গণহত্যায় সাধারণ নাগরিকই ৩৩ : এক সপ্তাহে নিহত জামায়াত-শিবির ৪৬ বিএনপি ৬, আ.লীগ ৫, পুলিশ ৭ এরশাদুল বারী

লিখেছেন লিখেছেন নীলমণিলতা ০৯ মার্চ, ২০১৩, ১২:২৮:৪৬ রাত



গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত এক সপ্তাহে সারাদেশে গণহত্যার শিকার ৯৭ জনের মধ্যে সাধারণ নাগরিকের সংখ্যাই ৩৩ জন। এরমধ্যে চারজন মহিলা ও চারটি শিশুসহ আলেম-ওলামাও রয়েছেন। সাধারণ নাগরিক ছাড়া নিহত হয়েছেন জামায়াত-শিবিরের ৪৬ জন, বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের ৬ জন, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ৫ জন, এলডিপির ১ জন এবং ৭ জন পুলিশ সদস্য।

আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে গণহত্যার এ চিত্র পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে আমাদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে এ অনুসন্ধান চালানো হয়। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, সাতক্ষীরায় ৮ জামায়াত-শিবির, ১ আ.লীগ কর্মী ও ১০ সাধারণ নাগরিকসহ ১৯ জন, বগুড়ায় ৭ জামায়াত-শিবির, ৩ মহিলা ও ১ শিশুসহ ১৪ জন, রংপুরে ১ পুলিশ সদস্যসহ ৯ জন, গাইবান্ধায় চার পুলিশ সদস্যসহ ৮ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের ৩ সহ ৭ জন, জয়পুরহাটে ৬, নোয়াখালীতে বিএনপি ও যুবদলের ২ জনসহ ৪ জন, রাজশাহীর বাঘায় ১ ও গোদাগাড়ীতে ২ জনসহ মোট ৩, সিরাজগঞ্জে ২, কক্সবাজারে ৩, চাপাইনবাবগঞ্জে ১ যুবলীগ কর্মীসহ ৪ জন, লোহাগোড়ায় ১ পুলিশ সদস্যসহ ২ জন, সাতকানিয়ায় ১ এলডিপি কর্মীসহ ৩ এবং মৌলভীবাজার, নাটোর, রাজধানীর মিরপুর, দিনাজপুর, বাঁশখালী, সোনাইমুড়ী, সিলেট, চট্টগ্রাম, কেরানীগঞ্জ, নীলফামারী, হরিণাকুণ্ড, সেনবাগ ও উল্লাপাড়ায় ১ জন করে। এ সময়ের মধ্যে পাঁচ সহস্রাধিক গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অন্তত আরও ২০ সহস্রাধিক ব্যক্তি।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় ঘোষণার পর দেশব্যাপী বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের নির্বিচারে গুলিতে বেশিরভাগ হত্যাকাণ্ড ঘটে। এছাড়া শাসকদলের যুবলীগ-ছাত্রলীগের তাণ্ডবেও হত্যার শিকার হন অনেকে। একইভাবে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির হরতাল চলাকালে সৃষ্ট সহিংসতায় বেশ কয়েকজন নিহত হন।

স্বাধীনতার পর অল্প কয়েকদিনে এত হত্যাকাণ্ডের নজির নেই। মানবাধিকার সংস্থাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিরা একে গণহত্যা হিসেবে উল্লেখ করে বলেছে স্বাধীনতার পর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ এটি। এ ঘটনায় সবার কাছে এটা স্পষ্ট, নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই এখন মূর্তমান আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেডরুম, বাসাবাড়ির আঙিনা থেকে শুরু করে রাজপথ পর্যন্ত এমনকি আইনি সহায়তার আশ্রয়স্থল থানাতেও নিরাপত্তা পাচ্ছে না নিরীহ নাগরিকরা। নাগরিকদের জিজ্ঞাসাবাদের নাম করে আটক করে থানায় নেয়ার পর পায়ে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করছে পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে নতুন আতঙ্ক হিসেবে যোগ হয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব)। তবে এ গণহত্যায় তুলনামূলকভাবে র্যাবের ভূমিকা ততটা ছিল না।

সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে নিহত পরিবারগুলোর করুণ চিত্র পাওয়া গেছে। পরিবারের একমাত্র অবলম্বনকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে নিহতদের শতাধিক পরিবার। সেখানে চলছে শোকের মাতম। দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের নিহতরা পরিবারের একমাত্র অবলম্বন ও উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় পরিবারগুলোতে অনেকেই এখন না খেয়ে দিনাতিপাত করছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে সরকারের পক্ষ থেকে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর খোঁজখবর নেয়া তো দূরের কথা অধিকাংশ পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে উল্টো পুলিশের পক্ষ থেকে এক বা একাধিক মামলা করায় তারা বর্তমানে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পুলিশ নিরস্ত জনতাকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করলেও উল্টো পুলিশের শতাধিক মামলায় সারাদেশে লক্ষাধিক নাগরিককে আসামি করা হয়েছে। ফলে দেশজুড়ে চলছে পুলিশের গণগ্রেফতার অভিযান। অধিকাংশ এলাকায় এখন নাগরিকরা নিজ ভিটেবাড়ি ছাড়া হয়ে পালিয়ে যাযাবর জীবনযাপন করছেন। অনেক এলাকা এখন পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। গত কয়েকদিনের সহিংসতায় গুলিবিদ্ধসহ গুরুতর আহতরা হাসপাতালে চিকিত্সা নিতে গেলে সেখানেও সরকারের পেটুয়া বাহিনী পুলিশ ও দলীয় ক্যাডাররা হামলা চালাচ্ছে।

সাতক্ষীরায় নিহত ১৯ : ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে গত এক সপ্তাহের চলমান সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের সাতক্ষীরা জেলায়। এরমধ্যে প্রথম দিন ২৮ ফেব্রুয়ারি নিহত হয় ১২ জন, ৩ মার্চ ৩ জন ও সর্বশেষ ৪ মার্চ ৪ জনসহ এ জেলায় সবমিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ জনে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর সাঈদী মুক্তি পরিষদ ও জামায়াত-শিবির কর্মীদের সঙ্গে পুলিশ ও বিজিবির সংঘর্ষে নিহত ১২ জন হলেন, সদরের ঘোনা সংকা গ্রামের আমিরুল ইসলামের ছেলে জামায়াতকর্মী রবিউল ইসলাম (৩০), আগরদাড়ির বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের ছেলে জামায়াতকর্মী আবুল হাসান (২৫), হরিশপুরের আবদুর বারীর ছেলে ইকবাল হাসান তুহিন (২০) কুলিয়ার শশা ডাঙ্গা গ্রামের আবদুল মজিদের ছেলে শিবিরকর্মী আলি মোস্তফা (২২), খানপুরের মাহবুবুর রহমানের ছেলে জামায়াতকর্মী সাইফুল্লাহ (২৫), শহরের পুরাতন সাতক্ষীরার জামায়াতকর্মী আবদুস সামাদ (৬০), সদরের পায়রাডাঙ্গা গ্রামের আতিয়ার রহমানের ছেলে শাহিন আলম (২২), ওফাপুর গ্রামের আবদুল মজিদ মোড়লের ছেলে শামসুর রহমান (৩৮) ও রইচপুর গ্রামের মফিজ উদ্দীনের ছেলে মাহবুব (৩০)। বিক্ষুব্ধ জনতার রোষানলে সাতক্ষীরা সিটি কলেজের ছাত্রলীগ সভাপতি মামুনও নিহত হয়েছে। বাকি দুজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। ঘটনার তিনদিন পর ৩ মার্চ সাতক্ষীরায় বিজিবির গুলিতে জামায়াতকর্মী মাহবুবুর রহমান (৪০) নিহত হয়। সেখানে স্কুলছাত্র সোহাগ (১৫) গুলিবিদ্ধ হলে তাকে প্রথমে দেবহাটা উপজেলার সখীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে খুলনায় নেয়ার পথে ৪ মার্চ তার মৃত্যু হয়। স্কুলছাত্র সোহাগ সাতক্ষীরা সদর উপজেলার রইচপুর গ্রামের আবদুস সবুরের ছেলে। সোহাগের লাশ গ্রামে পৌঁছলে ৪ মার্চ সাতক্ষীরায় হাজার হাজার গ্রামবাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে এলাকার হাজার হাজার নারী-পুরুষ কাফনের কাপড় মাথায় দিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। এ সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হয় কলারোয়া উপজেলার কামারালি গ্রামের মৃত আবদুর রহিমের ছেলে দুই সহোদর ওয়ার্ড জামায়াত সভাপতি আরিফ বিল্লাহ (৪৫) ও রুহুল আমিন (৪০), একই গ্রামের মৃত আবদুর রহিমের ছেলে (৪০) ও অজ্ঞাত আরও দু’জনের পরিচয় জানা যায়নি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ওই ঘটনার সাতক্ষীরায় বর্তমানে ২০ থেকে ২৫ জনের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকেই বলছেন, সাতক্ষীরার সার্কিট হাউজ মোড়ে আট পুকুরে ২৮টি লাশের খবর এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল সৃষ্টি করেছে। তবে পুলিশ সেটা অস্বীকার করেছে।

সাতক্ষীরায় নিহতদের মধ্যে জামায়াত-শিবিরের কর্মী রয়েছে ৮, ছাত্রলীগের ১ ও দশজন সাধারণ নাগরিক। বর্তমানে নিহতদের পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদেরই আসামি করে হত্যা মামলা করেছে পুলিশ। নিহতদের পরিবারে এখন চলছে শুধু কান্না আর শোকের মাতম। স্বজনদের দাবি খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।

বগুড়ায় ১৪ : সাঈদীর রায় ঘোষণার দিন থেকে গত ৫ মার্চ পর্যন্ত বগুড়ায় নিহত হয়েছে ১৪ জন। এরমধ্যে ২৮ ফেব্রুয়ারি পুলিশের সঙ্গে জামায়াতের সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে এক ইটভাটা শ্রমিক নিহত ও পুলিশসহ অর্ধশত আহত হয়। নিহত সাদেক আলী (৪০) ইটভাটার শ্রমিক ও বগুড়ার দহপাড়ার মনু মিয়ার ছেলে। এর তিন দিন পর ৩ মার্চ বগুড়ায় সাঈদীর ফাঁসির রায়ে ফুসে ওঠা বগুড়ার জনতার ওপর পুলিশ-বিজিবি নির্বিচারে গুলি চালালে ১২ জন নিহত হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয় আরও দুই শতাধিক। এর বাইরেও আহত হয় সহস্রাধিক। ওইদিন ক্ষুব্ধ জনতার এমনই বিস্ফোরণ ঘটে যে শেষপর্যন্ত বগুড়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। ওইদিন সাঈদীভক্তরা বনানী থেকে হরতালের সমর্থনে সকাল সোয়া ৬টায় বিশাল মিছিল নিয়ে শহরের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে মিছিলটি ইয়াকুবিয়া স্কুল মোড়ে পৌঁছলে পুলিশ ব্রাশফায়ার শুরু করে। এসময় গুলিতে জামায়াতকর্মী আলমগীর হোসেন ও অজ্ঞাতনামা এক স্কুলছাত্র নিহত হয়। নিহতের খবর জেলায় ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার নারী-পুরুষ মিছিল নিয়ে শহরে বিভিন্ন সড়ক দিয়ে প্রবেশ করতে থাকে। পুনরায় বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের গুলি, টিয়ারশেল এবং রাবার বুলেটে বাদল ও টিটু নামের আরও দুই জামায়াতকর্মী নিহত হয়। আহত হয় তিন শতাধিক। বিক্ষুব্ধরা নারুলী, স্টেডিয়াম, ফুলবাড়ী, সদর পুলিশ ফাঁড়ি, রেলস্টেশন, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মমতাজ উদ্দিনের শহরের কাটনারপাড়ার বাড়ি, শহরের কলোনির এমপি আবদুল মান্নানের বাড়ি, এসএ পরিবহন এবং করতোয়া কুরিয়ার সার্ভিস, শহরতলির গোদারপাড়ায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। সদরের সাবগ্রামে রেললাইন উপড়ে ফেলে।

পরে বিক্ষুব্ধ জনতা একযোগে থানায় হামলা করলে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন উপজেলার সাজাপুর পশ্চিমপাড়ার মেহরাজের স্ত্রী আর্জিনা বেগম (৪৫), ডোমনপুকুর গ্রামের তোতা মিয়ার স্ত্রী মঞ্জিলা বেগম (৩৮), ডোমনপুকুর নতুনপাড়ার মৃত মুনছের আলীর স্ত্রী আছিয়া বেগম (৫০) ও আবদুর রহমান (৪৫)। পুলিশের গুলিতে বগুড়ার শিবগঞ্জের মোকামতলায় নিহত আরও ৪ জন হলেন মোকামতলা ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামের আলহাজ দবির উদ্দিনের ছেলে দুলু মিয়া (৪৫), শিবগঞ্জ উপজেলার পারআঁচলাই গ্রামের লুত্ফর রহমানের ছেলে জিয়াউল ইসলাম (৩০), বগুড়া সদর উপজেলার লাহেড়িপাড়া ইউনিয়নের রায়মাঝিড়া লয়াপাড়া গ্রামের মোস্তাফিজার রহমানের ছেলে শিবিরকর্মী বাবু মিয়া (১৮) ও গাবতলী উপজেলার কাগইল ইউনিয়নের শাহাপুর গ্রামের দুলাল মিয়ার ছেলে আবদুস শহিদ (২০)। সাঈদীর মুক্তির দাবিতে জামায়াত-শিবিরের ডাকা ৪৮ ঘণ্টা হরতালের প্রথম দিনে বগুড়ায় পুলিশের গুলিতে আহত সেলিম মিয়া নামের আরও এক জামায়াতকর্মীর ৫ মার্চ শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়। সে বগুড়া সদরের এগুলিয়ার বানদীঘি হাপুনেপাড়ার দুদু মিয়ার ছেলে। ৫ মার্চ নিহতের বাবা সদর থানায় বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ২-৩ হাজারজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। তিনি পেশায় দর্জি শ্রমিক। এ নিয়ে বগুড়ায় পুলিশের গুলিতে ১৪ জন নিহত হলো। এর মধ্যে ৫ জন জামায়াত ও দু’জন শিবিরকর্মী ছাড়া বাকিরা সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। তারা শুধু সাঈদীর টানেই ওইদিনের বিক্ষোভে যোগ দিয়ে নিহত হন। নিহতদের পরিবারে বর্তমানে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এসব ঘটনায় পুলিশের একাধিক মামলায় হাজার হাজার মানুষকে আসামি করায় অনেক এলাকা বর্তমানে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে।

রংপুরে নিহত ৯ : গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রংপুরের মিঠাপুকুরে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষুব্ধ জামায়াত-শিবিরকর্মীদের সংঘর্ষে পুলিশের বেপরোয়া গুলিতে জামায়াত-শিবিরের ৭ কর্মী নিহত হয়েছে। সংঘর্ষে ৫০ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে প্রায় ৬০০ জামায়াত-শিবিরকর্মী ও সাধারণ মানুষ। নিহতরা হলো বালারহাট হুলাশু এলাকার মাওলানা আবদুল হাইয়ের ছেলে মাহমুদুল হাসান (২৮), মিঠাপুকুর কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র ও আনোয়ার হোসেনের ছেলে মশিউর রহমান (২৫), দাখিল শ্রেণীর ছাত্র আফতাব হোসেনের ছেলে সাদেকুল ইসলাম (২৫), কাশিপুরের আবুল হোসেনের ছেলে সাহেদ আলী (৪৩) ও আবদুল হাইয়ের ছেলে মামুন। এরা সবাই শিবিরকর্মী। অন্য দু’জনের মধ্যে মাঠের হাটের মুশফিকুর রহমান ও নিহত আরেকজন মাছ ব্যবসায়ীর পরিচয় পাওয়া যায়নি। তারা দু’জনই জামায়াতকর্মী। এছাড়া বিক্ষুব্ধ জনতার হামলায় মোজাহার আলী নামে এক পুলিশ কনস্টেবল আহত হওয়ার পর চিকিত্সাধীন অবস্থায় ৫ মার্চ মারা যায়। নিহত মোজাহার আলী দিনাজপুর উপজেলার চিরিরবন্দর উপজেলার নফরতপুর গ্রামের মৃত শওকত আলীর ছেলে। এছাড়া ২ মার্চ রংপুরের কাউনিয়ায় সরকারি দল আশ্রিত ক্যাডারদের হামলায় শিবিরকর্মী আকমল হোসেন (১৫) নিহত হয়েছে। সে পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের জিগাবাড়ী গ্রামের মোশারফ হোসেনের ছেলে। মাথায় ইটের আঘাতপ্রাপ্ত হলে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে শনিবার দুপুরে চিকিত্সাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। আকমল হোসেন জ্ঞানগঞ্জ মাদরাসার ৯ম শ্রেণীর ছাত্র ছিল। একই উপজেলার এতগুলো তাজা প্রাণ ঝরে যাওয়ায় মিঠাপুকুরের আকাশ-বাতাস এখন শোকে স্তব্ধ। মিঠাপুকুর উপজেলা শিবিরের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমানের বাড়িতে দেখা গেছে—একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় তার বাবা-মা। তার মা বার বার বুক চাপড়ে আর্তনাদ করছেন। কখনও কখনও অজ্ঞানই হয়ে পড়ছেন। এলাকাবাসী জানিয়েছে, মশিউর ছিল ওই এলাকার মধ্যে সবচেয়ে ভদ্র ও মেধাবী ছাত্র। মশিউরের বাবা আনোয়ার হোসেন জানান, তার ছেলের কোনো অপরাধ ছিল না। নিহত জামায়াতকর্মী মুশফিকুর রহমান ও মাছ ব্যবসায়ী তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় তাদের পরিবারের সদস্যদের শোকের ভাষা এখন শুধুই চোখের পানি। অনেকটা অনাহারেই কাটছে তাদের দিন।

গাইবান্ধায় নিহত ৮ : গত ২৮ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে ৩ জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়। নিহতদের মধ্যে আনিস নামে এক জামায়াতকর্মী রয়েছে। অপর দু’জনের নাম জানা যায়নি। বিক্ষুব্ধ জনতার হামলায় বাবলু, নাদিম ও হযরত আলী নামে তিন পুলিশ সদস্য নিহত হয়। পরদিন ১ মার্চ গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে নুরুন্নবী নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করে বিক্ষুব্ধ জনতা। সে সংখ্যালঘু নারু বাবুর বাড়িতে আগুন দিয়ে জামায়াত-শিবিরকর্মীদের দোষারোপ করে। এ নিয়ে বিতর্কের এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতার পিটুনির শিকার হয়ে মারা যায় সে। একই এলাকায় বৃহস্পতিবার জনতার হামলায় আহত পুলিশ কনস্টেবল তোজাম্মেল ১ মার্চ রংপুর মেডিকেলে মারা যায়। এ নিয়ে দু’দিনে জেলায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮-এ।

ঠাকুরগাঁওয়ে নিহত ৭ : সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পরপরই ঠাকুরগাঁওয়ে বিক্ষুব্ধ জনতার মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালালে ২৮ ফেব্রুয়ারি ৭ জন নিহত হয়। এতে মহিলাসহ গুলিবিদ্ধ ২০ জনসহ আরও অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। উত্তেজিত জনতার ওপর পুলিশ ও বিজিবির ব্রাশফায়ারে বীরগঞ্জের পলাশবাড়ী এলাকার সাইকেল মেকার নিরঞ্জন কুমার, শিবিরকর্মী রুবেল (১৪), যুবদল কর্মী ফিরোজ, ছাত্রদল কর্মী মনির (১৮) মারা যায়। এছাড়া সাইদুল নামে ৭ বছরের শিশুসহ নিহত দু’জনের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এলাকাবাসীর আশঙ্কা, পুলিশ গোপনে তাদের লাশ কোথাও দাফন করে ফেলেছে। সর্বশেষ ৫ মার্চ আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিত্সাধীন বিএনপিকর্মী দুলাল ইসলাম মারা যায়। নিহত দুলাল গড়েয়া চোংগাখাতা গ্রামের রফিকুলের ছেলে। হঠাত্ এতগুলো তাজা প্রাণ ঝরে যাওয়ায় এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। নিহতদের বাড়িতে নেমে আসে কান্নার রোল। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম নিহত নিরঞ্জনের পরিবারে এখন শুধুই হাহাকার চলছে।

জয়পুরহাটে নিহত ৬ : ৩ মার্চ জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে হরতাল সমর্থক ও পুলিশের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে জামায়াত-শিবিরের ৫ জন এবং সদর উপজেলার হিমচি এলাকায় একজন নিহত হয়েছে। গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে অন্তত ৫৫ জন। নিহতরা হলো—পাঁচবিবির কুসুম্বা ইউনিয়নের বাঁশখুর গ্রামের আবদুল হাকিম (২৫), নাসির উদ্দিন (২০), কাঁশড়া গ্রামের মহিদুল (৪০), দৈবকনন্দনপুর গ্রামের হেসাব উদ্দিন (২০), জয়হার গ্রামের ফরমান আলী (৩৬) ও সদর উপজেলার হিমচি এলাকার মজনু (৩৫)। নিহত ছয়জনই জামায়াত-শিবিরকর্মী। এতে ১৫ জন গুলিবিদ্ধ ও আহত হয়েছে আরও ৩০ জন। এসময় বিক্ষুব্ধ হরতাল সমর্থকরা আওয়ামী লীগ সমর্থিত কয়েকটি স্থাপনা ভাঙচুর করে। পরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।

নোয়াখালীতে নিহত ৪ : গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীর দত্তেরহাট, বেগমগঞ্জ উপজেলার রাজগঞ্জ বাজারসহ বেশ কয়েকটি স্থানে পুলিশ ও আ.লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে জামায়াত-শিবির এবং বিএনপির সংঘর্ষে পুলিশের নির্বিচারে গুলিতে মজিবুল হকের ছেলে পথচারী পিকআপভ্যান চালক খোকন (২৪), আহমদুল্লাহর ছেলে বিএনপি সমর্থক মাছ ব্যবসায়ী লিটন (৩০) ও আবুল কালামের ছেলে শ্রমিক নুরুদ্দিন (১৯) নিহত হয়। তাদের বাড়ি নোয়াখালী সদর উপজেলার দত্তেরহাট এলাকায়। আরেকজন যুবদল সমর্থক পথচারী র্যাবের গুলিতে নিহত হয়। এছাড়া ৩০ থেকে ৩৫ জন গুলিবিদ্ধ এবং শতাধিক লোক আহত হয়।

সিরাজগঞ্জে ২ : একই দিন জেলা সদরের চণ্ডিগাতিতে পুলিশ ও জামায়াত-শিবিরকর্মীদের সংঘর্ষে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার রাজাখাঁর চরের আলমগীর হোসেনের ছেলে মুক্তার হোসেন (১৮) ও চণ্ডিদাসগাতির আবদুল জলিলের ছেলে রুহুল আমিন (২০) নিহত হয়। এরা দু’জনই শিবিরের কর্মী। এছাড়া আরও ২৫ জন আহত হয়। বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে রাস্তায় কাঠের গুঁড়ি ফেলে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা সড়ক অবরোধ করলে পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়। এ সময় উভয়পক্ষে সংঘর্ষ বাধে। একপর্যায়ে হঠাত্ করেই পুলিশ জনতার সমাবেশে রাইফেল থেকে বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ শুরু করে। এতে শিবিরের ২৫ নেতাকর্মী আহত ও ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়। হাসাপাতালে নেয়ার পথে গুলিবিদ্ধ ওই দুইজনের মৃত্যু হয়।

নাটোরে ১ : একই দিনে নাটোরের রায়পুরে জামায়াতের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে খায়রুল বাশার (৩৭) নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী নিহত, সাত পুলিশ আহত ও দুই জামায়াতকর্মী গুলিবিদ্ধসহ ১২ জন আহত হয়েছে। নিহত খায়রুল কদিমচিলান গ্রামের দেলু ডাক্তারের ছেলে।

মিরপুরে ১ : একই দিন রাজধানীর মিরপুরে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষকালে ককটেল বিস্ফোরণে ৬৫ বছরের অজ্ঞাত এক পথচারী নিহত হন। তিনি তার মেয়ের বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন বলে জানা যায়।

কেরানীগঞ্জে ১ : গত ২৮ ফেব্রুয়ারি কেরানীগঞ্জে সংঘর্ষে নিহত হয় জীবন নামে ১৫ বছরের এক বালক। কেরানীগঞ্জের খেজুরবাগ এলাকা থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।

কক্সবাজারে ৩ : ফাঁসির আদেশ শুনেই কক্সবাজারে সাধারণ মানুষ ও জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে সাজ্জাদ (১৫) নামে কিশোরের মাথার খুলি উড়ে যায়। সে পেকুয়া ইউনিয়নের পূর্ব মেহেরনামার জালাল আহমদের ছেলে। এছাড়া কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের ঈদগাঁও স্টেশন এলাকায় পুলিশের গুলিতে আবদুর রশিদ নামে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তিনি ৫ মাস আগে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছেন। সম্প্রতি তার বিদেশ যাওয়ার কথা ছিল। তিনি উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের সাতজোলাকাটা গ্রামের হাজী মো. ইলিয়াসের ছেলে। পরের দিন আহত অবস্থায় কাউনিয়াতে আরও এক দোকান ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৪ : গত ২৮ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জজুড়ে ব্যাপক সহিংসতায় পর্যটন করপোরেশনের সোনামসজিদ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলাম (৫৫) ও এক জামায়াতকর্মী নাসির হোসেন (৩৫) নিহত হন। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতার হামলায় বিদ্যুত্ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হকের বাড়ি এবং বিআরটিসি বাসসহ ৫টি গাড়ি ভস্মীভূত হয়। পুলিশের গুলিতে জামায়াত-শিবিরের ৬ কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়। পুলিশসহ আহত হয় ৩০ জন। পরদিন নামো ধোবড়া এলাকার মকবুল হোসেনের ছেলে আবদুর রহিম (৪৩) ও গত ৭ মার্চ হরতালের দিন সংঘর্ষে যুবলীগকর্মী আবদুর রহমান (২৬) নিহত হয়।

লোহাগাড়ায় ২ : ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীর ফাঁসির রায়ের প্রতিবাদে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ নির্বিচারে গুলি চালালে ঘটনাস্থলে মিজবাহ উদ্দিন নামে এক জামায়াতকর্মী নিহত হয়। এ সময় আরও ৮ জন গুলিবিদ্ধ হয়। বিক্ষুব্ধ জনতার ইটপাটকেলে মো. তারেক নামে এক পুলিশ কনস্টেবল নিহত হয়।

মৌলভীবাজারে ১ : একই দিনে মৌলভীবাজারের বড়লেখা দক্ষিণভাগ ও কাঁঠালতলী ইউনিয়নের প্রায় ১২টি গ্রামের কয়েক শতাধিক সাঈদীভক্তের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে লোকমান হোসেন নামে একজন নিহত ও ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়।

রাজশাহীতে ৩ : গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর বাঘায় আওয়ামী লীগ-জামায়াত সংঘর্ষে আওয়ামী লীগের হামলায় আমিরুল ইসলাম নামে এক শিবিরকর্মী নিহতসহ ৩০ জন আহত হয়। আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হলে তার মৃত্যু হয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ কর্মীরা তিনটি দোকান ও সাংবাদিকের মোটরসাইকেল ভাংচুর করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় দেড় হাজার রাউন্ড শটগানের গুলি, টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে পুলিশের মতিহার জোনের এসিসহ ৫ পুলিশ সদস্য এবং পাঁচ শিবিরকর্মী গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৬০ জন আহত হয়। পরে ৩ মার্চ রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে পুলিশ-বিজিবির নির্বিচার গুলিতে মসজিদের মুয়াজ্জিনসহ দুইজন নিহত ও অন্তত ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। নিহতরা হলেন গোদাগাড়ীর মহিশালবাড়ী হাট জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন মাওলানা মুজাহিদুল ইসলাম (৪৮) ও সরাংপুর দাখিল মাদরাসার নবম শ্রেণীর ছাত্র ও শিবিরকর্মী রফিকুল ইসলাম (১৪)। নিহত জামায়াতকর্মী মাওলানা মুজাহিদুল ইসলাম মহিশালবাড়ী গ্রামের মৃত সিদ্দিক মোল্লার ছেলে ও রাফিকুল ইসলাম ভগবস্তীপুর গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে। একমাত্র কর্ণধার মুজাহিদুলের মৃত্যুর পর তার পরিবারের এখন হাল ধরার কেউ নেই বললেই চলে।

দিনাজপুরে ১ : ২৮ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুরে পুলিশ-হরতালকারীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষে ফয়েজ উদ্দিন নামে একজন নিহত ও কমপক্ষে ১০০ জন আহত হয়েছে। পুলিশের গুলিতে ওই শিবিরকর্মী নিহত হয়।

বাঁশখালীতে ১ : একই দিন চট্টগ্রামের বাঁশখালীর চাম্বল, শেখেরখিল, ছনুয়া, পুঁইছড়ি, গণ্ডামারা, শীলকূপ ও উত্তর বাঁশখালীর পুকুরিয়া, বৈলছড়ি, গুনাগরি থেকে হাজার হাজার জনতা মিছিল নিয়ে বাঁশখালী থানায় হামলা চালালে সংঘর্ষে দয়াল হরি নামে এক হিন্দু ব্যক্তি নিহত হয়। এ সময় স্থানীয় হিন্দু ও আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা মসজিদে হামলা করে কয়েকজন মুসল্লিকে আহত করে। পুলিশ প্রায় ৫০০ রাউন্ড রাবার বুলেট ও গুলি ছোড়ে। সংঘর্ষে ৫ পুলিশ সদস্যসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছে।

সোনাইমুড়ীতে ১ : গত ১ মার্চ নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে জামায়াত-শিবিরকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ ও র্যাবের গুলিতে কোরবান আলী নামে জামায়াতের এক কর্মী নিহত এবং ৫ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়। ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন জেলা জামায়াত নোয়াখালীতে আধাবেলা হরতাল পালন করে।

সিলেটে ১ : গত ২ মার্চ রাতে সিলেট নগরীর আখালিয়া এলাকায় দুর্বৃত্তদের হাতে জগেজ্যাতি (৩৪) নামে এক ছাত্রলীগ নেতা খুন হন। তিনি সিলেট মদনমোহন কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। তিনি নগরীর নয়াবাজার এলাকার বাসিন্দা ছিলেন।

সাতকানিয়ায় ৩ : গত ২ মার্চ দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় জামায়াত শিবিরকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্েষ দুই জামায়াতকর্মী ও এক এলডিপিকর্মী নিহত হয়েছেন। ওইদিন সকাল দশটার দিকে সাতকানিয়ায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের হাসমত আলী সিকদারের দোকান এলাকায় পুলিশ ও বিজিবির যৌথ হামলায় ওই তিনজন নিহত হয়। নিহতরা হচ্ছেন ছদাহা আজিমপুর গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে জামায়াতকর্মী শহীদুল ইসলাম (১৮), একই ইউনিয়নের ছোট ঢেমশা গ্রামের আবদুর রশিদের ছেলে আবু তাহের (৩০) ও সিকদার পাড়ার সৈয়দ আহমদের ছেলে এলডিপিকর্মী ওসমান গনি (৩৩)। একই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ আরও অন্তত ২০ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নীলফামারীতে ১ : একই দিন জেলার জলঢাকা উপজেলার রাজারহাটে পুলিশ ও বিজিবির গুলিতে আবদুর রাজ্জাক আপন (১৪) নামে এক শিবিরকর্মী নিহত হয়। সে উপজেলার খুটামারা কবিরাজ পাড়া গ্রামের আনিছুর রহমানের একমাত্র ছেলে। এ ঘটনায় আরও ৬০ জন আহত হয়েছে।

হরিণাকুণ্ডুতে ১ : ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে গত ৩ মার্চ হরতালে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষে ওমর ফারুক (৪০) নামে এক পুলিশ কনস্টেবল নিহত হয়েছেন। সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে শহরের পায়রা চত্বর এলাকায় হরতাল সমর্থকরা মিছিল বের করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে সে নিহত ও ৫ পুলিশ সদস্যসহ জামায়াত-শিবিরের ৩০ নেতাকর্মী আহত হয়।

চট্টগ্রামে ১ : গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষের সময় চট্টগ্রামে অজ্ঞাত এক পথচারী নিহত হয়। নিহত ওই পথচারীর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সেনবাগে ১ : গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হরতালে সংঘর্ষের সময় নোয়াখালীর সেনবাগের সেবারহাট বাজারে হারুনুর রশিদ নামে এক যুবদলকর্মী গুরুতর আহত হন। পরে গত ৩ মার্চ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

উল্লাপাড়ায় ১ : সহিংতার পঞ্চম দিনে গত ৪ মার্চ সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় পূর্বদেলুয়ায় জামায়াত-শিবির ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে শিবিরকর্মী স্কুলছাত্র মাহফুজুল্লাহ নিহত হয়। সে স্থানীয় পোলিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র। এ সময় ৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়। বিক্ষুব্ধ জনতা সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাঐতারায় একটি বেইলি ব্রিজের পাটাতন তুলে ফেলে বিক্ষোভ করে।

বিষয়: বিবিধ

১১০০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File