দাম্পত্য জীবনে সহনশীলতাঃ খলিফা হযরত ওমরের(রা) গল্প
লিখেছেন লিখেছেন প্রেসিডেন্ট ২০ অক্টোবর, ২০১৪, ০৩:০৯:২১ দুপুর
এক ব্যক্তি নিজের স্ত্রীর দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে হযরত ওমর(রা)এর নিকট নালিশ করতে ও তাঁর পরামর্শ নিতে এলো। এসে হযরত ওমরের(রা) বাস ভবনের দরজায় দাঁড়াতেই শুনতে পেলে তাঁর স্ত্রী অত্যন্ত কর্কশ ভাষায় ও উচ্চস্বরে তাঁকে তিরস্কার করেছে, আর হযরত ওমর তা নীরবে শুনেছেন। লোকটি তৎক্ষণাত ফিরে যেতে উদ্যত হলো।
সে ভাবলো, হযরত ওমরের(রা) মত কঠোর মেজাজের মানুষের যখন এই অবস্থা এবং তিনি খলীফা, তখন আমি আর কে? ঠিক এই সময়ে হযরত ওমর বাইরে বেরিয়ে দেখলেন এক ব্যক্তি তাঁর দরজা থেকে ফিরে যাচ্ছে। তিনি তাঁকে ডেকে ফেরালেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি জন্য এসেছ?
সে বললোঃ “আমিরুল মোমেনীন! আমি আপনার কাছে এসেছিলাম নিজের স্ত্রীর বদমেজাজ ও কঠোর ব্যবহার সম্পর্কে নালিশ করতে। কিন্তু এসে নিজ কানে যা শুনতে পেলাম, তাতে মনে হলো আপনার স্ত্রীরও একই অবস্থা। তাই এই স্বান্তনা নিয়ে ফিরে যাচ্ছিলাম যে, খোদ আমিরুল মোমেনীনের যখন নিজের স্ত্রীর সাথে এরূপ অবস্থা, তখন আমি আর কোথাকার কে?
হযরত ওমর(রা) বললেনঃ “ওহে দ্বীনি ভাই, শোন! আমি আমার স্ত্রীর এরূপ আচরণ সহ্য করি দুটি কারণে-প্রথমতঃ আমার কাছে তার অনেক অধিকার পাওনা আছে।
দ্বিতীয়তঃ সে আমার খাবার রান্না করে, রুটি বানায়, কাপড় ধোয় ও আমার সন্তানকে দুধ খাওয়ায়। অথচ এর কোনটি তার কাছে আমার প্রাপ্য নয় এবং সে এগুলো করতে বাধ্য নয়। এ সবের কারণে আমার মনে শান্তি বিরাজ করে এবং আমি হারাম উপার্জন থেকে রক্ষা পাই। এ কারণেই আমি তাকে সহ্য করি।
লোকটি বললোঃ হে আমিরুল মোমেনীন, আমার স্ত্রীও তদ্রুপ।
হযরত ওমর(রা) বললেনঃ তাহলে সহ্য করতে থাকো ভাই। দুনিয়ার জীবনতো অল্প কটা দিনের!
শিক্ষাঃ ইসলাম যে নারীর প্রতি কত উদার ও সহনশীল হওয়ার শিক্ষা দেয় তা এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়।
স্বামীর সম্পদ ও সন্তানের রক্ষণাবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধান অবশ্যই স্ত্রীর দায়িত্ব। কিন্তু নিছক প্রথাগতভাবে আমাদের সমাজে মনে করা হয় যে, রান্না বান্না করা, কাপড় ধোয়া ও গৃহস্থালির যাবতীয় কাজ করা স্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্য। কিন্তু আসলে তা তার কোনো দায়িত্ব ও কর্তব্য নয়। এ সব কাজ করা স্ত্রীর ইচ্ছাধীন। শুধু স্বামী ও সন্তানের মঙ্গলাকাঙ্খা থেকেই স্ত্রীরা নিজের ইচ্ছায় এসব কাজ করে থাকেন। এ সব কাজে কোনো ত্রুটি হলে সেজন্য তাকে শাস্তি বা বকাঝকা করা উচিত নয়।
সতর্কতাঃ এ ঘটনাকে ভিত্তি ধরে স্ত্রীদের উচিত নয় সাংসারিক কাজকর্ম হতে ইস্তফা দেয়া বা সুযোগ নেয়া। এতে নিজেদেরই ক্ষতি। কারণ অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। এছাড়া সাধারণত (বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই) স্বামী সারাদিন বাইরে উপার্জনে শ্রম ব্যয় করে এবং স্ত্রী ও সন্তানের ভরণপোষণ করে বলে স্ত্রীদের সংসারের কাজে সময় ও শ্রম দেয়া ইনসাফেরই অংশ।
বিষয়: বিবিধ
২৩৩৫ বার পঠিত, ৩০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ঐ গোঁড়াপন্থীরা নারীদেরকে হেয় করতে বিভিন্ন জাল হাদীসও বানিয়েছে। যেমনঃ স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত, শরীরের যে অংশে স্বামীর মাইরের আঘাত লাগবে সে অংশ জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে না ইত্যাদি।
আল্লাহ তাদের হেদায়াত দিন।
১। স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেস্ত কিংবা স্বামীর মাইরের আঘাত জাহান্নামে জ্বলবে না - এ জাতীয় বাক্য তৈরী করার জন্য হাজার হাজার টাকা ব্যায় করে বাংলাদেশের ডোনার এজেন্সি সমূহ এনজিওদের কে লালন পালন করে ও তারপর ৫ স্টার হোটেলে পেইড সাংবাদিকদের মাধ্যমে তা ছড়ায় - এ জাতীয় আইডিয়ার জন্ম, বিকাশ ও ব্যাপ্তির জন্য আমি আপনাকে এনজিও, এ্যাকটিভিস্ট, এ্যাডফার্ম, মিডিয়া কর্মীর নাম দিতে পারি। সো আপনি কট্টরপন্থি আলেম বলে যাদের চিহ্নিত করতে চাইছেন - মূলতঃ তারা অফিশিয়ালী নির্দোষ - বরং বলতে পারেন তারা কম জ্ঞানের জন্য ভিকটিম হয় মাত্র।
২। এমন একটি গল্প অমন ভাষায় লিখে স্বামীর টলারেন্স বৃদ্ধির চেষ্টা আর স্ত্রীর ভাষা প্রয়োগ ও তার ব্যবহার কে বৈধতা দেয়া - ট্যাকনিক্যালী একটা প্রশ্নবোধক ইসলামিক শিক্ষা।
আপনাকে আবারো ধন্যবাদ।
পোস্টে নিচে সতর্কতা দেয়া আছে।
হাদিসটি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। আমাদের সকলকে সহনশীল হতে হবে।
এদের কারনেই তো ইসলামে এতো মতবিরোধ। এতো বিভক্তি।
"হাদীসটি পড়ে আজ একটি নতুন জ্ঞানলাভ করলাম । আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।।"
বিঃদ্রঃ ব্লগার ঈপ্সিতার পোষ্ট ফেসবুকে শেয়ার করার প্রতিক্রিয়া মনে হয় বেশ ভালই হয়েছে ঘরে।
উনি কিন্তু ঈপ্সিতার সাথে শতভাগ একমত প্রকাশ করেছেন। তবে আমার বউ একটু ব্যতিক্রম আছে অন্য মেয়েদের চেয়ে। হুম। রিয়েলি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন