ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মুসলিমরা নির্মম নির্যাতনের শিকার : ঢাকায় আশ্রয় নিয়েও রেহাই মিলছে না

লিখেছেন লিখেছেন প্রেসিডেন্ট ০৮ জানুয়ারি, ২০১৩, ১১:১৮:৩৭ সকাল



পার্বত্য চট্টগ্রামে নির্মম নির্যাতনের শিকার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মুসলমানরা ঢাকায় এসে বিভিন্ন মসজিদ ও মাদরাসায় আশ্রয় নিয়েও রেহাই পাচ্ছেন না। পুলিশ ও র্যাবে নিয়োজিত খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরা তাদের ধরে নিয়ে অমানবিক নির্যাতনের পাশাপাশি থানায় সোপর্দ করছে। পার্বত্যাঞ্চলের খ্রিস্টান মিশনারিদের দেয়া তালিকা অনুযায়ী রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদ ও মাদরাসা কমপ্লেক্সে হানা দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে থাকা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ওইসব সদস্য। সর্বশেষ গত ২ জানুয়ারি রাজধানীর বাসাবো এলাকার একটি মাদরাসায় হানা দিয়ে পুলিশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ৫ মুসলিম এবং তাদের ১১ সন্তানকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। একই মাদরাসায় অধ্যয়নরত আরও ৫ জনকেও আটক করে তেজগাঁও থানা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে সোপর্দ করা হয়। এর আগে গত জুলাই মাসে গাজীপুরের একটি মাদরাসা থেকে ৮ জন ও ঢাকার অপর একটি মাদরাসা থেকে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ৩ মুসলিম ছাত্রকে আটক করে থানায় সোপর্দ করে পুলিশ। আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

বর্বর নির্যাতনের শিকার এসব মুসলিম আমার দেশ-কে জানান, পাহাড়ে থাকলে শান্তি কমিটির অত্যাচার আর নির্যাতন। ঢাকায় এসেও আশ্রয় পাচ্ছি না। কোনো মসজিদ কিংবা মাদরাসায় আশ্রয় নিলেও ভাগ্যে জোটে পুলিশ ও র্যাবের নির্যাতন। মুসলমান হিসেবে বাংলাদেশে আমাদের কি বাঁচার অধিকারটুকুও নেই? ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অন্তর্ভুক্ত রাজধানীর মিরপুরের একটি মসজিদ কমপ্লেক্সের পরিচালক আক্ষেপ করে আমার দেশ-কে বলেন, স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার দেশের প্রতিটি নাগরিকের রয়েছে। পার্বত্য এলাকায় বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর হাজার হাজার সদস্য খ্রিস্টান বানানো হচ্ছে। অথচ উপজাতীয়দের মধ্যে কেউ নিজ উপলব্ধি থেকে মুসলমান হলেই তার আর রক্ষা নেই। এদের রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়া হলেও তাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত ১ জানুয়ারি রাঙামাটির সাংড়াছড়ি এলাকার মো. করিম হোসেন (আগের নাম হামাজং ত্রিপুরা), মো. নূর ইসলাম (আগের নাম সুবামং ত্রিপুরা), মো. সোহেল (আগের নাম বিন্দুলাল চাকমা)সহ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ৫ মুসলমান তাদের ১১ সন্তানকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত একটি মাদরাসায় ভর্তি করাতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। ঢাকায় আগে থেকে পড়ালেখা করে এমন ৫ মুসলিম ছাত্রছাত্রীও তাদের সঙ্গে ছিলেন। পরদিন ২ জানুয়ারি ভোরে তারা ঢাকায় পৌঁছে বাসাবো আবুজর গিফারী কমপ্লেক্সে পৌঁছেন। কিছুক্ষণ পরই সবুজবাগ থানা পুলিশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত এ প্রতিষ্ঠানটি থেকে অভিভাবকসহ সব ছাত্রকে আটক করে নিয়ে আসে। পরে অবশ্য পুলিশ নতুন ভর্তি হওয়া ১১ ছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের ছেড়ে দেয়। অবশিষ্ট ৫ ছাত্রছাত্রীকে অভিভাবক সঙ্গে না থাকার কারণ দেখিয়ে সবুজবাগ থানা কর্তৃপক্ষ ঢাকার আদালতে সোপর্দ করে। আদালত তাদের তেজগাঁও থানাধীন ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে হস্তান্তর করে। একই সঙ্গে অভিভাবকদের কাছে তাদের হস্তান্তর করার নির্দেশ দেয় আদালত। এ বিষয়ে সবুজবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. বাবুল মিয়া আমার দেশ-কে বলেন, আমরা একটি তথ্যের ভিত্তিতে তাদের আটক করেছিলাম। তাদের সঙ্গে থাকা ৫ অভিভাবকের মুসলমান হওয়ার এফিডেভিটসহ যাবতীয় কাগজপত্র ছিল। এগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ১১ ছাত্রছাত্রীসহ তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ৫ ছাত্রছাত্রীর মা-বাবা সঙ্গে ছিল না বিধায় তাদের বিষয়ে আদালতের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

এদিকে তেজগাঁও থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের ৫ ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ২ জনকে ওইদিনই গাজীপুর শিশু-কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। গতকাল তাদের মা-বাবা তেজগাঁও থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে এসে দিনভর অপেক্ষা করেন। এফিডেভিটসহ মুসলমান হওয়ার সব কাগজপত্র পুলিশকে দেখানোর পরও পুলিশ তাদের সন্তানদের মুক্তি দেয়নি। খাওয়া-খাদ্য ভুলে সারাদিন তারা তেজগাঁও থানা চত্বরে কাটিয়ে দেয় প্রাণপ্রিয় সন্তানদের মুক্তির অপেক্ষায়।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকায় ত্রিপুরা স্টুডেন্ট ফোরামের সভাপতি উদয় ত্রিপুরাসহ ১০-১২ জন উপজাতীয় তরুণ ভিকটিম সেন্টারে এসে ভিড় করে। তারা থানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পৃথকভাবে দেনদরবার করে। শেষপর্যন্ত পুলিশ এসব ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মুসলমান ছাত্রছাত্রীদের কারও কাছেই হস্তান্তর না করে আজ (মঙ্গলবার) উভয় পক্ষকে আসতে বলে। এ বিষয়ে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের দায়িত্বে থাকা সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (তদন্ত) মেরিন সুলতানা আমার দেশ-কে বলেন, গত ৩ জানুয়ারি সবুজবাগ থানা পুলিশ অভিভাবকহীন এই ৫ শিশুকে আমাদের কাছে রেখে যায়। এখান থেকে ২ জনকে সবুজবাগ থানায় ফেরত পাঠানো হয়েছে। একই সেন্টারের সহকারী পুলিশ কমিশনার রওনক আমার দেশ-কে বলেন, আমাদের আশ্রয় সেন্টারে থাকা ৩ জনের মধ্যে ১২ বছরের রবিউল ইসলাম ও ৯ বছরের মতিউল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়েছে। রবিউল ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মুসলমান হয়েছে বলে আমাকে জানিয়েছে। সে আরবি ভাষা শিখেছে।

গতকাল বিকালে মতিউল ইসলামের মা রংবেতির সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি (অন্যের সহযোগিতা নিয়ে) আমার দেশ-কে জানান, তার এক ছেলে ও এক মেয়ে ঢাকায় মাদরাসায় পড়ালেখা করছে। পুলিশ কী কারণে তাদের আটক করেছে জানি না। পাড়ার একজন মুরব্বি আমাদের খবর দিলে আমরা ঢাকায় আসি। ছেলেমেয়ের আটকের খবর শোনার পর থেকেই খাওয়া ও ঘুম নেই। ঢাকায় এসেও আমাদের আদরের সন্তানদের মুখ দেখার সুযোগ পাইনি। এ বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন রংবেতি। কথা বলার একপর্যায়ে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর যুবকরা অভিভাবকদের আশ্রয় দেয়ার কথা বলে দ্রুত থানা এলাকা ত্যাগ করে। ভিকটিম সেন্টারে আটক এসব ছাত্রছাত্রীকে খ্রিস্টানদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য একটি ক্যাথলিক চার্চ থেকে চিঠিও দেয়া হয়েছে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমার দেশ-কে বলেন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মুসলমানদের হয়রানি নির্যাতনের ঘটনা এখন প্রতিনিয়তই ঘটছে। তারা ঢাকায় এলেই অদৃশ্য কারণে পুলিশ প্রতিবারই তাদের গ্রেফতার করে। এর আগেও একই এলাকার জুতিরাং ত্রিপুরা ওরফে জালাল ত্রিপুরা তার সন্তান ও ছোট ভাইকে মাদরাসায় ভর্তি করাতে ঢাকায় এসে বাস থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গেই একজন চাকমা কমান্ডারের নেতৃত্বে র্যাবের একটি দল তাকে গ্রেফতার করে। তাকে বেদম প্রহার করে সারা শরীর রক্তাক্ত করে ফেলে। তাদের ছাড়িয়ে আনতে গেলে মিরপুরের সংশ্লিষ্ট মাদরাসার ২ শিক্ষককেও সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে গত জুলাই মাসে ১১ শিক্ষার্থীকে পুলিশ আটক করে। গাজীপুর মিয়াপাড়ার দারুল হুদা ইসলামীয়া মাদরাসায় অধ্যয়নরত ৮ শিক্ষার্থীকে একটি খ্রিস্টান মিশনারির ইন্ধনে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়।

ঢাকায় আশ্রয় নেয়া ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর একজন মুসলমান আমার দেশ-কে জানান, ‘আমি রাঙামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া এলাকার দুমদুমিয়া গ্রামের বাসিন্দা। আমাদের এলাকায় কোনো স্কুল কিংবা অন্য কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। কেবল খ্রিস্টান মিশনারিদের একটি মিশনারি প্রাইমারি স্কুল রয়েছে। বাধ্য হয়েই ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর এসব মুসলমান শিক্ষার্থীকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ অন্যান্য সংস্থা পরিচালিত ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়। রাঙামাটি শহর থেকে আমাদের গ্রামে যেতে হয় কখনও হেঁটে, কখনও ইঞ্জিনচালিত নৌকায়। শুকনো মৌসুমে যেতে প্রায় তিনদিন এবং বর্ষাকালে দু’দিন লাগে।’ তিনি বলেন, ‘দুমদুমিয়া গ্রামের কাছাকাছি পাহাড়ের উপরে বিজিবির একটি ক্যাম্প রয়েছে। ক্যাম্পে লাকড়ি সাপ্লাইয়ের কাজ করতাম আমি। বিজিবি সদস্যদের আজানের সুমধুর আওয়াজ এবং সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া দেখে তার মনে পরিবর্তন আসে। প্রায়ই আজানের জন্য অপেক্ষা করতাম এবং নামাজরত ব্যক্তিদের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। স্ত্রীকে বিষয়টি জানালে সেও একই অনুভূতি প্রকাশ করে। পরে পুরো বিষয়টি গ্রামের সবার সঙ্গে আলাপ করলে তারাও মুসলমান হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন।

তিনি বলেন, ২০০৮ সাল থেকে দু’বছরেরও বেশি সময় তারা মুসলমান হওয়ার জন্য বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করে ব্যর্থ হন। কাপ্তাই উপজেলার তত্কালীন ইউএনওর কাছে বিষয়টি জানালে তিনি তাদের রুম থেকে বের করে দেন। ২০১০ সালে রাঙামাটি শহরে ইসলামিক ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে জানতে পারি। কোনো ধরনের পূর্বযোগাযোগ ছাড়াই নারী-পুরুষ মিলে প্রায় ১৫-১৬ জনের একটি দল তাদের পোষা শূকর এবং ছাগল বিক্রি করে টাকা জোগাড় করে রাঙামাটির উদ্দেশে রওনা দেন। শুকনো মৌসুম থাকায় কখনও হেঁটে, কখনও বোটে চড়ে প্রায় তিনদিন পর তারা রাঙামাটি এসে পৌঁছান। শহরে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালকের সঙ্গে সাক্ষাত্ করার পর তারা ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটি যদিও ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য করা হয়েছে, তবু এখানে মানুষকে মুসলমান করার কোনো কার্যক্রম নেই। তবে ঢাকায় আবুজর গিফারী ট্রাস্টসহ আরও কিছু সরকার অনুমোদিত সংস্থা রয়েছে, যারা ভিন্নধর্মাবলম্বীদের ইসলামিক রীতিনীতি শেখাতে সহযোগিতা করে। তবে আগে এফিডেভিট করে মুসলমান না হলে ওই ট্রাস্টও সহযোগিতা করে না। ফলে তারা নিজ উদ্যোগে এফিডেভিট করে মুসলমান হয়ে পরে ঢাকায় গিয়ে নামাজ-রোজাসহ ইসলামের কিছু রীতিনীতি শিখে আসেন। পরে তাদের অনুসরণ করে ওই গ্রামের হেডম্যানসহ সব লোক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ক্রমান্বয়ে পার্শ্ববর্তী সাংগ্রছড়ি গ্রামের লোকজনও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে শুরু করেন।

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর এসব মুসলমানের ওপর জুলুম-নির্যাতন বন্ধের আহ্বান জানিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত একটি সেন্টারের পরিচালক আমার দেশ-কে জানান, পার্বত্য এলাকায় একসময় সবাই বৌদ্ধধর্মের অনুসারী ছিলেন। খ্রিস্টান মিশনারিরা বিভিন্ন লোভ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের অধিকাংশকেই খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করেছে। মন ও প্রাণের টানে অথবা মুসলমানদের সংস্পর্শে এসে তাদের মধ্যে কেউ মুসলমান হলে তার আর রক্ষা নেই। নিজ বাড়ি থেকে উচ্ছেদের পাশাপাশি তাদের ওপর চরম নির্যাতন চালানো হয়। ঢাকায় এসে আশ্রয় নিলেও তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। ভিকটিম সেন্টারে আটক ছাত্রছাত্রীদের অবিলম্বে তাদের মা-বাবার হাতে তুলে দেয়ার জন্য তিনি জোর দাবি জানিয়ে বলেন, তাদের খ্রিস্টানদের হাতে তুলে দিলে এটা হবে ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে বড় অবমাননা। এটা মুসলমানরা সহ্য করবে না।

বিষয়: বিবিধ

১২৯১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File