ইসলামী রাজনীতিতে অমুসলিমরা কি কোন ভূমিকা রাখতে পারবে?
লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল মান্নান ১০ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৩:১৬:৩৪ দুপুর
আল্লাহ্র আইন প্রতিষ্ঠিত হলে অমুসলিমগণ বিপদে পড়বে মর্মে পরিকল্পিত ভাবে এক ভয়াবহ অবস্থার চিত্র প্রকাশ করা হয়ে থাকে। সাথে সাথে এও প্রচার করা হয় আল্লাহ্র আইন মানেই অমুসলিমদেরকে ঈমান আনতে বাধ্য করা, প্রয়োজনে অস্ত্রের সাহয্য নেয়া। মহান আল্লাহ্ তাঁর দ্বীন সম্বন্ধে বলেন -
দ্বীন সম্পর্কে জোর-জবরদস্তি নেই; ... (২.বাকারাঃ ২৫৬)।
তোমরা তাদেরকে মন্দ বলোনা, যাদের তারা আরাধনা করে আল্লাহ্কে ছেড়ে।... (৬. আনআমঃ ১০৮)
তোমাদের দ্বীন তোমাদের জন্য, আমার দ্বীন আমার জন্য। (১০৯.কাফিরূনঃ ৬)
আয়াতের আলোকে স্পষ্ট ভাবে বলা যায় জোর করে কাউকে ইসলামে প্রবেশ করানোর কোন সুযোগ নেই। তাছাড়া আল্লাহ ছাড়া অমুসলিমরা অন্য যাদের উপসনা করে তাদেরকে মন্দ না বলার ব্যাপারে আল্লাহ তাগিদ দিয়েছেন। যার যার ধর্ম সে তা পালন করবে। ইসলামী রাজনীতির মাধ্যমে আল্লাহ্র আইন প্রতিষ্ঠিত হলে অমুসলিমদের কোন অসুবিধা হবেনা তাদের ধর্ম পালনে তা স্পষ্ট।
তাছাড়া নিম্নের আয়াতগুলি থেকেও অমুসলিমদের সাথে কিরূপ ব্যবহার করতে হবে তা আমরা জানতে পারি।
তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান কর হিকমাত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে আলোচনা কর সদ্ভাবে। (১৬. নাহ্লঃ ১২৫)
তোমরা উত্তম পন্থা ব্যতীত কিতাবীদের সাথে বিতর্ক করবেনা, তবে তাদের সাথে করতে পার, যারা তাদের মধ্যে সীমালঙ্ঘনকারী। (২৯.আনকাবুতঃ ৪৬)
ওরা যা বলে তা আমি জানি, তুমি তাদের উপর জবরদস্তিকারী নও; সুতরাং যে আমার শাস্তিকে ভয় করে তাকে উপদেশ দান কর কুরাআনের সাহায্যে। (৫০. কাফঃ ৪৫)
নাগরিক হিসাবে অমুসলিমগণও রাষ্ট্রের সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে। ইসলাম অমুসলিদের সকল প্রকার অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করেছে। তাছাড়া মুসলিম ও অমুসলিম নির্বিশেষে সবার সাথে সুন্দর ব্যবহারের কথা স্পষ্ট ভাবে কুরআন ও হাদীসে ঊল্লেখ করা হয়েছে। যদি কোন লোক দুস্কৃতিকারী হয় তাহলে তাকে রাষ্ট্রীয় আইনে শাস্তি পেতে হবে, সে যে ধর্মেরই অনুসারী হোক না কেন। এমনকি অনৈসলামিক রাষ্ট্রের জন্যেও একই নিয়ম।
ধর্ম বিশ্বাস অন্তরে লালন ও ধর্মাচার পালন করার জন্য ইসলাম অন্য ধর্মের উপর বিন্দুমাত্র প্রভাব খাটাবেনা। রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে রাষ্ট্রে যে বিধান চালু থাকবে সেটা সকলকে মানতে হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে তা যদি কোন ধর্মের ধমীঁয় মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক হয় তাহলে অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে তা বিবেচনা করতে হবে। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট হোক, দুর্নীতি, সুদ-ঘুষ, রাহাজানি, ছিনতাই, মাদকাশক্তি, ব্যাভিচার, হত্যা, লুন্ঠন সহ সকল প্রকার মানবতা বিরোধী কর্ম-কান্ড সমাজে চালু থাকা যেমন ইসলামের আইনে অপরাধ ঠিক তেমনিভাবে অন্যান্য ধর্মের আইনেও একই অপরাধ।
অমুসলিমগণ যেখানে ইসলামী সমাজে নিজেদের ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষা করার নিশ্চয়তা পাচ্ছে সেখানে সকল প্রকার মানবতা বিরোধী কাজের অবসানের লক্ষ্যে ইসলামী রাজনীতিতে অংশ গ্রহণ করার সুযোগও তাদের আছে। কিন্তু এমন একটা আবহ সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে যে তাদের জন্য ইসলামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়েটা রীতিমতো দুরুহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী মুসলিম রাজনীতিকরাও অমুসলিমদেরকে আস্থায় আনতে না পারার দায়টা এড়াতে পারবেননা ।
বিষয়: বিবিধ
১২৫৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন