদা করা হয়েছে। তার মানে হলো এই যে, গায়েব আল্লাহ ছাড়া কেউই জানেনা। কেননা এ ব্যাপারে তিনি এক ও একক, এ ব্যাপারে তাঁর কেউই শরীক নেই।)

এমনিভাবে যে লোক বিশ্বাস করবে যে, মৃত লোকেরা দুনিয়ার ব্যাপারে ‘তাসাররুফ’ করে (নিজেদের ইচ্ছেমতো কোনো ঘটনা ঘটানো ও কার্য্ সম্পাদন করে), আল্লাহ ছাড়া এরূপ আকীদা রাখা কুফরী।

বিবাহে যে লোক আল্লাহর রাসূল(স)-কে সাক্ষী বানায়ঃ তাকে হানাফী ফিকাহ এর কিতাবে কাফির বলা হয়েছে। কেননা সে এ কাজ রাসূলে করীমকে ‘আলিমুল গায়েব’ মনে করেই করেছে।

নেক লোকদেরকে কেন্দ্র করে কোনো অতিজাগতিক বা অাশ্চর্য ঘটনা ঘটলে তা যেমন তার নিজের গৌরবের কোনো বিষয় নয়, তেমনি তা-ই নয় তার বুজুর্গীর কোনো প্রমাণ। আর যাকে কেন্দ্র করেই এমন কিছু ঘটবে, তাকেই যে অলৌকিক ক্ষমতার মালিক মনে করতে হবে, মনে করতে হবে তাকে আল্লাহর প্রিয় বান্দা, তার কোনো দলীলই কুরআন হাদীসের খুঁজে পাওয়া যায়না।

কুরআনের আয়াতের ভিত্তিতে কে আল্লাহর অলী, কে তাঁর প্রিয় ব্যক্তি, নিম্নোক্ত আয়াত থেকে জানতে পারা যায়।

আল্লাহ ইরশাদ করেছেনঃ

أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ [١٠:٦٢]

الَّذِينَ آمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ [١٠:٦٣]

–জেনে রেখো, আল্লাহর অলী লোকদের কোনো ভয় নেই, নেই তাদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ। এরা সেই লোক, যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে। (ইউনূসঃ62-63)

অলী আল্লাহ হলেই যে তার কারামত বা অলৌকিক ঘটনা ঘটানোর ক্ষমতা থাকতে হবে, কারো ‘কারামত’ থাকলেই যে সে অলী আল্লাহ বলে গণ্য হবে আর কারামত না হলে অলী আল্লাহ মনে করা যাবেনা, সব কথাই ভিত্তিহীন। কুরআন হাদীসের এসব কথার কোনোই দলীল নেই।

অলী-আল্লাহদের প্রতি এসব দান বাস্তবিকই আল্লাহর অতি বড় অনুগ্রহ। কিন্তু সে অনুগ্রহ ব্যক্তিগতভাবে তাদের জন্য। কেউ তা লাভ করে থাকলে তার উচিত আল্লাহর শোকর আদায় করা। কিন্তু তার প্রচারণার মারফতে পীর-মুরীদী ব্যবসা চালানোর লিল্লাহিয়াতের কোনো প্রমাণ মিলে না কুরআন ও হাদীসে।

হযরত আবু হুরায়রা(রা) বর্ণনা করেছেন, নবী করীম(স) হাদীসে কুদসী বর্ণনা প্রসঙ্গে আল্লাহর এ কথাটি বলেছেনঃ

-‘যে লোক আমার অলীর সঙ্গে শত্রুতা করবে, সে আমার সাথে যুদ্ধের ঘোষণা দেয়। বান্দার ওপর আমি যেসব ফরয ধার্য্ করে দিয়েছি কেবল সেগুলো আদায় করেই আমার নৈকট্য লাভ করতে পারে- এ-ই আমার নিকট অধিক প্রিয়। নফল কাজ করেও বান্দা আমার নৈকট্য লাভ করে থাকে। শেষ পর্য্ন্ত আমি তাকে ভালোবাসতে শুরু করি। আর আমি যখন কোনো বান্দাকে ভালোবাসতে শুরু করি, তখন আমি তার সেই কান হয়ে যাই যা দ্বারা সে শুনে, সেই চোখ হয়ে যায় যা দ্বারা দেখে, সেই হাত হয়ে যাই যা দ্বারা সে ধরে, সেই পা হয়ে যাই যা দ্বারা সে চলে। অতএব সে আমার দ্বারাই শুনে, আমার দ্বারাই দেখে, আমার দ্বারাই ধরে, আমার দ্বারাই চলে।’

কুরআনের আয়াত এবং হাদীস থেকে প্রমাণিত হলো যে, অলী-আল্লাহ সেই হয় এবং তাঁকেই বলা যায়, যে মুমিন হবে এবং মুত্তাকী হবে। ঈমান ও তাকওয়া হওয়ার মানে পূর্ণ ঈমান এবং নির্ভূল নির্ভেজাল তাকওয়া। আর হাদীস থেকে জানা গেল যে, সে হবে আল্লাহর আরোপিত ফরযসমূহের যথাযথ পালনকারী। কিন্তু সেই সঙ্গে তার যে কারামত হতে হবে এমন কথা না কুরআনে আছে, না হাদীসে।

আমাদের দেশে পীর মুরীদির বিদআতী কারবার প্রসারের জন্য অসংখ্য জাল হাদীসের অাশ্রয় নেয়া হয়েছে (পরবর্তীতে আলোচিত হবে ইনশাল্লাহ)। সাধারণ মুসলমান যারা মূলত ধর্মভীরু কিন্তু প্রচন্ড আবেগী ও কুরআন হাদীস এর জ্ঞান বর্জিত , এবং কুরআন হাদীস বহির্ভূত অলৌকিকতা, কারামতির ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল তারা সেসব জাল হাদীস শুনে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। পীরের মুরীদ হয়ে নিজের প্রিয় অর্থ সম্পদ পীরের দরবারে বিলিয়ে দেয়। পরকালে পীর নিজের সাথে করে তাকে বেহেশতে নিয়ে যাবেন-এমন ভয়ানক মিথ্যা ও চরম শিরকী, কুফরী কথায় নিজেদের ঈমান আমল নষ্ট ফেলেন। সে মূর্খ মুরীদ বুঝে না, তার সেই পীরও নিজের জাহান্নামে যাওয়ার পথ তৈরি করছে। আল্লাহ আমাদের সকলকে হেফাজত করুন।

শেখ সাদীর বাণী দিয়ে লেখাটি শুরু করেছিলাম। আল্লাহর অস্তিত্ব সম্পর্কে পবিত্র কুরআন ও হাদীসে অসংখ্য নিদর্শন বর্ণনা করা হয়েছে। অনুধাবনের জন্য সেসবই যথেষ্ট। কুরআন হাদীস বহির্ভূত কোন অতি জাগতিক বা অলৌকিকতার উপর বিশ্বাসের প্রয়োজন আদৌ নেই। এ মহাবিশ্বের তুলনায় পৃথিবী একটি বালুকণার চেয়েও ক্ষুদ্র। আর মানুষ যে কত ক্ষুদ্র আর তার জ্ঞান যে কত ক্ষুদ্র সে হিসেব কোন ক্যালকুলেটরে আঁটবে না। আপনা আপনি এ মহাবিশ্ব সৃষ্টি ও পরিচালিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত- এ বিষয়টি নিতান্তই পাগলের প্রলাপ। বিজ্ঞান ও কোন স্বীকৃত তত্ত্বও এটি স্বীকার করে না। যে কোন বিদ্যা অর্জন করতে হলে প্রথমে কতক বিশ্বাস দিয়েই শুরু করতে হয়। এরই নাম স্বতঃসিদ্ধ Axiom. মানুষের নিকট জ্ঞানের শুরুও নেই-শেষও নেই। প্রথমে কিছুকে সত্য বলে ধরে নিয়েই জ্ঞান চর্চা করতে হয়। এমনকি বিজ্ঞানের গবেষনাও Hypothesis বা অনুমান দিয়েই শুরু হয়।

মহান বিশ্বের স্রষ্টা কে? মানুষ এর আসল পরিচয় কি? মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য কি, স্রষ্টার সাথে তার কি সম্পর্ক? মৃত্যু মানে কি ধ্বংস এবং সবকিছুর ইতি? মৃত্যুর পর কি জীবন আছে? থাকলে সেটি কেমন, কী তার রূপ?

এসব মৌলিক প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। এসবের জওয়াব সকল মানুষেরই মনের দাবি। তাই মানুষ ভুল হোক বা শুদ্ধ হোক এ সবের কোন না কোন উত্তর যোগাড় করে মনের তৃষ্ঞা মিটাতে বাধ্য হয়।

একমাত্র ইসলামই এ সবের নির্ভুল জবাব দিয়েছে।

এ মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন নিশ্চয়ই মহাপরাক্রমশালী সর্বশক্তিমান আল্লাহ, যার কোন শরীক নেই।

সূরা বাকারার ২৯ নং আয়াতে বলা হয়েছেঃ

هُوَ الَّذِي خَلَقَ لَكُم مَّا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا

-তিনিই ঐ সত্তা যিনি পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন।

সূরা আল ইমরানে বলা হয়েছেঃ

إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَآيَاتٍ لِّأُولِي الْأَلْبَابِ [٣:١٩٠]

-‌‘নিশ্চয়ই আসমান ও যমীনের সৃষ্টির মধ্যে এবং রাত ও দিনের পরিবর্তনের মধ্যে বুদ্ধিমানদের জন্য নিদর্শন রয়েছে। (আয়াত ১৯০)।

একই সূরার পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছে-

الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَىٰ جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَٰذَا بَاطِلًا سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ [٣:١٩١]

-‘যারা সর্বদা আল্লাহকে স্মরণ রাখে এবং সৃষ্টি জগতের উপর গবেষণা চালায় একমাত্র তারাই উপলব্ধি করে যে, আল্লাহ তায়ালা অনর্থক ও বিনা উদ্দেশ্যে এ জগত পয়দা করেন নি।’ (সূরা আল ইমরান, ১৯১)।

স্টাডী সার্কেল গ্রন্থে অধ্যাপক গোলাম আযম একটি চমৎকার উক্তি করেছেন।

‘আধুনিক যুগে যারা বিজ্ঞান চর্চা করছে তারা আল্লাহকে স্মরণ করে না। আর যারা আল্লাহর যিকর নিয়ে মশগুল তারা বিজ্ঞান চর্চাই করেন না। তাই বিজ্ঞানের ফসল কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণেই বেশী ব্যবহার করা হচ্ছে।’

আল কুরআনে মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিতত্ত্বের যেটুকু বিবৃত করেছেন শুধু সেটুকু বুঝতে পারলেই স্রষ্টা আর সৃষ্টির মধ্যকার উপলব্ধিগত ব্যবধান ঘুচে যেতে পারে।

সৃষ্টিতত্ত্ব ও জ্ঞান বিজ্ঞান সংক্রান্ত কিছু আয়াতের শুধু রেফারেন্স দিচ্ছি।

সূরা -২/৩০-৩৯, ১৬৪; সূরা -৬/৯৫-৯৯; সূরা-৭/১৮৯; সূরা-৯/১২২, ১২৫-১২৭; সূরা-১০/৪; সূরা-১৫/১৬-১৮; সূরা- ২০/৫০,৫৫; সূরা-২৯, ৪৯-৫১, সূরা-৩০/৪৬-৫৩; সূরা ৩৫/১৯-২২; সূরা ৩৬/৩৮-৪০, ৮০; সূরা-৩৭/১১-২১; সূরা-৩৮/৭১-৭৮; সূরা-৩৯/৫-৬; সূরা ৫৬/৬৩-৬৭; সূরা-৬৭/২-৩; সূরা-৭৯/২৭-৩৩; সূরা-৮৫/১৩; সূরা ৮৬/৬-৭; সূরা-৮৮/১৮-২০; সূরা-৯৬/১-৫।

বিজ্ঞান যে বস্তু ও বস্তুগত শক্তি নিয়ে গবেষণা চালায় তা আল্লাহ তায়ালারই সৃষ্টি। আজ পর্যন্ত বিজ্ঞান এমন কোন বিষয় আবিষ্কার বা প্রমাণ করেনি যাতে কুরআনের কোন মন্তব্য ভুল বলে সাব্যস্ত হতে পারে। বিজ্ঞানের গবেষণায় ভুল হতে পারে যেহেতু মানুষের জ্ঞান সীমিত ও মানুষ মাত্রই ভুল। কিন্তু কুরআনের কোন কথা ভুল প্রমাণ করা সম্ভব নয়।

যদি বিজ্ঞানের কোন গবেষণায় কুরআনের কোন কথা আপাত ভুল বলে মনে হয় তাহলে বুঝতে হবে যে, উক্ত গবেষণায় ত্রুটি রয়েছে। তাই বিজ্ঞানের সাধনাকে নির্ভুল করার উদ্দেশ্যে অহীর জ্ঞানের কষ্টিপাথরে যাচাই বাছাই করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

স্টাডী সার্কেল গ্রন্থে অধ্যাপক গোলাম আযম অত্যন্ত চমৎকার ও প্রাঞ্জল ভাষায় আখিরাতে বিশ্বাসের পক্ষে সহজ সরল সাধারণ বোধগম্য কিছু অসাধারণ যুক্তি পেশ করেছেনঃ

-আল্লাহ তায়ালা মানুষকে নৈতিক জীব হিসেবে পয়দা করেছেন। তাই ভাল ও মন্দ সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান রয়েছে। এ কারণে মানুষ চায়, ভাল কাজের ভাল ফল ও মন্দ কাজের মন্দ ফল। মানুষের এ নৈতিক সত্তার দাবী পূরণের জন্য আখিরাত অপরিহার্য।

- এ দুনিয়া হলো বস্তু জগত। তাই মানুষ এখানে তার কর্মের বস্তুগত ফল পায়, নৈতিক ফল প্রকাশ পায় না। যেমনঃ এক লোক প্রতিবেশির ঘরে আগুন দিল। এর বস্তুগত ফল হল, ঘরটা জ্বলে গেল। কিন্তু নৈতিক অপরাধের ফল সে সাথে সাথে পায় না। এ জন্যই আখিরাত প্রয়োজন, যেখানে সে এর ফল পাবে।

-দুনিয়াতে হাজারো ভাল কাজ করেও কোন মানুষ দুঃখ কষ্টে দিনাতিপাত করতে পারে। ভাল কাজের নৈতিক ফল সে এখানে পেল না। আখিরাতে সে তা পাবে। (খুব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট)।

- সবাই চায় অপরাধীর শাস্তি হোক। কিন্তু সব অপরাধী ধরা পড়ে না। দুনিয়াতে সকলের শাস্তি হয়ও না। এছাড়া ভুল ব্যক্তিকেও অপরাধী বানিয়ে শাস্তি দেয়ার সম্ভাবনা থেকে যায় দুনিয়ায়। যেসব অপরাধী ধরা পড়ে না তাদের শাস্তির জন্য আখিরাত জরুরী।

- এক ব্যক্তি একাধিক এমন কি লক্ষ লোককে হত্যা করলেও দুনিয়ায় তাকে একবারের বেশি ফাঁসি দেয়া যায় না। আখিরাতে বার বার দেয়া যাবে।

- অপরাধের কী পরিমাণ শাস্তি দিলে ইনসাফ হয় এর ফায়সালা দুনিয়ায় করা সম্ভব নয়। বাদশাহ ফয়সালকে হত্যা করায় উম্মতের যে বিরাট ক্ষতি হলো এর শাস্তি শুধু খুনীকে ফাঁসি দিলেই যথেষ্ট হয় না। আখিরাতে এর সুবিচার হবে।

- নেক আমলের পুরস্কারও দুনিয়ায় যথাযথ পরিমাণ হওয়া সম্ভব নয়। কোন সৎকাজের কতটা পুরস্কার হলে সেটা ইনসাফপূর্ণ সে মাপকাঠিও মানুষের কাছে নেই। আখিরাতেই আল্লাহ তায়ালা যথাযথ পুরস্কার দিবেন।

-কত নির্দোষ লোক অহেতুক মজলুম হয়, কত নির্দোষ লোক জেলে পড়ে আছে এমনকি ভুল বা পক্ষপাতদুষ্ট বিচারে ফাঁসিও হয়ে যাচ্ছে। এর প্রতিকার দুনিয়ায় হতে পারে না। আখিরাত ছাড়া ঐ মজলুমরা প্রতিদান পাবেন না, প্রতিকার পাবেন না।

-প্রত্যেক কাজের পিছনেই ভাল বা মন্দ নিয়্যত থাকে। নিয়ত না জানলে কোন কাজের সঠিক মূল্যায়ন করা যায় না। আল্লাহ ছাড়া নিয়ত সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান কেউ রাখেন না বলেই সঠিক পুরস্কার বা শাস্তি দেবার জন্য আখিরাত অপরিহার্য।

(বি.দ্র.: বিদআত নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনার ‘পীর মুরীদি বিদআত’ অংশটি আরো কয়েকটি পর্ব পর্যন্ত চলমান থাকবে ইনশা আল্লাহ। আজকের আলোচনায় পীর মুরীদি প্রথায় কিছু ইসলাম বহির্ভূত অন্ধবিশ্বাস তথা এ প্রথার প্রধান উপকরণ কুরআন হাদীস বহির্ভূত অলৌকিক/অতিপ্রাকৃত ক্ষমতায় বিশ্বাসের অসারতা প্রমাণ করা হয়েছে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ হতে।)।

বিষয়: বিবিধ

১৭৫০ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

296435
২২ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:২২
নেহায়েৎ লিখেছেন : https://www.facebook.com/video.php?v=725566247532860&set=vb.100002384745665&type=2&theater;
এটা দেখুন কষ্ট করে।

জুয়েল আইচের যদি দাড়ি থাক রবীন্দ্রনাথের মতো তাহলে তাকেও হয়তোবা বেদাতীরা পীর হিসেবে পূজা করত। আল্লাহ ভাল জানেন। স্রষ্টার চাইতে সৃষ্টির প্রতি বেশি ভক্তি-শ্রদ্ধা প্রদর্শন করাই শিরক।
২২ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৩০
239931
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : এদের ধোঁকায় পড়ে সর্বস্ব হারানো মানুষগুলোর জন্য সমবেদনা। এরপরও মানুষ সচেতন হয় না। বারবার প্রতারিত হয়, বার বার কেরামতির পিছনে ছুটে। Worried
296443
২২ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৪১
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২৩ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:০০
240113
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : ধন্যবাদ।Angel
296448
২২ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৫০
আফরা লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খাইরান ।
২৩ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:০১
240114
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : বারাকামুল্লাহ ফিক।
296476
২২ ডিসেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:৫৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : পির-মুরিদি এখন স্রেফ ব্যবসা ছাড়া কিছু নয়।
পির বেহেস্তে নিয়ে যাবেন! এই চিন্তায় দুনিয়ার যত মানুষের হক নষ্ট করে পির কে নযর দিলেই সব হবে এই চিন্তায় সব ইসলাম বিরোধি কাজে লিপ্ত অনেকে।

২৩ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:০২
240116
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : আল্লাহ পাক তাদের হেদায়াত দিন।
296529
২২ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১০:০১
শেখের পোলা লিখেছেন : সাধারণ মানুষগুলো কেরমতি দেখেই নিজেকে সোপর্দ করে, আর কেরামতি ওয়ালারা এই সরলতার সুযোগ নেয়৷ কিন্তু তারা জানে তারা কি করছে৷ দেশের আইনেও এদের শাস্তি হওয়া উচিৎ৷ আল্লাহর শাস্তিতো আছেই৷ধন্যবাদ৷
২৩ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:০২
240117
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ মানুষের অন্ধবিশ্বাস তাদের বড় মূলধন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File