ডাঃ জোবায়দা রহমান ও কিছু কথা
লিখেছেন লিখেছেন প্রেসিডেন্ট ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০২:৩৫:৪৯ দুপুর
কথায় বলে, “যে দেশে গুণীর কদর নেই, সে দেশে গুণী জন্মায় না”। বলাবাহুল্য, বাংলাদেশ বর্তমানে এর প্রকৃষ্ঠ উদাহরণ।
ডাঃ জোবায়দা রহমান কে আমরা অনেকেই শুধু চিনি সাবেক প্র্রধানমন্ত্রীর পুত্রবধু কিংবা নৌবাহিনীপ্রধান মরহুম রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের কন্যা হিসাবে। এ পরিচয়ের কারণে অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হয়েও তিনি হয়েছেন রাজনৈতিক হয়রানির শিকার। কিন্তু এর বাইরেও ডাঃ জোবায়দা রহমান এর পরিচয় আছে যে পরিচয়ে তিনি আপন মহিমায় ভাস্বর, আপন বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল।
ডাঃ জোবায়দা রহমান শিক্ষা জীবনে কখনো দ্বিতীয় হন নি - না দেশে না বিদেশে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ এর ইতিহাসে ডিস্টিংশনসহ সর্বোচ্চ মার্কস পেয়ে এমবিবিএস পাশ করেছিলেন ডাঃ জোবায়দা। অত্যন্ত লোভনীয় স্কলারশিপ ও উজ্জ্বল ক্যারিয়ার এর হাতছানি সত্ত্বেও অন্য দিকে না গিয়ে মানব সেবার মহান ব্রত নিয়ে বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে সরকারী চাকুরিতেই ডাক্তার হিসাবে যোগদান করেছিলেন তিনি ১৯৯৫ সালে।
[u] জোবাইদা রহমানকে লন্ডনের ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাকরির অফার দেওয়া হয়েছে। তাকে সেখানে প্রফেসর হিসাবে যোগ দিতে বলা হয় গত বছর। ওই সময়ে তিনি ওই বিশ্বদ্যিালয় থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। সেখানে তিনি সব বিষয়ে ডিসটিংসন পেয়ে পাস করেন। তিনি ৫৩টি দেশের মধ্যে প্রথম হন। ওই সময় তাকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিতে যোগদানের অফার দিলেও তিনি দেশে ফিরে আসবেন এই আশায় বিদেশি কোনো চাকরিতে যোগ দেননি।
[/u]
এ বিশ্ববিদ্যালয় হতেই পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রি লাভ করেন ডাঃ জোবায়দা ও ৫৩টি দেশের ছাত্রছাত্রীর মধ্যে প্রথম হন। কমনওয়েলথেও প্রথম হন। এরপর তাকে প্রফেসর হওয়ার জন্য অফার দেওয়া হয়। তিনি সেটা গ্রহণ করেননি। তার মেধা তিনি দেশের কাজে লাগাতে চান। এই কারণে বিদেশে পড়ালেখা করলেও চাকরি করেননি।
এমন একজন মেধাবীকে সরকারী চাকুরী হতে বরখাস্ত করা হল স্রেফ রাজনৈতিক বিবেচনাপ্রসূত। আইন না মেনেই এ চাকুরীচ্যূতি। এমনকি ডাঃ জোবায়দাকে এ বিষয়ে কোনো চিঠিও ইস্যূ করা হয় নি নিয়মানুযায়ী।
‘ডা. জোবায়দা রহমান জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে এমডি (কার্ডিওলোজি) কোর্সের তৃতীয় পর্বে অধ্যয়নরত অবস্থায় অসুস্থ স্বামীর উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশে স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রণালয় কর্তৃক যথাযথ প্রক্রিয়ায় ছুটি (স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্মারক নম্বর পার-৫/ছুটি-১৭/শিক্ষা/২০০৮/১১২৮, তারিখ : ০৩.১১.২০০৮) গ্রহণ করে যুক্তরাজ্যে গমন করেন। নির্ধারিত ছুটির মেয়াদ শেষ হবার পূর্বেই সরকারি নিয়ম মেনে তিনি পুনরায় ছুটির জন্য আবেদন করলে মন্ত্রণালয় পুনরায় তিন মাসের জন্য ছুটি মঞ্জুর করে। তিনি বিনা বেতনে বহিঃবাংলাদেশ ছুটি ভোগ করছেন। এ সময় সরকারি কোষাগার হতে কোনো বেতন-ভাতা গ্রহণ করেননি।’
স্বামীর অসুস্থতা নিরাময় না হওয়ায় তার সেবা করার জন্য মানবিক দিক বিবেচনা করে পুনরায় বহিঃবাংলাদেশ ছুটি প্রদানের জন্য তিনি যথা নিয়মে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় কোনো জবাব দেয়নি। এরপরেও কয়েক দফা একই কারণে ছুটির মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আবেদন করলেও মন্ত্রণালয় কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ করেন ডা. জোবায়দার এই আইনজীবী ব্যারিষ্টার কায়সার কামাল।
বহিঃবাংলাদেশ ছুটি ভোগ সংক্রান্তে বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস্, পার্ট-১ এর পরিশিষ্ট-৮ এর বিধান উল্লেখ করে বলেন, ‘(১) বহিঃবাংলাদেশ ছুটি ভোগের অনুমতিপ্রাপ্ত কোনো কর্মচারীর ক্ষেত্রে চাকরি হতে অপসারণের যোগ্য কর্তৃপক্ষ যদি এই মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, ছুটি শেষে তাকে পুনঃ কর্মে যোগদানের অনুমতি দেওয়া হইবে না, তাহা হলে এই সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে বাংলাদেশ ত্যাগের পূর্বে জানাতে হবে। (অনু-২৫)
(২) সংশ্লিষ্ট কর্মচারী স্থায়ীভাবে অথবা সাময়িকভাবে শারীরিক বা মানসিকভাবে অযোগ্য কিনা তাহা বহিঃবাংলাদেশ ছুটিতে যাওয়ার মুহূর্তে নির্ধারণ করা সম্ভব না হলে, তাহা পরে দূতাবাসের মাধ্যমে তাহাকে অবহিত করতে হবে। উক্ত কর্মচারীকে ছুটি হতে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রেও তাহা দূতাবাসের মাধ্যমে জানাতে হবে। তবে ছুটি শেষ হবার কমপক্ষে তিন মাস পূর্বে তাহা দূতাবাসকে জানাতে হবে। (অনু-২৬)
নির্ধারিত ছুটি বিধিমালা, ১৯৫৯ এর বিধি-৫ অনুসারে ছুটি পাওনা না থাকা সত্ত্বেও একজন স্থায়ী সরকারি কর্মচারীকে ভবিষ্যতে সমন্বয়ের শর্তে ব্যক্তিগত বিশেষ কারণে বা মেডিকেল সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে অবসর প্রস্তুতি ছুটির ক্ষেত্র ব্যতীত প্রাপ্যতাবিহীন ছুটি প্রদান করা যায়। কর্তৃপক্ষ মানবিক দিক বিবেচনা করে তাকে প্রাপ্যতাবিহীন ছুটিও প্রদান করতে পারতেন। কিন্তু তার ক্ষেত্রে তাও বিবেচনা করা হয়নি।’
এ ছাড়া, কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে চাকরি হতে বরখাস্ত করার পূর্বে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে প্রথমে কেন তাকে বরখাস্ত করা হবে না; তা জানতে চেয়ে একটি নোটিশ প্রদান করতে হয়। তিনি নোটিশের জবাব প্রদান করলে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয় এবং পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। যদি সে প্রথম নোটিশের জবাব নাও দেয় তবুও তাকে অব্যাহতি প্রদানের পূর্বে দ্বিতীয় বার নোটিশ প্রদান করতে হয়। সরকারি কর্মকর্তা দ্বিতীয় নোটিশের জবাব দিলে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়। যদি তিনি দ্বিতীয় নোটিশের জবাব না দেন তবে তাকে অব্যাহতি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। যদি উক্ত সরকারি কর্মকর্তা বিদেশে অবস্থান করেন তবে দুতাবাসের মাধ্যমে তাকে নোটিশ প্রদান করতে হয়। ডা. জোবায়দার ক্ষেত্রে এর কোনো বিধানই অনুসরণ করা হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তার আইনজীবী।
সংসদে কোনো সরকারী কর্মকর্তার চাকুরীচ্যূতির খবর ঘোষণা করার মত অভিনব ও হাস্যকর ঘটনা ইতোপূর্বে ঘটে নি, ডাঃ জোবায়দার ক্ষেত্রে সেটা ঘটেছে। এটি স্রেফ বিদ্বেষপ্রসূত ও ডাঃ জোবায়দার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্মান হানির অপউদ্দেশ্যে করা হয়েছে-তা বলাই বাহুল্য। এ ঘৃণ্য কাজের ধিক্কার জানানোর ভাষা নেই।
বিষয়: রাজনীতি
৩৯০৩ বার পঠিত, ৩০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তিনি আসলে নষ্ট রাজনীতির শিকার হয়েছেন।
ধন্যবাদ
স্বামী পলিটিক্যাল এসাইলাম , সে তো না ? তার যদি দেশের মানুষদের সেবা দেওয়ার আগ্রহ থাকতো তাহলে সে দেশেই থাকতে বা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই ফিরে আসতো ।
হেনস্তা করবে এই ভয়ে আসে নি - এই তো বলবেন ? হেনস্তা করলে তার সহ বিএনপিরও জনপ্রিয়তা বাড়তো । তবে খালেদা জিয়ার জন্য সেটা মোটেও ভাল হত না ।
এমন কেসও আছে ১২-১৫ বছর অনুমোদনবিহীন অনুপস্থিতি, এরপরও বহাল তবিয়তে আছেন অনেকে। ডাঃ জোবায়দার বিষয়টি রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপ্রসূত-১০০%। বিষয়টি আপনিও ভাল জানেন।
তার মূল কারন হল তিনি বিরোধী দল বেগম জিয়ার পুত্রবধু এবং তারেক রহমানের স্ত্রী ।
তিনি যদি তথাকথিত আওয়ামী কোন মন্ত্রীর কন্যা হতেন তবে তিনি বরখাস্ত হতেননা ।
গুনীর কদর এ সরকার দিতে যানেনা যে কারনে একজন খ্যাতিমান গুনীও একজন নারী বাকশাল আওয়ামিলীগের চোখে একজন দায়িত্বজ্ঞানহীন সরকারী কর্মচারি মনে হল !
সরকারের এই হিংসাত্বক নীতির সরাসরি বিরোধীতা করছি ।
১৯৭৫ সাল থেকে কয়েক দাফ এগিয়ে চলা আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন সরকার যেন কোন আফ্রিকান জঙ্গলের প্রতিনিধিত্ব করছে। সবকিছুই বিধ্বস্ত।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে রক্ভেভেজা এ সবুজ ভূমি রক্ষার তৌফিক দান করুন।
সর্বশেষ আপনার লিখাটা সত্যিই ভাল লেগেছে। একজন জুবায়দাকে জাতির কাছে তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ। ডা} জুবায়দা তারেক রহমানের নয়, এ জাতির গর্ব ও অহংকার।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে রক্তেভেজা এ সবুজ ভূমি রক্ষার তৌফিক দান করুন। اَمِيْن
মন্তব্য করতে লগইন করুন