যুবক-যুবতীরা কাকে বিবাহ করবেন? নিকটাত্মীয়কে নাকি আত্মীয়ের বাইরে?
লিখেছেন লিখেছেন ইসমাইল একেবি ১০ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৫:৩৬:১৩ বিকাল
গত ৪/৫ দিন আগে ইশার পর এক জায়গা থেকে বাসে উঠলাম গন্তব্যে পৌছানোর জন্য। বাসে যাত্রী সংখ্যা ছিল খুবই কম; সর্বমোট ৫/৬ জনের বেশী হবে না। উঠেই দেখলাম বাসের ড্রাইভার এবং আরেকজন লোক একটা হাদীস নিয়ে আলোচনা করছে। "তোমরা দুরবর্তী লোকদেরকে বিবাহ কর।" বললাম, হাদীসটা কিন্তু সহীহ না; এটা দুর্বল বর্ণনার; আমল করা যায়। তবে,দলীল হিসেবে নেয়া যাবে না। কোন কোন বর্ণনায় পাওয়া যায় এটা হযরত উমার (রাঃ) এর কথা। তাদের প্রশ্ন, "হাদীসটাকে দুর্বল বর্ণনার কে বলেছে? হাদীসটা সহীহ।" বললাম, আমি এটা নিয়ে বিশ্লেষণ করার সুযোগ পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ এবং অনেক ইসলামিক স্কলারেরই এটা অভিমত।
তারা সন্তুষ্ট হতে পারল না। বলল, একটু ওয়েট কর। আমি একজন শায়েখকে ফোন করে জেনে নিচ্ছি। একজনকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করল, শায়েখ! অমুক হাদীসটা কি সহীহ নাকি অন্য কিছু? পরে উনিও আমার মতই বলেছেন বলে জানাল লোকটি। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাস আমার গন্তব্যে চলে আসায় নেমে গেলাম। বাসের ভাড়া দিতে গেলে ওরা "তাওয়াক্কাল আলাল্লাহ" বলে বিদায় দিল; বাসের ভাড়াটা নিল না। ভাড়া ছিল অবশ্য ৪০ টাকার মত। এ হাদীসটা প্রায়ই মানুষের মুখে মুখে শুনা পাওয়া যায়।
জর্ডানে আসার পর আমাকে কয়েকজন লোক কয়েকবার এ হাদীসটাকে আমল করার জন্য প্রস্তাবও দিয়েছেন।তাদের কথা ছিল, রাসুল (সাঃ) বলেছেন:
غربوا النكاح
অর্থাৎ,"তোমরা দুরের লোকদেরকে বিবাহ কর।" তার মানে ওদের কথা হল-আমি যেন ওদের দেশে আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপন করি। একজন সরকারী উচ্চপদস্থ অফিসারের আব্বা তো সরাসরি প্রস্তাবও দিয়ে ফেলেছিল। সব সময় আমার জবাব ছিল-আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপন করব নিজের দেশেই ইনশাল্লাহ। কারণ,ইট ইজ দ্যা বেস্ট ফর আন্ডারস্ট্যান্ডিং উইথ ইচ আদার। সিদ্ধান্ত পূণর্বিবেচনার জন্য আবার বলেছিল, দ্বীনদার কিন্তু!!!
যাহোক, আমার আলোচনার বিষয় হল তাদের উদ্ধৃত হাদীসটি। আসলে তারা হাদীসটির সঠিক অর্থটাকে অনুধাবণ করতে পারেনি!!! তাদেরকে হাদীসটির আসল মর্ম বুঝিয়ে দিয়ে বার বার প্রত্যাখ্যান করতে হয়েছিল। তাদের কথা ছিল,তুমি বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে আছো;আর রাসুল (সাঃ) এর হাদীসটাতেও বিদেশীদেরকে বিবাহ করতে বলা হয়েছে। অতএব,...............।
জর্ডানে না আসলে হয়ত কখনো বিশ্বাসই করতে পারতাম না যে,একজন লোক তার মেয়ের জন্য সরাসরি কোন ছেলের কাছে প্রস্তাব দিতে পারে।তবে,এদের কাছে হয়ত এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার।
তারা মনে করছে দূরে বলতে বিদেশে বুঝানো হয়েছে।অথচ,হাদীসে দুরে বলতে বুঝানো হয়েছে-নিকটবর্তী আত্মীয় স্বজনকে পরিহার করে অন্যদেরকে বিবাহ করার কথা। এতে অন্য দেশের লোকদেরকে বিবাহ করতে বলা হয়নি। তবে,আল্লামা নাসিরুদ্দিন আলবানীসহ অনেক স্কলার হাদীসটাকে দুর্বল বর্ণনার বলে অভিহিত করেছেন। যা আমল করা যাবে;তবে,কোন কিছুর পক্ষে একাকী দলীল হিসেবে দাড় করাতে হলে হাদীসটিকে অবশ্যই "সহীহ"বর্ণনার হতে হবে।
এমনই বক্তব্য পাওয়া যায় হযরত উমার (রাঃ) থেকে। তিনি বলেছেন:
يَا بَنِي السَّائِبِ إِنَّكُمْ قَدْ أَضْوَيْتُمْ ، فَانْكِحُوا فِي النَّزَائِعِ
অর্থাৎ, হে বনী সায়েব গোত্র! তোমরা সন্তাদেরকে দুর্বল করে ফেলেছ। তোমরা দুরবর্তীদেরকে বিবাহ কর। (আল মুজালাসা ওয়া জাওয়াহেরুল ইলম-৩৩৫৪; তালখীসুল হাবীর: ৩/৩০৯ )
ইমাম শাফেয়ী (রহঃ)বলেছেন:
لَيْسَ مِنْ قَوْمٍ يُخْرِجُونَ نِسَاءَهُمْ إِلَى رِجَالِ غَيْرِهِمْ وَرِجَالَهُمْ إِلَى نِسَاءِ غَيْرِهِمْ إِلا جَاءَ أَوْلادُهُمْ حَمْقَى
অর্থাৎ,যে সম্প্রদায়ের মহিলারা বাইরের কোন পুরুষকে বিবাহ করে না এবং পুরুষেরা বাইরের কোন মেয়েকে বিবাহ করে না তাদের সন্তান হয় বোকা টাইপের।(আল ইনতিকা ফি ফাদায়িলিস ছালাছাতিল আয়িম্মাঃ ১/৯৮)
এছাড়া ইমাম গাযযালী (রহঃ) পাত্রী পছন্দ করার ব্যাপারে যেসব দিক নির্দেশনা দিয়েছেন তন্মধ্যে একটা হল-পাত্রী যেন নিকটবর্তী আত্মীয় না হয়। কেননা, তা তাদের জৈবিক কামনাকে কমিয়ে দেবে। (ইহইয়াউ উলুমুদ্দিন:২/৪১)
উল্লেখ্য যে, নিকটবর্তী আত্মীয়স্বজন যেমন-ফুফাতো, চাচাতো, মামাতো, খালাতো ভাই বোনদেরকে বিবাহ করা ইসলামে বৈধ রাখা হয়েছে। তবে, এদেরকে বিবাহ করলে সন্তান দুর্বল হয় বলে অনেক ইসলামিক স্কলারের অভিমত। সেজন্য বলা হয় বিবাহ দুরবর্তীদের সাথে হলেই ভালো হয়।
বিষয়: বিবিধ
১৮৮০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন