আরবদেশের জেলখানাগুলোতে বন্দীদের উপর অমানুষিক নির্যাতন!!!

লিখেছেন লিখেছেন ইসমাইল একেবি ১৭ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৮:৫১:০৭ রাত

দেশে আসার কয়েকদিন আগে এক বাংলাদেশী বন্ধুর বাসায় গিয়েছিলাম। তার বাসায় আনলিমিটেড ওয়ার্লেস নেট থাকায় কিছু ডাউনলোড করার লোভ সামলাতে না পেরে ইউটিউব থেকে কিছু ভিডিও ডাউনলোড করলাম। তন্মধ্যে একটা ছিল-"এরাবিয়ান জেলখানাগুলোতে শাস্তিদান" শিরোনামে আল জাজিরা টিভি পরিচালিত টক শো। এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ টপিক বিধায় তা অনুবাদ করে আপনার সাথে শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারলাম না।

উক্ত টকশোতে উপস্থিত ছিলেন-মিশরের সাবেক স্টেট সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি ডিরেক্টর ব্রিগেডিয়ার ফুয়াদ আল্লাম এবং আলজেরীয় লেখক ও গবেষক আনওয়ার মালেক। উল্লেখ্য যে, আনওয়ার মালেক ইতিপূর্বে কারাবরণ করেছেন। টক শো পরিচালনা করেছেন আল জাজিরা টিভির ডক্টর ফয়সাল আল কাসেম।

ভুমিকায় পরিচালক ডক্টর ফয়সাল আল কাসেম বলেন: আরব দেশগুলো কেন ওবামার মত হতে পারল না? জংগী হিসেবে গ্রেফতারকৃতদের উপর নির্যাতনের কারণে কি তিনি সেগুলো তদন্ত করার জন্য আইনজ্ঞ নিয়োগের নির্দেশ দেননি? আরব দেশগুলোর বন্ধীদের চেয়ে কি চিড়িয়াখানার পশুদের সাথে বেশী ভাল ব্যবহার করা হয় না? আমাদের কিছু কিছু দেশ কি সারা বিশ্বের কাছে গর্ব করছে না যে, আমরা বিভিন্ন ভংগীতে শাস্তিপ্রদানে অন্যদের চেয়ে অগ্রগণ্য? আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনগুলো কি জেলখানার বিভিন্ন শাস্তি, বিরোধীদের উপর দমনপীড়ন, হত্যা, বন্দীর মাথা ছিদ্র করা এবং অন্যান্য উপায়ে অমানবিক অত্যাচারের কথা আলোচনা করছে না? ধর্ষণ, অমানবিকভাবে প্রহার করা, কারেন্ট শক দেয়া, উলঙ্গ করা, নখ উপড়ে ফেলা, বন্দীর বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে কাচ ফুটিয়ে দেয়া এবং বন্দীর মা কিংবা বোনকে ধর্ষনের হুমকি দেয়ার ঘটনা এমন কিছু বিষয় যাকে ছোট করে দেখা যায় না। আরব জল্লাদগুলো কবে ন্যায়পরায়ণতার মানদন্ডে পৌছবে? যে শাসকই অত্যাচারীদেরকে শেল্টার দিক না কেন প্রত্যেক অত্যাচারীকে কি শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরী নয়?

এরপর তিনি আল জাজিরা পরিচালিত একটা জরীপের ফলাফল তুলে ধরলেন। জরিপে প্রশ্ন ছিল- "আপনি কি সমর্থন করেন যে, আরব দেশের জেলখানাগুলোতে নির্যাতনের তদন্ত করা হোক?" হ্যা-এর পক্ষে ছিল-৯৪.১%; বাকী ৫.৯% না।

এরপর শুরু হল টক শো'র আলোচনা। প্রথমে কথা শুরু করলেন আনওয়ার মালেক।

আনওয়ার মালেকঃ প্রথমতঃ আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। দ্বিতীয়তঃ আপনাদেরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা আলোচনায় আনার জন্য ধন্যবাদ। এটা এমন একটা বিষয় যা সমস্ত আরব ও মানবতার গভীরে আঘাত হানে। আরব রাষ্ট্রপ্রধানগণ ও তাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় অনৈতিকভাবে মানুষকে নির্যাতন করছে। তারা এমন সব পদ্ধতিতে শাস্তি দেয় যার উপর সমস্ত আরব রাষ্ট্রপ্রধানগুলো একমত হয়েছে। আরেকটি বিষয় হল-আমি কখনও চিন্তাও করিনি যে, আমি একজন অন্যায়ভাবে নির্যাতিত ও কারাবরণকারী ব্যক্তি হিসেবে টেলিভিশনে এ বিষয়ে কথা বলব। আমি ধারণা করেছিলাম অচিরেই আমি আন্তর্জাতিক কোর্টে নির্যাতন বিষয়ে বিস্তারিত কথাবার্তা বলব। এছাড়াও আমি কখনও ধারণা করিনি যে,আমি অন্যায়ভাবে নির্যাতিত ব্যক্তি মিসরের এমন একজন লোকের সামনে কথা বলব যিনি মিশরে এক সময় জল্লাদ ও কসাই (টক শোতে উপস্থিত মিশরের স্টেট সিকিউরিটিকে উদ্দেশ্য করে)ছিলেন।এটা হলে ভালো হত যে, আমি অত্যাচারিত এবং তিনি অত্যাচারী আর আমি তার সামনেই কথা বলছি।

আরবদেশগুলোতে সবচেয়ে বেশী গোপণীয়তা রক্ষা করা হয় যে বিষয়ে তা হচ্ছে- বন্দীদের উপর পরিচালিত অমানুষিক নির্যাতন। এটার ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক থাকে গোয়েন্দা সংস্থা এবং সরকারের সিকিউরিটি ডিভিশন। হোক সেটা সরাসরি, মিডিয়া, কিংবা মানবাধিকার সংস্থার উপর হস্তক্ষেপের মাধ্যমে। যেন এসব অনৈতিক বিষয়গুলো প্রকাশিত না হয়ে পড়ে। এগুলো এত বেশী পরিমাণে হয় যে, ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে যায়। এগুলো হয় প্রকাশ্যভাবেই এবং ভিকটিমের অবস্থা যা হবার তাই হয়।

আগেকার যুগে জেলখানায় শাস্তি দেয়া হত করাত দিয়ে দ্বিখন্ডিত করে,গায়ের চামড়া তুলে ফেলে কিংবা পেট চিরে ফেলার মাধ্যমে। তবে, এখন শাস্তির পদ্ধতিগুলো আরও অত্যাধুনিক হয়েছে। ফলে, চিকিৎসাবিজ্ঞান ভিকটিমের সমস্যাও বের করতে পারছে না। হয়ত কাউকে কোন ঘরের মধ্যে রেখে খুব জোরে সাউন্ড বাজানো হয়। ফলে, ব্যক্তির শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। এরপরে কিভাবে সমস্যা চিহ্নিত করবে চিকিৎসাবিজ্ঞান? আরবদেশের রাস্তাঘাটগুলোর দিকে যদি খেয়াল করা হয় তাহলে দেখা যাবে, ৯৫% লোক কোন না কোনভাবে সিকিউরিটি ডিভিশন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে নির্যাতনের শিকার। হয়তবা সেটা আচার ব্যবহারের মাধ্যমে কিংবা গালি বা প্রহার করার মাধ্যমে।

উপস্থাপকঃ আপনার দৃষ্টিতে আরব সিকিউরিটি কর্তৃপক্ষ শয়তানের মত হয়ে গেছে?

আনওয়ার মালেকঃ আল্লাহর কসম! তারা শয়তানের চেয়েও বেশী খারাপ হয়ে গেছে। আল্লাহর কসম! তারা শয়তানের চেয়েও খারাপ হয়ে গেছে। শয়তান এদের চেয়েও অনেক পিছিয়ে আছে।

বন্দীদের অবস্থা এমন হয়েছে যে, একটা কুত্তা সেলের মধ্যে বন্দি আছে। আর তার সাথে এমন সব ব্যবহার করা হচ্ছে যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। একটু পরেই আমরা আলোচনা করব কিভাবে বিভিন্ন পদ্ধতিতে সিকিউরিটি ডিভিশন কর্তৃপক্ষ তাদেরকে নির্যাতন করছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত জেল কর্মকর্তাগণ নির্যাতনের তদারকিতে থাকে। কখনও নির্যাতনের এসব ব্যাপার তদন্ত করা সম্ভব হবে না। কেননা, যদি সেগুলো তদন্ত হয় তাহলে প্রথমেই ফেসে যাবে দেশগুলোর প্রেসিডেন্ট তারপর প্রধানমন্ত্রী তারপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এগুলোকে "সুনির্দিষ্ট সিলেবাসের আলোকে" ("মুমানহাজ" শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে) নির্যাতন বলা যায়। কেমন করে সরকার প্রচুর পরিমাণ অর্থ খরচ করে বিভিন্ন প্রকার অস্ত্র ও আধুনিক যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আমদানী করতে পারে বন্দীদেরকে শাস্তি দেয়ার জন্য??? পুলিশরা কিভাবে অন্য দেশে গিয়ে এদেরকে শাস্তি দেয়ার ট্রেনিং নিয়ে আসতে পারে??!!! তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে একত্রিত হয়ে সলাপরামর্শ করে, কীভাবে সেসব ভোটগুলোর একটা বিহীত করা যায় যা তাদের মসনদকে উল্টে দেয়ার সম্ভাবনা আছে??

উপস্থাপকঃ (ব্রিগেডিয়ারকে উদ্দেশ্য করে) আপনি সব শুনলেন। আপনি এ ব্যাপারে কি বলবেন? কেন এত অত্যাচার নির্যাতন করে গোয়েন্দা সংস্থাসহ সিকিউরিটি ডিভিশন? কেন শাস্তির প্রক্রিয়াগুলোর কোন তদন্ত করা হয় না?

ব্রিগেডিয়ার: আমি কামনা করি শাস্তির প্রক্রিয়াগুলো তদন্ত করা হোক যেন এই লোকের মত কথাবার্তাগুলোর দাতভাঙ্গা জবাব দেয়া যায়। আমি তার কথাগুলোর উত্তর দিতে পারছি না কারণ, এ ধরণের বাক্য ব্যবহার করে কথাবার্তা বলা সৌজন্যতা বিবর্জিত। তিনি একজন লেখক, গবেষক, সাংবাদিক সর্বোপরি একজন শিক্ষিত লোক। অথচ, তিনি (আমাকে) কসাই, জল্লাদ বিশেষণে অভিহিত করলেন!!

আরেকটি বিষয় হল- এসব বিষয় পূর্নাংগভাবে তদন্ত করা দরকার যেন, প্রমাণিত হয় যে এসব অভিযোগকারীদের অভিযোগের পক্ষে কোন প্রমাণ নেই। আমি চ্যালেঞ্জ করছি এই ভাইয়ের সাথে। তিনি যেন আমাদেরকে জানান যে, কেমন নির্যাতন করা হয়? তিনি জবাব না দিলে আমি বলব যে, বিভিন্ন আইন অনুযায়ী কিভাবে শাস্তি দেয়া হয়। অন্য একটি বিষয় হল-তিনি বলেছেন, নির্যাতন করা হয় "মুমানহাজ" বা সুনির্দিষ্ট সিলেবাসের আলোকে। আমি এটাতেও চ্যালেঞ্জ করছি। তিনি যেন বলেন-" মুমানহাজ" শব্দের অর্থ কি? তিনি যদি এগুলোর উত্তর দিতে পারেন তাহলে, আমি তাকে ধন্যবাদ জানাব। এ শব্দগুলো সাধারণত হযবরল ভাবে যত্রতত্র ব্যবহার করা হয়। তিনি এগুলোর অর্থও জানেন না।

তৃতীয়তঃ তিনি বলছেন, সমস্ত আরবদেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান এবং গোয়েন্দা বিভাগ সবাই এর জন্য দায়ী। তার মানে কি এটা যে রাষ্ট্রপ্রধানগণ জেলখানায় গিয়ে বন্দীদেরকে নির্যাতন করেন? এটা কি যুক্তিতে খাটে? এ কথাটা কি যুক্তিযুক্ত? অথচ এই লোকটি শিক্ষিত, সাহিত্যিক, লেখক এবং সাংবাদিক। এ কথাটা কখনও ধারণাই করা যায়না যে, একজন রাষ্ট্রপ্রধান জেলখানায় যাবে কোন ব্যক্তিকে নির্যাতন করার জন্য। এ কেমন কথা?

উপস্থাপকঃ তাহলে কি আরব দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানরা এটার দায়িত্ব থেকে নিস্তার পাওয়ার যোগ্য?

ব্রিগেডিয়ারঃ একজন রাষ্ট্রপ্রধান জেলখানায় যাবে ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়ার জন্য। এটা কেমন কথা? আমাকে শেষ কথাটা বলতে দিন। বিশ্বাস করুন এখন ওবামা এবং আমেরিকা হয়ত একটা পয়েন্ট তুলবে যে, এগুলোর বিচার করা জরুরী। তাহলে, আমরা এর কি ফলাফল দেখব? কামনা করি এখানে ভালো কোন ফলাফল আসুক।

উপস্থাপকঃ কোন ভালো ফলাফল আসবে না।

ব্রিগেডিয়ারঃ এই মুহুর্তে গুয়েন্তানামোতে বন্দীরা আছে। আমেরিকা নীরিহ মানুষদেরকে হত্যা করেছে ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, সোমালিয়া ও সুদানে। ইসরাইল কি করছে? উনি (আনওয়ার মালেকের দিকে আংগুল উচিয়ে)একটা প্রবন্ধ লিখে দেখান যে,ইসরাইলের জেলখানাগুলোতে কি হচ্ছে।আশা করব তিনি অনুষ্ঠান থেকে গিয়ে নিজের চিন্তাধারা দিয়ে একটা নিবন্ধ লিখবেন যে,ইসরাইলে যা ঘটছে তা "মুমানহাজ" তথা নির্দিষ্ট সিলেবাস অনুযায়ী।তাদের সমস্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদেরকে বিচারের সম্মুখীন করা হোক।তিনি একজন লেখক,গবেষক,সাংবাদিক,সাহিত্যিক তিনি সমস্ত আরবদেশের রাষ্ট্রপ্রধানদেরকে এভাবে বলছেন।তাহলে এসব দেশের অধিবাসীদের অবস্থান থাকল কোথায়? তার কথা গ্রহণযোগ্য নয়।

উপস্থাপকঃ জনাব ব্রিগেডিয়ার! আপনি বলেছেন,রাষ্ট্রপ্রধানরা জেলে কিংবা গোয়েন্দাবাহিনীর কাছে গিয়ে নির্যাতনকে তদারকি করে না।

ব্রিগেডিয়ারঃ হ্যা,হ্যা।

উপস্থাপকঃ কিন্তু ইরাকের বিখ্যাত কবি আব্দুল ওয়াহহাব আল বাইয়্যাতি এগুলোর নাম দিয়েছেন "কিলাবুস সায়ীদ" বা স্থলের কুত্তা। আপনি জানা আছে "কিলাবুস সায়ীদ" কারা। তারা হচ্ছে গোয়েন্দা কর্মকর্তাগণ; যারা এসব নির্যাতন ও কর্মকান্ডের মুল হোতা।

ব্রিগেডিয়ারঃ আপনি হয়ত জানতে পারেন। কিন্তু, আমি "কিলাবুস সায়ীদ" চিনি না।

উপস্থাপকঃ আব্দুল ওয়াহহাব আল বাইয়্যাতি বলছে এগুলো। জনাব আনওয়ার মালেক!! এবার আপনার কাছে আসি। আপনি "মুমানহাজ" শব্দটি দিয়ে মিথ্যাচার করছেন এবং আরবদের সিকিউরিটি ডিভিশন সম্বন্ধে আপনি যা বলেছেন তা হচ্ছে-অপবাদ। এছাড়া আপনার জানা নেই নির্যাতনের সংজ্ঞা। এ ব্যাপারে আপনি কি বলবেন?

আনওয়ার মালেকঃ তিনি বিভিন্ন বিষয়ের শাব্দিক সংজ্ঞার দিকে চলে যাচ্ছেন। "মুমানহাজ" এর সংজ্ঞা কি, নির্যাতন কাকে বলে এবং অন্যান্য বিষয়ে।বলতে দ্বিধা নেই যে,আমি তাকে "জল্লাদ ও কসাই" বলেছি।এটা আমার কথা নয় এটা খোদ মিশরীয়দের কথা।তারাই তাকে "জল্লাদ,কসাই" বলে থাকে।

ব্রিগেডিয়ারঃ না; এটা শুধু আপনিই বলছেন।

আনওয়ার মালেকঃ ডক্টর কামাল সানানীর এর হত্যার ব্যাপারে মিশরীয়রা বলে থাকে যে, আপনি নিজে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন।

ব্রিগেডিয়ারঃ (রেগে গিয়ে) এটা মিথ্যা কথা।

আনওয়ার মালেকঃ মিথ্যা নয় মিথ্যা নয়।

ব্রিগেডিয়ারঃ মিথ্যা কথা। কোন মিশরী এমন কথা বলেনি।

আনওয়ার মালেকঃ মিথ্যা নয়। আপনিই তাকে হত্যা করেছেন। এটা অনেক লোকের বক্তব্য ছিল।

ব্রিগেডিয়ারঃ মুহাম্মাদ হাবীব কি বলেছেন? আমাকে বলতে দেন।

আনওয়ার মালেকঃ আপনি বাড়ী ফিরে গিয়েছেন তখন আপনার পোশাক ছিল রক্তে রঞ্জিত!! তখন আপনি জেনারেল ছিলেন।

ব্রিগেডিয়ারঃ আমার কথা শুনুন জানতে পারবেন। আমার কথা শুনুন জানতে পারবেন।

আনওয়ার মালেকঃ না, না,আমি জানি জেলে কি হয়। আপনি ছিলেন জেলের পরিচালক আর আমি ছিলাম জেলের একজন বন্দী। আমি জেল ও সেখানে যা কিছু ঘটে সেগুলো সম্বন্ধে বলছি।

ব্রিগেডিয়ারঃ সব ভুয়া কথা।

আনওয়ার মালেকঃ ভুয়া নয়। আপনি পরে শান্তভাবে কথা বলবেন। আমাকে কথা বলতে দেন।

উপস্থাপকঃ এক মিনিট! এক মিনিট!

ব্রিগেডিয়ারঃ না, আগে অবশ্যই এটার জবাব দেয়ার দরকার। তারপর তিনি কথা পুর্ণ করবেন।

উপস্থাপকঃ আমরা যেন কথার মোড় অন্য দিকে না ঘুরিয়ে ফেলি।

ব্রিগেডিয়ারঃ আপনি মিথ্যাচার করে বলছেন মিশরীরা এমন বলেছে।

আনওয়ার মালেকঃ আমি মিথ্যাচার করে দাবি করিনি।

ব্রিগেডিয়ারঃ মুহাম্মাদ হাবীব পুরাতন ইখওয়ান।

আনওয়ার মালেকঃ ডক্টর শারিসা কি বলেছেন? ডক্টর শারিসা কি বলেছেন?

ব্রিগেডিয়ারঃ আমাকে শেষ করতে দেন।

আনওয়ার মালেকঃ ডক্টর শারিসা কি বলেছেন?

ব্রিগেডিয়ারঃ আমি শীঘ্রই আপনাকে বলব যে,কি বলেছে।

উপস্থাপকঃ আচ্ছা!আমরা যেন আমাদের বিষয় থেকে সরে না যাই।

ব্রিগেডিয়ারঃ আধা মিনিটের মধ্যেই আমি আপনাকে বলব তিনি কি বলেছেন?

উপস্থাপকঃ একটু ওয়েট করুন।জনাব ব্রিগেডিয়ার জবাব দেবেন।

ব্রিগেডিয়ারঃ আধা মিনিটে; মুহাম্মাদ হাবীব যা বলেছে, সে কামাল সানানীর হত্যার ব্যাপারে আমাকে সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনেছিল। আমি নায়েবে আমকে ব্যাপারটা জানালাম। নায়েবে আম ব্যাপারটা নিয়ে তদন্ত করল মুহাম্মাদ হাবীব ও মুহাম্মাদ আব্দুল কুদ্দুসকে সাথে নিয়ে। অতঃপর, তাদেরকে ১০ হাজার পাউন্ড জরিমানা করা হয়। কেউ অভিযোগ করেনি যে ডক্টর...... ও, জানেনা ব্যাপারটা।

আনওয়ার মালেকঃ আমার কাছে তার বক্তব্যটা আছে।

ব্রিগেডিয়ারঃ আমি জানি আপনার কাছে বক্তব্যটা আছে। আমি আপনাকে চ্যালেঞ্জ করছি।

উপস্থাপকঃ আচ্ছা!!

আনওয়ার মালেকঃ আপনি জল্লাদের একটা নমুনা;যিনি এক মিসরীকে নির্যাতন করেছেন। তিনি এখন বিভিন্ন আরবদেশ ভ্রমণ করেন এবং একজন রাজনীতি বিশেষজ্ঞ। আল্লাহর কসম! আমি আশ্চর্য হই এসব সংস্থার লোকদের সাহস দেখে। তারা দেদারসে মানুষ হত্যা করে এবং জেলখানায় তাদের দেহকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়। আর যখন এরা অবসরে যায় তখন মানুষকে রক্ষার কাজে মুখপাত্রের ভুমিকায় অবতরণ করে। আরবদেরকে আপনারাই নির্যাতন করেছেন এবং নির্মমভাবে পিটিয়েছেন।

.......................................

ব্রিগেডিয়ারঃ চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি যে, "মুমানহাজ" তথা নির্দিষ্ট সিলেবাসের আলোকে কাউকে নির্যাতন করা হয় না। আর উনি নির্যাতনের সংজ্ঞাও জানেন না।

আনওয়ার মালেকঃ নির্যাতন হচ্ছে এমন কোন কাজ যাতে ব্যক্তি অপমানিত হয় কিংবা তার শরীরে কোন ব্যথা হয়। আন্তর্জাতিক নির্যাতন প্রতিরোধ সংস্থার মতে-ব্রেন কিংবা শারিরিক কোন কষ্ট দেয়ার নামই হল নির্যাতন।

উপস্থাপকঃ (আনও য়ার মালেককে)আপনি উদাহরণ নিয়ে আসেন এবং নির্যাতিত কারাবন্দীদের নাম ও তার দেশের নাম বলেন।

আনওয়ার মালেকঃ আমি আপনাকে কিছু বন্দীর উদাহরণ দেব। আমি আপনাকে কিছু বন্দীর উদাহরণ দেব।

ব্রিগেডিয়ারঃ তার সংজ্ঞাটা ১০০% ভুল। আমি আপনাকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছি সে জানে না।

আনওয়ার মালেকঃ ১। এই ছবিটা দেখুন। ইনি একজন মিশরী। জেল থেকে বের হয়েছেন। তার অবস্থা দেখুন। আমি তার ছবি সম্বন্ধে কোন মন্তব্য করছি না।(১৫:২৩ মিনিট)

২। এটা একটা শিশু; তার নাম মামদুহু আব্দুল্লাহ। তার উপর নির্মমভাবে অত্যাচার করা হয়েছে এবং তাকে হত্যা করা হয়েছে। এটাও ঘটেছে মিশরীয় জেলখানায়। (১৫:৩৪ মিনিট)

৩।এই ছবিটা দেখুন।

৪। এটাও দেখুন।

এগুলো সব ঘটেছে মিশরীয় জেলখানায়। আর আপনি বলতে চাচ্ছেন, জেলখানাগুলোতে কোন নির্যাতন করা হয় না??? আপনি কি কখনও জেলে গেছেন? আপনি জেলে যান দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে। আর আমি বলছি জেলে যা হয় সেগুলো নিয়ে।

১। সেখানে তাদের নখ তুলে ফেলা হয়।

২। তাদের কন্যাদের শ্লীলতাহানি করা হয়।

৩। তাদের বোনদেরকে ধর্ষণ করা হয়।

৪। তাদেরকে আরেক বন্দীর সাথে সমকামিতায় বাধ্য করা হয়।

৫। তাদের সাথে সমকামিতায় লিপ্ত হয়।

৬। ধর্মীয় অনুভুতি নিয়ে খেলতামাশা করা হয়। কুরআনের অবমাননা করা হয়।

এগুলো সব করা হয় এবং আমি ছিলাম সেখানে চাক্ষুষ সাক্ষী। আমাকে বলবেন উদাহরণ দিন? আচ্ছা, আমি উদাহরণ দিচ্ছি- আলজেরিয়াতে একজন বন্দীর নাম মোবারক আব্দুল হামিদ; তার পুরুষাঙ্গ ছিড়ে ফেলেছিল জেলের কারারক্ষী; তার যৌনাঙ্গকে!!! তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছিল-সে নাকি সারকোজির হত্যাকান্ডস্থলে সংশ্লীষ্ট ছিল। এগুলো সব বাস্তবতা। এই যে সার্টিফিকেটগুলো; মিশরীরা স্বীকারোক্তি করে এবং সেখানে যা হয় সব ছাপিয়ে বিলি করছে। তাজমামার্টের জেলে কি হয়েছে? হাসান আস সানী যা করত শয়তানও তার কাছে ফেল হয়ে যাবে!! মিশরীয় জেলখানাগুলোতে কি করে? আবু জা'হবাল ও তোররা জেলখানায় এমন কিছু ঘটেছে যা কল্পনাতীত!! আপনি এত কিছু অস্বীকার করেন কেমন করে?

এখনও মিথ্যা অপবাদ দিয়ে হিযবুল্লাহর সাথে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতারকৃতদের সাথে কি ব্যবহার করা হচ্ছে? এখন পর্যন্ত তারা সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও ন্যাক্কারজনক নির্যাতনের শিকার। হিযবুল্লাহ গাযা পরিস্থিতিতে ভুমিকা পালন করার কারণে আপনার বস হুসনী মূবারক হাসান নাসরুল্লাহর সমালোচনা করে এসব কাজ করছে। আপনি এসব কিছুকেই অস্বীকার করছেন কেন???!!! আপনি বাস্তবতাকে অস্বীকার করছেন। আমি আপনাকে বলছি যখন কোন সংস্থা মানুষকে শাস্তি দেয়ার জন্য বিভিন্ন যন্ত্রাদি বিদেশ থেকে আমদানি করে তাদেরকে কি বলার আছে???!!!

ব্রিগেডিইয়ারঃ আপনি আরও কি বলতে চান? শুনেন! আপনি যা বলেছেন তার প্রত্যেকটি অক্ষর মিথ্যাচার ও অপবাদ। আমি প্রমাণ করছি, হিযবুল্লাহর ব্যাপারে গ্রেফতারকৃত প্রথম আসামীর আইনজীবী আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বলেছেন, তার মুয়াক্কেল কোন প্রকার নির্যাতনের শিকার হয়নি। এটা একটা ঘটনা। আরেকটি ঘটনা হল- কয়েক দশেক মানবাধিকার সংস্থা বলেছে...... তাদের রিপোর্ট আমার কাছে আছে।

উপস্থাপকঃ আমাদের আলোচনার বিষয় যেন মিসর, আলজেরিয়া ও মরক্কো না হয়ে যায়।

ব্রিগেডিয়ারঃ আমি আরবদেরকে নিয়েই বলছি। তবে, উদাহরণ নিয়ে আসছি মিসর থেকে। আর তিনি শুধু মিসরকে ফোকাস করছেন। কারণ, তিনি ব্যক্তিকে টার্গেট করতে চান। সে একজন আরব!!! চিত্রকে পরিবর্তন করতে চায়।

আনওয়ার মালেকঃ আর আপনি হচ্ছে ফেরআউন টাইপের। আপনি হচ্ছেন ফেরয়াউনী।

ব্রিগেডিয়ারঃ না; আমি একজন আরব।

আনওয়ার মালেকঃ না আপনি ফেরআউনী; আপনি ফেরআউন।

ব্রিগেডিয়ারঃ আমি একজন আরব তাই গর্বিত।

আনওয়ার মালেকঃ ফেরাউনী চরিত্র নিয়ে গর্ব করবেন না।

উপস্থাপকঃ এটা আমাদের আলোচনার বিষয় নয়।

ব্রিগেডিয়ারঃ আমি একজন আরব আমি এজন্য গর্ব করি। তাদেরকে নিয়ে এ ধরণের মন্তব্য করার কথা আমি কল্পনাও করতে পারি না। আপনার কত বড় সাহস দেখি- কথা বলেন ইসরাইলের বিরুদ্ধে, কথা বলেন আমেরিকার বিরুদ্ধে।

উপস্থাপকঃ জনাব ব্রিগেডিয়ার! ইসরাইল ফিলিস্তিনের সাথে যুদ্ধাবস্থায় আছে। কিন্তু, আরব দেশগুলো তাদের নাগরিকদের সাথে যুদ্ধাবস্থায় নেই। তারা তাদেরকে হত্যা করে থাকলে সেটা হবে যুদ্ধাবস্থায়। কিন্তু, আরব জেলগুলোতে যা হচ্ছে তা যুদ্ধাবস্থায় হচ্ছে না।

ব্রিগেডিয়ারঃ (উপস্থাপককে উদ্দেশ্য করে) ডক্টর, আপনি একটা প্রমাণ দেন। আমি আগে তার কথাটার জবাব দেয়া শেষ করি। তিনি বেশকিছু ছবি এখানে আমদানি করেছেন। এগুলো সব ভুয়া। এটা কি ধারণা করা যায় যে, কাউকে এভাবে শাস্তি দেয়া হয়েছে অথচ, তিনি আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি? আপনার মন্তব্য কি? বিগত ৫ বছরে সমস্ত আরবদেশ মিলিয়ে রাজনৈতিক কারণে যেসব লোকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলোর সংখ্যা ২০০ এর বেশী হবে না।

উপস্থাপকঃ ২০০!! তবুও এত চিল্লাচিল্লি??!!

ব্রিগেডিয়ারঃ বিগত ৫ বছরে।

উপস্থাপকঃ আচ্ছা আচ্ছা!!

এমন সময় একটা ফোন আসল তিউনিশিয়া থেকে। ফোন করেছেন মুনসিফ বিন সালেম।

মুনসিফঃ ধন্যবাদ আপনাকে ডক্টর ফয়সাল। ধন্যবাদ আপনার দর্শকদেরকে। আমি আপনার দর্শক নই কেননা, আমি এই মুহুর্তে রয়েছি হাসপাতালে।

উপস্থাপকঃ আচ্ছা বলেন!!

মুনসিফঃ আপনার এ প্রোগ্রামের ভুমিকাতে একটা প্রশ্ন এসেছিল যে, আরবদেশের জেলখানাগুলোতে কোন অমানুষিক নির্যাতন করা হয় কিনা? আমার উত্তর হচ্ছে-আরব দেশের জেলখানাগুলোতে কোন নির্যাতন নেই; আছে শুধু একজন মানুষকে আল্লাহ তায়ালা যেসব নেয়ামত দিয়েছেন (পঞ্চইন্দ্রিয় ইত্যাদি) সেগুলোকে সমূলে ধ্বংস করে দেয়া এবং একজন মানুষের সম্মান মর্যাদাকে ধুলিস্মাৎ করার প্রক্রিয়া। বিশেষ করে এমনটি রাজনৈতিক বন্দীদের সাথে করা হয়। তিউনিশিয়ার জেলে থাকা অবস্থায় এটাই আমার মনে হয়েছে। আর এমন অবস্থা চলছে প্রায় সমস্ত আরবদেশগুলোতে; তবে, কোথাও একটু কম কিংবা বেশী। এটা একটা পরিকল্পিত ও নির্দিষ্ট পদ্ধতি; বিপথগামী কিংবা স্বতঃস্ফুর্তভাবে কারও ব্যক্তিগত কর্মকান্ড নয় যেমনটি দাবী করা হয়। যখন কোন রাজনৈতিক বন্দী জেলখানার দরজা অতিক্রম করে তার অর্থ দাড়ায়-সে তার শরীর ও ইচ্ছাকে এমন কারও সামনে সমর্পন করেছে যে কারও উপর কখনও দয়া দেখায় না; সে চায় ইচ্ছামত প্রতিশোধ নিতে। যখন বনের কোন হিংস্র পশু অন্যকে খাওয়ার জন্য শিকার করে তখন তাকে খাওয়ার আগে হত্যা করে থাকে। কিন্তু, মানুষ নামের হিংস্র পশুগুলো তাদেরকে জীবিত অবস্থায় খায়। এগুলো হয় দুইটি প্রক্রিয়ায়।

প্রথমতঃ তাকে অসুস্থ করে দেয়া। এটা হয় নিম্নোক্ত উপায়ে।

তাদেরকে প্রলোভন দেয়া হয়, সামান্য কারণে কিল ঘুষি ও কামড় দেয়া হয়। কখনও কখনও বিনা কারণে এমনটি করা হয়। এভাবেই রাজনৈতিক বন্দীদের সাথে ব্যবহার করা হয়। আর যখন বন্দীকে এক জেল থেকে আরেক জেলে স্থানান্তর করা হয় যে অবস্থা আমি অতিক্রম করে এসেছি। তখন তাকে রিসিভ করার জন্য একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে যা করা হয় তাহল-

তাকে পুর্নাঙ্গভাবে উলঙ্গ করে ফুটবলের মত একদল প্রহারকারী হায়েনার সামনে ছেড়ে দেয়া হয়। সে বার বার অজ্ঞান হয়ে যায়। তারপর তাকে পাথরের উপর হামাগুড়ি দিতে বাধ্য করা হয় এবং মুরগীর মত ডাকতে বলা হয়; সে যেন একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নয় বরং, সে একজন মুরগী চোর। ওরা দাবী করে আমাদের জেলখানাগুলোতে নাকি বিরোধী মতের কেউ নেই!!!! সামান্য কারণে বন্দীকে জেলখানায় পৃথক পৃথকভাবে শাস্তি দেয়া হয়। কখনও কখনও তাকে পশুর মত শিকল দিয়ে বেধে রাখা হয়। সে কোথায় পায়খানা পেশাব করবে? কনক্রিটের ঘরের মধ্যে?? রোগীদেরকে চিকিৎসা না করেই রেখে দেয়া হয়। এভাবেই অনেকে মৃত্যুকে আলিংগন করে থাকে। তাদেরকে এমন নাপিতের কাছে নেয়া হয় যে নাপিত একই ব্লেড দিয়ে ১৫ জন মদ্যপ, সমকামী ইত্যাদির জন্য ব্যবহার করে থাকে। মোটকথা-অনেক ভাইরাসযুক্ত ব্লেড ব্যবহার করা হয়। এর কারণটা স্পষ্ট; যেন এসব ভাইরাসের বন্দীর মাঝেও ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে আরও শাস্তি দেয়া হয় অনেকগুলো বড় বড় ইদুর দিয়ে। আমরা ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় যেন একটা উন্মুক্ত ঘর থেকে বেরিয়ে আমাদের হাড্ডি গোশত খেয়ে শেষ করে ফেলতে পারে।

দ্বিতীয়তঃ আরেকটি প্রক্রিয়া হল, বন্দীকে রাখা হয় এমন একটা সেলে যেখানে আছে প্রচুর পরিমাণ সমকামী। গোলমাল ও অপরাধের একটা কেন্দ্রবিন্দু সে সেলগুলো। সারারাত দেখা যায় হিংস্র পশুরা অশ্লীল কর্মে লিপ্ত রয়েছে। সেখানে কয়েক বছর ধরে লেখা কিংবা পড়ার কোন সামগ্রী দেয়া হয় না। প্রতিদিন অকারণে রাজনৈতিক বন্দীর জিনিসপত্র তল্লাশীর নামে তন্ন তন্ন করে তাকে নাজেহাল করা হয়। তাদেরকে বিভিন্ন বিশেষণ উল্লেখ করে গালিগালাজ করা হয়। যেমন-নাশকতা সৃষ্টিকারী দল, ক্রীড়নক বা ইসরাইলের হাতের পুতুল প্রভৃতি। যদি কোন বন্দী কোন রাজনৈতিক বন্দীর দিকে সামান্য পরিমাণ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে তাকেও কঠোর শাস্তি দেয়া হয়। একবার একজন বর্ষিয়ান লোক আমাকে একটা কলা দিয়েছিল। তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে এত অমানবিকভাবে তার পায়ে শাস্তি দিয়েছিল যে, সে পায়ে ভর দিয়ে চলতে পারছিল না। তার অপরাধ তিনি আমার দিকে মাত্র একটা কলা এগিয়ে দিয়েছেন।

আরব দেশের জেলখানার অবস্থা ও নির্যাতনকারী কর্মকর্তাদের বিচার

উপস্থাপকঃ আচ্ছা, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তাদেরই একজন সাক্ষ্য দিল। এখানে অনেক বিষয় রয়েছে। জনাব ব্রিগেডিয়ার আপনি এগুলোর কি জবাব দেবেন? তিনি একজন বন্দী; এই মুহুর্তে হাসপাতালে আছেন। তিনি জেলখানায় যা হচ্ছে তা বলেছেন। এটা কি পরিকল্পিত পদ্ধতি নয়?এর পরেও আপনি বলবেন এটা পরিকল্পিত নয়?

ব্রিগেডিয়ারঃ কেন আরও লোকের মতামত নিচ্ছেন না?

উপস্থাপকঃ আমরা আরও লোকের মতামত নেব। আপনি বলেন।

ব্রিগেডিয়ারঃ আমিও এটা চাই, আমিও এটা চাই। কয়েকমাস আগে মিসরের মুহাম্মাদ ফাদেল নামক একজন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আমার সাথে দেখা করেছিলেন। তিনি এগুলো নিয়ে একটা ফিল্ম তৈরী করেছেন এবং জেলের ভিতরের বিভিন্ন ছবিও তুলেছেন। তাকে মিশরের ৬ টির ও বেশী জেলখানায় যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। আমি চাই আপনি তার মতামত নিবেন। তিনি আমাকে জানাতে এসেছিলেন যে, তিনি জেলগুলো দেখে আশ্চর্যান্বিত হয়েছেন; তিনি এগুলোর নাম দিয়েছেন একেকটা "শেরাটন হোটেল"। সেখানকার জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত।

আনওয়ারঃ ফাইভ স্টার হোটেল???!!!

ব্রিগেডিয়ারঃ ফাইভ স্টার।

আনওয়ার মালেকঃ মাশা আল্লাহ।

ব্রিগেডিয়ারঃ সে এখনও আছে। তাকে ফোন করতে পারেন।

উপস্থাপকঃ ফাইভ স্টার!!! আরবদেশের জেলখানাগুলো???!!!

ব্রিগেডিয়ারঃ জনাব, আমি একটা নির্দিষ্ট ঘটনা উল্লেখ করলাম মাত্র।

উপস্থাপকঃ জনাব ব্রিগেডিয়ার! আরেকবার বলেন।

ব্রিগেডিয়ারঃ মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মুহাম্মাদ ফাদেল।

উপস্থাপকঃ তার মানে আরবদেশের জেলখানাগুলো একেকটা ফাইভ স্টার হোটেল?

ব্রিগেডিয়ারঃ তিনি একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তি এবং জেনে রাখা দরকার যে, তিনি বর্তমান শাসক বিরোধী ব্যক্তি।

উপস্থাপকঃ তার মানে জেলখানাগুলো ফাইভ স্টার হোটেল??

ব্রিগেডিয়ারঃ প্লিজ, তার কাছে এবং অন্যদের কাছে একটু ফোন করে দেখেন।

উপস্থাপকঃ ভাল বলেছেন।

ব্রিগেডিয়ারঃ মুনতাসির জাইয়্যাতকে ফোন করেন সে তাকে ভালো করেই চেনে।

উপস্থাপকঃ খুব ভাল।

ব্রিগেডিয়ারঃ আচ্ছা, ওখানে কয়েকটি বিষয় রয়েছে যারা জবাব দেয়া দরকার। ......... তিনি কি জানেন মিশরের ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার মুহাম্মাদ সাদেককে তিন বছর জেল দেয়া হয়েছিল কারাগারে নির্যাতন করার কারণে?তিনি কি জানেন মিশর মিলিটারী গোয়েন্দা ডেপুটি ডিরেক্টর ব্রিগেডিয়ার ইবরাহীম সালামাকেও নির্যাতন করার অভিযোগে তিন বছর জেল দেয়া হয়েছিল?? আমি কামনা করি আমেরিকাতেও এটা শুনব।

উপস্থাপকঃ আচ্ছা, আমি আপনাকে প্রশ্ন করতে চাই, তিনি কান্ট্রি সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের একজন বড় অফিসার ছিলেন। তার কাছে অনেক তথ্য আছে। তিনি এসব কথা বলছেন। আপনি এর কি জবাব দেবেন? নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিলেন ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার,মিলিটারী গোয়েন্দা সংস্থার ডেপুটি ডিরেক্টর। তাদের প্রত্যেকেই কারাবরণ করেছেন বন্দীদেরকে নির্যাতনের অপরাধে। এরপরেও আপনি কেন রাগান্বিত? আপনার কাছে জেলখানা রয়েছে ফাইভ স্টার।

ব্রিগেডিয়ারঃ আপনি তাকে নির্দিষ্ট প্রশ্ন করেন তিনি পুর্ণাংগ জবাব দেবেন।

আনওয়ার মালেকঃ আমাকে সুযোগ দেন আমি জবাব দেব। আপনার যখন সুযোগ আসবে তখন আপনি জবাব দেবেন।

ব্রিগেডিয়ারঃ আপনি কি কখনও "কারাম জাহিরি" ও "নাজেহ ইবরাহীমের" বক্তব্য শুনেছেন?

আনওয়ার মালেকঃ আমি কামনা করি আপনিও জেলখানায় যান এবং ফাইভ স্টারে বসবাস করেন।

উপস্থাপকঃ ওসব বাদ দেন; মিসর মিশরের জায়গাতে থাকুক আমাদের আলোচনার বিষয় পুরো আরব বিশ্ব।

ব্রিগেডিয়ারঃ আমি আরব বিশ্বের কথাই বলছি।

আনওয়ার মালেকঃ নির্যাতনের ব্যাপারে যে বিচার হয়েছে তা হয়েছে অত্যন্ত লিমিটেড কিছু ব্যাপারে। যখন মিডিয়ায় কোন ঘটনা আসে তখন মিডিয়ার উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়। তাই এগুলো জানা যায় না।

ব্রিগেডিয়ারঃ আমাকে একটা ঘটনা বলেন।

আনওয়ার মালেকঃ অনেক সময় কর্মকর্তা ও পুলিশ অফিসারদের মাঝে আন্ডার স্ট্যান্ডিং এর মাধ্যমে হাজার হাজার অভিযোগ সরিয়ে ফেলা হয়। তারা বলে, এ অমুক অমুক ঘটনাগুলোর তারা সত্যতা পেয়েছে এবং তারা বিভিন্ন কথাবার্তা বলে (তাড়াহুড়া করে) এদের ব্যাপারে রায় দিয়ে দেয়। জনাব!! আমি প্রাপ্ত বাস্তবতার আলোকে কথা বলছি। আমি নির্যাতনের ভিকটিম ছিলাম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে। আমি ছিলাম ঝুলন্ত অবস্থায় এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তখন নির্দেশ দিচ্ছিলেন।

উপস্থাপকঃ ঝুলন্ত!! কিভাবে?

আনওয়ার মালেকঃ আমি ছিলাম পা বাধা অবস্থায় ঝুলন্ত। এই দেখুন এগুলো প্যারিসের সবচেয়ে বড় হাসপাতালের চিকিৎসকদের রিপোর্ট। এটাই প্রমাণ করে যে, আমি ছিলাম নির্যাতিত। এই দেখুন নির্যাতিত হিসেবে চিকিৎসার কার্ড। আমি বর্তমানে প্রতিবন্ধী। (চেয়ার থেকে উঠে হেটে দেখালেন) আমার বাম পায়ে ভর দিয়ে হাটতে পারি না। তারা আসে এবং বলে......... স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে এমনটি হচ্ছে। ধারণা করা হয় ইখওয়ানের ব্যাপারটা দেখার দায়িত্ব তার হাতে রয়েছে। চলে অনেক রকম ন্যাক্কারজনক ঘটনা। আমি জেলে ছিলাম। যখন কোন ঘটনা বাইরে চলে যায় বাইরে যায় হয়ত কারও পরিচিত কেউ আছে কিংবা মিডিয়ার কেউ তার পরিচিত আছে অথবা বাইরের কেউ তার পরিচিত আছে তারা তাদের কাছে আসে এদের মাধ্যমে। যেমনটি ঘটছে মিশরে। যখনই জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের কোন রিপোর্ট আসে এবং নির্যাতনের কোন ঘটনা মিডিয়ায় উল্লেখ করা হয় তারপর ব্যক্তিকে (বাস্তবায়ন না করে নামকাওয়াস্তে) তিনমাসের আটকাদেশ দিয়ে দেয়। কিংবা পরে তাকে নির্দোষ বলে রায় দেয়া হয়।

উপস্থাপকঃ বাস্তবায়ন ছাড়াই??!!

আনওয়ার মালেকঃ বাস্তবায়ণ করা হয় না। পরে তাকে নির্দোষ বলে ঘোষণা করা হয়। এরপর ভিকটিম আর কোন কথা বলতে সাহস করে না। যে বলবে আরবদেশের জেলখানাগুলোর ভিকটিমরা কথা বলতে পারে সে মিথ্যাবাদী। কেননা, যখন সে বের হয় তখন বের হয় নির্যাতিত অবস্থায়, সে বের হয় নিজেকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত রেখে। নিজের জীবনের উপর আশংকা নিয়েই সে বের হয়। সে মনে করে বাকী যে কয়েকদিন সে বেচে থাকবে সে শুধু নামকাওয়াস্তে পরিবারের সাথে বেচে থাকবে। সে কোন সাহস করবে না। আমি এখান থেকে চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি। আপনি বলছেন এগুলো তদন্ত করা হবে। আমি চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি। আমার জাতিসংঘ নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির কাছে পেশকৃত অভিযোগ আছে। আমি আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্টকে চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি এটা তদন্ত করার সুযোগ দেয়া হোক। আমি এখান থেকে সরাসরি তাকে চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি। যখনই এটা তদন্ত করার দরজা খুলে যাবে তখনই নিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তাগণ ফেসে যাবেন। লাঞ্চিত হবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং দেশের কর্তাগণ। এসব কারণে কস্মিনকালেও এগুলো তদন্তের মুখ দেখবে না। এ অভিযোগগুলো জেলের মধ্যেই মারা পড়বে এবং শুধুমাত্র কারাবন্দীদের মুখেই সীমাবদ্ধ থাকবে। তিনি বলছেন ফাইভ স্টার!! ফাইভ স্টার কাকে বলে? বন্দীরা সমকামিতার শিকার হয়।

উপস্থাপকঃ সমকামিতার শিকার??!!

আনওয়ার মালেকঃ হ্যা, সমকামিতার শিকার হয় নিরাপত্তারক্ষীদের পক্ষ থেকে। তারা তাদের সাথে কুকর্ম করে থাকে। তারা কুকর্ম করে প্রকাশ্যে। এটাই কি ফাইভ স্টার??? (দুইজনের পাশাপাশি শুয়ে থাকার ছবি দেখিয়ে) এই বন্দীরা ঘুমাচ্ছে টয়লেট রুমের মধ্যে। এটাই কি ফাইভ স্টার???? আপনি কি এদের মত করে ঘুমাতে পারবেন? এটাই কি ফাইভ স্টার??? (আরেকটি ছবি দেখিয়ে) ৫০০ বন্দী একে অপরের গায়ের উপর গা রেখে ঘুমিয়ে আছে!!!

ব্রিগেডিয়ারঃ এগুলো কিভাবে ক্যামেরায় ধারণ করা হল?

আনওয়ার মালেকঃ ছবিগুলো তুলেছে স্বাধীন ব্যক্তিরা।

ব্রিগেডিয়ারঃ কিভাবে?

আনওয়ার মালেকঃ যারা এগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করছে......

ব্রিগেডিয়ারঃ কেমন করে?

আনওয়ার মালেকঃ আমি ছিলাম জেলে এবং জেলের অনেক ডকুমেন্ট সরিয়ে নিয়েছিলাম।

ব্রিগেডিয়ারঃ কিভাবে?

আনওয়ার মালেকঃ হ্যা, মুক্তরা; আর আপনার মত লোকদের জীবন পুর্ণটাই থাকবে.........

ব্রিগেডিয়ারঃ আপনার ছবি কই? যেগুলো সরিয়ে নিয়েছেন সেগুলোর মধ্যে??

আনওয়ার মালেকঃ আমার জীবনের টার্গেট হল (এমন) বিভিন্ন ছবি ফাস করা।

ব্রিগেডিয়ারঃ আমাকে দেখান! আমাকে সেটা দেখান!

আনওয়ার মালেকঃ কামাল সানানিরির ব্যাপারে আসি।

ব্রিগেডিয়ারঃ দেখান।

আনওয়ার মালেকঃ দেখুন!! কিভাবে বন্দীদেরকে ঝুলন্ত অবস্থায় নির্যাতন করা হয়। দেখুন কিভাবে তাদেরকে নির্যাতন করা হচ্ছে? দেখুন কিভাবে ঝুলিয়ে রেখে শাস্তি দেয়া হচ্ছে??? এগুলো সবই বাস্তব সাক্ষ্য। দেখুন! কিভাবে একে শাস্তি দেয়া হচ্ছে বস্ত্রের টুকরা দিয়ে। তাকে পানি গেলানো হচ্ছে আশ্চর্যজনক পরিস্থিতির অপেক্ষায়। আর আপনি এসে সব কিছুকে অস্বীকার করছেন???!!! আপনাকে যথাযথ সম্মান দেখিয়েই বলছি, আল্লাহর কসম! আপনাকে মনে হচ্ছে আপনি একজন অন্ধ!!

ব্রিগেডিয়ারঃ আপনি আসলেই আদবওয়ালা!!!

আনওয়ার মালেকঃ আল্লাহর কসম! আপনাকে দেখছি আপনি অন্ধ!! একজন জেনারেল হলেও অন্ধ!!!

ব্রিগেডিয়ারঃ আল্লাহর কসম! আপনি আসলেই আদবওয়ালা!!! আল্লাহর কসম! আপনি আসলেই আদবওয়ালা!!!

উপস্থাপকঃ প্লিজ!! ব্যক্তিগত ব্যাপার বাদ দেন। সাইয়্যেদ মালেক; আপনাকে এ ব্যাপারে উষ্ণ আবেদন করছি......

আনওয়ার মালেকঃ এগুলো কি বাস্তব নয়? এগুলোই বাস্তব।

ব্রিগেডিয়ারঃ আপনি আসলেই আদবওয়ালা!!!

আনওয়ার মালেকঃ এটাই বাস্তব। এটাই বাস্তবে উপস্থিত। এটাই বাস্তব।

উপস্থাপকঃ আচ্ছা, আপনাকে একটা প্রশ্ন করি, যদি এমনই হয় যে, আরব দেশের গোয়েন্দা অফিসাররা এমনই কাজ করে বিশেষ করে গোয়েন্দা অফিসাররা তারা এখন পশ্চিমা বিশ্বে বসবাস করছে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছে। তাদের প্রজেক্ট রয়েছে কয়েক মিলিয়ন ডলারের। তারা যদি অপরাধীই হত তাহলে তারা লন্ডন, প্যারিস, ব্রুক্সেল, সুইজারল্যান্ডে ভালো থাকতে পারত না। কয়েক দশেক গোয়েন্দা অফিসার লন্ডনে আছে। তাদের সাথে আছে মিলিয়ন মিলিয়ন এবং বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা। আর এরা অনেক অনেক লোক; তারা কেন কিছুই করছে না? কেন কি কারণে তারা কিছু করছে না?

আনওয়ার মালেকঃ ভিকটিমের ব্যাপার হচ্ছে- ভিকটিমদের অধিকাংশই হচ্ছে বঞ্চিত ব্যক্তিবর্গ। যারা কোন পুলিশের কাছে এমনকি ট্রাফিক পুলিশের কাছেও নিজেদের অভিযোগ পেশ করে বিচার চাইতে পারে না। কেমন করে বিচার চাইবে............

ব্রিগেডিয়ারঃ সঠিক নয়।

আনওয়ার মালেকঃ এটা আরব দেশের মানবাধিকার সংস্থার রিপোর্ট। সেখানে নামধামসহ ত্রিশজন বন্দীর কথা বলা হয়েছে, যারা গোয়েন্দা দফতরে গিয়ে নির্যাতিত হয়েছে। যখন রিপোর্ট প্রকাশিত হল তারপর কি হল? পরে আরেকটি বিবৃতি দেয়া হল যে, বন্দীদের ভাগ্যে কি ঘটল? তাদেরকে দেশান্তরিত করল। তাদের নামে আরও কিছু অভিযোগ তৈরী করে দেয়া হল। তাদের বিরুদ্ধে রায় হল ২০ বছর এমন সব কেসে যার কোন ভিত্তি নেই। অনেককে পাওয়া গেছে যাদেরকে পরিবার থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। অনেককে দেখা গেল দ্বিতীয়বার নির্যাতনের শিকার হয়েছে এবং তাদের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করতে চেয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে-সেখানে দলবেধে পেটানো হয়েছে। কেমন করে এবং কেন এমন ঘটনা ঘটল? ১৯৯৬ সালে লিবিয়ার "আবু সুলাইম" জেলখানায় কতজন মারা গিয়েছিল? এখন যান। আদেশ দেন যে, ১০০০ খুনের তদন্ত করা হোক। তদন্ত করা হবে????

উপস্থাপকঃ ১০০০ হত্যা??!!

আনওয়ার মালেকঃ হ্যা, হ্যা। এখন গাদ্দাফী নির্দেশ দিয়েছে আজ তার তদন্ত করা হবে। পত্রিকায় লেখা হয়েছে, অচিরেই তদন্ত করা হবে। ১০০০ হত্যা!!! আলজেরিয়ায় "সারকাজী" জেলখানায় প্রকাশ্য হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত তার কোন তদন্ত হয়নি। "বারওয়াটিয়া" কারাগারে ৩০ জনের মত বন্দীকে লোহার বেড়া দেয়া গাড়ীতে করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় স্থানান্তরিত করেছিল গ্রীষ্মের প্রচন্ড গরমের মধ্যে। এরপর তাদেরকে গলাটিপে হত্যা করে গাড়ীটাকে রাস্তায় উল্টিয়ে দিয়ে বলা হয়েছিল তারা গাড়ী এক্সিডেন্টে মারা গেছে। এসব ঘটনা অহরহ ঘটে থাকে।

উপস্থাপকঃ জনাব ব্রিগেডিয়ার, আপনি কিভাবে জবাব দেবেন? আমি আপনাকে একটা প্রশ্ন করব, বেশ কিছুদিন আগে যখন বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা কিছু স্বরাষ্ট্র, বিচার ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে কথাবার্তা বলা শুরু করল খালেদ নাজ্জার ফ্রান্সে এবং তিউনিশিয়ান মন্ত্রী সুইজারল্যান্ডে চলে গেল। এরা কয়েক মিনিটে পালিয়ে গেল যখন জানতে পারল যে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। হ্যা, যদি তারা অপরাধী না হবে কিংবা নীরিহ লোকদের রক্তে তাদের হাত রঞ্জিত না হবে তাহলে তারা এত দ্রুত পালিয়ে গেল কেন?

ব্রিগেডিয়ারঃ সাইয়্যেদ ফয়সাল, দেখুন! কেউ অস্বীকার করবে না যে, কিছু কিছু লোকের পক্ষ থেকে মাঝে মাঝে কিছু বাড়াবাড়ি হতেই পারে। তবে, আমি চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি যে, এত বাড়াবাড়ি হয়নি।

উপস্থাপকঃ আচ্ছা, চমৎকার!!

ব্রিগেডিয়ারঃ আচ্ছা, তিনি "মুমানহাজ" এর অর্থ জানেন না। যদি অবস্থা এমনই হত তাহলে আগের কোন কর্মকর্তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হত না। কেননা, রাষ্ট্র পারে তার আইন দিয়ে দেশের নাগরিকদেরকে রক্ষা করবে। কিন্তু, বাস্তবতা পুরো বিপরীত। হতে পারে কেউ কেউ এমন অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন কিন্তু, আমি তা জানিনা। তবে, তারা হয়ত অপরাধ করে থাকতে পারে। আর আমি যেটা বলতে চাই, আমি তার সাথে একমত হব যে, আমাদের কিছু জেলখানা অনেক পুরাতন এবং ভঙ্গুর এতে আমি তার সাথে একমত। যুগের চাহিদামত সেগুলোকে নতুন করে সংস্কার করা হয়নি কিংবা বন্দী হলেও তাদের মানবাধিকারের যথাযথভাবে দৃষ্টি দেয়া হয়নি। তবে, এ জেলখানাগুলো সংস্কার ও নতুন আধুনিক মানের জেলখানা নির্মানের প্রস্তাব এসেছে। এটা একটা বিষয়।

আরেকটি বিষয় যেটাতে আমি তার সাথে একমত পোষণ করি, আমাদের জেলখানাগুলোতে আসলেই বন্দী সংখ্যা ধারণ সংখ্যার চেয়ে বেশী রয়েছে। এটা সত্য। আর এই ছবিগুলো আমি নিশ্চয়তার সাথে বলছি, এগুলো সব নকল ও ভুয়া। তিনি ভালো করেই জানেন, তিনি যেহেতু জেলে ছিলেন-জেলে ক্যামেরা লুকিয়ে রাখা অসম্ভব। তল্লাশীকারীগণ মনে হয় পাগল যে, একজন লোক ক্যামেরা দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছবি তুলবে আর তারা তাকে ছবি তোলার সুযোগ করে দেবে।

আনওয়ার মালেকঃ এটা তাদের মাধ্যমেই হয়েছে। তারা টিভি চ্যানেলের সামনে বলেছে।

ব্রিগেডিয়ারঃ কোন বোধসম্পন্ন ব্যক্তি এটাকে বিশ্বাস করবে না।

উপস্থাপকঃ জনাব ব্রিগেডিয়ার! অনেক বন্দী আছে যারা জেলের ভিতর থেকে টেলিফোন করে। তাদের কাছে মোবাইল ফোন আছে। আপনি জানেন একজন আরব বন্দীর ব্যাপারে বেশ কিছুদিন আগে জানা গিয়েছিল যে, বন্দিদের কাছে ভয়ংকর সব যোগাযোগ সামগ্রী রয়েছে। তারা বাইরের বিভিন্ন গ্রুপের সাথে যোগাযোগ করে থাকে। এরকম অনেক আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটছে জেলের মাঝে।

ব্রিগেডিয়ারঃ ডক্টর ফয়সাল! আপনি উলটপালট করে ফেলছেন জেল এবং তদন্তের জন্য আটক করে রাখার জায়গার মাঝে। জেল হচ্ছে সেসব জায়গা যেখানে কোর্টের রায় বাস্তবায়ন করা হয়। সেখানে কোন প্রয়োজন থাকে না তাদের কাছে থেকে জবাব চাওয়ার কিংবা কোন তথ্য নেয়ার।

আনওয়ার মালেকঃ না!!! সতর্কতামুলক জেলও আছে। সতর্কতামুলক বন্দীও আছে।

ব্রিগেডিয়ারঃ নেই; তদন্তের স্বার্থে আটক রাখার স্থানকে অন্য কোন কাজে লাগানো যায় না। এটা অসম্ভব যে, এই লোক ক্যামেরা নিয়ে জেলখানায় প্রবেশ করে কারও ছবি তুলবে এবং এটাও অসম্ভব যে, তাকে ঝুলিয়ে শাস্তি দেয়া হত, তার সংগে কুকর্ম করা হত এবং সে ......... তে ঘুমাত।

উপস্থাপকঃ এমনটিই ঘটেছে আবু গারীব কারাগারে। আবু গারিব কারাগারের ছবি সম্বন্ধে আপনি কি বলবেন? তাদের সাথেও কুকর্ম করা হত কিন্তু!!!

ব্রিগেডিয়ারঃ আচ্ছা, আমরা যেটা বলব কে আবু গারীব কারাগারে ছবি তুলেছে?

উপস্থাপকঃ কে?

ব্রিগেডিয়ারঃ সৈন্যরাই ছবি তুলেছে। বাইরের কেউ ছবিগুলো তোলেনি ডক্টর ফয়সাল। আমরা আমাদের বুদ্ধিকে কাজে লাগাবো। আমি কোন কিছুতেই আমাদের বোধশক্তিকে ছুড়ে ফেলে এমন কোন কথার পিছনে ছুটে বেড়াব না যা আমাদের আরবদেশ ও এর নাগরিকদের জন্য অপমানজনক। আরব দেশের নাগরিকদেরকে এভাবে চিত্রায়িত করা লজ্জাজনক। আমার কাছে মিশরীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট আছে; আপনি চিনেন হাফেজ আবু সা'দা ও তার সহযোগীদেরকে। আমার কাছে মিশরের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট আছে। আপনি যা বলেছেন তার কোন কিছু আছে কিনা এ ব্যাপারে আমি আপনাকে চ্যালেঞ্জ করছি। সমস্ত জরীপের প্রাপ্ত তথ্য এখানে আছে। এমন কোন কথা আমরা দেখিনি কিংবা শুনিওনি।

আরব দেশে গোপণ কারাগার ও জেলখানাগুলোতে অনিয়ম দুর্নীতি

উপস্থাপকঃ আপনি কি চান আরবদেশের সরকার তাদের জেলখানায় বন্দী চোর ডাকাত, সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের হাতে রেশমী মোজা পরিয়ে দেবে? আচ্ছা, আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করতে চাই যে, বর্তমানে আরবদেশে হাজার হাজার চুরির ঘটনা ঘটছে। যখন কোন চোর আপনার বাড়ীতে ঢুকে জিনিসপত্র চুরি করে ধরা পড়ে জেলে যায় তখন তারা জেলখানায় তাদের চোখ উপড়ে ফেলুক কিংবা তার বাপ মাকে অভিশাপ দিক তাতে আপনার সমস্যা কোথায়?

আনওয়ার মালেকঃ ডক্টর! আমরা এই চোরকে দোষ দেয়ার আগে দোষ দেব সেসব প্রশাসন যন্ত্রকে যারা তাদের জন্য কোন কাজের ব্যবস্থা করতে পারেনি। সামাজিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিই অনেক অপরাধের জন্ম দিচ্ছে। আর এসব প্রশাসনযন্ত্র ওগুলোর সাথে যুক্ত।

উপস্থাপকঃ আচ্ছা, এক মিনিট!!! বিষয়টাকে প্রশাসনের উপর চাপিয়ে দেয়ার আগে আপনি যারা খুনী, অপরাধী ও বোমা মেরে মানুষ হত্যাকারী তাদের সাথে কেমন ব্যবহার করবেন? যারা চোখের সামনেই খুন করছে তাদের চোখ কি উপড়ে ফেলা হবে না? কেন তাদের চোখ উপড়ে ফেলা হবে না?

আনওয়ার মালেকঃ সে অপরাধী! কিন্তু, রাষ্ট্র তো অপরাধী হতে পারে না। সে এ ধরণের ন্যাক্কারজনক কাজ করতে পেরেছে। কিন্তু, রাষ্ট্রের জন্য এ ধরণের কাজ করতেই হবে এমন নয়। রাষ্ট্রের করণীয় হল আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। তবে, মানবাধিকার সংরক্ষন করতে হবে। রাষ্ট্র হচ্ছে সেটাই যা আইনের প্রতিনিধিত্ব করে। যদি সেটা চোর ডাকাতের পর্যায়ে নেমে যায় এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে তাহলে, রাষ্ট্রও সন্ত্রাসী হিসেবে গণ্য হবে।

তিনি কিছুক্ষণ আগে বলেছেন, আপনি আমেরিকা ও আমেরিকার জেলখানাগুলোর কথা বলুন। আমেরিকা তো আরব বিশ্বের গোপণ জেলখানাগুলোকে নির্বাচন করে থাকে। ভয়ংকর ব্যক্তিগুলোর মধ্য থেকে যেসব লোকের কাছ থেকে তথ্য আদায় করতে পারবে না বলে সন্দেহ করে তাদেরকে আরবদেশের জেলখানাগুলোতে পাঠায়।

ব্রিগেডিয়ারঃ সুনির্দিষ্টভাবে একটা উদাহরণ দেন।

আনওয়ার মালেকঃ খালেদ মুহাম্মাদ আশ শায়খ এবং রামযী বিন শায়বাকে যখন গ্রেফতার কথা হল তাদেরকে জর্ডানে আনা হয়েছিল।

ব্রিগেডিয়ারঃ এমন কোন ঘটনা ঘটেনি।

আনওয়ার মালেকঃ তাদেরকে রেফার করা হয়েছিল জর্ডানে এবং তাদেরকে টর্চার করা হয় জর্ডানে অত্যন্ত অমানবিক ও ন্যাক্কারজনক পন্থায়।

ব্রিগেডিয়ারঃ "ইউসরি ফুদা" এখনও বেচে আছে তাকে জিজ্ঞাসা করেন।

আনওয়ার মালেকঃ অনেক বন্দী আছ যাদেরকে এসব জেলে রেফার করা হয়েছে। গোপণ কারাগার রয়েছে। গোপণ কারাগার রয়েছে। তারা বলে, মরক্কোতে গোপণ কারাগার আছে। গোপণ কারাগার আছে.........

ব্রিগেডিয়ারঃ তারা বলে!

আনওয়ার মালেকঃ বিমানের কারাগার। আমি আপনাকে একটা বিষয় বলব।

ব্রিগেডিয়ারঃ জনাব মালেক!

আনওয়ার মালেকঃ আমাকে একটু কথা বলতে দেন।

ব্রিগেডিয়ারঃ জনাব মালেক! আপনার কি হল, বিভিন্ন টেলিভিশন এমনকি আল জাজিরাও তার মধ্যে আছে। তারা খালেদ বিন শায়েখের সমস্ত কর্মকান্ড রেকর্ড করেছে। তিনি আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে বের হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন।

আনওয়ার মালেকঃ না!! মাশাআল্লাহ!!! আল জাজিরা তাহলে তার সাথে বিমানেও ভ্রমন করেছে এবং তার সাথে ১৪/১৫ ঘন্টা ছিল??!!! এসব বাস্তবতা বিবর্জিত কথাবার্তা। আল জাজিরা কি সামি আল হাজ্জকেও রেকর্ড করেছে? যাকে পাকিস্তান থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে .........

ব্রিগেডিয়ারঃ হ্যা, জিজ্ঞাসা করুন ইউসরি ফুদাকে।

আনওয়ার মালেকঃ এটা বাদ দেন। আমি আপনাকে বলতে চাচ্ছি...

ব্রিগেডিয়ারঃ বলেন যা বলতে চান

আনওয়ার মালেকঃ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট আমাদের সেদিকে দৃষ্টি দেয়া দরকার। নির্যাতন অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক পন্থায় হয়। রাষ্ট্রও এসব সমস্যার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে না। যেমনটি ঘটছে বিরোধীমতের বিশেষ করে ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে।

উপস্থাপকঃ ভাই, জনাব ব্রিগেডিয়ার বললেন, আরবদেশগুলোর জেলখানায় বিরোধী মতের বন্দীর সংখ্যা সব মিলিয়ে ২০০ এর বেশী হবে না। এর কি জবাব দেবেন? ২০০ লোকের জন্য এত কিছু?

আনওয়ার মালেকঃ আল্লাহর কসম! হাজার হাজার। আমি একটা জেলে ছিলাম। সেখানে ইসলাম পন্থীদের সেলে ছিল প্রায় ৩০০ লোক। হারাশ জেলে আমি ছিলাম বিভিন্ন হলরুমে। সেখানে একটা মাত্র জেলে বিরোধীমতের লোক ছিল ৩০০ এর অধিক।

ব্রিগেডিয়ারঃ কত সালে?

আনওয়ার মালেকঃ ২০০৫।

ব্রিগেডিয়ারঃ আমি বলছি বিগত সর্বশেষ ৫ বছরের কথা।তারা সবাই মিলেও এ সংখ্যা অতিক্রম করেনি।

আনওয়ার মালেকঃ আমি আপনাকে উদাহরণ দিচ্ছি।

ব্রিগেডিয়ারঃ থাকতে পারে।

আনওয়ার মালেকঃ এমন কোন নির্যাতনের ঘটনা পাওয়া যায় না পরে যার বিচার হয়েছে।

..............................

উপস্থাপকঃ আচ্ছা, যাক সে কথা। জেলখানায় অনিয়ম কি কি আছে?

আনওয়ার মালেকঃ দুর্গতি, ব্যবসা। একটা আলু আরবদেশের জেলখানাগুলোতে ৯ ডলারে বিক্রি হয়েছে। আলজেরিয়াতে জেলরক্ষীরা মোবাইল ফোনের ব্যবসা করে যার মুল্য ৫০ লাখ পর্যন্ত। কারারক্ষীরা মাদকদ্রব্যের ব্যবসা করে কারণ তাদের বেতন ভালো না। তারা বন্দীদের কাছে জেলের ভিতর মাদকদ্রব্য পাঠিয়ে দেয়।

ব্রিগেডিয়ারঃ কেন এগুলোর এরকম দাম?

আনওয়ার মালেকঃ কয়জন জেল পরিচালক এসব তদন্ত করে দেখেছেন? বলা হয় বন্দীদেরকে অবশ্যই এমন মানের খাদ্য দিতে হবে। কিন্তু, সেভাবে দেয়া হয় না। এভাবেই বিভিন্ন বিষয়ের বেলাতেই দুর্গতি চলে।

ব্রিগেডিয়ারঃ খাট?

আনওয়ার মালেকঃ খাট, কোন বন্দী যখন খাট চায় তখন তাকে অবশ্যই পরিবারকে বলতে হবে কারারক্ষীদেরকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিতে এরপর তাকে খাট দেয়া হবে। কম্বল অনেক পুরাতণ ও জরাজীর্ন। একটা কম্বল নিতে হলে পরিবারকে বলতে হবে কারারক্ষীদেরকে কিছু অর্থ দিতে। এভাবেই সবকিছু হয়।

উপস্থাপকঃ জনাব ব্রিগেডিয়ার! আপনি এর কি জবাব দেবেন?

ব্রিগেডিয়ারঃ অনিয়ম-দুর্নীতি; দেখুন......

উপস্থাপকঃ এটাও এক প্রকারের নির্যাতন। এটাই কি যথেষ্ট নয়? এক মিনিট! এটাই কি যথেষ্ট নয় যে, বন্দীদের দিয়ে জেলখানাগুলো কানাই কানাই পূর্ণ? তাদের পরিবারের কাছ থেকে ছিনতাই করা হয়। অর্থাৎ, একজন হয়ত ভুলক্রমে জেলে ঢুকল এবং তার পরিবার বিভিন্ন বিষয়ের জন্য কারারক্ষিকে অর্থ দিল। ৫ দিন জেলে থাকার পর যখন সে বের হল তখন এগুলো দিয়ে তারা ব্যবসা করল। তিনি আপনাকে বলেছেন, একটি জেলে আলুর মুল্য ছিল ৯ ডলার। তারা একটা রুমে ২০০ জন লোক রেখে বলে তোমাকে একটা খাট দেব ১/৪ মিটার জায়গাতে। তুমি সেখানে ঘুমাবে। তুমি কি বল? এগুলো কি মেনে নেয়া যায়? এটা কি একজন আরবের উপর অত্যন্ত নিকৃষ্ট ও নিচুমানের নির্যাতন নয়??? এদের চেয়ে চিড়িয়াখানার পশুদের সাথে কি আরও ভালো ব্যবহার করা হয় না?

ব্রিগেডিয়ারঃ ডক্টর ফয়সাল! আপনি যেটা বলেছেন তা আপনার মত।

উপস্থাপকঃ আচ্ছা, আপনি তাকে জবাব দেন।

ব্রিগেডিয়ারঃ আচ্ছা, আমাকে জবাব দিতে দেন।

উপস্থাপকঃ আচ্ছা বলেন।

ব্রিগেডিয়ারঃ আমি অস্বীকার করছিনা যে আরবদেশের জেলখানাগুলোসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কিছু অনিয়ম দুর্নীতি রয়ে গেছে। এটা একটা সমস্যা। সমস্যা চিহ্নিত করে সেগুলোর সমাধান করা প্রয়োজন। তবে, ইনি যেটা বললেন যে, আলুর দাম হয়েছিল ৯ ডলার এবং একটি মোবাইল ৫০ লাখ তাহলে, এতে বুঝা যাচ্ছে সরকার এ অনিয়মগুলো গোপণ করে রাখে এবং এগুলোকে অনেক বাড়িয়ে বলা হয়। তবে, যতদিন মানুষ থাকবে ততদিন অপরাধ চলতেই থাকবে। এসব অনিয়ম রয়েছে তবে, সরকারের অবস্থান কোথায়?? সরকার এগুলোর ব্যাপারে কি ব্যবস্থা নিচ্ছে? সরকার কি এগুলো মেনে নেবে?

উপস্থাপকঃ এটাই প্রশ্ন!

ব্রিগেডিয়ারঃ এটা কি সরকার মেনে নেবে? কখনও মানবে না।

উপস্থাপকঃ তাহলে রাষ্ট্রপ্রধানগণ......

ব্রিগেডিয়ারঃ প্রণিধানযোগ্য যে,এই লোকের কথা অনুযায়ী আলজেরিয়াসহ অনেক আরব দেশ সুযোগ দিচ্ছে। তাহলে, আপনার টেলিভিশনের প্রয়োজন হলে টাকা দেন তাহলে টেলিভিশন পেয়ে যাবেন। মোবাইল নিতে চাইলে টাকা দেন মোবাইল চলে আসবে। মোটকথা এগুলো প্রবেশ করার মানে হল অন্যান্য বন্দীদের অবস্থা উন্নতির রাস্তাটাও খুলে দেয়া।

উপস্থাপকঃ তাহলে এটা হয়ে যাবে ফাইভ স্টার।

ব্রিগেডিয়ারঃ না,ফাইভ স্টার হবে না।আপনি এ কথাটাকে ধরবেন না।আমি আপনাকে বলেছি এটা মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মুহাম্মাদ ফাদেলের পক্ষ থেকে আমাকে বাড়িয়ে বলা হয়েছে।এটা ফাইভ স্টার না।এটা জেলখানা। এখানে অভিযুক্তরা আছে,রায়ে প্রমাণিত দোষীরা আছে এবং আইন অমান্যকারীরা আছে।

উপস্থাপকঃ তাহলে সংক্ষিপ্ত কথা হল-আরবদেশের জেলখানাগুলোর ব্যাপারে বেশী কিছু বলা যাবে না এবং আরব বন্দীরা অনেক সম্মানের সাথেই আছে।

ব্রিগেডিয়ারঃ সাইয়্যেদ ফয়সাল!আপনি যেহেতু একজন নিরপেক্ষ গবেষক এবং আপনি একজন সম্মানিত মিডিয়া ব্যক্তিত্ব অনেক বিষয়ে প্রভাব সৃষ্টিও করতে পারেন।কিন্তু,আপনি কেন আল জাজিরার পক্ষ থেকে প্রতিনিধি পাঠাচ্ছেন না মানবাধিকার সংস্থার সাথে একাত্ম হয়ে বন্দী অবস্থা থেকে মুক্ত লোকদের সাথে সাক্ষাৎ করে আপনার আলোচনায় নিয়ে আসা নেগেটিভ বিষয় এবং বিরোধী আরব ভাইটাকে নিয়ে আসার সাথে সাথে পজিটিভ বিষয়গুলোও নিয়ে আসতে পারতেন?

উপস্থাপকঃ আচ্ছা!যাহোক,সংক্ষেপে মাত্র একটি বাক্যে নির্দিষ্ট করে বলবেন আরবদেশের কারাগার, কারাগার বিষয়ে কিংবা আরবদেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের ব্যাপারে আপনি কি বলতে চান?

আনোয়ার মালেকঃ জেলখানাগুলোতে মানবাধিকার ক্ষুন্ন করার অপরাধে আরব দেশসমুহের রাষ্ট্রপ্রধানদেরকে আন্তর্জাতিকভাবে বিচারের মুখোমুখি করা দরকার।

উপস্থাপকঃ সম্মানিত দর্শক আমাদের হাতে আর সময় নেই আমরা আমাদের দুইজন অতিথি ব্রিগেডিয়ার জনাব ফুয়াদ আল্লাম ও জনাব আনোয়ার মালেককে ধন্যবাদ।………

মুল লেখাটা ও তার ভিডিও আল জাজিরা টিভির ওয়েবসাইটে নিচের লিঙ্কে পাওয়া যাবে।

http://www.aljazeera.net/programs/pages/a4e433a4-f4dc-47b9-be54-dc651a318a2d

(লেখাটা জর্ডানে থাকাকালীন লিখেছিলাম। তখন পোষ্ট করা হয়নি)

বিষয়: বিবিধ

২৩৯৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File