ডিয়ার মুসলিমস, ইসলাম ইজ নট অ্যা ম্যাটার অব জোকস (পর্ব নয়)
লিখেছেন লিখেছেন প্রেসিডেন্ট ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৩:৪২:০১ দুপুর
অষ্টম পর্বের লিংক - http://www.bdmonitor.net/blog/blogdetail/detail/1838/President/53387#.VCppcldXv2k
শিরকঃ
তাওহীদের বিপরীতই হচ্ছে শিরক। সর্বশক্তিমান আল্লাহর সত্তায়, গুণাবলীতে অন্য কাউকে শরিক করা, আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ইবাদতের যোগ্য মনে করা শিরক।
একমাত্র আল্লাহই ইবাদত পাওয়ার যোগ্য।
এ সম্পর্কিত কুরআন কারীমের আয়াতগুলি অত্যন্ত সুস্পষ্ট।
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ [٥١:٥٦
] -আমি জ্বীন ও মানবকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র এ কারণে যে, তারা আমারই ইবাদত করবে।[সূরা আয-যারিয়্যাত(৫১): ৫৬]।
إِنَّ الَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ عِبَادٌ أَمْثَالُكُمْ ۖ
- আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে তোমরা ডাক, তাঁরা তো তোমাদের মতই বান্দাহ।[সূরা আল আরাফ (৭): আয়াত ১৯৪)।
اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللَّهِ
-আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা তাদের আলিম আর দরবেশদের রব বানিয়ে নিয়েছে...[সূরা তাওবাহ(৯): আয়াত ৩১]।
وَإِن يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ ۖ
-আল্লাহ তোমার কোন ক্ষতি করতে চাইলে তিনি ছাড়া কেউ তা সরাতে পারবে না......।[সূরা আল আনআম(৬): আয়াত ১৭]।
أَفَتَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنفَعُكُمْ شَيْئًا وَلَا يَضُرُّكُمْ [٢١:٦٦.....
-.....তাহলে তোমরা কি আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর ইবাদত কর যা না পারে তোমাদের কোন উপকার করতে, আর না পারে তোমাদের ক্ষতি করতে। [সূরা আল আম্বিয়া(২১): আয়াত ৬৬]।
আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদত করা বা আল্লাহর সঙ্গে অন্যের ইবাদত করা হচ্ছে সর্ববৃহৎ পাপ যা শিরক বলে গণ্য।
মক্কার মুশরিকরা আল্লাহকে সর্বশক্তিমান, সৃষ্টিকর্তা ও তাদের রিযিকদাতা হিসেবে মানত কিন্তু পাশাপাশি মূর্তিপূজাও করত। এজন্য তারা আল্লাহর নিকট মুসলিম হতে পারে নি। পৌত্তলিকদের বলার জন্য আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে রাসূলুল্লাহ(সা) কে বলেনঃ
......وَلَئِن سَأَلْتَهُم مَّنْ خَلَقَهُمْ لَيَقُولُنَّ اللَّهُ ۖ
-তুমি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস কর-তাদেরকে কে সৃষ্টি করেছে, তাহলে তারা অবশ্যই অবশ্যই বলবে, আল্লাহ।...।[সূরা আয-যুররুখ(৪৩): আয়াত ৮৭]।
وَلَئِن سَأَلْتَهُم مَّن نَّزَّلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَحْيَا بِهِ الْأَرْضَ مِن بَعْدِ مَوْتِهَا لَيَقُولُنَّ اللَّهُ.......
-যদি তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস কর-আকাশ হতে কে পানি বর্ষণ করে যমীনকে তার মৃত্যুর পর আবার সঞ্জীবিত করেন? তারা অবশ্যই অবশ্যই বলবে-আল্লাহ।....[সূরা আনকাবূত(২৯): আয়াত ৬৩]।
প্রকৃত সত্য হচ্ছে এই যে, আল্লাহ বলেনঃ
وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُم بِاللَّهِ إِلَّا وَهُم مُّشْرِكُونَ [١٢:١٠٦]
-অধিকাংশ মানুষ আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা সত্ত্বেও মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত।[সূরা ইউসূফ(১২): আয়াত ১০৬]।
বস্তুত আল্লাহ তাআলা তাঁর সত্তা ও গুণাবলীতে এক ও অতুলনীয়। তাঁর কোনো শরীক নেই। সকল প্রশংসা তাঁরই জন্য, ইবাদতের যোগ্য সত্তা একমাত্র তিনিই।
শিরক ভয়াবহতম পাপ।
পবিত্র কুরআন কারীমে শিরককে সবচেয়ে বড় জুলুম হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ [٣١:١٣]
-নিশ্চয়ই শিরক সবচেয়ে বড় জুলুম। (সূরা ৩১, লুকমান, আয়াত ১৩)।
আল্লাহ তা’আলা শিরকের গুনাহ তওবা ছাড়া ক্ষমা করবেন না।
আল্লাহ বলেন-
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ ۚ وَمَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَىٰ إِثْمًا عَظِيمًا [٤:٤٨]
• “নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা তার সাথে শিরক করার অপরাধ ক্ষমা
করবেন না। এ ছাড়া অন্য সকল গুনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে
দিবেন” (সুরা নিসা: ৪৮)
إِنَّهُ مَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ ۖ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ [٥:٧٢]
আল্লাহ তা’আলা মুশরিকদের জন্যে জান্নাত হারাম বলে ঘোষণা করেছেন:
• “নিশ্চয় যে আল্লাহ’র সাথে শিরক করবে আল্লাহ তার উপর জান্নাত হারাম করে দেবেন এবং তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। জালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই।” (সূরা মায়িদাহ: ৭২)
শিরক সমস্ত আমলকে বিনষ্ট করে দেয়। আল্লাহ বলেন,
وَلَوْ أَشْرَكُوا لَحَبِطَ عَنْهُم مَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ [٦:٨٨]
• “আর যদি তারা শিরক করে তাহলে তাদের সকল আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে।” (সুরা আনআম: ৮৮)
শিরকই হল সবচেয়ে বড় গুনাহ। নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
# “আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় গুনাহ সম্পর্কে অবহিত করব না? আর তা হল, আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করা।” (বুখারি-মুসলিম)।
শিরকের প্রকারভেদঃ
মোটা দাগে শিরক দুই প্রকার।
১ ) শিরকে আকবর বা বড় শিরক।
২) শিরকে আসগর বা ছোট শিরক।
১. শিরকে আকবার(বড় শিরক) :
যা বান্দাকে মিল্লাতের গন্ডী থেকে বের করে দেয়৷ এ ধরণের শিরকে লিপ্ত ব্যক্তি যদি শিরকের উপরই মৃতু্যবরণ করে, এবং তা থেকে তওবা না করে থাকে, তাহলে সে চিরস্থায়ী ভাবে দোজখে অবস্থান করবে৷
শিরকে আকবর হলো গায়রুল্লাহ তথা আল্লাহ ছাড়া যে কোন ব্যক্তি, প্রাণী বা বস্তুর উদ্দেশ্যে কোন ইবাদত আদায় করা, গায়রুল্লাহর উদ্দেশে কুরবানী করা, মান্নাত করা, কোন মৃত ব্যক্তি কিংবা জি্বন অথবা শয়তান কারো ক্ষতি করতে পারে কিংবা কাউকে অসুস্থ করতে পারে, এ ধরনের ভয় পাওয়া, প্রয়োজন ও চাহিদা পূর্ণ করা এবং বিপদ দূর করার ন্যায় যে সব ব্যাপারে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ ক্ষমতা রাখেনা সে সব ব্যাপারে আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে আশা করা৷
আজকাল আওলিয়া ও বুযুর্গানে দ্বীনের কবরসমূহকে কেন্দ্র করে এ ধরনের শিরকের প্রচুর চর্চা হচ্ছে৷ এদিকে ইশারা করে আল্লাহ বলেন:
• ‘তারা আল্লাহর পরিবর্তে এমন বস্তুর ইবাদত করে, যা না তাদের কোন ক্ষতি সাধন করতে পারে, না করতে পারে, কোন উপকার৷ আর তারা বলে, এরা তো আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী৷’ (সূরা ইউনুস ১৮)
২.শিরকে আসগার (ছোট শিরক)
শিরক আসগার বান্দাকে মুসলিম মিল্লাতের গন্ডী থেকে বের করে দেয়না, তবে তার একত্ববাদের আক্বীদায় ত্রুটি ও কমতির সৃষ্টি করে৷ এটি শিরকে আকবারে লিপ্ত হওয়ার অসীলা ও কারণ৷
এ ধরনের শিরক দু’প্রকার:
প্রথম প্রকার: স্পষ্ট শিরক
এ প্রকারের শিরক কথা ও কাজের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে৷
কথার ক্ষেত্রে শিরকের উদাহরণ:
আল্লাহর ব্যতীত অন্য কিছুর কসম ও শপথ করা৷ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
# রাসূল (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করে, সে কুফরী করে অথবা শিরক করে।”[তিরমিযী]
কাজের ক্ষেত্রে শিরকের উদাহরণ:
যেমন বিপদাপদ দূর করার জন্য কড়ি কিংবা দাগা বাঁধা, বদনজর থেকে বাঁচার জন্য তাবীজ ইত্যাদি লটকানো৷ এসব ব্যাপারে যদি এ বিশ্বাস থাকে যে, এগুলো বলাথ-মসীবত দূর করার মাধ্যম ও উপকরণ, তাহলে তা হবে শিরকে আসগার৷ কেননা আল্লাহ এগুলোকে সে উপকরণ হিসাবে সৃষ্টি করেননি৷ পক্ষান্তরে কারো যদি এ বিশ্বাস হয় যে, এসব বস্তু স্বয়ং বালা- মুসীবত দূর করে, তবে তা হবে শিরক আকবর৷ কেননা এতে গায়রুল্লাহর প্রতি সেই ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে যা শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট৷
দ্বিতীয় প্রকার: গোপন শিরক
এ প্রকার শিরকের স্থান হলো ইচ্ছা, সংকল্প ও নিয়্যাতের মধ্যে৷ যেমন লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ও প্রসিদ্ধি অর্জনের জন্য কোন আমল করা৷ অথর্াত্ আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায় এমন কোন কাজ করে তা দ্বারা মানুষের প্রশংসা লাভের ইচ্ছা করা৷ যেমন সুন্দর ভাবে নামায আদায় করা, কিংবা সদকা করা এ উদ্দেশ্যে যে, মানুষ তার প্রশংসা করবে, অথবা সশব্দে যিকির- আযকার পড়া ও সুকন্ঠে তেলাওয়াত করা যাতে তা শুনে লোকজন তার গুণগান করে৷ যদি কোন আমলে রিয়া তথা লোক দেখানোর উদ্দেশ্য সংমিশ্রিত থাকে, তাহলে আল্লাহ তা বাতিল করে দেন৷ আল্লাহ বলেন:
• ‘অতএব যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সত্কর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরীক না করে’ ( সূরা কাহফ: ১১০)
# রাসূল (সাঃ) বলেন, “যে বিষয়ে আমি তোমাদের উপরে সবচেয়ে বেশি ভয় করি, তা হল ছোট শিরক”। সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ছোট শিরক কি? তিনি বলিলেন, “ছোট শিরক হচ্ছে রিয়া (লোক দেখানো ইবাদত।)”[মুসলিম]
শিরককে নিম্নোক্ত চারটি ভাগেও ভাগ করা যায়।
১। শিরক বিযযাত-شرك بلذات
উদাহরণঃ আল্লাহর সত্তার সাথে শরীক করা-যেমন কাউকে আল্লাহর পুত্র, কন্যা, স্ত্রী মনে করা। ফেরেশতা, দেব দেবী ইত্যাদিকে আল্লাহর বংশধর বলে মনে করা।
২। শিরক বিস-সিফাত-شرك با الصفات
উদাহরণঃ আল্লাহর গুণসমূহ যে অর্থে আল্লাহর জন্য ব্যবহৃত হয় সে অর্থে অন্যের জন্য ব্যবহার করা। আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে সকল প্রকার দোষত্রুটি ও দুর্বলতা হতে পবিত্র মনে করা।
৩। শিরক বিল ইখতিয়ারাত-شرك با الاختيا رات
উদাহরণঃ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো অলৌকিকভাবে উপকার বা ক্ষতি করার ক্ষমতা, প্রয়োজন পূরণ ও হেফাজত করার যোগ্যতা, মানুষের ভাগ্য গড়া ও ভাঙ্গা, দোয়া কবুল করা, হালাল হারাম, জায়েয নাজায়েযের সীমা ঠিক করা, সন্তান দান করা, রোগ ভাল করা, গুনাহ মাফ করা, হায়াত ও মওত দেওয়া, রিযক দান করা ইত্যাদি বিশ্বাস করা।
৪। শিরক বিলি হুকূক-شرك با بحقوق
উদাহরণঃ আল্লাহ ছাড়া কাউকে রুকু, সিজদা ও পূজা পাওয়ার অধিকারী বা হাত বেঁধে নত হয়ে দাঁড়িয়ে ভক্তি করার পাত্র মনে করা, কারো আস্তানাকে চুমু দেয়ার যোগ্য মনে করা, কুরবানী, নযর-নিয়ায, মানত পেশ করার যোগ্য মনে করা, নিয়ামতের শুকরিয়া পাওয়ার অধিকারী বা আপদে বিপদে সাহায্য পাওয়ার জন্য আবেদন গ্রহণের যোগ্য, সব অবস্থায় যাকে ভয় করা যায় বা যার জন্য আর সব মহব্বত ত্যাগ করা যায় বলে মনে করা।
শিরকের বিভিন্ন রূপঃ
১। আরব জাহিলিয়াতে - ফেরেশতা, জিন, তারকা, বুজুর্গ, পূর্বপুরুষ ও নাফসের পূজা।
২। আহলি কিতাবদের - আহবার ও রুহবান পূজা, তাগুত পূজা, জাতি পূজা।
৩। মুনাফিকদের- তাগুত পূজা, আত্ম পূজা, সুবিধা পূজা।
৪। মুসলমানদের- দরগাহ ও কবরপূজা, পীরপূজা, বুজর্গপূজা, উস্তাদপূজা, নেতা পূজা, শাসক পূজা।
(চলবে.......)
তথ্যসূত্রঃ
-আল কুরআনুল কারীম;
-Fundamentals of Tawheed, Dr. Abu Ameenah Billal Phillips;
-ষ্টাডী সার্কেল , অধ্যাপক গোলাম আযম;
-তাওহীদ ও শিরক, মাও. আবদুর রাহীম;
- Digital Bangla Hadith Team.
বিষয়: বিবিধ
১৬৬২ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভালো লাগলো।
অনেক রেফারেন্স পেলাম। স্টাডি করা যাবে।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
শুরু থেকেই নজর রাখছি----
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
শিরক এর ব্যাপারে আমাদের ব্যাপক অজ্ঞতা আছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন