ডিয়ার মুসলিমস, ইসলাম ইজ নট অ্যা ম্যাটার অব জোকস (পর্ব দশ)

লিখেছেন লিখেছেন প্রেসিডেন্ট ২২ নভেম্বর, ২০১৪, ০৪:২১:৪৭ বিকাল

নবম পর্বের লিংকঃ http://www.bdmonitor.net/blog/blogdetail/detail/1838/President/54268#.VHBPL2dXv2k

সিরিজটি শুরু করেও নিয়মিত হতে পারছি না। এজন্য প্রথমেই ‍দুঃখ প্রকাশ করছি, অফিস ও পারিবারিক ব্যস্ততাহেতু দীর্ঘ বিরতির জন্য।

শিরক ও বিদআত এর চলমান আলোচনাটি এবার সূরা তাওবার ২৪ নং আয়াত দিয়ে শুরু করছিঃ

قُلْ إِن كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُم مِّنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوا حَتَّىٰ يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ ۗ

-(হে নবী) বলুন, যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের ভাই, তোমাদের পরিবার পরিজন এবং তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ ও ব্যবসা বাণিজ্য- যা অচল হয়ে যাবে বলে তোমরা ভয় করো, তোমাদের বাড়িঘরসমূহ, যা তোমরা (একান্তভাবে) কামনা করো, যদি তোমরা আল্লাহ তায়ালা, তাঁর রাসূল ও তাঁর পথে জেহাদ করার চাইতে (এগুলিকে) বেশি ভালবাসে, তাহলে তোমরা আল্লাহ তায়ালার (পক্ষ হতে আযাবের) ঘোষণা আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করো (জেনে রাখো); আল্লাহ তায়ালা কখনো ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়াত করেন না। (সূরা তাওবা, আয়াত ২৪)।

এ দীর্ঘ আয়াতটির মেসেজ সুস্পষ্ট। দুনিয়ার সকল প্রিয় ব্যক্তি ও প্রিয় সম্পদ অপেক্ষা একজন মুসলমানের কাছে অবশ্যই প্রিয় হতে হবে আল্লাহ , আল্লাহর রাসূল এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করা। যারা এর চাইতে দুনিয়াবী মায়া ও সম্পদকে বেশি ভালবাসে তারা নিঃসন্দেহে শিরকে লিপ্ত, যুলুমে লিপ্ত, তাদেরকে ফাসেক ও গোমরাহ হিসেবে নির্দেশ করা হয়েছে উক্ত আয়াতে।

আল্লাহকে একমাত্র ইলাহ বা মাবুদ হিসেবে সমাজ, রাষ্ট্র ও সর্বত্র চালু করা এবং সর্বত্র তাঁর বিধান কায়েম করার আন্দোলনই জিহাদ ফী সাবিল্লিাহ। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, সংস্কৃতি সবকিছু পরিচালিত হবে আল্লাহর বিধানের আলোকে; কারণ কুরআনের ঘোষণার আলোকে ইসলাম হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। তাগুতী শক্তি এ আন্দোলনকে বরদাশত করতে পারেনা কায়েমী স্বার্থের কারণে।

طغيات (তাগুত) শব্দের অর্থ সীমা লঙ্ঘনকারী, বিদ্রোহী, বাতিল। শরীয়তের পরিভাষায় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণকারীরা তাগুতী বা বাতিল শক্তি।

পাঁচ ধরনের তাগুত-

ক. নাফস বা হাওয়া। নাফস হলো দেহের সব দাবী যা আল্লাহর বিধানকে অমান্য করতে উস্কে দেয়। (সূরা ফুরকান, আয়াত ৪৩ দ্রষ্টব্য)।

খ. সামাজিক কুসংস্কার তথা Customs adn Traditions তাগুতী শক্তি বলেই টিকে আছে। (সূরা বাকারাহ, ১৭০ নং আয়াত দ্রষ্টব্য)।

গ. শাসন শক্তি- ক্ষমতার দাপটে মানুষকে আল্লাহর পথে চলতে দেয় না। (দ্রষ্টব্যঃ সূরা নাযিয়াত, আয়াত ২৪)। উদাহরণঃ তাফসিরুল কুরআন মাহফিলে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের হামলা ভাঙচুর

ঘ. অর্থ শক্তি- রিযক বন্ধ করার হুমকী দিয়ে আল্লাহর পথে চলতে বাধা দেয়।

ঙ. অন্ধ আনুগত্যের দাবিদার শক্তিঃ রাসূল (সা) ছাড়া যাদেরকে অন্ধভাবে ভক্তিশ্রদ্ধা করা ও মেনে চলার দাবি করা হয়।

اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللَّهِ

-আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা তাদের আলিম আর দরবেশদের রব বানিয়ে নিয়েছে...[সূরা তাওবাহ(৯): আয়াত ৩১]।

বর্তমানে আমরা কি দেখছি? একশ্রেণীর আলেম সহীহ সালামতে থাকার জন্য, আয়েশী জীবন যাপনের জন্য ইসলামের কঠিন বিধানগুলি অপব্যাখ্যা দিয়ে সহজ করে নিয়েছে, আর দুনিয়াবী স্বার্থে সহজ বিষয়গুলি কঠিন করে নিয়েছে। এরা মিষ্টি খাওয়া আর কদু খাওয়ার সহজ ও আরামদায়ক সুন্নাত পালন করেন। কিন্তু দ্বীনের পথে কষ্ট স্বীকার করা, জিহাদ ফী সাবিল্লিাহর মত ফরজ ও সুন্নাত পালনে উদাসীন। এমনকি ঈমানের ন্যুনতম দাবী অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেও অনেকের অনীহা। কারণ -তাতে বাতিলের আঘাত এর ভয় থাকে, জেল জুলুম এর ভয় থাকে, নির্যাতন নিপীড়নের আশংকা থাকে। তারচেয়ে বরং বাতিলের সহযোগী হয়ে মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকায় বন্দী হয়ে থাকা ভাল! এ হচ্ছে তাদের মানসিকতা!!

কুরআন সাক্ষী, রাসূল(সা) এর হাদীস সাক্ষী, ইতিহাস সাক্ষী- ইসলাম মসজিদ, মাদ্রাসা আর খানকায় বন্দী হয়ে থাকতে আসেনি। মুসলমানদের ‘মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত’ এ সংকীর্ণতায় সীমাবদ্ধ করার জন্য আল্লাহ দুনিয়ায় পাঠান নি। ঈমানী চেতনায় বলীয়ান হয়ে মুসলমানদেরকে সমাজ, রাষ্ট্র, অর্থনীতি, সংস্কৃতি সর্বত্র আল্লাহর বিধান কায়েম করার জোর প্রচেষ্টা তথা ‘জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ’ এ সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে হবে। নিদেনপক্ষে যারা সক্রিয় অংশগ্রহণ করছে তাঁদের সমর্থন করতে হবে। তাঁদের বিরোধিতা করা যাবে না।

ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) এর সে বিখ্যাত বাণীটি -

"যে কোন যুগে তুমি যদি কোন সঠিক ইসলামপন্থী দল খুঁজে না পাও, তাহলে চিহ্নিত ইসলাম বিদ্বেষী এবং ইসলামের পরীক্ষিত শত্রুদের দিকে তাকাও, তারা কোন দলটির প্রতি সবচেয়ে বেশি ক্ষিপ্ত। কেননা সঠিক ইসলামপন্থী দল মুসলমানরা চিনতে ভুল করলেও, ইসলামের চিহ্নিত শত্রুরা কখনো ভুল করে না।"



বিশ্লেষণ করুন-

> আপনার কথা, কর্ম, অবস্থান, সমর্থন বক্তব্যে কারা লাভবান হচ্ছে। হক্ব না বাতিল?

> আপনার সমর্থন কি মজলুমের পক্ষে নাকি বাতিল জালিমের পক্ষে?

> আপনার সমর্থন কি ইনসাফের পক্ষে না কি বে-ইনসাফীর পক্ষে?

আপনি জালিমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা জায়েয মনে করেন না, কিন্তু মজলুমের ছিদ্রাণ্বেষণ করে বেড়ান আবার নিজেদের আহলে হাদীস বলে প্রচার করেন। জেনে রাখুন, আপনি কুরআন বিরোধী কাজ করছেন।

(চলবে........)।

বিষয়: বিবিধ

১০৯৪ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

286859
২২ নভেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:১৪
ছালসাবিল লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া, Day Dreaming
আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন। Praying

সত্যি ইটস নট এ জোকস Day Dreaming Day Dreaming Day Dreaming
Rose Rose Rose Rose
২৩ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:৩৯
230611
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : ওয়ালাইকুম সালাম। আপনাকেও আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দিন। বারাকামুল্লাহ ফিক।
286957
২২ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১০:২০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অধ্যাপক গোলাম আযম এর একটি বই এর নাম "খাটি মুমিন হতে গেলে তাগুতের পাক্কা কাফির হতে হবে"।
একজন খাটি মুমিন কখনই কাফিরদের প্রিয় গতে পারে। শ্রদ্ধেহ হতে পারে চরিত্রগত কারনে। শেরেবাংলা একে ফজলুল হক এর মত মানুষ ও বলেছিলেন যে যখন দেখবেন হিন্দু সম্পাদিত পত্রিকাগুলি আমার প্রশংসা করছে বুঝবেন আমি মুসলিমদের ক্ষতি করেছি আর যখন দেখবেন তারা আমাকে গালি দিচ্ছে তখন বুঝবেন আমি মুসলিমদের ভাল করেছি।
২৩ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:৪০
230612
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : এক্সাক্টলি
287006
২৩ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১২:৫৮
শেখের পোলা লিখেছেন : আমাদের কলেমায় দুটি অংশ আছে৷ প্রথমটিতে আল্লাহর আসনটি পরিষ্কার ও খালিকরতে হবে, তবেই দ্বতীয়টি, ইল্লাল্লাহ কার্যকরি হবে৷ তাগুতকে বসিয়ে রেখে আল্লাহকে বসানো যাবেনা৷ কেননা তিনি সহাবস্থান পছন্দ করেন না৷
আপনাকে ধন্যবাদ৷
২৩ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:৪০
230614
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ। Angel Angel

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File