সমুদ্র গর্ভে মিষ্টি পানির বিশাল রিজার্ভ!!! আল্লাহ তায়ালার এক মহান করুণা ও রহমত

লিখেছেন লিখেছেন ইসমাইল একেবি ১৯ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৪:৫২:২০ বিকাল

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের সমস্ত প্রয়োজন পূরণ করে দেয়ারও ব্যবস্থা করেছেন। তাঁর কুদরতের কিছু কিছু অংশ আমরা সচরাচর দেখি আবার এমন অনেক কিছু আছে যা যুগে যুগে বিজ্ঞানীদের গবেষণার মাধ্যমে বেরিয়ে আসে। এগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করলে আল্লাহ তায়ালার সামনে আমাদের মাথা সিজদাবনত হয়ে যায়; মনের অজান্তেই মুখ দিয়ে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসাস্বরূপ বের হয়ে যায় "আলহামদুলিল্লাহ" ধ্বনি।

পৃথিবীর সমুদ্রগুলোকে আল্লাহ তায়ালা লোনা পানিতে ভরপুর করে দিয়েছেন। পানির অপর নাম জীবন হলেও সমুদ্রে প্রচুর পরিমাণ পানি থাকা সত্ত্বেও মানুষ পিপাসায় কাতর হয়ে জীবন হারাতে পারে। পক্ষান্তরে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষ ও অন্যান্য পশুর পিপাসা মেটাতে নদী-নালা, খাল-বিলের পানিকে করে দিয়েছেন সুমিষ্ট ও সুপেয়। এছাড়া আকাশ থেকে নেমে আসা পানিকেও তিনি করে দিয়েছেন সুমিষ্ট।

এ মহাবিশ্বে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অনেক কিছুকে সৃষ্টি করে সুবিন্যস্ত করে রেখেছেন। তন্মধ্যে কিছু সৃষ্টিকে আমরা খালি চোখে দেখতে পাই এবং কিছু সৃষ্টি দেখার জন্য বিভিন্ন প্রকার টেকনোলজির প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন গ্রন্থসুত্রে জানা যায়, এ পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জিনিসগুলোর মধ্যে আমরা শুধুমাত্র ৪% দেখতে পাই এবং বাকী ৯৬% আমরা দেখতে পাই না।

যাহোক, পৃথিবীর স্থলভাগের বাইরে সাগর মহাসাগরকে আল্লাহ তায়ালা করে দিয়েছেন এক একটি বিস্ময়। বিজ্ঞানীদের গবেষণার মাধ্যমে আমরা যুগে যুগে এ ব্যাপারে নতুন নতুন তথ্য জানতে পারি। বক্ষমাণ প্রবন্ধে সে ধরণেরই একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব ইনশাল্লাহ।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন,

سَنُرِيهِمْ آيَاتِنَا فِي الْآفَاقِ وَفِي أَنْفُسِهِمْ حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُ الْحَقُّ

অর্থাৎ,অচিরেই আমি তাদেরকে সর্বত্র আমার নিদর্শনসমূহ দেখাবো এবং তাদের নিজেদের মধ্যেও আমার নিদর্শনাবলী দেখিয়ে দেব।যেন এদের কাছে একথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে,এ কুরআন যথার্থ সত্য।(সূরা হামীম সিজদাহঃ ৫৩)

এ একবিংশ শতাব্দীতেও আমরা বিজ্ঞানীদের নতুন নতুন গবেষণার মাধ্যমে অনেক নতুন তথ্য জানতে পারছি যা আগে কখনও জানতে পারি নাই।যখনই দেখি বিজ্ঞানীদের নব আবিস্কারের সাথে পবিত্র কুরআন ও হাদীসের তথ্যের মিলে যাচ্ছে তখন আল্লাহ তায়ালার অসীম কুদরতের পরিচয় আমাদের কাছে নতুন রূপে উদ্ভাসিত হয়।

আমরা সবাই আগে থেকেই জানতাম যে,আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর সাগর ও মহাসাগরগুলোকে লবনাক্ত পানিতে ভরপুর করে দিয়েছেন।যা পান করার অনুপযুক্ত।কিন্তু,সমুদ্র গর্ভে যে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের জন্য সুমিষ্ট পানি রিজার্ভ করে রেখে দিয়েছেন তা কি আমরা জানতাম? আশ্চর্য হলেও সত্য যে,বিজ্ঞানীরা গবেষণার মাধ্যমে এটাকেই প্রমাণ করেছেন।বিজ্ঞানীদের এ গবেষণার ফলাফলের সত্যতার ব্যাপারে ইঙ্গিত রয়েছে পবিত্র কুরআন মাজীদে।এ আবিস্কারের আগে হয়ত এটা কারও জানা ছিল না।আল্লাহ তায়ালা চেয়েছেন এ যুগে তাঁর কুদরতের প্রমাণ দেখিয়ে দেবেন বিজ্ঞানীদের গবেষণার মাধ্যমে।

অস্ট্রেলিয়ার ফ্লিন্ডারস ইউনিভার্সিটির গবেষকদের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, মহাসাগরগুলোর নিচে প্রচুর পরিমাণ পানোপযোগী সুমিষ্ট পানির রিজার্ভ রয়েছে যা ক্রম বহমান। বিজ্ঞানীরা এ পানির পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন ৫,০০,০০০ কিউবিক কিলোমিটার। বিগত ১০০ বছর মানুষ যে পরিমাণ পানি ব্যবহারের জন্য সংগ্রহ করেছে তার চেয়ে এটার পরিমাণ কয়েকশতগুণ বেশি। এ পরিমাণ পানি ভবিষ্যত প্রজন্মের কয়েকশত বছরের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম।

বিভিন্ন প্রকার ছিদ্র দিয়ে এ পানিগুলো ক্রমাগত বেরিয়ে আসে। নিচের ছবিটিতে তা স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে।



হাজার হাজার বছর ধরে কিভাবে পানোপযোগী সুমিষ্ট পানি মহাসাগর গর্ভে রিজার্ভ থাকা সম্ভব? এ প্রশ্নের জবাবে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَأَرْسَلْنَا الرِّيَاحَ لَوَاقِحَ فَأَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَسْقَيْنَاكُمُوهُ وَمَا أَنْتُمْ لَهُ بِخَازِنِينَ

অর্থাৎ, আর আমি বৃষ্টিবাহী বাতাস প্রেরণ করি। অতঃপর আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করি এবং এ পানি দিয়ে তোমাদের পিপাসা মিটাই। এগুলো সংরক্ষন করার দায়িত্ব তোমরা গ্রহণ করোনি। (সূরা হিজরঃ ২২)

উপরোক্ত আয়াতে কারীমা ইঙ্গিত করে যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আসমান থেকে যে বৃষ্টি বর্ষণ করেন তা সুমিষ্ট পানি এবং তিনি তাকে সুন্দরভাবে মানবজাতির জন্য সমুদ্র গর্ভে মায়ের বুকের দুধের মতই নিরাপদভাবে রিজার্ভ করে রেখে দিয়েছেন যা কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। এর প্রমাণ কুরআনের উপরোক্ত আয়াতের শেষাংশ-"وَمَا أَنْتُمْ لَهُ بِخَازِنِينَ " অর্থাৎ, তোমরা সেগুলোকে রিজার্ভ করে রাখো না। মানুষ এতদিন জেনে এসেছে আল্লাহ তায়ালা আয়াতের উপরোক্ত অংশ দিয়ে মাটির নিচের সুমিষ্ট পানিকে বুঝিয়েছেন।

আল্লাহ তায়ালা এসব বিষয়ে সরাসরি তথ্য আমাদেরকে দেননি হয়ত এ কারণে যে, মানুষ যেন অলস মস্তিষ্ক না হয়ে এগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা ও গবেষণা করায় আত্মনিয়োগ করে।

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ وَلَوْ كَانَ مِنْ عِنْدِ غَيْرِ اللَّهِ لَوَجَدُوا فِيهِ اخْتِلَافًا كَثِيرًا

অর্থাৎ, তারা কি কুরআন নিয়ে চিন্তা ভাবনা ও গবেষণা করে না?? যদি তা আল্লাহ তায়ালা ব্যতিত অন্য কারও কাছ থেকে আসত তাহলে তারা তাতে অনেক অসঙ্গতি লক্ষ্য করত। (সূরা নিসাঃ ৮২)

অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন,

أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ أَمْ عَلَى قُلُوبٍ أَقْفَالُهَا

অর্থাৎ, তারা কি কুরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করেনা? নাকি তাদের অন্তকরণকে তালাবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে? (সূরা মুহাম্মাদঃ ২৪)

আল্লাহ তায়ালার বিভিন্ন নিদর্শন ও সৃষ্টি নিয়ে গবেষণার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা অনেক আয়াত নাযিল করেছেন তন্মধ্যে একটি আয়াত হল,

إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ

অর্থাৎ, নিশ্চয় এর মধ্যে চিন্তাশীলদের জন্য অনেক নিদর্শণ রয়েছে। (সূরা নুরঃ ২১)

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের জন্য এত নেয়ামত দুনিয়াতে রেডি করে রেখেছেন। আমরা কি তার সামান্য পরিমাণও কৃতজ্ঞতা যথার্থভাবে আদায় করতে পেরেছি?

এখানে সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করলাম। আরও বিস্তারিত জানার জন্য নিচের লিংকগুলো দেখতে পারেন।

http://www.kaheel7.com/ar/index.php/2010-02-02-20-13-13/1604-2014-01-14-11-51-26

http://www.nature.com/nature/journal/v504/n7478/full/nature12858.html

http://www.dailymail.co.uk/news/article-2519911/Vast-freshwater-reserves-discovered-ocean-floor-supply-future-generations.html

http://www.sci-news.com/geology/science-fresh-groundwater-reserves-ocean-01606.html

http://arabic.rt.com/

http://www.businessinsider.com/scientists-discovered-massive-freshwater-reserves-underneath-the-ocean-floor-2013-12

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তার নেয়ামতের হক যথার্থভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

বিষয়: বিবিধ

২৬০১ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

164407
১৯ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:০০
সিটিজি৪বিডি লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ--আমাদের সবাইকে অর্থসহ কোরআন পড়া উচিত। অনেক দিন আসলেন ভাই.কেমন আছেন?
১৯ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:১৫
118639
ইসমাইল একেবি লিখেছেন : ভাই, আসলে মাঝে মাঝেই আসি, কিন্তু ব্যস্ততার কারণে লেখার সময় বের করতে পারি না। ভাল আছি আলহামদুলিল্লাহ!!
164413
১৯ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:১২
ভিশু লিখেছেন : অনেকদিন, অনেককিছুর পর...আপনাকে পেয়ে ভাল্লাগ্লো অনেক...Sad
ব্লগার বড় আপন ব্লগের বাঁধনে...Big Hug
যদিও সময় নেই সুন্দর কারণে... Happy Good Luck Rose কেমন আছেন আপনারা? StarStar
১৯ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:২৩
118641
ইসমাইল একেবি লিখেছেন : ভাল আছি আলহামদুলিল্লাহ!! আপনি কেমন আছেন?

মাঝে মাঝে ব্লগে আসলেও লেখার সময় হয়ে ওঠে না সেজন্য লগ ইন করি না। সামান্য সময়ের জন্য এসেই আবার চলে যেতে হয়।

ধন্যবাদ আপনাকে।
১৯ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:৪০
118645
সিটিজি৪বিডি লিখেছেন : বিয়ের আগে সবাইকে ব্লগকে খুব আপন করে নেয়.আর বিয়ের পরে............?
164432
১৯ জানুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১২
মেঘ ভাঙা রোদ লিখেছেন : আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তার নেয়ামতের হক যথার্থভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
১৯ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:১৩
118722
ইসমাইল একেবি লিখেছেন : আমীন।
164499
১৯ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:০৫
আনিস১৩ লিখেছেন : Thanks for sharing.
১৯ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:১৪
118725
ইসমাইল একেবি লিখেছেন : জাযাকাল্লাহু খাইরান।
164503
১৯ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:০৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অনেকককক... দিন পর আপনার লেখা।
অত্যন্ত গুরুত্ব ও তথ্যপুর্ন লিখাটির জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। মিষ্টি পানি নোনা পানির তুলনায় হালকা সেকারনে মিষ্টি পানি উপরের স্তরে উঠে আসে। আল্লাহতায়লা মানুষ এবং সৃষ্টিকুলের প্রয়োজন মিটানোর জন্যই এই ব্যবস্থা করেছেন।
১৯ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:১৬
118727
ইসমাইল একেবি লিখেছেন : আমি তো লেখাটা সংক্ষেপে লিখলাম। আপনি সময় পেলে লেখাটাকে সবিস্তারে সাজিয়ে পোষ্ট করে ফেলতে পারবেন। অনেকে উপকৃত হবে ইনশাল্লাহ।
164558
১৯ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৯:৪৮
আলোর আভা লিখেছেন : জাযাকাল্লাহু খাইরান।
১৯ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:০৩
118825
ইসমাইল একেবি লিখেছেন : ওয়া ইয়্যাকা।
164565
১৯ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:১৪
মোঃমাছুম বিল্লাহ লিখেছেন : ভাই আপনাকে সোনার বাংলার পর আর দেখিনি। খুব ভাল লাগল। আপনার fb পরিচয় দেবেন?
২০ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৯:৩৬
118954
ইসমাইল একেবি লিখেছেন : এখানেও মাঝে মাঝে আসি। আমি ফেসবুকে ফেসবুক ডট কম/ismailakbbd তে আছি।

ধন্যবাদ ভাই, জাযাকাল্লাহু খাইরান।
164764
২০ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:১২
আলোকিত ভোর লিখেছেন : ধন্যবাদ Rose
164807
২০ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ১২:২৩
জাগো মানুস জাগো লিখেছেন : Alhamdulliah. we want ismail akb vai will write regularly....its bloggers public demand.

Rose
১০
165154
২১ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৮:০৫
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : অনেক অনেকদিন পর ঘুম থেকে জেগে উঠলেন আর সাথে সাথে কি চমৎকার একটা পোস্ট উপহার পেলাম আমরা! আপনাকে পুণরায় স্বাগতম Rose Rose Rose Rose Rose Rose Rose Rose Rose
২২ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১১
160233
ইসমাইল একেবি লিখেছেন : ুয়া করেন যেন আল্লাহ সময়ে বরকত দিয়ে দেন।
২৩ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১১:২৯
160471
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : Praying Praying

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File