রুখে দাঁড়াও হলুদ সাংবাদিকতা। বন্ধ হোক নিউজ মেকারদের ইচ্ছের আগুনের বলি।
লিখেছেন লিখেছেন প্রেসিডেন্ট ০৩ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১২:৪৮:৫৬ দুপুর
শিরিন আক্তার (১৯)। একজন গার্মেন্টস কর্মী। থাকেন যাত্রাবাড়ির ডেমরায়। স্বামীর সাথে রাগ করে নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। আগুন নিভানোর আগেই অর্ধদগ্ধ হয়ে যায় মেয়েটির শরীর। প্রতিবেশীরা মহিলার স্বামীকে বুদ্ধি দেয়- “ হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলবি, শিরিন অবরোধের আগুনে দগ্ধ হয়েছে। তাহলে বিনা খরচে চিকিৎসা পাবি, আবার সরকারের কাছ থেকে সাহায্যও পাবি।” কিন্তু পরবর্তীতে স্বামীর অসংলগ্ন কথাবার্তায় ধরা পড়ে প্রকৃত ঘটনা। ঘটনা দ্রুত ধরা পড়ায় সরকারে নগ্ন ও কট্টর সমর্থক বিডিনিউজ24.কম এবং সমকাল যথাসাধ্য চেষ্টা করেও প্রকৃত ঘটনা আর লুকোতে পারেনি। সত্য প্রকাশ হয়ে পড়ে।
“চুলার আগুনে দগ্ধকে অবরোধের বলি বানানোর চেষ্টা”- শিরোনামে রিপোর্ট করে বিডিনিউজ24.কম।
http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article708462.bdnews
এ ঘটনা নিয়ে চরম মিথ্যাচার করে হাতেনাতে ধরা পড়ার পর রাতারাতি ভোল পাল্টে সমকাল এর পরিবর্তিত রিপোর্ট-পুরোটাই সাজানো নাটক।
http://www.nowbd9.com/samakal/2013/12/03/6184.htm
অথচ এ সাজানো ঘটনা নিয়েই অবরোধকারীদের দায়ী করে অনেক আবেগময় মর্মস্পর্শী লিডীং স্টোরি করে সমকাল সহ বেশ কয়েকটি পত্রিকা। টেলিভিশনের খবরে রিপোর্টার এর কৃত্রিম কান্নার সাথে বিউগলের করুণ সুর বাজিয়ে অবরোধকারীদের উপর শতভাগ দোষ চাপিয়ে ফলাও করে ঘটনাটি এমনভাবে প্রচার করা হয় যেন ঘটনাস্থলে রিপোর্টার উপস্থিত থেকে চাক্ষুস স্বাক্ষী ছিলেন।
চুলার আগুনে দগ্ধ এ অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে অবরোধের বলি বানানোর হীন প্রচেষ্টা করেছে ইয়েলো নিউজ মেকাররা। এ ঘটনা নিয়ে ইত্তেফাকের নজিরবিহীন হলুদ সাংবাদিকতার রূপটাও একটু দেখুন।
‘আমার পেটে বাচ্চা আমাকে নামতে দাও পরে আগুন দিও’
আগুন থেকে বাঁচতে শিরিনার আকুতি ‘ভাই, ভাইরে আমি অন্তঃসত্ত্বা। আমার পেটে ছয় মাসের বাচ্চা আছে। আমাকে বাস থেকে নামতে দাও। আগুন দিলে পরে দিও’। সন্তানের জন্য নিজেকে বাঁচাতে হাতজোড় করে পিকেটারদের কাছে এই আকুতি জানিয়েছিলেন গার্মেন্টস কর্মী শিরিনা বেগম। কিন্তু পাষণ্ড পিকেটারদের মন গলেনি এতে। আগুনে ঝলসে এখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন শিরিনা। হাসপাতালের বেডে শুয়ে যন্ত্রণায় গোঙ্গাচ্ছেন তিনি। নিজের কথা যতটা না ভাবছেন, তার চেয়ে বেশি ভাবছেন অনাগত সন্তানের কথা। বারবার চিকিৎসকের কাছে জিজ্ঞাসা করছেন ভাল আছে তো তার সন্তানটি। শত চেষ্টা সত্ত্বেও চিকিৎসকরা কোন আশার বাণী শোনাতে পারছেন না শিরিনাকে। গতকাল সোমবার আলট্রাসনোগ্রামসহ অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা জানতে পেরেছেন নিষ্ঠুর আগুনের আঁচ লেগেছে শিরিনার পেটের সন্তানের গায়েও।
http://www.nowbd6.com/ittefaq/2013/12/03/6342.htm
হয়তো ভাবছেন, ভিকটিম হতে মিথ্যা বক্তব্য শুনে ভুল রিপোর্ট করেছে সাংবাদিক। দুঃখিত, এটা ভাবার কোন কারণ নেই। কারণ রিপোর্টটির বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে উক্ত সাংবাদিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং সে অনুযায়ী চাক্ষুস ঘটনা বর্ণনা করছেন।
এটাকে কি আপনি সাংবাদিকতা বলবেন? পুলিশের গুলিতে পঙ্গু হওয়া ও স্বজন হারানোদের আর্তনাদ, আহাজারি কি এদের চোখে পড়েনা? আগুনে পুড়িয়ে মৃত্যুর একটি ঘটনাও কেন হাতেনাতে ধরা পড়ছেনা? অবরোধ এর তীব্রতা ঢাকার বাইরেই সবচেয়ে বেশি। কই ঢাকার বাইরেতো সহিংসতার বলি হয়ে কেউ আগুনে পুড়ে মরছেনা। আগুনে পোড়ানোর ঘটনাগুলো শুধু ঢাকায় ই ঘটছে,অথচ ঢাকায় ই বিরোধী দলের অবস্থান সবচেয়ে দূর্বল,উপরন্তু আইন শৃংখ্যলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাপট ঢাকাতেই সবচেয়ে বেশি। তাহলে ঢাকায় কারা এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে যেখানে মাঠ সরকারের দখলে? আজ ভাবার সময় হয়েছে। পেট্রোল বোমার ধ্বংস ক্ষমতাতো এত নয় যে এত বড় বিহঙ্গ পরিবহনের বাস নিমিষেই দাউ দাউ করে জ্বালিয়ে দিবে। বিহঙ্গ এর মালিক পঙ্কজ দেবনাথ কিভাবে দলীয় মনোনয়ন পেল? তবে কি আগে হতেই বাসে শক্তিশালী বোমা রাখা হয়েছিল? এরপর নিজের গাড়ি পুড়িয়ে অবরোধকারীদের উপর দোষ চাপিয়ে মনোনয়ন নিশ্চিত করলেন? সাংবাদিক নামের হলুদ সাংবাদিক ও নিউজ মেকাররা ও কি এসবে জড়িত? ঢাকা মেডিকেল এর বার্ণ ইউনিট ঘিরে এসব সাংবাদিকদের সিরিজ প্রতিবেদনও কি সন্দেহ করার জন্য যথেষ্ট নয়?উদোর পিন্ডি বুদোড় ঘাড়ে চাপাতে মিল্কি হত্যাকান্ড ঘটানো হলে ও সেটা ধরা পড়ে গেছে সিসি টিভিতে। আজ মানসচক্ষু উন্মোচন করে প্রতিটি বিবেককে সিসি টিভির ভূমিকা পালন করতে হবে। নিজের বিবেক এর কাছেই জবাব পেয়ে যাবেন সকল জিজ্ঞাসার।
অনেক হয়েছে আর নয়। হলুদ মিডিয়ার সাজানো নাটকে নিউজ মেকারদের ইচ্ছের বলি হচ্ছে অনেক নিরীহ প্রাণ। আজ এসব হলুদ সাংবাদিক আর নিউজ মেকারদের রেশ টেনে ধরার সময় হয়েছে। এসব সাংবাদিক নামের জানোয়ারদের নষ্টা নারীর সাথে তুলনা করতেও আমার ঘৃণা হয়। সময়মতো হলুদ সাংবাদিকতাকে রুখে দিতে না পারলে অচিরেই পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হতে হবে গোটা জাতিকে।
বিষয়: বিবিধ
৫০৩৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন