ইহা একটি আজাইরা গল্প

লিখেছেন লিখেছেন প্রেসিডেন্ট ০৯ নভেম্বর, ২০১৩, ০৩:৩৩:২৭ দুপুর

পঁচা আলু পত্রিকার সভাকক্ষ। সভাকক্ষে উপস্থিত মাত্র ৪টি প্রাণী। গোপন পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠকে বসেছেন তাঁরা। একজন প্রতিবেশী বৃহৎ রাষ্ট্রের দূতাবাস এর উঁচুস্তরের কর্তাস্থানীয় ব্যক্তি যার নামের সংক্ষিপ্ত রূপ - এম.আর। আরো আছেন অলটাইম নেগেটিভ নিউজ এর সাংবাদিক চুন্নী রাহা, দালাল স্টার এর সম্পাদক মালু হনুমান। অপরজন পঁচা আলু পত্রিকার সম্পাদক ভানুমতি নিজেই। টেলিকন্ফারেন্স এর মাধ্যমে কাফের ষাঁড় নামে আরো একজন আছেন মিটিংয়ে।

মুখ খুললেন এম.আর.- আমাদের পরিকল্পনাতো ঠিকভাবেই এগুচ্ছে মনে হচ্ছে। কি বলো চুন্নী রাহা?

চুন্নী রাহা- জ্বি স্যার। মোটামুটি সব ঠিকভাবেই হচ্ছে। পাবনায় আপনার পরামর্শমতো রায়ট লাগিয়ে দেয়া হয়েছে।

সংশোধনী দেন মালু হনুমান-রায়ট নয়, বলো সংখ্যালঘু নির্যাতন। রায়টতো দুপক্ষেই হয়।

চুন্নী রাহা- সরি, হনুমান ভাই। আপনি ঠিক বলেছেন- সংখ্যালঘু নির্যাতন। ছোট একটি সমস্যা হয়ে গিয়েছে। ছাত্রলীগ কর্মীদের দিয়ে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাট করার পর সেই সংখ্যালঘুদের স্থানীয় বিএনপি নেতারা আশ্রয় দিয়েছে। এখন সংখ্যালঘুদের দিয়ে জোর করে ও বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করা যাচ্ছেনা। অবশ্য এটা বড় সমস্যা নয়। ইতিমধ্যে আমার চ্যানেলে ও আরো বেশ কিছু চ্যানেলে উক্ত ঘটনার দায় বিএনপি জামায়াত এর উপর চাপিয়ে বেশ কয়েকবার প্রচার করা হয়েছে। হনুমান ভাই ও ভানুমতি ভাইও তাঁদের পত্রিকায় প্রায় অনুরূপ প্রতিবেদন দিয়ে লিডিং স্টোরি করার পাশাপাশি সম্পাদকীয় লিখেছেন। পুলিশ ও ইতিমধ্যে বিএনপি জামায়াত এর নেতাকর্মীদের আসামী করে মামলা ও করেছে এবং ইতিমধ্যে অনেকে গ্রেফতার হয়েছে।

এম.আর.- কিন্তু ঐ এলাকার আওয়ামীলীগ এর সাবেক এক এমপি ও প্রতিমন্ত্রী ঘটনার জন্য স্থানীয় মন্ত্রীর ক্যাডারদের দায়ী করে বিবৃতি দিয়েছে। এটাতো একটু সমস্যা হয়ে গেল।

"এসব ব্যাপার নয়। আমাদের প্রচারণার তোড়ে এসব প্রতিবাদ বিবৃতি ধোপে টিকবেনা।" এম.আর. সাহেবকে আশ্বস্ত করে মালু হনুমান। সাথে যোগ করে- পেমেন্ট টা এবার একটু বাড়াতে হবে এম.আর. সাহেব।

এম.আর. - আপনাদের উপর আমার আস্থা আছে হনুমান সাহেব। পেমেন্ট নিয়ে কোন টেনশন করবেননা। নেক্সট প্ল্যানটা বাস্তবায়ন করেন ঠিকঠাক মতো।এরপর মান্থলি পেমেন্ট একেবারে ডাবল করে দিবো।

“আমার গতমাসের পেমেন্ট এখনো পাইনি”- টেলিফোনের ঐ প্রান্ত হতে খেঁকিয়ে উঠে কাফের ষাঁড়।

হিন্দু পল্লীতে হামলার জন্য স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী দায়ী : আবু সাইয়িদ



“ গতমাসের পেমেন্ট দেয়া হয়নি আপনার জন্য। আপনি কি সব ওয়েস্টার্ন গল্প অনুবাদ করে নিজ নামে চালিয়ে দেন, ছাত্রীদের সাথে মদ খেয়ে ড্যান্স করেন। সেটা সমস্যা নয়, সমস্যা হচ্ছে ধরাও পড়ে যান। চুরি করে ধরা পড়া আমাদের মিশন এর জন্য অনেক ক্ষতিকর। আপনাকে সতর্ক করার জন্য এক মাসের পেমেন্ট বন্ধ করা হয়েছে। সমস্যা কি? এখন হতে পরিকল্পনামতো বুঝে শুনে কাজ করেন। মিশন সাকসেস হলে পরবর্তীতে বকেয়াসহ পুষিয়ে দেব।”- এম আর এর জবাব।

“এখন লাঞ্চ ব্রেক। লাঞ্চ এর পর হরতালকালীন সহিংসতার প্ল্যান নিয়ে কথা হবে।” ঘোষণা দেন - সম্পাদক ভানুমতি।

এম আর- ওকে, তাই হোক।

হোটেল সোনারগাঁ হতে লাঞ্চ চলে এসেছে। ইন্টারকমে অফিস স্টাফকে লাঞ্চ পাঠাতে নির্দেশ দেন ভানুমতি।

লাঞ্চের ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক কথাবার্তা চলে। চুন্নী রাহার সাথে খুঁনসুটিতে মেতে উঠেন এম আর, ভানুমতি ও মালু হনুমান। অনেক ভালগার কথাবার্তাও হয়। চুন্নী রাহা এসব কিছু মনে করেনা, বেশ উপভোগ করে। আজকের মিটিংয়ের সকলের শারীরিক সান্নিধ্যেই সে এসেছে একাধিকবার। গত মাসেইতো এম আর সাহেব এর সাথে চেন্নাইতে ৪ দিনের ট্যুর দিয়ে এসেছে। এম আর সাহেব ডাকলে বাকি সকলের এপয়ন্টমেন্ট ক্যানসেল করে হাজির হয় চুন্নী রাহা।

হঠাৎ একটু নষ্টালজিক হয় চুন্নী রাহা। মনে পড়ে ক্যারিয়ার এর প্রথম দিককার কথা। এতো প্রাচূর্য ছিলনা। খুব উচ্চাকাঙ্খা ছিল তাঁর। এজন্য সর্বস্ব বিলিয়ে দিতেও কোন কুন্ঠা ছিলনা। একসময় ভানুমতির নজরে পড়ে। একে একে মালু হনুমান ও অন্যরা। একসময় ভানুমতি প্রতিবেশি দেশের দূতাবাস এর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন চুন্নী রাহার সাথে। ঐ দূতাবাস ও তাঁদের গোপন মিশন সাকসেস করতে লুফে নেয় চুন্নীকে। রাতারাতি অর্থবিত্তের পাহাড় গড়ে উঠে চুন্নী রাহার। ঢাকা শহরে এখন তাঁর এক ডজন ফ্ল্যাট, কোটি কোটি টাকার প্লট, অত্যাধুনিক ৩ টি দামি গাড়ি। চুন্নী জানে সোজা পথে এদেশে কিছু হয়না। তাই সে বাঁকাপথটাই বেছে নিয়েছে। নিজের কুমারীত্বও বিসর্জন দিতেও দ্বিধা করেনি। আজ সে দূতাবাস এর মর্জিমতো ও ভানুমতি, হনুমানদের পরামর্শমতো হলুদ সাংবাদিকতা করে খ্যাতি (??) ও অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে, নিজের একটি চ্যানেল হয়েছে। খুব হ্যাপী বোধ করে চুন্নী রাহা। দেশের পরিস্থিতি যদি কখনো পাল্টেও যায় কোন টেনশন নেই। চেন্নাই এর অভিজাত এলাকায় একটা দামি ফ্ল্যাট রেডি রাখা আছে তাঁর জন্য -এম আর সাহেব এর উদ্যোগে। বিপদে পড়লে উড়াল দিবে।



লাঞ্চ শেষে আবার মিটিং শুরু হয়। এম আর সাহেবই শুরু করেন-দুইদিন পরইতো হরতাল। এ নিয়ে পরামর্শ চাচ্ছি আপনাদের। অধ্যাপক সাহেব কি বলেন?

“একটি সহিংস ঘটনা ঘটাতে হবে হরতাল এর দিন যেটি হবে মর্মস্পর্শী, স্পর্শকাতর, হৃদয়বিদারক। এরপর সে ঘটনা নিয়ে হরতালের যৌক্তিকতা প্রশ্নবিদ্ধ করে মর্মস্পর্শী লিডিং স্টোরি হবে পত্রিকায়, পাশাপাশি আমাদের পছন্দের লোকদের নিয়ে সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয়। খুব ভোরে ভোরে যখন লোক চলাচল কম থাকে সে সময়টা বেছে নিতে হবে।”- কাফের ষাঁড় টেলিফোন এর ঐপ্রান্ত হতে বলেন।

“ভালো পরামর্শ। তবে প্রথমে ইংরেজী পত্রিকায় ঘটনাটি ফোকাস করতে হবে। হনুমান সাহেব দালাল স্টারের মাধ্যমে সেটা করবেন। এখন ঘটনাটি কি হতে পারে?”- জিজ্ঞেস করেন এম আর।

হরতালে ‘সাজানো’ মিছিল-বোমাবাজি

“যাত্রী ভর্তি বাসে গান পাউডার দিয়ে আগুন দিলে কেমন হয়?” - চুন্নী রাহা প্রশ্ন করে।

“ এতদিন এ লাইনে থেকেও তোমার এখনো বুদ্ধি পাকেনি চুন্নী। ঘটনা সকাল ৭ টার আগেই ঘটাতে হবে যখন লোক চলাচল বেশ কম থাকে। এখন প্রযুক্তির যুগ, সবার হাতে ক্যামেরা মোবাইল থাকে। যাত্রী বাসে আগুন দিলে সবাইতো মারা যাবেনা। কেউ না কেউ বেঁচে যাবে, ঘটনার ভিডিও করবে, অপরাধীরা ধরা পড়ে যাবে। আমাদের সংশ্লিষ্টতাও ফাঁস হয়ে যেতে পারে। তার চেয়ে এমন ঘটনা ঘটাতে হবে যাতে সবকূল রক্ষা হয়। ধর- ভিকটিম একজন নিরীহ কর্মজীবি কমবয়সী শ্রমিক বা ১০-১৫ বছরের একজন কিশোর বা স্কুলগোয়িং কোন কিশোরী। জায়গামত ও সময় মত স্মার্ট প্লান করে ঘটালে বেশি লাশ দরকার নয়, একটি লাশ দিয়েও ব্যাপক হৈ চৈ ফেলা যাবে।”- দীর্ঘ বক্তব্য শেষ করেন মালু হনুমান।

“ হনুমান সাহেব এর যুক্তি আমার পছন্দ হয়েছে। আমিও এরূপ ভাবছিলাম। তাহলে ঘটনা সংঘটনের দায়িত্ব চুন্নী রাহার উপর দিলাম। ঘটনার সময়, স্থান,প্রকৃতি ও ভিকটিম বাছাই নিয়ে আমাদের দূতাবাসের আরো কয়জন এর সাথে চূড়ান্ত আলাপ করে ফাইনাল করা হবে। আগামী ২ দিন হনুমান ও ভানুমতি তোমাকে আরো প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিবেন - কিভাবে কার মাধ্যমে ঘটনা ঘটাতে হবে এ বিষয়ে। ঘটনা ঘটনার পরদিন অবশ্যই দালাল স্টার এ মর্মস্পর্শী লিডিং স্টোরি হবে, সম্পাদকীয় হবে। হরতালকারীরা সহিংস, ধ্বংসাত্বক আন্দোলন করছে-এ বার্তা পৌছে দিতে হবে পশ্চিমা দেশগুলোকে। চুন্নী রাহা অলটাইম নেগেটিভ নিউজ এর মাধ্যমেও ঘটনার জন্য হরতালকারীদের দায়ী করে বেশ ফোকাস করবে। এছাড়া চ্যানেল লীগোত্তরসহ ডজনখানিক চ্যানেলতো আছেই যেগুলোতে ঘটনা ফোকাস করার বিষয়টি চুন্নী রাহা দেখভাল করবে।” -দীর্ঘ বক্তব্য শেষ করলেন এম আর।

“আজ তাহলে স্যার মিটিং এর ইতি এখানেই টানি।”- অনুমতির অপেক্ষায় ভানুমতি।

ওকে বলে আজকের মত মিটিং শেষ করলেন এম আর ।

কিশোর মনিরঃ হরতালের বলি নাকি নিউজ মেকারদের ইচ্ছের বলি?

পরিশিষ্টঃ ইহা একটি আজাইরা গল্প। জীবিত, মৃত, হাম্বাদিকতায় ও ষড়যন্ত্রে রত, আগামীতে পিঠ বাঁচানোর চিন্তায় টেন্শিত কোন ব্যক্তি বা ঘটনার সাথে কদাচিৎ মিল পাওয়া গেলে সেটা একটা অনভিপ্রেত কাকতাল মাত্র।

বিষয়: বিবিধ

১৭৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File