ডিয়ার মুসলিমস, ইসলাম ইজ নট অ্যা ম্যাটার অব জোকস (পর্ব দু্ই)
লিখেছেন লিখেছেন প্রেসিডেন্ট ০৫ জুন, ২০১৪, ০৭:৪৫:৫৫ সন্ধ্যা
প্রথম পর্বের লিংকঃ Click this link
প্রিয় মুসলিম ভাই বোনেরা- আমাদের কি হয়েছে? আমরা কি আল্লাহ তাআলার নির্দেশিত সীরাতুল মুস্তাকিমের পথে চলছি?
-আজ আমরা কুরআন হাদীস অধ্যয়ন করিনা। পড়লেও সেটা বুঝে পড়িনা। কুরআন হাদীস নয়, আমাদের ইসলাম শিক্ষার উপকরণ ভুলে ভরা মকসুদুল মুমিনীন, কাসাসুল আম্বিয়া, নিয়ামুল কুরআন, লজ্জাতুন্নেসা এসব গ্রন্থাদি। এটা যে কত বড় লজ্জাস্কর বিষয় সেটা কি আমরা বুঝতে পারছি?
- আমরা পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাত আদায় করিনা অথচ বানোয়াট মনগড়া নফল সালাত আদায় করি, বিদআতী মিলাদ পড়ি । অথচ ইচ্ছাকৃতভাবে ফরয সালাত অস্বীকার করা কুফরী এবং ত্যাগ করাও প্রায় কুফরীর মতো বলে পবিত্র কুরআনে উল্লেখ আছে।
- আমাদের কিছু আলেম এর কি হয়েছে আজ? আরবী শিক্ষা বঞ্চিত কেউ ইসলাম শিখতে চাইলে কেন তারা নিরুৎসাহিত করেন? এটা কি ইসলামের শিক্ষা?
(আজকের আলোচ্য বিষয় ইসলাম, ঈমান, ইসলামের নামে প্রচলিত কয়েকটি জাল হাদীস/জাল কথা)।
ইসলাম শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে আনুগত্য করা, আত্মসমর্পণ করা।
ব্যবহারিক অর্থে আমাদের স্রষ্টা মহান প্রভু আল্লাহ তাআলার নিকট নিঃশর্ত আত্মসমপর্ণ করে তাঁর সকল বিধিবিধান মেনে চলা ও রাসূলুল্লাহ(সা) এর অানুগত্য করার নামই ইসলাম।
অর্থাৎ ইসলামের পাঁচটি মূল ভিত্তি(কালিমা, সালাত, সাওম, হাজ্জ, যাকাত) ও কুরআন হাদীসে নির্দেষিত সকলপ্রকার ফরয ইবাদতকে স্বীকার করতে হবে, তদনুযায়ী আমল করতে হবে, হালাল হারাম মেনে চলতে হবে এবং রাসূলুল্লাহ(সা) এর সুন্নাত অনুসরণ করতে হবে।
ঈমান
ঈমান অর্থ বিশ্বাস করা, আস্থা স্থাপন, স্বীকৃতি দেওয়া, নির্ভর করা, মেনে নেওয়া ইত্যাদি। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষা অনুযায়ী- ইসলামী শরীয়তের যাবতীয় বিধিবিধান শর্তহীনভাবে অন্তরে পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস করা, মুখে স্বীকার করা এবং তদনুযায়ী আমল করার নামই হচ্ছে ঈমান।
প্রকৃতপক্ষে, ঈমান ও ইসলাম পরস্পর পরিপূরক। ঈমান হচ্ছে গাছের শিকড় বা মূল আর ইসলাম হচ্ছে তার শাখা প্রশাখা। দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা লাভ করতে হলে ঈমান ও ইসলাম উভয়টিকেই পরিপূর্ণভাবে স্বীয় জীবনে বাস্তবায়ন করতে হবে।
আরো মনে রাখতে হবে, ঈমানহীন আমল এবং আমলহীন ঈমান -কোনোটিতে মুক্তি নিহিত নেই। তবে প্রথমটি(ঈমানহীন আমল) নিঃসন্দেহে মুনাফিকদের লক্ষণ।
ঈমান এর কতগুলো মৌলিক বিষয়ের উপর দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস রাখতে হবে মুসলমানদের। এ সাতটি মূল বিষয় হলোঃ
১. আল্লাহ তাআলার প্রতি বিশ্বাস,
২. ফেরেশতাগণের প্রতি বিশ্বাস,
৩. আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস,
৪. নবী-রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস,
৫. আখিরাতে বিশ্বাস,
৬. তাকদিরে বিশ্বাস ও
৭. মৃত্যুর পর পুনরুথ্থান তথা পরকালে বিশ্বাস।
এ বিশ্বাসগুলি হতে হবে শর্তমুক্ত এবং পরিপূর্ণভাবে। কোনো প্রকার সন্দেহ পোষণ করলে ঈমান পূর্ণাঙ্গ হবেনা। শয়তান প্রতিনিয়ত মনের মধ্যে সন্দেহের বীজ রোপণ করতে চাইবে। শয়তানের কুপ্ররোচনার বিরুদ্ধে জয়ী হতে যে পারলো সেই মুমিন। কোনো কিছু নিয়ে মনে দ্বিধা আসলে ভাবতে হবে- আমাদের জ্ঞানের স্বল্পতার কারণেই আমরা এর রহস্য বুঝতে অক্ষম, সর্বশক্তিমান আল্লাহই এ সম্পর্কে সম্যক অবগত। মহাগ্রন্থ আল কুরআন অধ্যয়ন করলে সকল দ্বিধা দূর হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে অসংখ্য নিদর্শন বর্ণনা করেছেন মুমিনদের জন্য।
মানুষ হিসেবে আমাদের ক্ষুদ্রতা সম্পর্কে আমরা যদি সচেতন হই তাহলে আমরা বুঝতে পারবো - আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা।
একবার ভাবুন- মহাবিশ্ব> মহাকাশ > সৌরজগত> পৃথিবী> মানুষ।
মহাবিশ্ব/মহাকাশ এর তুলনায় আমাদের সৌরজগত একটি ধূলিকনার চেয়েও ক্ষুদ্র। আবার আমাদের গ্রহ পৃথিবী ও সৌরজগতের তুলনায় ধূলিকণা বৈ আর কিছু নয়। তাহলে মানুষ? আবার দেখুন - মহাবিশ্বের অন্য সকল স্থান এর চেয়ে আল্লাহ তাআলা পৃথিবীকেই বেছে নিয়েছেন মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে। (সুবহানাল্লাহ)।
الشَّمْسُ وَالْقَمَرُ بِحُسْبَانٍ [٥٥:٥]
The sun and the moon follow courses (exactly) computed;
-সূর্য ও চন্দ্র উভয়ই নির্ধারিত হিসাব মোতাবেক (অবিরাম কক্ষপথ ধরে) চলছে।(সূরা আর রাহমানঃ আয়াত ৫)।
(বি.দ্র. আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে- শুধু পৃথিবী নয়, সূর্য, চন্দ্র ও ঘূর্ণায়মান নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করে। অর্ধশিক্ষিত অবিজ্ঞানী নাস্তিকরা এ নিয়ে অযথাই পানি ঘোলা করার চেষ্টা করে)।
يَسْأَلُهُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِي شَأْنٍ [٥٥:٢٩]
Of Him seeks (its need) every creature in the heavens and on earth: every day in (new) Splendour doth He (shine)!
﴿٢٩﴾
فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ [٥٥:٣٠]
Then which of the favours of your Lord will ye deny?
- এই আকাশমন্ডলী ও ভূ-মন্ডলে যত কিছু আছে সবাই নিজ নিজ প্রয়োজনে তাঁরই কাছে চায়। তিনি প্রতিদিন কোনো না কোনো কাজে রত রয়েছেন। অতএব, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন কোন্ নিদর্শন অস্বীকার করবে?(সূরা আর রাহমানঃ আয়াত ২৯-৩০)।
أَلَمْ يَرَوْا إِلَى الطَّيْرِ مُسَخَّرَاتٍ فِي جَوِّ السَّمَاءِ مَا يُمْسِكُهُنَّ إِلَّا اللَّهُ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ [١٦:٧٩]
Do they not look at the birds, held poised in the midst of (the air and) the sky? Nothing holds them up but (the power of) Allah. Verily in this are
signs for those who believe.
-এরা কি পাখির দিকে তাকিয়ে দেখেনা? যে আকাশের শূণ্যগর্ভে বিচরণ করছে, আল্লাহ তায়ালা ছাড়া এমন কে আছে যিনি এদের স্থির করে ধরে রাখেন, অবশ্যই এর মাঝে ঈমানদারদের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে। (সূরা নাহলঃ আয়াত ৭৯)
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ [٥١:٥٦]
-আমি জ্বীন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি আমার ইবাদত করার জন্য। (সূরা আদ দারিয়াতঃ আয়াত ৫৬)।
ঈমান ও আমল সম্পর্কিত পবিত্র কুরআনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আয়াত রয়েছে। কিছু উল্লেখ করছি -শুধু সূরা ও আয়াত নং।
সূরা ৫০/৩৯-৪০; সূরা ৪৯/১৪,১৭; সূরা ১০৭/৪-৬; সূরা ১০০/৪-৬; সূরা ৯৮/৭; সূরা ৯১/১-১০; সূরা ৮৪/১৬-২৪; সূরা ৭৬/১০-২২; সূরা ৭০/২২-৩৫; সূরা ২/২-২০; সূরা ৯/১২৫-১২৭; সূরা ১৮/২৮-২৯; সূরা ২৬/৭৮-১০১; সূরা ৪২/৩৭-৪৩; সূরা-৪৩/৮৪-৮৯; সূরা ১৮/৫৪-৫৯।
কয়েকটি জাল হাদীসঃ
হাদীসের নামে অনেক জালিয়াত নানা মনগড়া, বানোয়াট, অবান্তর ও ফালতু কথাবার্তা প্রচার করে আমাদের দেশে ইসলামকে বিকৃত করেছে। এ নিয়ে বিস্তারিত লিখতে গেলে কয়েকটি গ্রন্থ হবে। তাই আমি প্রতি পর্বের সাথে কয়েকটি জাল হাদীসের পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দেয়ার ইচ্ছে করছি। অবশ্যই সেটাকে জাল বলার শক্ত ভিত্তি/রেফারেন্সসহ।
১। “সৃষ্টির সংখ্যাঃ ১৮ হাজার মাখলুকাত”- হাদীস নামে ভয়ংকর এ মিথ্যা কথা প্রচলিত আমাদের দেশে।
এই কথাটি একান্তই লোকশ্রুতি ও কোনো কোনো আলিমের মতামত। আল্লাহর অগণিত সৃষ্টির সংখ্যা কত লক্ষ বা কত কোটি সে বিষযে কোনো তথ্য কোনো সহীহ এমনকি যয়ীফ হাদীসেও বর্ণিত হয়নি।
যারা বিজ্ঞানের ছাত্র, বৈজ্ঞানিক নাম পড়ার সময় নিশ্চয়ই খেয়াল করে থাকবেন- এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত প্রাণী/উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা লক্ষ লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে।
২. বিশ্ব সৃষ্টির তারিখ বা বিশ্বের বয়স বিষয়ক
বিশ্ব সৃষ্টির তারিখ, সময়, বিশ্বের বয়স, আদম(আ) হতে ঈসা(আ) পর্য্যন্ত সময়ের হিসাব, আর কতদিন বিশ্ব থাকবে তার হিসাব ইত্যাদি বিষয়ে যা কিছু বলা হয় সবই বাতিল, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কথা। জালিয়াতগণ এ বিষয়ে অনেক কথা বানিয়েছে।
ইহুদী ও খৃস্টানগণের বাইবেলে বিশ্ব সৃষ্টির বয়স উল্লেখ করা হয়েছে। মানব সৃষ্টির সময় বলা হয়েছে। বাইবেল এর হিসেব অনুসারে বর্তমান বিশ্বের বয়স মাত্র ৭০০০(সাত হাজার) বছর মাত্র। এ কথা ঐতিহাসিকভাবে ও বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল বলে প্রমাণিত। এ সকল মিথ্যা ও ভুল তথ্যের উপর নির্ভর করে মুসলিম ঐতিহাসিকগণও অনেক কথা লিখেছেন। আর জালিয়াতগণ এই মর্মে অনেক জাল হাদীসও বানিয়েছে।
৩. জান্নাতের অধিবাসীদের দাড়ি থাকবেনা
জান্নাতের অধিবাসীদের দাড়ি থাকবেনা, সবাই দাড়িবিহীন যুবক থাকবে। শুধুামাত্র আদম(আ) এর দাড়ি থাকবে। কেউ বলছে শুধু মূসা(আ) বা হারূন(আ) এর দাড়ি থাকবে বা ইবরাহীম(আ) ও আবু বকর(রা) এর দাড়ি থাকবে। এগুলি সবই মিথ্যা ও বানোয়াট কথা।(যাহাবী, মীযানুল ইতিদাল ৩/৩৯৩; মুল্লা কারী, আল আসরার, পৃ. ৭৫)।
৪. আল্লাহ ও জান্নাত জাহান্নাম নিয়ে চিন্তা ফিকির করা
প্রচলিত একটি মিথ্যা হাদীস হলোঃ “মহান আল্লাহর মহত্ত্ব, জান্নাত ও জাহান্নাম নিয়ে এক মুহুর্ত চিন্তা ফিকির করা সারা রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়ার চেয়ে উত্তম।”(ইবনু ইরাক, তানযীহ ১/১৪৮)।
৫. আজগুবি সাওয়াব বা শাস্তি
মুহাদ্দিসগণ সনদ বিচার ছাড়াও যে সমস্ত আনুষঙ্গিক অর্থ ও তথ্যগত বিষয়কে জাল হাদীসের চিহ্ন হিসাবে উল্লেখ করেছেন তন্মধ্যে অন্যতম বিষয় হলো আজগুবি সাওয়াব ও শাস্তির বিবরণ।
বিভিন্ন প্রকারের সামান্য নফল ইবাদত বা অত্যন্ত সাধারণ ইবাদত, যিকির, দোয়া, কথা, কর্ম বা চিন্তার জন্য অগণিত আজগুবি সাওয়াবের বর্ণনা। এক্ষেত্রে জালিয়াতগণ কখনো সহীহ হাদীসে প্রমাণিত যিকির, সালাত, দোয়া বা ইবাদতের এইরূপ আজগুবি সাওয়াব বলেছে। কখনো বা বানোয়াট যিকির, সালাত, দোয়া, সিয়াম ইবাদত তৈরি করে তার বানোয়াট আজগুবি সাওয়াব বর্ণনা করেছে। এ সকল জাল হাদীসের ভাষা নিম্নরূপঃ যে ব্যক্তি অমুক যিকির করবে, অমুক বা অমুক কাজটি করবে তার জন্য এক লক্ষ নেকী, এক লক্ষ পাপ মোচন……। অথবা তার জন্য জান্নাতে এক লক্ষ বৃক্ষ রোপন, প্রত্যেক গাছের……….গোড়া স্বর্ণের……….ডালপালা………পাতা……….ইত্যাদি কাল্পনিক বর্ণনা। অথবা তার জন্য একলক্ষ শহীদের সাওয়াব, সিদ্দীকের সাওয়াব………। অথবা তার জন্য একটি ফিরিশতা/পাখি বানানো হবে, তার এত হাজার বা এত লক্ষ মুখ থাকবে…….ইত্যাদি। অথবা অমুক দোয়া পাঠ করলে লোহা গলে যাবে, প্রবাহিত পানি থেমে যাবে….প্রত্যেক অক্ষরের জন্য এত লক্ষ ফেরেশতা ইত্যাদি।
৬. ৭, ৭০ বা ৭০ হাজার পর্দা
সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, “মহান আল্লাহর নূরের পর্দা রয়েছে।”(মুসলিম, আস-সহীহ ১/১৬১)। কিন্তু পর্দার সংখ্যা, প্রকৃতি ইত্যাদির বিস্তারিত বিবরণ সহীহ হাদীসে পাওয়া যায়না। কিছু হাদীসে মহান স্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর পর্দার সংখ্যার কথা বলা হয়েছে। আমাদের দেশে বিভিন্ন ওয়াযে ৭০ হাজার নূরের পর্দা, ৭০ টি পর্দা, ৭টি পর্দা ইত্যাদি কথা বলা হয়। মুহাদ্দিসগণ বিস্তারিত আলোচনা ও নিরীক্ষার মাধ্যমে দেখেছেন যে, এই অর্থের হাদীসগুলি কিছু সন্দেহাতীতভাবে মিথ্যা ও বানোয়াট কথা আর কিছু যয়ীফ, দুর্বল ও অনির্ভরযোগ্য কথা।
৭. যে নিজেকে চিনল সে আল্লাহকে চিনল
আমাদের সমাজে ধার্মিক মানুষের মাঝে অতি প্রচলিত একটি বাক্য হলো- “যে নিজেকে জানল, সে তার প্রভুকে জানল।” অনেক আলেম তাঁদের বইয়ে এই বাক্যটিকে রাসূলুল্লাহ(সা) এর কথা বলে সনদবিহীনভাবে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু মুহাদ্দিসগণ একবাক্যে বলেছেন যে, এই বাক্যটি রাসূলুল্লাহ(সা) এর কথা নয়, কোনো সনদেরই তাঁর থেকে বর্ণিত হয়নি। কোনো কোনো মুহাদ্দিস উল্লেখ করেছেন যে, বাক্যটি তৃতীয় হিজরী শতকের একজন সূফী ওয়ায়েয ইয়াহইয়া ইবনে মুয়ায আল-রাযী(২৫৮ হি)-র নিজের বাক্য।
৮. মুমিনের কালব আল্লাহর আরশ
আমাদের সমাজে ধার্মিক মানুষের মাঝে বহুল প্রচারিত একটি বাক্যঃ“মুমিনের হৃদয় আল্লাহর আরশ।” এ বিষয়ে বিভিন্ন বাক্য প্রচলিতঃ “হৃদয় প্রভুর বাড়ি।” “মুমিনের হৃদয় আল্লাহ আরশ।” “আমার যমিন এবং আমার আসমান আমাকে ধারণ করতে পারেনি, কিন্তু আমার মুমিন বান্দার কলব বা হৃদয় আমাকে ধারণ করেছে।”- এগুলি সবই বানোয়াট বা জাল হাদীস। কোনো কোনো লেখক এই বাক্যগুলিকে তাঁদের গ্রন্থে সনদবিহীনভাবে হাদীস হিসেবে উল্লেখ করেছেন। হাদীসের হাফেয যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসগণ অনেক গবেষণা করেও এগুলোর কোনো সনদ পাননি, বা কোনো হাদীসের গ্রন্থে এগুলোর উল্লেখ পাওয়া পাননি।রাসূলুল্লাহ(সা)হতে কোনো সনদেই এ সকল কথা বর্ণিত হয়নি। এজন্য তাঁরা এগুলিকে মিথ্যা ও বানোয়াট হাদীসের মধ্যে গণ্য করেছেন। (মুল্লা আলী কারী, আল আসরার, ১৭০ ও ২০৬ পৃ., আল-মাসনূয়, ১০০ ও ১৩০ পৃ.)।
(চলবে-আগামী পর্বের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে কুফর ও নিফাক, একটি কেসস্টাডি ও কয়েকটি জাল হাদীস)।
বিষয়: বিবিধ
১৭৬০ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আজগুবি সওয়াব এর উদ্ভাবনের কারন সম্ভবত শর্টকাটে গুনাহ মাফ আর সওয়াব আদায় এর সুযোগ সৃষ্টি। সামনেই শবে বরাত এর নামে এক শ্রেনির লোক বিভিন্ন কর্মকান্ড করবে কিন্তু রমজান আসলেই বিভিন্ন প্রয়োজনিয় সামগ্রির মুল্য বাড়িয়ে দিবে।
কালকে বাসায় যাবার সময় দেখলাম এক হকার মাইক দিয়ে বই বিক্রি করছে বইয়ের নাম “সেকেস্ডে সেকেস্ডে লক্ষকুটি নেকি” তাহলে ভাবুন মানুষ কেন সেদিকে ঝুকবে না?
একবার মনে হলো ১০ টাকা দিয়ে বইটা কিনে বিভিন্ন হাদীসের গ্রন্থথেকে তাহকিক করে সবার জন্য ইন্মুক্ত করবো কিন্তু পরে কেন জেন কিনলাম না।
শবেবরাতে মনে হয় চান্দা তুলে বিরানি ভোজ করবে মিলাদের নামে।
আল্লাহ হেফাজত করুন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন