ডিয়ার মুসলিমস, ইসলাম ইজ নট অ্যা ম্যাটার অব জোকস (প্রথম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন প্রেসিডেন্ট ০৪ জুন, ২০১৪, ০১:৪৭:৪৯ দুপুর
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
এ উপমহাদেশে ইসলাম যতটা বিকৃত হয়েছে দুনিয়ার আর কোথাও এতটা হয়নি। ইসলামকে ফানি ম্যাটেরিয়ালস এ পরিণত করেছে বকধার্মিক অনেকের কর্মকান্ড। সাড়ে তিন হাত শরীরে ইসলাম কায়েমের নামে ইসলামকে শুধুমাত্র ব্যক্তিজীবনেই সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে অনেক বিভ্রান্ত আলেম। অথচ ইসলাম কি স্রেফ ধর্ম? Islam is a complete code of life. অনেকে ইসলামকে পৌত্তলিক ধর্মের সাথে মিশিয়ে সম্রাট আকবরের বিকৃত ‘দ্বীন ই ইলাহীর’ মতো পীর মুরীদী ব্যবসা ফেঁদে বসেছে। কেউ কেউ পবিত্রতার নামে ঢিলা কুলুখ এর মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে গিয়ে ফালতু ও অবান্তর কাহিনীর জন্ম দিচ্ছে। এ নিয়ে হাস্যকর সব কর্মকান্ড! ইসলাম বিদ্বেষীদের কাছে ইসলামকে হাসির খোরাকে পরিণত করেছে।
সরলমনা মুসলমানদের বেশিরভাগ ইসলাম বলতে বুঝে শুধুমাত্র অলৌকিক কাহিনী ও মুযেজা। আল্লাহ কর্তৃক যুগে যুগে প্রেরিত নবী রাসূলদের উপর যে মুযেজা প্রদান করা হয়েছে তার মহান গুরুত্ব অনস্বীকার্য। সে মুযেজার একচ্ছত্র মালিক একমাত্র আল্লাহ। যুগে যুগে নবী রাসূলদের মাধ্যমে সেটার প্রয়োগ ঘটেছে। কিন্তু সুস্পষ্ট মুযেজা দেখার পরও কাফেররা এটাকে যাদুবিদ্যা বলে ঈমান আনতে অস্বীকার করেছে। কারণ হেদায়াত এর মালিক একমাত্র আল্লাহ তায়ালা।
বলছিলাম, সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কথা। ইসলামের প্রতি এদের আবেগ আছে, ভালবাসা আছে। কিন্তু সঠিক ইসলামটি কি তাঁরা জানেননা। এরা কুরআন হাদীসের চেয়ে বেশি পছন্দ করে আজগুবি ও বানোয়াট কেচ্ছা কাহিনী। এ সুযোগে কুরআন হাদীস বাদ দিয়ে জালিয়াত ও তথাকথিত গল্পকাররা আজগুবি ও অবান্তর কেচ্ছাকাহিনীকে ইসলামের নামে প্রচার করছে। বিভিন্ন মনগড়া ও বানোয়াট অনুষ্ঠানকে ইবাদতের নামে বানিয়ে সেসব এর ফজীলতে এমন সব বানোয়াট কথা প্রচার করছে যার ফলে সরলমনা মুসলমানরা বিভ্রান্ত হচ্ছে। ফরয ইবাদত ও ফরয দায়িত্ব ভুলে সে সকল বিদয়াতী ইবাদতে লিপ্ত হচ্ছে। এ জন্য প্রধানত দায়ী আমাদের কুরআন হাদীস এর জ্ঞান এর অজ্ঞতা। অল্প শিক্ষিত আলেম, উচ্চশিক্ষিত অনেক আলেম এর সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি এ বর্তমান মুসলমানদের এ দুরবস্থার জন্য দায়ী। অনেক মাদ্রাসা শিক্ষিত আলেম আছেন(সকলে কথা বলছিনা) যারা নিজেদের ইসলামের ঠিকাদার ব্যবসায়ী মনে করেন। কেউ কুরআন হাদীস পড়ে ইসলাম জানতে চাইলে নিরুৎসাহিত করেন। আগ্রহী ব্যক্তিদের আরবী উচ্চারণ অশুদ্ধ, কম জ্ঞান এসব নিয়ে কটাক্ষ করেন। জ্ঞান অর্জনে উৎসাহ প্রদান করেননা। এ অজ্ঞতা ও জ্ঞানবিমূখতা কিন্তু ক্ষমাহীন অপরাধ।
হাদীসের বাণীঃ طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ
অর্থাৎঃ জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের (নর-নারী উভয়) জন্য ফরয।
আমি এ নিয়ে কয়েকটি সিরিজ লেখার নিয়্যত করেছি। সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ যেন আমাকে এ নিয়ে তাঁর নির্ধারিত সিরাতুল মুস্তাকিম সম্পর্কে সঠিক ও নির্ভুলভাবে লেখার সুযোগ দেন সে দোয়া কাম্য সকলের কাছে। সকলের অংশগ্রহণ কাম্য। মানুষ মাত্রই ভুল। আমার যে কোনো ভুল কুরআন হাদীসের আলোকে শুধরিয়ে দিলে কৃতার্থ হবো।
[وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْآنَ لِلذِّكْرِ فَهَلْ مِن مُّدَّكِرٍ [٥٤:١٧
-And We have indeed made the Qur'an easy to understand and remember: then is there any that will receive admonition?
আমি উপদেশ গ্রহণ ও বুঝার জন্য এ কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি। কে আছে শিক্ষা গ্রহণ করবে? (সূরা আল কামারঃ ১৭)
মানবতার মহান মুক্তিদূত রাসূলুল্লাহ(সা) এর বিদায় হজ্জের ভাষণ প্রদান কালে পবিত্র কুরআনের সূরা আল মায়ীদা এর ৩ নং আয়াতটি নাযিল হয়ঃ
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا ۚ
-“আজ আমি তোমাদের ধর্মকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহকারীকে সুসম্পন্ন করলাম, আর ইসলামকে তোমাদের ধর্ম হিসেবে মনোনীত করলাম।”
প্রিয় পাঠক, লক্ষ করুন। আল্লাহ কর্তৃক ইসলামকে পরিপূর্ণ করার ঘোষণা দেয়ার পর ইবাদতের নামে নতুন কিছু সৃষ্টি করা কি সুস্পষ্ট বাড়াবাড়ি ও বিদয়াত নয়?
সে ভাষণে রাসূলুল্লাহ(সা) আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদ ও তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা দিলেন জোরালো ভাষায়। বললেনঃ
الله أكبر، الله أكبر، الله أكبر، لااله الا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد وهو على كل شئ قدير، لااله الا الله وحده لا شريك له ، أنجز وعده و نصر عبده و هزم الأحزاب وحده .
“আল্লাহ ভিন্ন কোন মাবুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরিক নেই। রাজত্ব তাঁর আর সকল হামদ তথা প্রশংসাও তাঁরই। তিনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ ভিন্ন কোন মাবুদ নেই, তিনি এক তাঁর কোনো শরিক নেই, তিনি তাঁর ওয়াদা পালন করেছেন, আপন বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং সমস্ত দল ও উপদলকে একা পর্যুদস্ত করেছেন”।
উল্লেখযোগ্য আরো যা বললেনঃ
সকল মানুষ মাটির তৈরি। মানুষে মানুষে বৈষম্য নেই।
“অনারবদের ওপর আরবদের প্রাধান্যের কোনো কারণ নেই। মানুষ সবাই আদমের সন্তান আর আদম মাটি থেকে সৃষ্ট। জেনে রাখো, নিশ্চয়ই এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই, আর জগতের সব মুসলমান মিলে এক অবিচ্ছেদ্য ভ্রাতৃসংঘ।”
নবুওয়াতী ধারার সমাপ্তি
“হে লোকেরা, জেনে রাখো, আমার পরে আর কোনো নবীর আগমন হবে না। তোমাদের পর আর কোনো উম্মাহ নেই। আমি যা বলছি মনোযোগ দিয়ে শোনো।”
চারটি বিশেষ নসীহত
চারটি বিষয় বিশেষ করে স্মরণ রেখো! (১) কখনো শিরক করো না, (২) অন্যায়ভাবে নরহত্যা করো না, (৩) অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করো না, (৪) কখনো ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ো না। সাবধান, কারো অসম্মতিতে তার সামান্য সম্পদও গ্রহণ করো না। জুলুম করো না। জুলুম করো না! কোনো মানুষের ওপর জুলুম করো না।”
কুরআন-সুন্নাহ মুক্তির পথ
“আমি তোমাদের কাছে যা রেখে যাচ্ছি, যত দিন তোমরা সেগুলো আঁকড়ে ধরে রাখবে, পথভ্রষ্ট হবে না। আর তা হলো আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসুলের সুন্নাত।”
স্ত্রীদের ব্যপারে সতর্কবানী
“হে লোকসকল! নারীদের সম্পর্কে আমি তোমাদের সতর্ক করে দিচ্ছি। এদের প্রতি নির্মম ব্যবহার করার সময় আল্লাহর দন্ড সম্পর্কে নির্ভয় হয়ো না। নিশ্চই তাদের তোমরা আল্লাহর জামিনে গ্রহন করেছ এবং তাঁরই বাক্যের মাধ্যমে তাদের সাথে তোমাদের দাম্পত্য সম্পর্ক হয়েছে। জেনে রাখ, তাদের উপর যেমন তোমাদের অধিকার রয়েছে, তেমনি তোমাদের প্রতি তাদেরও আধিকার রয়েছে। সুতরাং তাদের কল্যাণ সাধনের বিষয়ে তোমারা আমার নসীহত গ্রহণ কর।”
(চলবে)।
বিষয়: বিবিধ
৩৭৫২ বার পঠিত, ২৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
..............................
মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ আলকোরআন অবিকৃত অবস্থায় থাকলেও ইসলামী ওয়াজনসীহতে অনেক আজগুবী ও কল্পকাহিনী ঢুকে গেছে । আর সরলপ্রাণ মুসলমানেরা সেদিকেই ঝুকে যাচ্ছে বেশী । আপনার সুন্দর লেখাটির জন্য প্লাসিত ধন্যবাদ ।
খুব সুন্দর লেখা ।এবং বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ ।
আল্লাহ আপনার কলমের শক্তি বাড়িয়ে দিক এবং আপনার আশা-আকাঙ্খ্যা পূর্ণ করুক । আমীন ।ধন্যবাদ ভাইয়া ।
Thanks.
আমাদের দেশের বড় সমস্যাটিই হচ্ছে বেশিরভাগ মাদ্রাসা উত্তির্ন আলিমরা কওমি বা আলিয়া যে ধারারই হোন না কেন কোন বিষয়ে উপমহাদেশিয় উলামাদের সিদ্ধান্তকেই চুড়ান্ত মনে করেন। অথচ ইসলাম সারা পৃথিবীতে বিস্তৃত। অন্যদিকে অভিজ্ঞতায় দেখেছি এরা উর্দু ফার্সিতে যতটা অভিজ্ঞ আরবিতে নন।
এরা উর্দু ফার্সিতে যতটা অভিজ্ঞ আরবিতে নন।-একমত।
is a complete code of
life.
মন্তব্য করতে লগইন করুন