শবে বরাত এর মূলেই গলদ- এটি নিয়ে বিতর্ক অর্থহীন
লিখেছেন লিখেছেন প্রেসিডেন্ট ১১ জুন, ২০১৪, ১১:১২:২৮ সকাল
শবে বরাত শব্দটিই আপত্তিকর, এর গোড়াতেই গলদ। কিছু আলিম অহেতুক এটি নিয়ে বিতর্ক করেন কোনো প্রকার তথ্য প্রমাণ ছাড়াই।
শবে বরাত শব্দযুগল ফারসী। আপত্তির কারণ সেটি নয়, বরং আপত্তির কারণ হচ্ছে এর অর্থ। ফারসীতে শব শব্দের অর্থ রাত এবং বরাত শব্দের অর্থ ভাগ্য। অর্থাৎ এ শব্দযুগলের অর্থ ভাগ্য রজনী যেটার উপর বিশ্বাস ঈমানের পক্ষে মারাত্বক ক্ষতিকর। বেশিরভাগ সাধারণ মুসলিম এ রাতে ভাগ্য লিপিবদ্ধ হয় বলে বিশ্বাস করেন এবং সে বিশ্বাস হতে এটি পালন করতে গিয়ে নানাবিধ শিরক ও বিদয়াতে জড়িয়ে পড়েন। ইসলামের একটি মৌলিক বিশ্বাস হচ্ছে তাকদীর। ভাগ্য রজনীতে বিশ্বাস তাকদীরে বিশ্বাসের বিপরীত।
অর্থাৎ ভাগ্য রজনীতে বিশ্বাস করা মানে আপনি ঈমান হারানোর ঝুঁকিতে পড়লেন। অতএব, শবে বরাত বর্জনীয়- এ নিয়ে কোনো মতভেদ থাকা উচিত নয় মুমিনদের মাঝে।
মতভেদ যেটা নিয়ে থাকতে পারে সেটি হচ্ছে -লাইলাতুল নিসফে বিন শাবান বা শাবানের মধ্য রাত্রি।
এটি নিয়ে এবার আলোচনা করা যেতে পারে। লাইলাতুল নিসফে বিন শাবান। সম্পর্কে বর্ণিত বিশেষ নামায বা বিশেষ নামায এর ফযীলত বিষয়ক সকল হাদীস বানোয়াট ও মনগড়া।
তবে এ রজনীর তথা শাবানের মধ্য রজনীর মর্যাদা বা ফযীলত বিষয়ক কয়েকটি হাদীস বিভিন্ন হাদীসের গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে, যেগুলি হাসান বা যয়ীফ বা মাঊযূ(জাল) -এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে।
শাবান মাসের মধ্য রাত্রির ফযীলত সম্পর্কে কিছু হাদীস বর্ণিত হয়েছে:
১. আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন: এক রাতে আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে খুঁজে না পেয়ে তাঁকে খুঁজতে বের হলাম, আমি তাকে বাকী গোরস্তানে পেলাম। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন: ‘তুমি কি মনে কর, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার উপর জুলুম করবেন?’ আমি বললাম: ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি ধারণা করেছিলাম যে আপনি আপনার অপর কোন স্ত্রীর নিকট চলে গিয়েছেন। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: ‘মহান আল্লাহ তা’লা শা‘বানের মধ্যরাত্রিতে নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন এবং কালব গোত্রের ছাগলের পালের পশমের চেয়ে বেশী লোকদের ক্ষমা করেন।
হাদীসটি ইমাম আহমাদ তার মুসনাদে বর্ণনা করেন (৬/২৩৮), তিরমিযি তার সুনানে (২/১২১,১২২) বর্ণনা করে বলেন, এ হাদীসটিকে ইমাম বুখারী দুর্বল বলতে শুনেছি। অনুরূপভাবে হাদীসটি ইমাম ইবনে মাজাহ তার সুনানে (১/৪৪৪, হাদীস নং ১৩৮৯) বর্ণনা করেছেন। হাদীসটির সনদ দুর্বল বলে সমস্ত মুহাদ্দিসগণ একমত।
২. আবু মূসা আল আশ’আরী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘আল্লাহ তা‘আলা শাবানের মধ্যরাত্রিতে আগমণ করে, মুশরিক ও ঝগড়ায় লিপ্ত ব্যক্তিদের ব্যতীত, তাঁর সমস্ত সৃষ্টিজগতকে ক্ষমা করে দেন। হাদীসটি ইমাম ইবনে মাজাহ তার সুনানে (১/৪৫৫, হাদীস নং ১৩৯০),এবং তাবরানী তার মু’জামুল কাবীর (২০/১০৭,১০৮) গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।
আল্লামা বূছীরি বলেন: ইবনে মাজাহ বর্ণিত হাদীসটির সনদ দুর্বল। তাবরানী বর্ণিত হাদীস সম্পর্কে আল্লামা হাইসামী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) মাজমা‘ আয যাওয়ায়েদ (৮/৬৫) গ্রন্থে বলেনঃ ত্বাবরানী বর্ণিত হাদীসটির সনদের সমস্ত বর্ণনাকারী শক্তিশালী। হাদীসটি ইবনে হিব্বানও তার সহীহতে বর্ণনা করেছেন। এ ব্যাপারে দেখুন, মাওয়ারেদুজ জাম‘আন, হাদীস নং (১৯৮০), পৃঃ (৪৮৬)।
৩. আলী ইবনে আবী তালিব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “যখন শা‘বানের মধ্যরাত্রি আসবে তখন তোমরা সে রাতের কিয়াম তথা রাতভর নামায পড়বে, আর সে দিনের রোযা রাখবে; কেননা সে দিন সুর্যাস্তের সাথে সাথে আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন: ক্ষমা চাওয়ার কেউ কি আছে যাকে আমি ক্ষমা করব। রিযিক চাওয়ার কেউ কি আছে যাকে আমি রিযিক দেব। সমস্যাগ্রস্ত কেউ কি আছে যে আমার কাছে পরিত্রাণ কামনা করবে আর আমি তাকে উদ্ধার করব। এমন এমন কেউ কি আছে? এমন এমন কেউ কি আছে? ফজর পর্যন্ত তিনি এভাবে বলতে থাকেন”।
হাদীসটি ইমাম ইবনে মাজাহ তার সুনানে (১/৪৪৪, হাদীস নং ১৩৮৮) বর্ণনা করেছেন। আল্লামা বূছীরি (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) তার যাওয়ায়েদে ইবনে মাজাহ (২/১০) গ্রন্থে বলেন, হাদীসটির বর্ণনাকারীদের মধ্যে ইবনে আবি সুবরাহ রয়েছেন যিনি হাদীস বানাতেন। তাই হাদীসটি বানোয়াট।
তিনটি বিষয়ে অল্প যয়ীফ(সামান্য দুর্বল) হাদীস বলা অনেকে অনুমোদন করেছেন।
(১) কুরআন কারীমের তাফসীর বা শাব্দিক ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে,
(২) বিভিন্ন ইতিহাস বা ঐতিহাসিক বর্ণনার ক্ষেত্রে,
(৩) বিভিন্ন নেক আমলের ফযীলত বর্ণনার ক্ষেত্রে।
তবে এর জন্য নিম্নলিখিত শর্ত আরোপ করা হয়েছেঃ
১. যয়ীফ হাদীসটি অল্প দুর্বল হবে, বেশি দুর্বল হবেনা এবং সহীহ হাদীসের বিপরীত অর্থ প্রকাশ করবেনা।
২.যয়ীফ হাদীসটি এমন একটি কর্মের ফযীলত বর্ণনা করবে যা মূলত সহীহ হাদীসের আলোকে ভাল ও জায়েয।
৩. যয়ীফ হাদীসের উপর আমল করার ক্ষেত্রে সত্যিই একথা মনে করা যাবেনা যে, রাসূলুল্লাহ(সা) সত্যিই এ কথা বলেছেন। সাবধানতামূলক আমল করা যেতে পারে এ ভেবে যে, রাসূলুল্লাহ(সা) এ কথা না বলার(করা বা অনুমোদন) সম্ভাবনাই বেশি তবে যদি সত্যি হয় আমল করে রাখি, সাওয়াবটা পাওয়া যাবে। আর সত্য না হলেও মূল কাজটি যেহেতু সহীহ হাদীসের আলোকে মুস্তাহাব তাহলে কিছু সাওয়াবতো পাওয়া যাবে।(সুয়ূতী, তাদরীবুর রাবী ১/৩৫০-৩৫১)।
কাজেই এটাও বুঝা যাচ্ছে যে, অল্প যয়ীফ হাদীসের আলোকে আমল করা জায়েয, তবে সেটা সাবধানতামূলক। সুতরাং এ ব্যাপারে অন্যদের উৎসাহিত করাটা উচিত নয়। (যেহেতু সাবধানতার বিষয়)।
মোট কথাঃ এক্ষেত্রে- প্রথম ও দ্বিতীয় হাদীস দুটি দুর্বল, খুব দুর্বল বা বানোয়াট নয়। সে হিসেবে যৎকিঞ্চিৎ প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে এ রাত্রির ফযীলত রয়েছে।
আবার দেখুন,
সহীহ হাদীসে সুস্পষ্ট এসেছে যে, “আল্লাহ তা‘আলা প্রতি রাতের শেষাংশে – শেষ তৃতীয়াংশে- নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হয়ে আহবান জানাতে থাকেন ‘এমন কেউ কি আছে যে আমাকে ডাকবে আর আমি তার ডাকে সাড়া দেব? এমন কেউ কি আছে যে আমার কাছে কিছু চাইবে আর আমি তাকে দেব? আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আর আমি তাকে ক্ষমা করে দেব?” [বুখারী, হাদীস নং ১১৪৫, মুসলিম হাদীস নং ৭৫৮]
যদি উপরে উল্লিখিত প্রথম ও দ্বিতীয় হাদীসদ্বয়ে—আল্লাহ তা‘আলা নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হয়ে তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আহবান জানাতে থাকেন — এ বক্তব্যই উপস্থাপিত হয়েছে।
হাদীস দুটিকে হাসান হাদীস(মোটামুটি গ্রহণযোগ্য) হিসেবেও ধরে নিলাম। কিন্তু নতুন বা অতিরিক্ত কিছুতো নেই হাদীসদুটিতে।
পরিশিষ্টঃ উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে একথা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, হালুয়া রুটি, আতশবাজি, বিশেষ নিয়মে বিশেষ নামায, জিকিরের নামে গলা ফাটিয়ে বিকট আওয়াজ করা - এগুলি সবই বিদয়াত, সুতরাং বর্জনীয়।
তবে অল্প যয়ীফ বা হাসান হাদীসদ্বয়ের আলোকে এ রাতের মর্যাদা বা ফযীলতের বিষয়টি যৎকিঞ্চিত প্রমাণিত। এক্ষেত্রে সাবধানতামূলক নফল বা মুস্তাহাব আমল করা যেতে পারে। যেমনঃ তাহাজ্জুদ নামায একটু দীর্ঘায়িত করা, কুরআন পড়া এসব। তবে এ সকল নফল ইবাদত ঘরে বসে করাটাই বাঞ্চনীয়, মসজিদে নয়।
বিষয়: বিবিধ
৩৬৭২ বার পঠিত, ৫৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সুন্দর ইসলামকে এরা অসুন্দর আর বিকৃত করে ফেলছে।
আল্লাহ তা'আলা এই বেদাতী আলেম-ওলামাদের হতে আমাদের হেফাজত করুন। আমীন।
শব শব্দের অর্থ রাত্রি আর বরাত অর্থ মুক্তি, অতএব শবে-বরাত অর্থ মুক্তির রাত্রি। কিন্তু নামটি হাদীসের ভান্ডারে কোথাও নেই। রসূল (সাঃ) এ নামে এ রাত্রিকে আদৌ উল্লেখ করেন নি। কারণ 'শব' ফারসী শব্দ আর 'বরাত' আরবী শব্দ। অর্ধেক ফারসী আর অর্ধেক আরবী শব্দ সংযোগে কোন আরবী নাম হতে পারে না। হাদীসে উক্ত রাত্রিকে 'লায়লাতুন নিসফো মিন শা'বান' বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এবং বিভিন্ন হাদীসে এর কিছু ফজিলতও বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু কিছু হাদীস বিশেষজ্ঞদের মতে এ হাদীস গুলো সহীহ নয়। (আমরা সে তর্কে যাব না)। মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী স্বীয় মিরকাতে (২য় খন্ড ১৭৮ পৃষ্ঠা) শবে-বরাতের তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। এ রাত্রে কবর জিয়ারতে যাওযার কোন নির্দেশ নেই। তবে কোন হাদীসেই ঘরবাড়ি সাজানো বা মসজিদ সাজানো, হালুয়া রুটি, পটকা ফোটানো, ঘরে মোতবাতি জ্বালানো রসম-রেওয়াজের উল্লখ নেই। বরং এসবই বিদআত ও অনৈসলামিক কাজ। তবে সামর্থ্যনুসারে অন্যান্য রাত্রির ন্যায় উক্ত রাত্রিতে আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী করা, তাসবীহ তাহলীল, কুরআন তিলাওয়াত, তাহাজ্জুদের সলাত ইত্যাদিতে লিপ্ত হওয়াতেই মঙ্গল। (বিস্তারিত দেখুন- ইসলামের দৃষ্টিতে শা'বান ও শবে-বরাত মাওলানা মুনতাসির আহমাদ রাহমানী
যেহেতু এটি একটি বিশেষ রাত সুতরাং এ রাতে (সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন রসম-রেওয়াজ পরিহার করে) অন্যান্য রাত্রির তুলানায় অতিরিক্ত নফল ইবাদত-বন্দেগী হতে-ই পারে -- রমযান মাসে যেমন আমরা অতিরিক্ত সাওয়াবের আশায় অতিরিক্ত ইবাদত-বন্দেগী করে থাকি । মহানবী (সাঃ)-ও তো তাই করেছিলেন ; যেমন-- হযরত আ’লা ইবনুল হারিছ রাহ. থেকে বর্ণিত, উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা রা. বলেন, “একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নামাযে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সেজদা করলেন যে, আমার আশঙ্কা হল, তাঁর হয়তো ইনতেকাল হয়ে গেছে। আমি তখন উঠে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা! অথবা বলেছেন, ও হুমায়রা! তোমার কি এই আশঙ্কা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না, ইয়া রাসূলুল্লাহ। আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না। নবীজী জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি জান এটা কোন্ রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি তখন বললেন, এটা হল অর্ধ শা’বানের রাত। (শা’বানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত)। আল্লাহ তাআলা অর্ধ শা’বানের রাতে তাঁর বান্দাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি প্রদান করেন, ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।” -শুআবুল ঈমান, বায়হাকী ৩/৩৮২,৩৮৩ (হাদীসটিকে মুহাদ্দেসীনে কিরাম "উত্তম" আখ্যা দিয়েছেন। উপরোক্ত হাদীস থেকে এ রাতের ফযীলত যেমন জানা যায় তদ্রূপ এ রাতের আমল কেমন হওয়া উচিত তাও বোঝা যায়। অর্থাৎ দীর্ঘ নামায পড়া, সেজদা দীর্ঘ হওয়া, দুআ ও ইস্তেগফার করা ইত্যাদি। [কৃতজ্ঞতাঃ ব্লগার চিরবিদ্রোহী]
শুআবুল ঈমান, বায়হাকী ৩/৩৮২,৩৮৩ (হাদীসটিকে মুহাদ্দেসীনে কিরাম "উত্তম" আখ্যা দিয়েছেন।
প্রশ্ন 'সমালোচক'কে, কারা এবং কোথায়? কোন কোন মুহাদ্দেসীন "উত্তম" আখ্যা দিয়েছেন?
কোন কোন মুহাদ্দেসীন শুআবুল ঈমান, বায়হাকী ৩/৩৮২,৩৮৩ (হাদীসটিকে মুহাদ্দেসীনে কিরাম "উত্তম" আখ্যা দিয়েছেন।) সেটা ব্লগার চিরবিদ্রোহী বলতে পারবেন । আমি তার বক্তব্য ইমরান ভাই-এর পোষ্ট (http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/7094/imranh/46212#176966) থেকে উদ্ধৃত করেছি মাত্র ।
রিজাল শাস্ত্র সম্বন্ধে কিছু পড়াশোনা থাকলে দেখা যাবে যে, কোনো কোনো সময় এক-ই ব্যক্তিকে বিভিন্ন মুহাদ্দীসিন উত্তম বা অনুত্তম বিবেচনা করেছেন । শায়খ আলবাণী পর্যন্ত কোনো কোনো সময় এক-ই রাবী-কে এক হাদীসের বেলায় গ্রহণযোগ্য বলে অন্য হাদীসের বেলায় তাকে-ই অগ্রহণযোগ্য বলেছেন । এসব নিয়ে তাঁর সমালোচনাকারীরা বই পর্যন্ত লিখেছেন । এখানে এসব নিয়ে বিস্তারিত আলাপের ইচ্ছা আমার নেই । ধন্যবাদ ।
মসজিদে মাইক বাজানো চিৎকার করে জিকির করা জিলাপী বিতরণ, আর বাড়ি বাড়ি হালুয়া রুটিতো আছেই!
সুন্দর ইসলামকে এরা অসুন্দর আর বিকৃত করে ফেলছে।
আবার একইভাবে এ উপমহাদেশে ইসলাম যতোটা বেশী ও আন্তরিকতার সাথে পালিত হয় পৃথিবীর আর কোথাও হয় না !
তবে এ রজনীর তথা শাবানের মধ্য রজনীর মর্যাদা বা ফযীলত বিষয়ক কয়েকটি হাদীস বিভিন্ন হাদীসের গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে, যেগুলি হাসান বা যয়ীফ বা মাঊযূ(জাল) -এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে।
>>>
আপনি রেজাল শাস্ত্র নিয়ে কতটুকু পড়াশুনা করেছেন তা জানতে খুবই ইচ্ছে করে !!!
সময় পেলে বইটি পড়ে দেখবেন।
কুরআন-হাদীছের আলোকে শবে বরাত
الذي عليه كثير من أهل العلم أو أكثرهم من أصحابنا وغيرهم على تفضيلها وعليه يدل نص أحمد
আমাদের মাযহাবের বা অন্যান্য মাযহাবের বহুসংখক বরং বেশিরভাগ আলেমের মত হলো এই রাতের ফজীলত রয়েছে। ইমাম আহমদের স্পষ্ট কথার মাধ্যমে এটাই প্রমানিত হয়।
{ইক্তিদাউস-সিরাত আল মুস্তাকীম}
>>>
ইমাম আন-নাববী বলেন,
قال الشافعي في الام وبلغنا أنه يقال إن الدعاء يستجاب في خمس ليال في ليلة الجمعة وليلة الاضحي وليلة الفطر وأول ليلة في رجب وليلة النصف من شعبان
ইমাম শাফেঈ তার কিতাব ‘‘আল-উম’’ এ বলেন, আমি জানতে পেরেছি পাঁচটি রজনীতে দোয়া কবুল করা হয় জুমআর রাত, ইদুল আদহার রাত, ঈদুল ফিতরের রাত, রজব মাসের প্রথম রাত ও শাবান মাসের মাঝ রাত।
এর পর তিনি উক্ত রাত সমুহতে পূর্ববর্তীদের কে কি আমল করতেন তা বর্ণনা করেন পরে বলেন,
قال الشافعي وانا استحب كل ما حكيت في هذه الليالي من غير ان تكون فرضا هذا آخر كلام الشافعي واستحب الشافعي والاصحاب الاحياء المذكور مع أن الحديث ضعيف لما سبق في أول الكتاب أن أحاديث الفضائل يتسامح فيها ويعمل علي وفق ضعيفها
ইমাম শাফেঈ বলেছেন, আমি এসব রাতে পূর্ববর্তীরা যা কিছু আমল করতো বলে বর্ণনা করেছি তা সবই মুস্তাহাব মনে করি ফরজ নয়। (ইমামা নাববী বলেন) ইমাম শাফেঈর কথা এই পর্যন্তই। তিনি এই রাত সমুহে আমল করা মুস্তাহাব মনে করেছেন যদিও এসব রাত সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসসমূহ দূর্বল কারণ আমরা পূর্বেই বলেছি ফজীলত সংক্রান্ত ব্যাপারে দূর্বল হাদীস গ্রহনযোগ্য হয় এবং দূর্বলতা সত্বেও তার উপর আমল করা হয়।
{আল মাজমু’}
নিশ্চয় আল্লাহ শা’বান মাসের মাঝ রাতে বান্দাদের দিকে দৃষ্টি দেন এবং সমস্ত সৃষ্টিকে ক্ষমা করেন শুধু মুশরিক ও অন্য মুসলিমের সাথে বিবাদে লিপ্ত ব্যক্তি ছাড়া।
{ইবনে মাযা/ كتاب إقامة الصلاة والسنة فيها/ باب ما جاء في ليلة النصف من شعبان}
{মিশকাত/ كتاب الصلاة/ باب قيام شهر رمضان - الفصل الثالث}
হাদীসটির অন্য একটি রেওয়ায়েত হলো,
يطلع الله إلى جميع خلقه ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن
এই হাদীসটির অর্থ পূর্বের হাদীসটির মতই শুধু শব্দগত কিছু পার্থক্য ছাড়া।
{তিবরানী, ইবনে হিববান, আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব, সিলসিলাতুস-সাহীহা/১১৪৪}
শায়খ আলবানী সিলসিলাতুস সাহীহাতে বলেন,
حديث صحيح، روي عن جماعة من الصحابة من طرق مخةلفة يشد بعضها بعضا وهم معاذ ابن جبل وأبو ثعلبة الخشني وعبد الله بن عمرو وأبي موسى الأشعري وأبي هريرة وأبي بكر الصديق وعوف ابن مالك وعائشة
এই হাদীসটি সহীহ। এটি বহু সংখক সাহাবী হতে বিভিন্ন সনদে বর্ণিত আছে যার একটি অন্যটিকে শক্ত করে। যেসব সাহাবা হতে হাদীসটি বর্ণিত আছে তারা হলেন, মুআজ ইবনে জাবাল, আবু ছা’লাবা, আব্দুল্লাহ ইবনে আমর, আবু মুসা আল আশআরী, আবু হুরাইরা, আবু বকর আস-সিদ্দীক, আওফ ইবনে মালিক এবং আয়েশা ()।
{সিলসিলাতুস সাহীহা/১১৪৪}
যারা বলেন কোনো সহীহ হাদীসে শবে বরাত বা নিসফে শা’বানের ফজীলতের কথা উল্লেখ নেই তাদের কথা সঠিক নয়। আল্লামা নাসিরুদ্দীন আনবানী শেষের হাদীসটির ৮ টি সনদের উপর বিস্তারিত আলোচনার পর বলেন,
وجملة القول أن الحديث بمجموع هذه الطرق صحيح بلا ريب والصحة تثبت بأقل منها عددا ما دامت سالمة من الضعف الشديد كما هو الشأن في هذا الحديث، فما نقله الشيخ القاسمي رحمه الله تعالى في " إصلاح المساجد " (ص ১০৭) عن أهل التعديل والتجريح أنه ليس في فضل ليلة النصف من شعبان حديث صحيح، فليس مما ينبغي الاعتماد عليه، ولئن كان أحد منهم أطلق مثل هذا القول فإنما أوتي من قبل التسرع وعدم وسع الجهد لتتبع الطرق على هذا النحو الذي بين يديك. والله تعالى هو الموفق
মোট কথা সমস্ত সুত্র একত্রিত করলে এই হাদীসটি সহীহ হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ অবশিষ্ট থাকে না। এখানে যা কিছু শর্ত পাওয়া গেছে তার চেয়ে অনেক কম শর্তে হাদীস সহীহ হয় যতক্ষণ না তাতে ভীষণ দূর্বলতা থাকে যেমনটি এই হাদীসে নেই। শায়খ কাসেমী রহেমাহুল্লাহ ‘‘ইসলাহুল মাসাজিদ’’ নামক কিতাবে জারহ্ ও তা’দীল শাস্ত্রের ইমামদের থেকে বর্ণনা করেছেন যে, শা’বান মাসের মাঝ রাতের ফজীলত সম্পর্কে কোনো সহীহ হাদীস নেই তার এ মতের উপর নির্ভর করা যাবে না। যদি কেউ সাধারনভাবে একথা বলে থাকে তবে তা এই হাদীসের সমস্ত সনদকে একত্রিত কারার মতো কষ্ট শিকার না করে তাড়াহুড়া করে রায় দেওয়ার কারণে বলেছে। যেভাবে তুমি এখানে একত্রিত দেখতে পাচ্ছ আর আল্লাহই তওফীক দাতা।
{সিলসিলাতু আস সহীহা/১১৪৪}
আমার এই কমেন্টের সাথে আপনার কমেন্টে মিল কোথায় তা একটু জানাবেন কি ???
পোষ্টের মধ্যে যে আরো গলদ আছে সেটা ব্লগার আবদুস সবুর অত্যন্ত বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছেন । সুতরাং আমি আর সে বির্তকে যাবো না । বিষয়টি নিয়ে আরো আলোচনা দেখলাম এখানে এবং সেখানে।
পোষ্ট ও ব্লগার নেহায়েৎ-এর মন্তব্য থেকে আরো যে গলদ আবিষ্কার করলাম তা হচ্ছে, সুযোগ বুঝে সুবিধাবাদের আশ্রয় গ্রহণ করা । যারা ইমাম আহমদ, ইমাম ইবনে তাইমিয়া ও হাল আমলের শায়খ আলবাণীর কথা (মতামত) ইমাম আবু হানিফা বা তাঁর পদাঙ্কানুসারী আলেমদের কথার উপর প্রাধান্য দেন (বা অনেক সময় অবজ্ঞা করেন) তারা সুযোগ বুঝে এক্ষেত্রে ঐসব "সালাফী” ইমামদের বক্তব্য চেপে গেছেন । কেনো ?
ওয়াহাবী ও সালাফী মতাদর্শে (কুর'আন-হাদীসের আক্ষরিক ব্যাখ্যা যাদের স্পেশালটি) মজে থাকা ব্যক্তিদের এটি একটি খাসলত -- লক্ষ্য বাদ দিয়ে উপলক্ষ্য নিয়ে টানা-হেঁচড়া করা । আদর্শিক মিল থাকার কারণে আপনার অবস্থা-ও হয়েছে তথৈবচ !
আপনি এখানে আপনার সমস্ত ফোকাস শব্দযুগলের মধ্যে আটকে দিয়েছেন যার জন্য এর মধ্যে ভয়াবহ শিরকের গন্ধ পাচ্ছেন এবং আপনার মূল পোষ্টের বিপরীতে ব্লগার আবদুস সবুর এবং ব্লগার চিরবিদ্রোহী (ইমরান ভাই-এর পোষ্টে) যে সব মতামত উপস্থাপন করেছেন সেগুলো সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলেছেন বিশেষত সালাফী ইমাম তাইমিয়া ও শায়খ আলবাণীর বক্তব্যগুলো ।
প্রায় সব ভাষায় একটি শব্দের অনেক সময় বিভিন্ন অর্থ পাওয়া যায় । যেমন, বরাত শব্দটির দুটো অর্থ আছে -- মুক্তি এবং ভাগ্য । আপনি 'মুক্তি' অর্থের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ না করে একমাত্র 'ভাগ্য' অর্থের প্রতি জোর দিয়ে চলেছেন মতলবী চিন্তা থেকে - অর্থাৎ শিরক ব্যাপারটি লাইম লাইটে আনার জন্য – 'মুক্তি রজনী' না বলে 'ভাগ্য রজনী' বলে ঢোল পিটিয়ে চলেছেন । অথচ 'মুক্তি রজনী' বলাটা হাদীসের কথার সাথে বেশী সঙ্গতিপূর্ণ ও অর্থবহ -- গোণাহ থেকে মুক্তি, অভাব-অনটন থেকে মুক্তি, ইত্যাদি ।
আমরা সাওম (আরবী) না বলে রোযা (ফার্সী) বলায় কি আমাদের সাওম পালন করা হচ্ছে না ? আমরা তো অনেক সময় এমন কথা বলে থাকি, 'রোযা-রমজানের দিন এমন কাজ করো না ...' যেখানে আরবী ও ফার্সী শব্দযুগল পাশাপাশি ব্যবহৃত হচ্ছে । এতে কি মূল কথা বুঝতে অসুবিধা হয় ? আবার আমরা সচরাচর একই অর্থবোধক 'আক্বিদা-বিশ্বাস' শব্দযুগল ব্যবহার করে থাকি যেখানে আরবী-বাংলা পাশাপাশি ব্যবহৃত হয় । এখানে-ও কি সমস্যা হয় ? ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আদহা কিন্তু পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে পরিচিত ! তাতে কি কোনো সমস্যা হয়েছে বা হচ্ছে ?
মাওলানা হেমায়েত উদ্দীন এ রাত-কে 'মুক্তির রাত' বলে অনুবাদ করা পছন্দ করেছেন । 'ভাগ্য রজনী' কথাটা হয়তো একটি হাদীসের (সেটা যে ক্যাটাগরীর হাদীস-ই হয়ে থাকুক না কেনো) কারণে চাউর হয়ে থাকতে পারে যেখানে বলা হয়েছে - এ রাতে আল্লাহ আগামী এক বছরের জন্য মানুষের হায়াত-মউত, রিযিক-দৌলত ইত্যাদির ফায়সালা করে থাকেন । এসব কোন্ রাতে ফায়সালা করা হয় সে সম্পর্কে হাদীসে দুই রাতের (শবে কদর ও শবে বরাত) কথা উল্লেখ পাওয়া যায় । (অনুপ্রেরণাঃ মাওলানা মুহাম্মদ হেমায়েত উদ্দীন কৃত বয়ান ও খুতবা, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং ২৭০) । এ হাদীস অনুসারে তো এখানে শিরকের কিছু দেখা যাচ্ছে না । এখানে ঈমানহারা হওয়ার-ই বা কি আছে ? কুর'আন ও হাদীস থেকে তাকদীর বা ভাগ্য (সৃষ্টির শুরুতে এর প্রথম নির্দিষ্টকরণ ও প্রথম লিখন, আবার গর্ভাশয়ে পুনরায় নির্দিষ্ট হওয়া, একবার এটা অপরিবর্তনীয় বলা, আবার পরে অন্যত্র দানের মাধ্যমে বা পিতামাতার সেবার মাধ্যমে আয়ুর বৃদ্ধির কথা বলা, আয়ু বৃদ্ধির জন্য দোয়া চাইতে বলা, ইত্যাদি...) সম্পর্কিত সব কথা একত্র করলে কিন্তু খুব ঘোলাটে মনে হবে । আলোচনা অন্যদিকে চলে যাবে আশংকায় আমি এ ব্যাপারে এখানে আর বেশী আগাবো না । কিন্তু আপনার শিরক আশংকা অমূলক ও অতিরঞ্জন ।
আপনার উপরোক্ত বক্তব্যটি স্ববিরোধীতায় পূর্ণ । আমরা সবাই যদি একে অপরকে বলি--
তাহলে কি প্রকারান্তরে সবাই-কে উৎসাহিত-ই করা হচ্ছে না ? আসলে আপনারা যারা এই দিবসটি পালনের বিরুদ্ধে কথা বলছেন তারা আমলের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম কথা বলেছেন । যেমন,
নেহায়েতঃ আপনার মতানুসারী ।
ইমরান ভাইঃ শবে বরাত রাতে বিশেষ মর্যাদা কোন কোন হাদীসের আলোকে প্রমাণিত হলেও এ উপলক্ষ্যে বিশেষ কোন ইবাদত সহীহ হাদীসের আলোকে প্রমাণিত নয়।
ওরিয়নঃ (৫) এ রাতকে কেন্দ্র করে যেমন সম্মিলিতভাবে ইবাদাত বন্দেগী করা, রাত্রি জাগরণ করা ঠিক নয় তেমনি ব্যক্তিগত ইবাদাত বন্দেগী করাও ঠিক হবে না। ... এ রাতে ইবাদাত-বন্দেগী করলে অধিক সওয়াব হবে এমন ধারণায় ব্যক্তিগতভাবে বা চুপিসারে কিছু করাও ঠিক হবে না।
বাগড়া তো আপনারা-ও বাঁধিয়েছেন দেখছি !
http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/9146/Tarek_ctg/47241
মন্তব্য করতে লগইন করুন