চার সিটি নির্বাচন এবং অতঃপর..........
লিখেছেন লিখেছেন প্রেসিডেন্ট ১৬ জুন, ২০১৩, ০২:২৫:০৪ দুপুর
নবনির্বাচিত চার সিটি মেয়রকে অভিনন্দন।
সরকারের সীমাহীন দূর্নীতি, নৈরাজ্য ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছে প্রতিবাদী জনতা। তবে নির্বাচনের এই ফলাফলই জনমতের প্রকৃত প্রতিফলন নয়। Level Playing Field এ সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে সরকারদলীয় প্রার্থীদের জামানত রক্ষা করা কঠিন হত। ভোটের ব্যবধান যে আরো অনেক বেশি হত এই নিয়ে সন্দেহের কোনই অবকাশ নেই। সরকারদলীয় প্রার্থীরা কালোটাকা, পেশীশক্তি ও প্রশাসনিক শক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের পরও পরাজয় এড়াতে পারেননি।
মিডিয়ার পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকার কারণে নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনকালীন অনেক ঘটনা জনগণের আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। আলোকপাত করা যাক কিছু ঘটনার উপরঃ
- নির্বাচনের দিন বরিশালে সরকারী দলের মেয়র প্রার্থী নিজে রিরোধী দলের মেয়র প্রার্থীর পোলিং এজেন্টকে চড় মেরেছেন, কেন্দ্র থেকে বেড় করে দিয়েছেন। এমন কী এইসব ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিরোধী দলের মেয়রপ্রার্থী কামাল লাঞ্ছিত হয়েছেন এবং বিএনপিদলীয় সাবেক সাংসদ আবুল হোসেনকে আহত করা হয়েছে। । এসব ঘটনার বিবরণও এনটিভি ছাড়া অন্য কোন মিডিয়ায় আসে নাই। অভিযোগ জানাতে গেলে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে কয়েকঘন্টা ধরে কাউকে পাওয়া যায়নি।
- নির্বাচনের আগে বিএনপি সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচারণায় পদে পদে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। নেতাকর্মীদের অকারণে গ্রেফতার করা হয়েছে, পুলিশ দিয়ে হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে সবকটি সিটিতেই। সন্ত্রাসীদের ভয়ে অনেকেই ভোট প্রদানে বিরত ছিলেন। বিপরীতে সরকারদলীয় প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থনে মন্ত্রীরা একাধিকবার আইনলঙ্ঘন করলেও কমিশন হতে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। প্রশাসন তাঁদের সকল বেআইনী কাজে সহযোগিতা প্রদান করেছে।
- বরিশালে প্রচারণা চালানোর সময় বিএনপির নারী কর্মীদের পুলিশ হেনস্তা করে ও গ্রেফতার করে। খবর পেয়ে দলীয় মেয়রপ্রার্থী আহসান হাবীব কামাল সেখানে গেলে পুলিশ কামালকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করে। কামালকে বাঁচাতে গেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন তাঁর দেহরক্ষী।
-সরকারী দলের ক্যাডাররা নিশ্চিত পরাজয় ঠেকাতে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে জনতার হাতে ধরা পরেছে, পুলিশে দেয়া হয়েছে। এমন খবর ও কেবলমাত্র এনটিভিতেই এসেছে, অন্য কোন মিডিয়ায় এই খবর পরিবেশন করা হয় নাই এবং পুলিশও এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয় নাই।
- নির্বাচনের আগে সরকারী দলের পক্ষ থেকে ভোট প্রতি ৫০০/১০০০ টাকা দেবার এবং সেই টাকা গ্রহন কারীর ছবিও ছাপা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কোন ব্যবস্থা গ্রহন করে নাই। অথচ নির্বাচনের আগের রাতে বিরোধী দলের প্রার্থীর কয়েকজন পোলিং এজেন্টকে গ্রেফতার করে অন্য পোলিং এজেন্ট এবং ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য টাকা দিয়ে ভোট কেনার মিথ্যা অভিযোগটাকেই ব্যবহার করা হয়েছে। ৬ জনের কাছ থেকে ৯ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। মাত্র ৯ হাজার টাকা দিয়ে কয়টা ভোট কেনা যেত? আর ঐ টাকা যদি ভোট কেনার জন্যই ছিলো তাহলে ঐ লোকগুলোর ব্যক্তিগত ব্যবহারের টাকা কোথায় ছিলো। মনে রাখবেন এই একই পদ্ধতিতে পরবর্তী নির্বাচনের সময়ও পোলিং এজেন্ট এবং ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানো হবে। এই মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনকারী মিডিয়াগুলোকেও চিনে রাখুন।
-সরকারের মন্ত্রী, এমপি, আমলা, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতা এবং ক্যাডারদের প্রভাব বিস্তারের ব্যাপক চেষ্টা, ১৮ দল সমর্থিত প্রার্থীদের এজেন্টদের বের করে দেয়া, নির্বাচনে পুলিশ ও র্যাবের পক্ষপাতমূলক আচরণ, বিরোধী দল সমর্থকদের দেখামাত্র বেধড়ক লাঠিচার্জ করে আহত করা, বিভিন্ন স্থানে সরকারদলীয় পোলিং এজেন্ট এমনকি প্রিজাইডিং অফিসারের নেতৃত্বে জালভোট দেয়া, কেন্দ্রের ভেতরে বিরোধী সমর্থক ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন, কালো টাকার ছড়াছড়ি, জালভোটের কারণে বৈধ ভোটারদের ভোট দিতে না পারার মতো ঘটনাও ঘটেছে। অনেক ক্ষেত্রে ভোটারদের আঙ্গুলে কালি লাগিয়ে ভোট প্রদানের সুযোগ না দিয়েই বের করে দেয়া হয়েছে।
উপরের ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ নিচের বিষয়গুলোকে প্রমাণ করে।
(ক) বর্তমান নির্বাচন কমিশন কোনভাবেই নিরপেক্ষ নয়; তারা বর্তমান সরকারী দলের আজ্ঞাবহ পুতুলমাত্র।
(খ) নির্বাচনের সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সরকারী দলের লোকজন দলীয় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীর মত ব্যবহার করতে পারে।
(গ) দলীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আর দলীয় মিডিয়া ব্যবহার করে তারা মিথ্যা ও হাস্যকর অভিযোগ দিয়ে বিরোধী দলীয় নির্বাচন কর্মী/ সমর্থকদের গ্রেফতার করে ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরী করতে পারে। এবং
(ঘ) ভোটকেন্দ্রে ঘোষিত ফলাফলকে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে বদলে দেবার চেষ্টা করতে পারে।
তবে ঘটনা যাই হোক-এই নির্বাচনের ফলাফলকে সরকার নেতিবাচকভাবে তত্বাবধায়ক এর দাবির বিপরীতে ব্যবহার করবে। কিছু দলকানা মিডিয়াকে দিয়ে ইতিমধ্যে এ বিষয়টি জোরেসোরে প্রচার করা হচ্ছে যে- দলীয় সরকার এর অধীনেই নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন নেই। এই দাবি যে সম্পূর্ণ অসার ও অবাস্তব তা উপরের আলোচনায় ইতিমধ্যেই উঠে এসেছে।
এরপরও যারা মনে করছেন, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে তাঁদের উদ্দেশ্যে আরো দুটি কথা।
-সারা দেশের অতিরিক্ত পুলিশ, RAB, বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে মাত্র ৪ টি জেলার শুধুমাত্র জেলা শহরে। আর এই চার সিটি কর্পোরেশন এর নির্বাচন দেখে ও বিরোধী দলের জয় এর কারণে কেউ যদি মনে করে (প্রকৃতপক্ষে এই নির্বাচনকেও নিরপেক্ষ বলার অবকাশ নেই)জাতীয় নির্বাচন ও সুষ্ঠু হবে, তবে তা হবে চরম মূর্খতা। ৪ টি জেলার শুধুমাত্র জেলা শহর আর ৬৪ টি জেলার সকল শহর ও গ্রামের একযোগে নির্বাচন মনিটরিং করা এক নয়।
- বাস্তবতা হচ্ছে শত শত মিডিয়ার ক্যামেরা ও জনগণের দৃষ্টি এই চার সিটি নির্বাচনে নিবদ্ধ থাকা সত্ত্বেও সরকার পেশী শক্তির ব্যবহার ও প্রশাসনের মাধ্যমে ব্যাপক কারচুপি করেছে। নয়তো ফলাফলের ব্যবধান আরো অনেক বেশি হতো। সংসদ নির্বাচনে একযোগে ৩০০ টি আসনে নির্বাচন হবে। তখন সারাদেশব্যাপী নির্বাচন কাভারেজ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া এই সিটি নির্বাচনের মত করতে পারবেনা ফলে কারচুপি বেশ সহজ হবে। তত্তাবধায়ক ছাড়া সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠ হওয়ার কোন সুযোগ নেই।
সুতরাং এই নির্বাচন বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের সময় নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীকে আরো জোরদার করলো।
ভুলে যাবেন না, ১৯৯৪ সালেও বিএনপির অধীনে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছিলো। তারপরও কিন্তু তারা নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে সীমাহীন হরতাল, অসহযোগ ও নৈরাজ্যের মাধ্যমে অটল ছিল এবং তৎকালীন বিএনপি সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করেছিল।
বিষয়: বিবিধ
১৪৭২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন