শান্তিপূর্ণ ধর্ম ইসলামকে রাজনীতিতে জড়ানো কি ক্ষমতালোভীদের কাজ নয়?

লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল মান্নান ০১ জানুয়ারি, ২০১৬, ১০:২৯:৫৯ রাত

যখন প্রশ্ন করা হয়ে থাকে পবিত্র কুরআনে রাষ্ট্রের বিভিন্ন আইন-কানুনের ব্যাপারে যে নির্দেশগুলি দেয়া হয়েছে সেগুলি বাস্তবায়িত হবে কি ভাবে? উত্তরে অনেকে বলে থাকেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় যাঁরা অংশ গ্রহণ করে থাকেন তাঁদেরকে দ্বীনের দাওয়াত দানের মাধ্যমে ভাল মুসলিম বানাতে পারলে তাঁরা নিজেরাই একসময় স্বতস্ফুর্তভাবে কুরআনের আইন প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী হবেন। আপাতদৃষ্টিতে যুক্তিটা বেশ শক্তিশালী মনে হতে পারে। কিন্তু বিষয়টা অত সহজ নয়। প্রসাশন যন্ত্রের সবাইকে দাওতের মাধ্যমে পরিসুদ্ধ করা যাবে এমনটি আশা করা বাতুলতা ছাড়া আর কিছুই না। তাছাড়া একদল সৎলোকের সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা ছাড়া কেউ ভাল মুসলিম হলেই প্রতিকুল পরিবেশে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন তাও জোর দিয়ে বলা যায়না। রাষ্ট্রের হর্তা-কর্তাগণও কোন না কোন আদর্শের অনুসারী হয়ে থাকেন। আর হর্তা-কর্তাগণ যদি ইসলাম বিদ্বেষী হয়ে থাকেন তাহলে কেউ চাইলেই তাঁরা ইসলামের জন্য রাস্তা পরিস্কার করে দিবেন এমনটি ভাবা নেহায়েত বোকামি ছাড়া আর কিছুই না।

কোন আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে সে আদর্শের ধারক ও বাহকদেরকেই দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়। রাষ্ট্রযন্ত্র ইসলামের বিপরীত আদর্শের লোকদের কর্তৃত্বে থাকলে সমাজে যতই ইসলাম প্রিয় লোকের প্রাচুর্যতা থাকুকনা কেন রাষ্ট্রের সর্বস্তরে আল্লাহ্‌র আইনের উপস্থিতি কখনই লক্ষ্য করা যাবেনা। ক্ষমতা লোভী হিসাবে নয়, ইসলামের আইন প্রতিষ্ঠার নিয়তে মুমিনগণ রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত হয়ে থাকেন। তবে ইসলামের আলোকে রাজনৈতিক কর্মকান্ডের পরিসীমা ব্যাপক। এর মাধ্যমে ইসলামের সঠিক জ্ঞান দান, দাওয়তি কাজের সমপ্রসারণ, নৈতিক মানের উন্নয়ন, সমাজ কল্যাণ ও সংস্কার মূলক কাজ সহ বহুবিধ কাজের আঞ্জাম দেয়া যায়। কাজেই রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্যে বিচরণ করেই ইসলামের আদর্শ অনুযায়ী সৎলোক তৈরি করতে হবে কাঙ্খিত ফল লাভের উদ্দেশ্যে।

ইসলামে কিছু আইন আছে যা ব্যক্তিগত উদ্যোগে সম্পাদন করতে হয, আর কিছু সামষ্টিক ভাবে। সামষ্টিক ভাবে যে আইনগুলি মানতে হয় তা সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত। রাষ্ট্রের আইন ইসলাম পরিপন্থী হলে ইচ্ছা থাকা সত্বেও অনেক আইন সমষ্টিগতভাবে তো নই ব্যক্তিগতভাবেও মানা সম্ভব হয়না। উদাহরণ ¯^iƒc বলা যেতে পারে কোন ব্যক্তি সুদমুক্ত অবস্থায় তাঁর জীবন অতিবাহিত করতে চাইলেও তিনি তা পারবেননা যদি রাষ্ট্রের অর্থনীতি সুদের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। কারণ তাঁর সার্বিক কাজে সুদের প্রভাব কোন না কোন ভাবে পড়বেই। আরও অনেক উদাহরণ দেয়া যাবে যদি ইসলামের নীতিমালার আলোকে রাষ্ট্র পরিচালিত না হয় তাহলে কিভাবে ব্যক্তিগত আমল অবৈধতার হাতছানিতে প্রভাবিত হয়।

তাহলে উপরোল্লিখিত সমস্যা থেকে পরিত্রানের উপায় কি? দুটি উপায়, যদি সম্ভব হয় হিজরত করতে হবে সেই দেশে যেখানে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠিত আছে, নতুবা নিজের দেশের শাসন ব্যবস্থাকে ইসলামের আলোকে সাজাতে হবে। নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে রাষ্ট্রের শাসনতন্ত্র পরিবর্তনের জন্য বর্তমানে যে পথটি খোলা আছে তা হচ্ছে রাজনীতিতে অংশ গ্রহণ করে গণতন্ত্রের মাধ্যমে জনসাধারণের সমর্থন আদায় করা। গণতন্ত্রের মাধ্যমে রাজনৈতিক কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে সরকার পরির্তন হচ্ছে ¯^xK…Z পথ। রাষ্ট্রের ক্ষমতা হাতে আসলেই শুধুমাত্র সমাজের সর্বস্তরে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। ইসলাম ছাড়া অন্যান্য আদর্শের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। বিপরীত আদর্শের ছায়াতলে কোন আদর্শই প্রস্ফুটিত হতে পারেনা। রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ্‌ সুবহানো তায়ালা বলেনঃ

তারা এমন লোক যাদেরকে আমি পৃথিবীতে শক্তি-সামর্থ্য (রাষ্ট্র ক্ষমতা) দান করলে তারা নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করবে। প্রত্যেক কর্মের পরিণাম আল্লাহ্‌র ইখতিয়ারভূক্ত। (২২. হাজ্জঃ ৪১)

তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ্‌ তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন। যেমন তিনি শাসনকর্তৃত্ব দান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে, (২৪. নূরঃ ৫৫)

প্রথম আয়াতটিতে শাসনকর্তৃত্ব কেউ পেয়ে থাকলে তাঁর দায়িত্ব ও কর্তব্য কি হবে তা বলে দেয়া হয়েছে। সুতরাং কোনভাবেই একটি মুসলিম জন অধ্যূষিত দেশের সরকার ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠা না করার দায় এড়াতে পারবেননা।

দিত্বীয় আয়াতে বিশ্বাসী ও সৎকর্মশীলদেরকে পৃথিবীতে শাসনকর্তৃত্ব দান করার ওয়াদও করেছেন আল্লাহ্‌ সুবহানো তায়ালা। প্রশ্ন হলো একজন ব্যক্তি কর্তৃত্ব পেয়ে থাকেন কিভাবে? নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা আসমান থেকে তাঁকে কর্তৃত্ব দিয়ে পাঠিয়ে দেননা। আমাদের সমাজে কর্তৃত্বশীল ব্যক্তি কে হবেন তা নির্ধারণ করার জন্য পন্থা হলো গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সাধারণ নির্বাচন। আর তা রাজনৈতিক কর্ম কান্ডের মধ্য দিয়েই পরিচালিত হয়ে থাকে। কাজেই আল্লাহ্‌র আইন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চলমান পরিস্থিতিতে রাজনীতির বিকল্প কোন পথ খোলা আছে কি? পানিতে না নেমে যেমন সাঁতার শেখা যায়না, তেমনইভাবে ইসলামী রাজনীতির সাথে জড়িত না হয়ে সমাজে ও রাষ্ট্রে আল্লাহ্‌র আইনের প্রয়োগ কল্পনাও করা যায়না। ইসলাম বিরোধী চক্র এটাকে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা বলে প্রচার করে থাকে।

বিষয়: বিবিধ

১১৯৪ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

355957
০১ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ১১:৪৮
অপি বাইদান লিখেছেন : কোন ধর্মকেই রাজনীতিতে টেনে আনা ঠিক নয়। বিশেষ করে ইসলামের মত একটি যুদ্ধবাজ ধর্মকে টেনে আনার প্রশ্নই উঠে না।
০২ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০২:১৮
295607
শেখের পোলা লিখেছেন : আপনাদের মত জ্ঞাণীগুণীদের শায়েশ্তা এক ইসলামই করতে পারবে৷
355958
০১ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ১১:৪৮
বড়মামা লিখেছেন : ভালো লাগল আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
355971
০২ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০২:২০
শেখের পোলা লিখেছেন : দরকার যা তাহল বিপ্লব৷ দু দশ বা দুশো জন নির্বাচিত হয়েও ইসলাম কায়েম করতে পারবে না৷ মুরসী পারেন নি৷ধন্যবাদ৷
০২ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০২:৩২
295608
সাদাচোখে লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম!
এরদোগান ও না। ফ্রেম যদি চৌকোনা হয় তার ভিতর দিয়ে যা পাচার করা হবে তা চৌকোনা হবে তে কোনা হবে না। গনতন্ত্রের ভিতর দিয়ে যাই বের হবে তা আর যাই হোক ইসলাম বের হবে না।

আল্লাহ ভাল জানেন। ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File