যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালকে ‘নিম্নমানের’ আখ্যা দিয়ে হংকংভিত্তিক খ্যাতনামা মানবাধিকার সংগঠন এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন (এএইচআরসি) বলেছে, ওই ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশকে গৃহযুদ্ধের কিনারায় নিয়ে গেছে। স্টাফ রিপোর্টার
লিখেছেন লিখেছেন নীলমণিলতা ০৮ মার্চ, ২০১৩, ০৩:২৫:৫০ রাত
গতকাল এক বিবৃতিতে কমিশন বলেছে, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন ১৪ দলের রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। যারা আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ তাদের যুদ্ধাপরাধের তদন্ত করা হচ্ছে না। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধেও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া তদন্ত কর্মকর্তা ও সরকার পক্ষের আইনজীবীদের এবং বিচারের ক্ষেত্রেও পক্ষপাতের অভিযোগ রয়েছে। রায়ে স্বভাবতই এসব বিষয় প্রতিফলিত হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তা, সরকার পক্ষের আইনজীবী এবং রায় নির্ধারণী অঙ্গগুলো নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, দেশ এখনই এমন রসাতলে পতিত হয়েছে যে যেখানে আইনের শাসনের ধারণাটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাংলাদেশের ট্র্যাজেডি হলো, অতীতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচারের জন্য যে প্রতিষ্ঠান (যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল) গঠন করা হয়েছিল তা দেশকে গৃহযুদ্ধের কিনারায় নিয়ে গেছে। বিচার বিভাগীয় প্রতিষ্ঠান বর্তমানে যে গভীর সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছে, রক্ত দিয়ে তার অনিবার্য মূল্য দিতে হচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ক্ষমতায় যাওয়ার উন্মত্ততায় রাজনৈতিক দলগুলো দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কথা ভুলে গেছে। এর ফলে ন্যায়বিচার অস্বীকার করা হয়েছে। নিম্নমানের ট্রাইব্যুনাল এভাবে আক্ষরিক অর্থেই আইনগত ন্যায়বিচারের সম্ভাবনাকে তিরোহিত করেছে। এটা শুধু অতীতে যারা সহিংসতার শিকার হয়েছিলেন তাদের ক্ষেত্রেই নয়, সমগ্র জাতির মননে ন্যায়বিচারের অনুপস্থিতির কথা বিরাজ করছে। উপরন্তু এই ট্রাইব্যুনাল নিজেই আরও সহিংসতার সৃষ্টি করেছে এবং ন্যায়বিচার পাওয়ার জাতীয় আকাঙ্ক্ষাকে আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করেছে।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গণহত্যার কথা তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, ভয়ঙ্কর ওই ঘটনায় মনে হচ্ছে দেশে দৃশ্যত সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সরকার বেপরোয়াভাবে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর অপব্যবহার করছে। সংস্থার ওয়েবসাইটে দুটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রকাশ্যেই রাষ্ট্রীয় বাহিনী নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে (মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির আদেশের দিন) নারী, শিশু ও পুলিশসহ প্রায় ১০০ লোক নিহত হয়েছে। এতে শত শত লোক আহত হয়েছে। যেসব লোক নিহত অথবা আহত হয়েছে তারা কোনো সশস্ত্র প্রতিবাদ করেনি। তাদের দুর্ভাগ্য যে তারা ভুল সময়ে ভুল জায়গায় ছিলেন। এসব বীভত্স ঘটনার জন্য রাষ্ট্র যেমন দায়ী, তেমনি দায়ী রাষ্ট্রবহির্ভূত উপাদান।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের কড়া সমালোচনা করে বিবৃতিতে বলা হয়, ট্রাইব্যুনাল ও তার রায়ের পর সহিংসতার সৃষ্টি হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল ফৌজদারি বিচারের কিছু মৌলিক নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে। যেমন তারা অশরীরি বিচার করেছে। ট্রাইব্যুনাল বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীকে টার্গেট করেছে, যে দলটি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। ভিকটিমরা জামায়াত ও সহযোগীদের বিচার চায়। ক্ষমতাসীন সরকার বিষয়টি ভালো করেই জানে। প্রকৃত ঘটনা হলো, এই রাজনৈতিক বিচারকে বৈধতা দিচ্ছে নিম্নমানের ট্রাইব্যুনাল। এই ট্রাইব্যুনালের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচারে ঘাটতি রয়েছে।
দুর্ভাগ্যজনক হলো, জামায়াতের সহায়তায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যে বর্বরতা চালিয়েছিল এখন সেই বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালের ভুলত্রুটি, সাংবিধানিক বৈধতা ও বিচারের উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বললেই হুমকি দেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিপীড়নের কথা উল্লেখ করে বিবৃবিতে বলা হয়, রাজনৈতিক দলগুলো এ নিয়ে একে অন্যের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। বাংলাদেশে প্রকৃতপক্ষে কী ঘটছে তা নিয়ে নিরপেক্ষভাবে আলোচনা করার পরিবেশও স্পষ্টতই সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। মানবাধিকার কর্মীদের ওপর নানা ধরনের নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে কিছু তথ্যপ্রবাহের ঘটনা ঘটলেও এর ওপর কঠোর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
বিষয়: বিবিধ
৯৩২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন