ডিয়ার মুসলিমস, ইসলাম ইজ নট অ্যা ম্যাটার অব জোকস (পর্ব চার)

লিখেছেন লিখেছেন প্রেসিডেন্ট ২১ জুন, ২০১৪, ০৩:৪৩:৫৫ দুপুর

পূর্ববর্তী পর্বের লিংকঃ http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/1838/President/46791#.U6U7ZVPLe3g

প্রিয় ব্লগার বন্ধুরা,

আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? দীর্ঘ অসুস্থতা কাটিয়ে আবার ফিরে এলাম আপনাদের মাঝে। আমার জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করার জন্য আপনাদের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

আজ শুরু করছি আমার চলমান সিরিজ এর ৪র্থ পর্ব। গত পর্বে কুফর ও নিফাক সম্পর্কে আলোচনা শুরু করেছিলাম। কিন্তু কলেবর বড় হওয়ায় শেষ করা সম্ভব হয়নি। কুফর ও নিফাক- এর বাকী অংশ নিয়েই আজকের আলোচনা।

একনজরে ‌‌'কুফর ও নিফাক' সম্পর্কিত কুরআন কারীমের আয়াতগুলিঃ সূরা ২/৩৯; সূরা ৪/১৪২-১৪৩; সূরা ৫/৮২-৮৩; সূরা ৯/৩০-৩৩,৬৭-৬৯,৭৩-৮০,৮৪; সূরা ১৩/৩৩; সূরা ২২/১৯-২২; সূরা ২৯/৬৮; সূরা ৩১/২১, সূরা ৩২/২৯; সূরা ৯৮/১-৪; সূরা ৭৬/২৭-৩১; সূরা ৬৯/৫০; সূরা ৬৮/৫১; সূরা ৬৩/১-৮; সূরা ৫৯/১১-১৭; সূরা ৫৪/২,৫; সূরা ৫০/৩-৫,১২-১৫; সূরা ৪৭/২০-২৮,৩২-৩৪; সূরা ৩৯/৩,৪৫,৭১-৭২; সূরা ৩৮/৩-১১; সূরা ৩৩/৯-২০,৬৪-৬৮; সূরা ৩৭/১১-২১, ১৭৫-৭৯; ......

وَالَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِآيَاتِنَا أُولَٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ [٢:٣٩]

-যারা কুফরী করবে এবং আমার নিদর্শনগুলোকে অস্বীকার করবে তারাই জাহান্নামের অধিবাসী। সেখানে তারা চিরদিন থাকবে। (সূরা আল বাকারা, আয়াত ৩৯)।

কাফিরঃ যে কুফরী করে সেই কাফির। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি যদি ইসলামের কোনো মৌলিক বিষয় অবিশ্বাস করে বা অস্বীকার করে তখন তাকে কাফির বলা হয়। বিষয়টি ব্যাখ্যার দাবি রাখে। দেখা যাক কিভাবে কেউ কাফির হতে পারেঃ

> কেউ আল্লাহ তাআলার অস্তিত্ব অবিশ্বাস বা অস্বীকার করলে কাফির হয়ে যাবে।

> আল্লাহ তাআলার কোনো গুণাবলি অস্বীকার করা বা অবিশ্বাস করা। যেমনঃ আল্লাহ তাআলাকে রিযিকদাতা বা সৃষ্টিকর্তা না মানলে কাফির হয়ে যাবে।

> ঈমানের মৌলিক সাতটি বিষয়ের যে কোনোটিকে অস্বীকার করলে কুফরী হবে।

> হালাল হারাম এর বিধান অস্বীকার করলে কুফরী হবে।

> ফরয বিধানসমূহকে(যেমনঃ সালাত, সাওম, হজ্জ্ব, যাকাত, পর্দা করা, জিহাদ করা ইত্যাদি) অস্বীকার করা, উপহাস করা বা ঠাট্টা করলে কাফির হয়ে যাবে।

> ইসলামের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক কোনো বিধান(যেমনঃ ধর্মনিরপেক্ষতা) অনুসরণ করলে বা মেনে চললে কুফরী হবে।

> ইচ্ছাকৃতভাবে কাফিরদের ধর্মীয় চিহ্ন ব্যবহার করলে কুফরী হবে।

> ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় নিয়ে ঠাট্টা তামাশা করলে কুফরী হবে।

কুফর ভয়াবহ পাপ যেটা আপনাকে মুসলমান পরিচয় হতে খারিজ করে দিবে। আমাদেরকে সর্বোচ্চ সতর্কতার পরিচয় দিতে হবে কথাবার্তায়, আচার আচরণে যাতে কোনো অবস্থাতে আমরা কুফরী করার ঝুঁকিতে না পড়ি। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।

প্লিজ লক্ষ্য করুন,



*** আপনি যদি ইসলামের কোনো ফরয বিধান পালন না করেন তাহলে কঠিন পাপী ও গোনাহগার হবেন। কিন্তু কাফির হবেন না। (অবশ্য সালাত এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। ইচ্ছাকৃতভাবে, ফরয সালাত আদায় না করাকে কুফরী করার মত বলা হয়েছে কুরআনে)।

তবে আপনি যদি কোনো ফরয বিধান নিয়ে উপহাস করেন, অস্বীকার করেন তবে নিশ্চিতভাবে আপনি কাফির হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে গেলেন।

*** ধরুণ, আপনি একজন প্রাপ্তবয়স্কা নারী। আপনি পর্দা পালন করেন না। এজন্য আপনার কঠিন পাপ হবে। তবে আপনি কাফির হবেন না। আপনার একজন বান্ধবী আছে যে সালাত আদায় করে, সাওম পালন করে ও অন্যান্য ফরয ইবাদতও পালন করে, তবে সে পর্দা পালন করেনা। বরং যারা বোরকা পড়ে কিংবা হিজাব পড়ে তাদের বোরকাওয়ালী, আনকালচার্ড, ক্ষেত আরও বিভিন্ন কথা বলে উপহাস করে। আপনার বান্ধবী শুধু পাপীই হবেন না, তিনি নিশ্চিতভাবে কাফির হওয়ার ঝুঁকিতে পড়লেন। সাওম, যাকাত, হজ্জ্ব, যিহাদ, হালাল হারাম সকল বিধানের ক্ষেত্রেও বিষয়টি অনুরূপ।

সেক্যুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতা কুফরী

Oxford dictionary তে বলা হয়েছে –“Secularism means the doctrine morality should be based solely on regard to the wellbeing of mankind in the present life, to exclusion of all consideration drawn from belief in God or in future life”

-ধর্মনিরপেক্ষতা এমন একটি মতবাদ যেখানে মানবজাতির কল্যাণ চিন্তায় গড়ে উঠেছে এমন একটি নৈতিক ব্যবস্থা যেখানে থাকবেনা স্রষ্টা বা পরকাল বিশ্বাস ভিত্তিক কোন বিবেচনা। (নাউজুবিল্লাহ)।

Encyclopedia- বা বিশ্বকোষে বলা হয়েছেঃ

Secular spirit or tendency especially a system of political or social philosophy that reject all form of religious faith.

--ধর্মনিরপেক্ষ চেতনা এমন একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক দর্শন যা সকল ধর্ম বিশ্বাসকেই প্রত্যাখ্যান করে।

সুতরাং নিশ্চিত করেই বলা যায়- ধর্মনিরপেক্ষতা কুফরী।

আপনি নামাজ, রোজা, হজ্জ্ব, যাকাত সব ঠিকমত পালন করেন, হালাল হারাম মেনে চলেন কিন্তু আবার ধর্মনিরপেক্ষতা সমর্থন করেন তাহলেও আপনি কুফরী করলেন। আপনার নেক আমলগুলি কুফরীর কারণে ধ্বংস হয়ে যাবে। সূরা মুহাম্মদে বলা হয়েছেঃ

إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَصَدُّوا عَن سَبِيلِ اللَّهِ وَشَاقُّوا الرَّسُولَ مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْهُدَىٰ لَن يَضُرُّوا اللَّهَ شَيْئًا وَسَيُحْبِطُ أَعْمَالَهُمْ [٤٧:٣٢]

-যারা কুফরী করে এবং আল্লাহর পথে আসা হতে বিরত রাখে এবং তাদের কাছে হেদায়াত এর পথ পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পরও যারা আল্লাহর রাসূলের বিরোধিতা করে, তারা কখনো আল্লাহ তায়ালার কোনো ক্ষতি সাধন সক্ষম হবেনা; অচিরেই আল্লাহ তায়ালা তাদের যাবতীয় কর্ম নিষ্ফল করে দিবেন।

(সূরা মুহাম্মাদঃ ৩২)।

এখানে ‘কর্ম নিষ্ফল করে দিবেন’ এর ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, এর অর্থ হচ্ছে- কুফরীর কারণে নেক আমলগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হবে।

নিফাকঃ

নিফাক শব্দের আভিধানিক অর্থ ভন্ডামি, কপটতা, ধোঁকাবাজি, প্রতারণা ইত্যাদি। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায়, অন্তরে কুফর ও অবাধ্যতা গোপন করে মুখে ইসলামকে স্বীকার করার নাম হলো নিফাক। যে এরূপ কাজ করে তাকে বলা হয় মুনাফিক।

রাসূলুল্লাহ (সা) মুনাফিকদের তিনটি চিহ্ন বর্ণনা করে বলেছেনঃ “মুনাফিকের চিহ্ন তিনটি। যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করে, আর যখন কোনো কিছু তার নিকট আমানত রাখা হয় তার খেয়ানত করে।(সহিহ্ বুখারী)।

রাসূলুল্লাহ(সা) এর যুগে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই এর মত নিকৃষ্ট মুনাফিক ছিল। এমন ধরনের মুনাফিক আজো মুসলিম সমাজে বিচরণ করছে বিভিন্ন পরিচয়ে।

মুনাফিকদের শাস্তি সম্পর্কে কুরআন কারীমে ঘোষিত হয়েছেঃ

إِنَّ الْمُنَافِقِينَ فِي الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ

-নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে অবস্থান করবে। (সূরা আন নিসা, আয়াত ১৪৫)।

দয়াময় আল্লাহ তাআলা আমাদের কুফর ও নিফাকের মত নিকৃষ্ট পাপ কাজ হতে হেফাজত করুন। আমিন।

(চলবে........)

বিষয়: বিবিধ

১৪২৮ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

237207
২১ জুন ২০১৪ বিকাল ০৪:০৫
সন্ধাতারা লিখেছেন : wonderful writing. How are you now?
২১ জুন ২০১৪ বিকাল ০৪:১৫
183755
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : Many thanks. Alhamdulillah, my health condition is improving gradually. Feeling better now than earlier.
২১ জুন ২০১৪ বিকাল ০৫:২১
183770
সন্ধাতারা লিখেছেন : alhamdulillah bhaiya. plz take care of you.
237221
২১ জুন ২০১৪ বিকাল ০৪:১৮
চোরাবালি লিখেছেন : সুন্দর বিশ্লেষণ

দয়াময় আল্লাহ তাআলা আমাদের কুফর ও নিফাকের মত নিকৃষ্ট পাপ কাজ হতে হেফাজত করুন। আমিন

২১ জুন ২০১৪ বিকাল ০৪:২৫
183757
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : Praying Praying Praying Praying
237225
২১ জুন ২০১৪ বিকাল ০৪:২২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ফরজ বিধান এর অনুসরন করা কুফরি। কিন্তু আমরা বেশিরভাগই ফরজ নিয়ে চিন্তিত নই। বরং ছোটখাট কিছু বিষয় নিয়ে একে অন্যের বিরুদ্ধে কুফরির অভিযোগ আনি।
২১ জুন ২০১৪ বিকাল ০৪:২৭
183758
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : ধন্যবাদ। মন্তব্যটিতে(প্রথম বাক্য) বোধ হয় অনিচ্ছাকৃত ভুল আছে। রিচেক প্লিজ।
২১ জুন ২০১৪ বিকাল ০৪:২৮
183759
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : অস্বীকার করা এর পরিবর্তে ‘অনুসরণ করা’ লিখেছেন।
২১ জুন ২০১৪ বিকাল ০৪:৩৪
183760
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : একটু ভুল হয়েছে। "অনুসরন না করা" হবে।
ধন্যবাদ ঠিক করে দেওয়ার জন্য।
২২ জুন ২০১৪ রাত ০২:২৩
183885
আবু সাইফ লিখেছেন : "কুফরীর অপরাধ করা" এবং "কাফির হওয়া" এ দুয়ের মাঝে একটি দেয়াল আছে বলে জানি...

ঈমান যেমন "সিদ্ধান্ত+ঘোষণা"র ব্যাপার, কুফরও তেমনি। তাই কেউ কুফরীর অপরাধ করলেও "কাফির" সাব্যস্ত হবেনা, যতক্ষন না ইসলাম পরিত্যাগের ঘোষণা দেয়- যদিও তার অপরাধটি মৃত্যুদন্ডযোগ্য। "কর্মগত" ও "বিশ্বাসগত" কুফরীর পার্থক্যটি উপেক্ষণীয় নয়।
আল্লাহতায়ালাই ভালো জানেন।
২২ জুন ২০১৪ সকাল ১১:২৬
183975
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : আবু সাইফ ভাই এর উপলব্ধি ঠিক আছে। আমি ও কারণগুলিতে কোথাও উল্লেখ করেছি কাফির হয়ে যাবে এবং কোথাও কুফরী হবে।


সালাত ব্যতীত অন্য ফরয বিধান এর উপর আমল না করলে কুফরী হয়না,ভয়াবহ পাপ হয়। তবে অস্বীকার, অবজ্ঞা বা উপহাস করলে কুফরী হবে।


237231
২১ জুন ২০১৪ বিকাল ০৫:০৭
পললব লিখেছেন : ভালো লাগল। ধন্যবাদ
237253
২১ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৮
পুস্পিতা লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ। এই ধরনের মৌলিক বিষয়গুলো আসলে অধিকাংশ মুসলমানই জানে না। তাদের জানানো তেমন হয় না, হয়তো সুযোগও পায় না।
২২ জুন ২০১৪ সকাল ১১:৩৩
183976
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : সেটাইতো সমস্যা ভগিনী। এসব নিয়ে আলোচনা না করে আমাদের এক শ্রেণীর আলেম নামধারী মুস্তাহাব আমল নিয়ে মতভিন্নতা হলে কাফির/বাতিল ফতোয়া দিয়ে বসেন। খুব দুঃখজনক।
237337
২১ জুন ২০১৪ রাত ১১:১১
স্বপন২ লিখেছেন : দারুন লেখা । চালিয়ে যান।
২২ জুন ২০১৪ সকাল ১১:৩৪
183977
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।
237394
২২ জুন ২০১৪ রাত ০২:৩২
আবু সাইফ লিখেছেন : আপনার অসুস্থতার খবর জেনে দোয়া করেছি-

আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ হযে আমাদের মাঝে ফিরেছেন

আপনার এ সিরিজটি, বিশেষতঃ উদাহরণসহ বিশ্লেষণ খুব ভালো লেগেছে।

এখানে "সদ্দু আন সাবীল" নিয়ে আরেকটু বেশী বললে ভালো হতো মনে হয়, এটা তো আমাদের দেশে এখন মহামারীর রূপ নিয়েছে
২২ জুন ২০১৪ সকাল ১১:৪০
183978
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : আপনাদের ভালবাসায় আমি সিক্ত। ধন্যবাদ নিন। সামনের পর্বগুলোতে এ বিষয়টি পুণরায় অবতারণা করার ইচ্ছে আছে। সাথে থাকুন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File