পুণ্য অর্জন ও তার সুরক্ষা
লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল মান্নান ১১ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:২৯:৫৭ দুপুর
কোন কিছু অর্জন করা যত না কঠিন তার চেয়ে সে অর্জনকে ধরে রাখা বা সুরক্ষা দেয়া তার চেয়ে অনেক বেশী কঠিন। পরকালের অনন্ত জীবন সুন্দর করার জন্য অর্জিত পুণ্যগুলির সুরক্ষা দিতে না পারলে সুখময় স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে। তাই অর্জন যে ধরণেরই হোক না কেন তার সুরক্ষার বন্দোবস্ত করতে হবে।
গভীর রাত, দুনিয়াবাসী নিদ্রায় মগ্ন। গোটা আকাশে তারকা রাজির মহা সমারোহ। থেমে থেমে পেঁচার ডাক আর গাছের ডালের পাতায় পাতায় জোনাকির মিটিমিটি আলোর ঝলকানীতে চলছে আলো আঁধারের খেলা। এরকম এক গুরু গম্ভীর পরিবেশে আল্লাহর বান্দাহ উঠলেন পুণ্য অর্জনের মাধ্যমে তাঁরই সাথে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য। সালাত আদায় করলেন, তাসবিহ্ তাহলিল করলেন, সুললিত কন্ঠে কুরআন তেলাওয়াত করলেন, জিকির আজকারে মশগুল হলেন, পূর্ব দিগন্তে অন্ধকারের বুক চিরে কখন যে সুবেহ্ সাদেকের আগমন হয়েছে তিনি তা জানতেই পারলেননা। মোয়াজ্জিনের সুমধুর আজানের শব্দে চেতনা ফিরে পেলেন। যথারীতি এবাদত-বন্দেগী শেষ করলেন।
সকাল হয়ে গেল। সূর্য স্বমহিমায় ভাস্বর হলো পূর্বাকাশে। তার আলোকোচ্ছাটায় পৃথিবীবাসি সুযোগ পেল নিত্য দিনের কাজের গতিকে সচল করতে। পাখি কিচির-মিচির শব্দে ছড়িয়ে পড়ছে দিগ্বিদিক খাদ্যের অন্বেষায়। বসে নেই কিষান-কিষানি, মাঝি তার বৈঠা হাতে ছুটে চলেছে নদীর পানে, রাখাল গরুর পাল নিয়ে মাঠে হাজির, রিকশাচালক বেলে আওয়াজ তুলে জানান দিচ্ছে সেও বিছানা ছেড়েছে রুটি-রোজগারের উদ্দেশ্যে অনেক আগেই। সকল পেশার লোক নিজ নিজ কাজের জন্য বেরিয়ে পড়ছে স্ব স্ব কর্ম স্থলের দিকে।
রাতে নফল এবাদত পালনকারী সে যেই হোক, তার মনে অনুরণিত হচ্ছে কুরআনের বাণী-
فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانتَشِرُوا فِيالْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِوَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
অতঃপর সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লার অনুগ্রহ তালাশ কর ও আল্লাহ্কে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। আল্লাহর বান্দাহ্ তিনি যে পেশারই হোন না কেন, বেরিয়ে পড়লেন আর অন্য সকলেরই মত, রুটি-রোজগারের উদ্দেশ্যে।
রাতের এবাদতকারী ব্যক্তি হতে পারেন একজন কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, সরকারী কর্মকর্তা, আলেম-উলাম, রাজনীতিবিদ অথবা সুশীল কোন ব্যক্তি। তিনি যেই হোন, প্রতিটি কাজ সম্পাদন করছেন আল্লাহর নির্দেষ অনুযায়ী। রাতে এবাদতের সময় আল্লাহর সাথে যে ওয়াদা করেছেন সেগুলি পালনে, কুরআন থেকে যে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন তা অনুসরণে কোন ব্যত্যয় ঘটছেনা। ফলে রাতের এবাদতের ফলে অর্জিত পুণ্য সুরক্ষা পাচ্ছে। সাথে সাথে প্রতিটি কাজ আল্লাহর বিধান অনুযায়ী করার কারণে তা এবাদতে পরিণত হচ্ছে এবং অধিক ছওয়াব তাঁর আমলনামায় যোগ হচ্ছে। ফলে নেক আমলের কারণে তাঁর জন্যে রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে সফলতার সুসংবাদ।
অপর দিকে রাতে এবাদতকারী ব্যক্তি যদি তাঁর নেক আমলের জন্য অহংকারী হোন, তাহলে তাঁর অর্জিত ছওয়াবের সুরক্ষা তো হবেই না বরং নিমিষের মধ্যে জীবনের সমস্ত অর্জন শেষ হয়ে যাবে। আর এ অবস্থায় মৃত্যু বরণ করলে পরিণতি হবে খুবই ভয়াবহ। আমরা জানি অহংকারই ছিল ইবলীসের অধঃপতনের মূল কারণ। মনের মধ্যে যদি প্রদর্শনেচ্ছা লালন করেন তাহলে সৎকাজ গুলোকে ধ্বংষ করে দেবে। নামাজের মধ্যে ও কুরআন তেলাওয়াতের সময় অনেক আয়াত মুখে আওড়ানোর পরও যদি এবাদতকারী আল্লাহর হুকুম মানতে অপারগ হয় তাহলে নামাজ পড়া ও তেলাওয়াতের জন্য যে ছওয়াব পেয়েছিল তার চেয়ে অনেক বেশী গুনাহ্ করার ঝুঁকি থেকে যাবে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, তেলাওয়াতকৃত আয়াতের মধ্যে আল্লাহ্ (সু.) সুদ, ঘুষ অথবা আল্লাহদ্রোহীতা সম্বন্ধে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছিলেন। অর্থ না বুঝার কারণে অথবা তার প্রতি তোয়াক্কা না করে এবাদতকারী আল্লাহর হুকুম অমান্য করে অমার্জনীয় অপরাধ করে ফেললে তার অর্জিত পুণ্য রক্ষা তো পাবেই না, বরং শাস্তি হতে পারে তার পুরস্কার। তাই সৎকর্ম ক্ষণিকের বিষয় নয়। সর্বাবস্থায় এবং প্রতিটা ক্ষেত্রেই সত্যের উপর টিকে থাকার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যেতে হবে অর্জিত পুণ্যকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য।
বিষয়: বিবিধ
৫৭৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন