জামায়াতভীতিতে ভরে গেছে পুরো বাংলাদেশ!!
লিখেছেন লিখেছেন ইসমাইল একেবি ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৮:০৭:৫৪ রাত
গতকাল ঢাকার মুহাম্মদপুরে গিয়েছিলাম একটা কাজে। আসরের নামাজের সময় হয়ে গেলে নামাজ আদায় করতে গিয়েছিলাম রাস্তার পাশের একটা মসজিদে। মসজিদের পাশেই রয়েছে একটা মাদ্রাসা। নামাজ আদায় করে বের হয়ে পিচ্চিদের কাছ থেকে জানতে পারলাম এটা একটা হিফজখানা। কোথাও হিফজখানা লেখা আছে কিনা খেয়াল করিনি।
এবার হিফজখানার সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম। সেখানে কিছু পিচ্চি ঘোরাফেরা করছে। আমার আবার ছোটখাটো পিচ্চিদের সাথে কথা বলতে ভালো লাগে। তাদের সাথে কথাবার্তা বলার মাধ্যমে অনেক কিছু শেখাও যায়। তাদের সাথে কথাবার্তা বলতে বলতে চিন্তা করলাম যেহেতু কিছুক্ষণ ফ্রি আছি তাই, এদের সাথে কিছুক্ষণ গল্পগুজব ও কথাবার্তা বলে কাটিয়ে দেই।
তাদের কাছে গিয়ে নাম ও বাড়ী কোথায় জিজ্ঞাসা করে তাদের সাথে কিছুটা খাতির জমালাম। জিজ্ঞাসা করলাম কার কতপারা কুরআন শরীফ মুখস্ত হয়েছে। জিজ্ঞাসা করতেই তারা সহাস্যে জবাব দিতে লাগল।
ওদের কয়েকজনকে বললাম, আসো! আমরা একটু কুরআনের হিফজটাকে কিছুটা ঝালাই করে নেই। আমি একটুখানি তেলাওয়াত করব আর তুমি তারপর থেকে বলবে। একজনকে সুরা হাশরের একটা আয়াত তেলাওয়াত করে শোনানোর পর সে পরের অংশ থেকে পড়া শুরু করল। আমি সুরা বাকারার তৃতীয় পারার একটা আয়াতাংশ তেলাওয়াত করলে আরেকজন পরের অংশ থেকে তেলাওয়াত করা শুরু করল। এক জায়গায় একটু আটকিয়ে গেলে আমি শুধরিয়ে দিলাম। পরে সে আবার সামনের দিকে এগোতে শুরু করল। বললাম, তোমাকে আরও বেশী বেশী পড়তে হবে। তাহলে, পরে আর ভুলবে না। আমার উদ্দেশ্য ছিল এদেরকে উৎসাহ দেয়া।
আরেকজনকে কুরআনের আরেকটা আয়াত তেলাওয়াত করে শোনানোর পর সে তেলাওয়াত শুরু করল। এভাবে একে অপরকে কুরআন থেকে প্রশ্ন করা ও উত্তর দেয়ার কাজ করতে থাকলে কুরআনের হিফজ অনেক শক্তিশালী হয়। আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের সিলেবাসের জন্য নির্দিষ্ট কয়েক পারা থেকে এভাবেই ডক্টররা প্রত্যেককে ভাইভাতে প্রশ্ন করতেন। সেখান থেকেই তিনি আমাদেরকে ৫০ এর ভিতরে নাম্বার দিতেন। বাকী ৫০ মার্ক থাকত কুরআনের লিখিত পরীক্ষায়। এভাবে অনার্সে চার বছরে ৪০০ মার্ক নির্দিষ্ট ছিল কুরআন হিফজের জন্য।
এতক্ষণ যাদের সাথে ছিলাম তাদের বয়স হবে আনুমানিক ৮-১২ বছরের মধ্যে। একটু পরেই আরেকজন কিশোর রুম থেকে বের হয়ে আসল। তার বয়স হবে ১৬ বছরের মত। তার প্রশ্ন, আপনি এদেরকে কুরআন ধরছেন কি জন্য?
জবাব দিলাম, কেন? কোন সমস্যা আছে নাকি? সে জবাব দিল, অনেকে এভাবে এসে ছাত্রদেরকে কুরআন জিজ্ঞাসা করার পর যখন ওরা আটকে যায় তারা বাইরে গিয়ে বলে হুজুর এদেরকে কি পড়ায়? তারা হুজুরের বদনাম করে। আপনি যেকোন মাদ্রাসায় এভাবে জিজ্ঞাসা করতে পারেননা। তবে, যদি এখানে বা অন্য কোন মাদ্রাসায় আপনার কোন ভাই থাকত তাহলে তাকে জিজ্ঞাসা করতে পারতেন।
কিছুটা শকড হলাম। ব্যাপার কি? এ বয়সের একজন কিশোরের মনে এমন অনুভুতি কেন এবং কোথা থেকে আসল? আসলেই কি এমন কোন সবক ওদেরকে দেওয়া হয়েছে? ওদেরকে কি ওদের শিক্ষক বলে দিয়েছেন যে, কেউ যেন এভাবে ছাত্রদেরকে কুরআন জিজ্ঞাসা না করে সেদিকে সর্বদা খেয়াল রেখো?
মনকে প্রশ্ন করেও কোন জবাব পেলাম না। কয়েক গজ দূরে চেয়ার টেবিলে বসেছিলেন এ প্রতিষ্ঠানেরই দুইজন শিক্ষক। একটু পরে তারা এদিকে আসলেন। জিজ্ঞাসা করলেন আমার পরিচয়। কি করি? ইত্যাদি।
তাদেরকে নিজের পরিচয় দিয়ে বললাম, বাচ্চাদের সাথে একটু কথাবার্তা বলছিলাম এবং কুরআন হিফজ নিয়ে সামান্য আলোচনা পর্যালোচনা করছিলাম। কিন্তু, আপনাদের এই ছাত্র তো আমাকে এরকম বলছে।
তারা বললেন, আমরাও দূর থেকে আপনাকে ফলো করছিলাম যে, ওখানে আপনি ওদের সাথে কি বলছিলেন? আর ফলো করাটাই স্বাভাবিক। কারণ, বর্তমানে দেশের অবস্থা ভাল নয়। আপনি দেশের বাইরে থাকেন তাই, আপনার দেশের বর্তমান অবস্থা সম্বন্ধে না জানারই কথা। এখানে এদের সাথে আপনার কথাবার্তার কারণে হয়ত পুলিশ এসে জামাত শিবির মনে করে এখানে কাউকে গ্রেফতার করতে পারে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে খুবই সাবধান থাকতে হয়। না জানি কখন আবার কি হয়ে যায়।
বুঝলাম, ওদেরকেও আজকাল কঠিনভাবে জামায়াত ভীতিতে পেয়ে বসেছে। আজকে সব জায়গাতেই জামায়াতভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারকে জামায়াতভীতি পেয়ে বসেছে। জামায়াত ভীতিতে রয়েছে পুলিশও। যার কারণে কয়েকদিন আগে ডিএমপি পুলিশ কমিশনার বলে বসলেন যে, শিবির দেখলেই গুলি কর। মন্ত্রী মিনিস্টার ও বামপন্থীরা তো বক্তৃতা আর টক শোর মাধ্যমে জামায়াত শিবিরকে তুলোধনা করতেই সচেষ্ট রয়েছেন। কারণ, এদের উত্থান শুরু হলে ওদের সামনে ঘোর অন্ধকার নেমে আসবে। ইচ্ছামত তারা যা ইচ্ছা তা করতে পারবে না।
কিন্তু, আমি উত্তর মিলাতে পারলাম না যে, কেন তারা আমাকে ওদের সাথে কথাবার্তা বলতে দেখে পুলিশকে ভয় পাচ্ছে। শুধুমাত্র কথাবার্তা বললেই কি পুলিশ ওদেরকে সন্দেহ করবে?? নাকি ওটা শিক্ষকদের অতি সন্দেহ প্রবণতার বহিঃপ্রকাশ??
যাহোক, একটু পরে ওখান থেকে প্রস্থান করে আমার গন্তব্যের দিকে রওয়ানা করলাম।
(এটাকে জামায়াত ভীতি বলব নাকি পুলিশভীতি বলব সেটা বুঝতে পারছি না)
বিষয়: বিবিধ
১৬৭৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন