আমার ক্রিকেটীয় ভাবনা
লিখেছেন লিখেছেন প্রেসিডেন্ট ৩০ অক্টোবর, ২০১৩, ০৪:২৪:৫৫ বিকাল
ক্রিকেট আমার সবচেয়ে প্রিয় খেলা। তবে ইদানীং ক্রিকেট আর তেমন আনন্দ জোগায়না। চার ছয়ের উৎসব, বোলারের ইয়র্কার, গুগলি, ফিল্ডারের শূণ্যে লাফিয়ে ডাইভ মারা, আম্পায়ারের বৈচিত্র্যময় অঙ্গভঙ্গি, বোলারদের হাইফাইভ কিংবা ধারাভাষ্যকারদের রসালো বর্ণনা সবই এখন নীরস মনে হয়।
নীরস কেনই বা হবেনা? যে দেশে বিডিআর ধ্বংস করে বিজিবি গঠন করা হয় এবং সে বিজিবির চোখের সামানে ফেলানীদের ঝুলিয়ে রাখা হয় সে দেশের মানুষের চিত্তেতো কোন বিনোদন জাগার কথা নয়। সীমান্তে কাপুরুষের ভূমিকা পালনকারী সে বীরপুরুষরা (???) এখন মহা উল্লাসে নিজ দেশের নিরীহ নিরস্ত্র মানুষকে পাখির মত গুলি করে মারছে। যাদের করের টাকায় তাঁদের মাইনে হয় তাঁদেরকেই অন্যায়ভাবে গুলি করছে বিজিবি যেটা হানাদার পাকিস্তান বাহিনীর বর্বরতাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে। নিজ দেশে আজ নাগরিকরা যেন পরাধীন, তাঁরা প্রকৃত স্বাধীনতার প্রহর গুণছে।
গতকাল বোলার রুবেল হোসেন এর অনবদ্য হ্যাট্রিকে হৃদয়ের সব দগদগে ক্ষত ভুলে উল্লাস করেছি। সে মুহুর্তে ভুলে গেছি সকল দুঃখ বেদনা ক্ষোভ। অভিনন্দন টিম বাংলাদেশ, অভিননন্দন রুবেল। সত্যি বলতে কি -ম্যাচ জয়ের আনন্দের চেয়েও বেশি উপভোগ করেছি রুবেল এর অসাধারণ হ্যাট্রিক।
টিনএজ বয়স হতেই খেলা হিসেবে ক্রিকেট এর প্রতি এক অন্য রকম ভালোবাসা। সে ভালোবাসা খেলোয়াড় হিসেবে নয়, স্রেফ একজন দর্শক হিসেবে।
সম্ভবত তখন 1997 সাল। আইসিসি ট্রফির ফাইনালে বাংলাদেশ কেনিয়ার মুখোমুখি। সে ঐতিহাসিক ম্যাচের দিন আমি ছিলাম চট্টগ্রাম (এইচ এস সি এর পর ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোচিং করে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম)। কাকা ব্যস্ত থাকায় চাচী আর ছোট বোনকে নিয়ে কাজীর দেউড়ি এক আত্মীয়ের বাসায় গিয়েছিলাম সেদিন একটি কাজে। যাওয়ার পথে দেখলাম রাস্তায় খুব কম লোক। সবাই বাসায় বসে টিভিতে খেলা দেখছিল। যারা বাইরে তাঁদের অনেকের হাতে ছোট ছোট রেডিও। এমনকি রাস্তার ট্রাফিক পুলিশদেরও দেখলাম জটলা করে রেডিওতে খেলার ধারাবিবরণী শুনছে। ঐ আত্মীয়ের বাসায় পৌছে আমিও খেলা দেখতে বসে গেলাম। আকরাম খানের দারুণ ব্যার্টিং এর কল্যাণে দূর্দান্ত জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। সাথে সাথে শহর হয়ে পড়ে মিছিলের নগরী। বাঁধভাঙ্গা উল্লাসে মেতে উঠে ক্রিকেট পাগল জনতা। হঠাৎ দেখলাম কাজীর দেউরীর একটা দোতলা বাড়িতে একটার পর একটা মিছিল ঢুকছে আর বের হচ্ছে। কৌতুহল বেড়ে গেল। জানলাম এটা আকরাম খান এর বাড়ি। আমিও একটি মিছিল এর সাথে মিশে চলে গেলাম। বাড়িতে ঢুকেতো থ। এ দেখি আকরাম খান স্বয়ং দাঁড়িয়ে। এটা কিভাবে সম্ভব? আকরাম খানতো মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে, আজকের ম্যাচ জয়ের নায়ক। পরে জানলাম উনি আকরাম খান নন, আকবর খান। আকরাম খান এর বড় ভাই (চেহারা প্রায় হুবহু এক), জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার।
আরো বেশি ক্রিকেট এর প্রেমে পড়লাম। পড়াশোনা লাটে উঠলো। কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ থাকলেই টিভির সামনে বসে পড়ি। ভর্তি পরীক্ষার পড়াশোনা বাদ দিয়ে ক্রিকেট খেলা উপভোগ করা প্রায় নেশা হয়ে গেল।
1998-99 সালে আমি ঢাকায়। আইসিসি নক আউট বিশ্বকাপ (প্রথম আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি) অনুষ্ঠিত হয় ঢাকায়। ঘরের মাঠে বাংলাদেশ স্রেফ দর্শক হলেও ক্রিকেট পাগল জনতার উৎসাহের কমতি ছিলনা। অনেক চেষ্টা করেও কোন ম্যাচের টিকেট পাইনি। টুর্নামেন্ট শেষে অবশ্য বাংলাদেশ এর সাথে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রীতি ম্যাচটি টিকেট ছাড়াই বিনা টিকেটে ভিআইপি গ্যালারীতে বসে উপভোগ করলাম (পরবর্তীতে বাংলাদেশ দলের বেশ কয়টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ মাঠে উপস্থিত থেকে সরাসরি উপভোগ করেছি)।
1999 এর বিশ্বকাপে বাংলাদেশ নবাগত। দর্শকদের প্রত্যাশাও ছিল সীমিত। কিন্তু শক্তিশালী পাকিস্তানকে 61 রানের পরিস্কার ব্যবধানে হারিয়ে সারা দেশকে আবারো উল্লাসে ভাসিয়ে দিল টিম বাংলাদেশ। 1999 বিশ্বকাপের স্মৃতিগুলো ভোলার নয়। খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা অস্ট্রেলিয়া কিভাবে যেন এক জটিল সমীকরণে উতরে সুপার সিক্স এ চলে গেল। এরপরতো ইতিহাস। সেমিফাইনালে নিশ্চিত জয়ের পথে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে অবিশ্বাস্য টাই করে রান রেট এর সমীকরণে ফাইনালে উন্নীত হয়ে পাকিস্তানকে সহজে হারিয়ে বিশ্বকাপটাই জয় করে। দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার ঐ ম্যাচটি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম স্মরণীয় এক ম্যাচ।
ক্রিকেট নিয়ে আমার অনেক নষ্টালজিয়া। মনে পড়ে ওয়াসিম ওয়াকারের দ্বৈরথ; উইকেট প্রাপ্তির পর ওয়াসিম এর ভুবনজয়ী উল্লাস; শহীদ আফ্রিদীর বুমবুম; মাতারা হারিকেন জয়সুরিয়ার ঝড়ো গতির ব্যাটিং; জাভাগাল শ্রীনাথ, শোয়েব আখতার, ম্যাকগ্রা ও ব্রেটলির ভয়ংকর গতি; কার্টলি এমব্রোস এর দানবীয় শরীরের অতি কৃপণ বোলিং; সাঈদ আনোয়ার, অজয় জাদেজা, আজহার উদ্দিন, শচীন টেন্ডুলকার এর ক্লাসিক্যাল ব্যাটিং; ইনজামাম উল হক এর রাজকীয় ভঙ্গিমায় ছক্কা হাঁকানো; জন্ডি রোডস এর শূণ্যে লাফিয়ে দূর্দান্ত ক্যাচ; অ্যাম্পায়ার ডেভিড শেফার্ড, স্টিভ বাকনর; ধারাভাষ্যের জাদকর টনি গ্রেগ; ছোট দেশের বড় তারকা ফ্লাওয়ার ভ্রাতৃদ্বয়; বাংলাদেশর অতীতোজ্জ্বল গৌরব আকরাম খান, পাইলট, আমিনুল ইসলাম বুলবুল, খালেদ মাহমুদ সুজন-- সবই এখন অতীত।
ক্রিকেট নিয়ে আমার বেশ কিছু লেখা আছে। এক ডজনেরও বেশি লেখা ছাপা হয়েছিল বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায়। এখানে একটির লিংক দিলাম।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2013/01/06/181377#.UnC8LCdp415
আবারো ক্রিকেট নিয়ে মাততে চাই। স্বপ্ন দেখি - ফিরে পাবো হারানো স্বাধীনতা। পরিপূর্ণ স্বাধীন দেশে আবারো ক্রিকেট দেখে পূর্ণ বিনোদন পাবো, চার ছক্কার আনন্দে লাফিয়ে উঠবো, প্রিয় বোলারের উল্লাসের সাথে নিজেও মাতবো, উপভোগ করবো দৃষ্টিনন্দন ফিল্ডিং, ধারাভাষ্যকার এর উপভোগ্য বর্ণনা।
বিষয়: বিবিধ
১৫৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন