ডিয়ার মুসলিমস, ইসলাম ইজ নট অ্যা ম্যাটার অব জোকস (পর্ব তিন)
লিখেছেন লিখেছেন প্রেসিডেন্ট ০৭ জুন, ২০১৪, ০৩:৩১:৪৩ দুপুর
পূর্ববর্তী পর্বের লিংকঃ ডিয়ার মুসলিমস, ইসলাম ইজ নট অ্যা ম্যাটার অব জোকস (পর্ব দু্ই)
ফেসবুকে জনৈক ব্যক্তির পোস্টঃ
“আমি সত্যান্বেষী, সত্যে খুজিঁ ফিরি
চোখ কান অন্তর খোলা রেখে।
সত্য খুঁজে পেয়েছি আমি পূর্বসুরীদের (আকাবিরে দেওবন্দ) মাঝে।
- আলহামদুলিল্লাহ্” (উচ্চ আওয়াজে বলুন নাউজুবিল্লাহ)।
https://www.facebook.com/abul.kashem.1671897/posts/715802605149648?comment_id=716020295127879&offset=0&total_comments=31¬if_t=feed_comment_reply
মুসলমানদের সত্য অন্বেষণ কোথায় করা উচিত? নিশ্চয়ই কুরআন হাদীসে।
তা না করে কেউ যদি নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের অনুসরণ করে অন্ধভাবে তাহলে সেটাকি ব্যক্তিপূজা নয়?
আগে শুনতাম মাযহাব অনুসরণ করার কথা শুধুমাত্র মতভেদ পূর্ণ বিষয়গুলোতে। কিন্তু এটা এখন অন্ধ অনুসরণ এর বিষয়ে পরিণত হয়েছে সকল বিষয়ে যাচাই বাছাই ছাড়া। ক্রমশ এটা আরো নীচে নামছে। কুরআন, হাদীস, মাযহাব ছেড়ে কেউ কেউ সরাসরি ‘আকাবিরে দেওবন্দ’ ও অনুসরণ করছে। আর কত হেয় করবে এরা ইসলামকে?
(আলোচ্য বিষয় হচ্ছে একটি কেসস্টাডি, কয়েকটি জাল হাদীস এবং কুফর ও নিফাক)।
কেসস্টাডিঃ
হাসান সাহেব মধ্যবয়সী ভদ্রলোক। শহরে ব্যবসা করেন, বেশ টাকাপয়সা আছে। গ্রামের বাড়িতে হাসান সাহেব এর মা থাকেন। হাসান সাহেব এর ধর্মকর্মে খুব একটা মতি নেই। জুমার নামাজ পড়েন মাঝে মাঝে আর দুই ঈদের নামাজ। একদিন বৃদ্ধা মা মারা গেলেন। দাফন কাফন হলো। তিনদিনের দিন বড় মাদ্রাসার হুজুর ডেকে এনে অনেক বড় করে মীলাদ পড়ানো হলো। সবাইকে খাসির বিরিয়ানী খাওয়ানো হলো। মীলাদ শেষে বড় হুজুরকে বেশ বড় অংকের বখশিশ দেওয়া হলো। চল্লিশার ব্যাপারে হুজুর এর সাথে পরামর্শ করছেন হাসান সাহেব।
পান চিবোতে চিবোতে বড় হুজুর ফতোয়া দিলেন, “যে ব্যক্তি নিকটাত্মীয় মারা যাওয়ার চল্লিশদিন পর ভোজসভার আয়োজন করে এতিম মিসকীন খাওয়ায়, প্রতি লোকমার বিপরীতে সে ব্যক্তি এবং তার মৃত নিকটাত্মীয় এক লক্ষ নেকী পায়।”
হাসান সাহেব খুব খুশী। বড় হুজুরের পকেটে আরো কয়েকটি বড় অংকের নোট ঢুকিয়ে দিলেন এতিমদের খানাপিনার জন্য।
হুজুর এর এমন ফতোয়াটি কেমন যেন লাগলো পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেধাবী কিশোর রাকিব এর। রাকিব ক্লাসের ফার্স্ট বয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিত পড়ে, কুরআন হাদীসও পড়ে নিয়মিত। সে একটু ফাঁকা হলে হুযুরকে জিজ্ঞেস করে- হুযুর এ হাদীসটি কোথায় আছে?
“সেটা দিয়ে তোমার কি দরকার? তুমি কি বুঝবে এসব?” -চোখ লাল করে ধমক দেন হুযুর।
থতমত খায় রাকিব। বলে-“না মানে। আমাদের ইসলাম শিক্ষার স্যার বলেছেন- মীলাদ বিদআত, চল্লিশা বিদআত। আপনি ফযীলত বর্ণনা করছেন। রেফারেন্স দিলে মিলিয়ে দেখতাম আর কি!”
“পোলাপাইন পোলাপাইনের মত থাকো। বেয়াদবী করবানা। তোমার নিজের সাড়ে তিন হাত শরীরে তো মুসলমানীর আলামত দেখিনা। মাথায় টুপি কই? পাজামা পাঞ্জাবী কই?আইছে আমারে ইসলাম শিখাইতে! ”
হুজুরের রুদ্রমূর্তি দেখে রাকিব আর কথা বাড়ায়না। চুপ হয়ে যায়।
মা মারা যাওয়ার পরে আবেগাপ্লুত হাসান সাহেব পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু যতই দিন গড়াতে থাকে আবেগ কমতে থাকে, ধর্মভীতি ও কমতে থাকে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ তিন ওয়াক্তে এসে ঠেকে। একমাসের মাথায় হাসান সাহেব আবার আগের অবস্থায় ফিরে যান। নামাজ আর পড়া হয়না।
চল্লিশ দিনের দিন মহা ধূমধামে ৫টি গরু, কয়েকটি বকরী জবাই করে চল্লিশার আয়োজন করেন হাসান সাহেব।
কিছু জাল হাদীস
১/ “অলীগণের কারামত বা অলৌকিক ক্ষমতা সত্য” এ মর্মে একটি হাদীস বর্ণিত হয় যেটি সত্যি নয়। এটি মূলত কোনো আলিম এর বাণী বা মন্তব্য। মূলত আল্লাহ ছাড়া অপর কারো মুজিযা বা অলৌকিক ক্ষমতা (নবী-রাসূলগণের উপর আল্লাহর পক্ষ হতে মুজিযার প্রয়োগ ঘটেছে, সেটা নবী-রাসূলদের নিজস্ব ক্ষমতা নয়) আছে, এমন বিশ্বাস শিরক। (সাখাবী, আল মাকাদিস, পৃ. ৩৩৫; মোল্লা আলী কারী, আল আসরার, পৃ. ১৮১)।
২/ খাজা নিযামুদ্দিন আউলিয়া (রাহ) এর নাম দিয়ে ‘রাহাতুল মুহিব্বীন’ নামক পুস্তকে বলা হয়েছেঃ
“নিশ্চয় আল্লাহর বন্ধুদের কোনো মৃত্যু নেই বরং তাঁরা স্থানান্তরিত হয়ে ধ্বংসশীল ইহজগত হতে স্থায়ী পরজগতে।-আল হাদীস”
আব্দুল কাদির জিলানি(রাহ) এর নামে প্রচারিত বিকৃত তথ্যে ভরপুর ‘সিবরুর আসরার’ নামক পুস্তকে এটি উল্লেখ হয়েছে এভাবে-“মুমিনগণের কোনো মৃত্যু নেই বরং তাঁরা স্থানান্তরিত হয়ে ধ্বংসশীল ইহজগত হতে স্থায়ী পরজগতে।-আল হাদীস।”
দুটি কথাই রাসূলুল্লাহ(সা) এর নামে জঘন্য, মিথ্যা ও বানোয়াট কথা। শুধু তাই নয়, এগুলো কুরআনের ঘোষণার বিপরীত ।
এ জাতীয় আরেকটি জাল হাদীস, “নবীগণ ও অলীগণ তাঁদের কবরের মধ্যে সালাত আদায় করেন যেন তাঁদের বাড়িতে সালাত আদায় করছেন।”
৩। জিহাদ সম্পর্কিত দুটি জাল হাদীস
এক. “সবচেয়ে কঠিন জিহাদ প্রবৃত্তির সাথে জিহাদ।”-প্রসিদ্ধ তাবি তাবিয়ী ইবরাহীম ইবনু আদহাম এর এ বক্তব্যটিকে অবলীলায় হাদীস হিসেবে উল্লেখ করেন আমাদের অনেক আলিম অনেক প্রসিদ্ধ গ্রন্থে।
দু্ই. কথিত আছে, রাসূলুল্লাহ(সা) এক যুদ্ধ হতে ফিরে এসে ঘোষণা দিলেন, “আমরা ছোট জেহাদ হতে বড় জেহাদে প্রত্যাবর্তন করলাম।...বড় জেহাদ হলো মনের সাথে জেহাদ বা নিজের প্রবৃত্তির সাথে সংগ্রাম।” - ইবনু তাইমিয়্যা হাদীসটি ভিত্তিহীন ও বাতিল বলে গণ্য করেছেন। ইবনু হাজার আসকালানী বলেছেন-এটা ইবরাহীম ইবনু আবী আবলা নামক তাবিয়ীর বক্তব্য।
লক্ষ্য করুন, পবিত্র কুরআনে জিহাদ নিয়ে অনেকগুলো আয়াত আছে যেগুলিতে জিহাদ এর সংজ্ঞা, প্রকৃতি, প্রয়োজন সব স্পষ্ট করা হয়েছে। এ হাদীসগুলি কুরআনের বক্তব্যের বিরোধী হওয়ায় এমনিতেই বাতিল।
৪/ আরো কয়েকটি জাল হাদীস যেগুলি জাল/বানোয়াট বুঝার জন্য সেগুলির অর্থই যথেষ্ট। তাই রেফারেন্স উল্লেখ করে আর কলেবর বাড়াতে চাইনা।
এক. জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়ে পবিত্র।
দুই. কিছু সময় চিন্তা হাজার বৎসর ইবাদত অপেক্ষা উত্তম।
তিন. আমার উম্মতের আলিমগণ বনী ইসরাঈলের নবীগণের মত।
চার. আলিমের ঘুম ইবাদত।
পাঁচ. মূর্খের ইবাদতের চেয়ে আলিম এর ঘুম উত্তম।
ছয়. রাতের কিছু সময় ইলম চর্চা সারা রাত জেগে ইবাদতের চেয়ে উত্তম।
কুফর ও নিফাক
কুফর হচ্ছে ঈমানের বিপরীত যার অর্থ অস্বীকার করা, অবিশ্বাস করা, অবাধ্য হওয়া বা অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোতে বিশ্বাসের নাম ঈমান আর এসব বিষয়ে অবিশ্বাস করাটাই হচ্ছে কুফর।
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَصَدُّوا عَن سَبِيلِ اللَّهِ وَشَاقُّوا الرَّسُولَ مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْهُدَىٰ لَن يَضُرُّوا اللَّهَ شَيْئًا وَسَيُحْبِطُ أَعْمَالَهُمْ [٤٧:٣٢]
Those who reject Allah, hinder (men) from the Path of Allah, and resist the Messenger, after Guidance has been clearly shown to them, will not injure Allah in the least, but He will make their deeds of no effect.
-যারা কুফরী করে এবং আল্লাহর পথে আসা হতে বিরত রাখে এবং তাদের কাছে হেদায়াত এর পথ পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পরও যারা আল্লাহর রাসূলের বিরোধিতা করে, তারা কখনো আল্লাহ তায়ালার কোনো ক্ষতি সাধন সক্ষম হবেনা; অচিরেই আল্লাহ তায়ালা তাদের যাবতীয় কর্ম নিষ্ফল করে দিবেন।
(সূরা মুহাম্মাদঃ ৩২)।
(কুফর ও নিফাক একটি ব্যাপক বিষয়। কলেবর বড় হয়ে যাওয়ায় এ আলোচনা আজ এখানেই শেষ করছি। বাকি অংশ আগামী পর্বে)।
(চলবে.........)।
বিষয়: বিবিধ
১৫৬১ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
(সূরা মুহাম্মাদঃ ৩২)। আল্লাহ আমাদের সকল প্রকার কুফরী হতে রক্ষা কর
দেওবন্দ মাদরাসার ভিত্তি স্থাপনের সময় নাকি রসুল (সা) উপস্থিত হয়েছিলেন।
এই হচ্ছে দেওবান্দ তাহলে তার অনুসারীদের কি হবে?
হাহাহা
কন নাউজুবিল্লাহ।
(সূরা মুহাম্মাদঃ ৩২)।
জাজাকাল্লাহু খাইরান। এরকম কাজে হাত দিয়েছেন। চালিয়ে যান।
কিতাবের নামটি কি ভাই ?
প্রথম কথা হচ্ছে, আপনি যখন কিছুকে চ্যালেঞ্জ করবেন তখন সেটা মিথ্যা প্রমাণের দায়িত্বও আপনার উপর বর্তায়। বিষয়টি এক্ষেত্রে খুব সহজ। আপনি হাদীসটি সহীহ হলে সনদসহ বর্ণনা করবেন রেফারেন্স দিয়ে।
যাই হোক, এবার এটা যে জাল হাদীস সেটার রেফারেন্স দিচ্ছিঃ
১. হাদীসের নামে জালিয়াতি- ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর(২য় খন্ড, পৃ. ৩২৬)।
২. মোল্লা আলী কারী, আল আসরার পৃ.১২৭; দরবেশ হুত, আসনাল মাতালিব, পৃ. ১৫৩; তাহের ফাতানি, তাযকিরাহ, পৃ. ১৯১।
কেস ষ্টাডির মত অভিজ্ঞতা আমার নিজেরই একাধিক বার আছে। আমাদের আশে পাশে এরকম অনেক মানুষ ই আছে যারা অন্তরে ইসলামে বিশ্বাস রাখে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই অর্থলোভি হুজুরদের এই ধরনের পরামর্শের ফাঁদে পরে প্রকৃত ইসলাম হতে দুরে সরে যায়। তাদের মনে এই ধারনা জন্মায় যে নির্দৃষ্ট দিন যেমন শবেবরাত এ ইবাদত করলেই সব মাফ হয়ে যাবে এবং অর্থ খরচ করে মিলাদ বা যিয়াফত দিলেই সব হক আদায় হয়ে যাবে।
আমাদের মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা সেটা কওমি বা আলিয়া যাই হোক না কেন একটি বড় ত্রুটি হচ্ছে এখানে শিক্ষকদের অন্ধ অনুসরন করতে শিখান হয়। এমনকি স্কুলে ও এভাবে শিক্ষা দেয়া হয় অনেক সময় যে শিক্ষকদের ভুল ধরাও ভুল। এই জন্য আমাদের মধ্যে স্বাধিন চেতনা খুব কমই গড়ে উঠে।
গল্পের এই কথার মধ্যেই সমস্থ কথা নিহিত আছে। ওদের ব্যবসা বন্ধ হবে না। কোন উপায় নাই, যতদিন না মানুষ ইসলাম কি তা জানবে।
আল্লাহ আমাদের জ্ঞান দান করুন। ক্ষমা করুন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন