ধর্মদ্রোহী নষ্ট তরুণের প্রতিকৃতি ব্লগার রাজীব : হত্যাকাণ্ডের রাতে তানজিলা ছিল রাজীবের বাসায়।
লিখেছেন লিখেছেন নীলমণিলতা ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৫:৫৮:৫৭ সকাল
ধর্মদ্রোহী নষ্ট তরুণের প্রতিকৃতি ব্লগার রাজীব : হত্যাকাণ্ডের রাতে তানজিলা ছিল রাজীবের বাসায়
মাহমুদা ডলি
দৈনিক আমার দেশ, মঙ্গলবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী,২০১৩ ঢাকা।
মাহমুদা ডলি
প্রচণ্ড ইসলামবিদ্বেষী ব্লগার রাজীব হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছে তার গার্লফ্রেন্ড তানজিলা। তিন মাস ধরে স্ত্রী বাসন্তী ওরফে অনিকার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল না রাজীবের। স্ত্রীকে শ্বশুরবাড়িতে রেখে গার্লফ্রেন্ড তানজিলাকে নিয়েই থাকত রাজীব। তানজিলা ছাড়াও আরেক প্রেমিকা রাফির সঙ্গেও অবাধ মেলামেশার তথ্য পাওয়া গেছে রাজীবের আত্মীয় ও তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে। ঘটনার দিন রাজীবের বাসাতেই ছিল তানজিলা। পুলিশ রাজীবের মা নার্গিস হায়দারের বাসা থেকে তানজিলাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। ওই বাসায় প্রচুর মদের বোতল ও নেশার উপকরণ পাওয়া গেছে। রাজীব হত্যা সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে গিয়ে গতকাল পল্লবী থানা পুলিশ ও এলাকাবাসী আরও অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন।
গতকাল দুপুরে সরেজমিন পল্লবীর পলাশনগর ১১ নম্বর রোডের রাজীবের মায়ের বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, পল্লবী থানার দুইজন পুলিশ পাহারা দিচ্ছেন। বাসায় অন্য কোনো লোক নেই। রাজীব যে কক্ষটিতে থাকতো সেটি তালাবদ্ধ। অন্য একটি কক্ষে রয়েছে অসংখ্য মদের বোতল। কোনোটিতে মদ ভর্তি, কোনোটিতে অর্ধেক, আবার কোনোটি খালি। কর্তব্যরত পুলিশের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘পল্লবী থানা থেকে আমাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমরা কিছু বলতে পারব না, থানায় গেলেই সবকিছু জানতে পারবেন।’ বাড়ির কাছেই মাত্র ১শ’ গজের মধ্যে রেজা কিডস কেয়ার স্কুলের সামনে চায়ের দোকানের মালিক ইউনুস এবং দোকানে থাকা এলাকাবাসী জানান, ওই বাসায় রাজীব ও নোবেল নামে দুই ভাই থাকত। এরা এলাকাবাসীর সঙ্গে কখনও মেলামেশা করত না। তবে মাঝে মধ্যেই রাজীবের সঙ্গে একাধিক মেয়েকে দেখা যেত। মেয়েরা ওই বাসায়ও থেকেছে। ঘটনার দিনও রাজীবের সঙ্গে তারা মেয়ে দেখেছেন। তবে তাকে নিয়ে কোনো দোকানে চা খেতে দেখেননি বলেও জানিয়েছেন তারা।
পল্লবী থানা পুলিশ জানিয়েছে, রাজীবের হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে তার বাবা নাজিমউদ্দিন থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলার প্রেক্ষিতেই ঘটনার পরপরই রাত সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার দিকে রাজীবের খালাতো ভাই গালি এবং ভাই নোবেলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে তথ্য পেয়েই রাজীবের গার্লফ্রেন্ড তানজিলাকে গ্রেফতার করা হয়। এদিকে তানজিলা ও রাফিকে গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে জানতে চাইলে থানার ডিউটি অফিসার আবুল হোসেন ও অন্য পুলিশ অফিসাররা জানান, তানজিলা ও রাফিকে আটকের পর ডিবি পুলিশ তাদের নিয়ে গেছে। বর্তমানে তারা ডিবি পুলিশের কাছে রয়েছে। আপনারা সেখান থেকে তথ্য নিয়ে নিন’।
উচ্ছৃঙ্খলতা নিয়ে শ্বশুরবাড়ির অভিযোগ : গতকাল ব্লগার রাজীবের শ্বশুরের পুরান ঢাকার আনন্দ বেকারি, পল্লবী থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ, রাজীবের পলাশনগর বাসার লোক এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে তার ধর্মদ্রোহী, উচ্ছৃঙ্খলতাসহ নানা অপকর্মের তথ্য পাওয়া গেছে।
পুরান ঢাকার আবুল হাসনাত রোডের প্রসিদ্ধ আনন্দ বেকারির মালিক আবদুর রশীদ ব্লগার রাজীবের শ্বশুর। আবদুর রশীদের ছোট মেয়ে আনিকার সঙ্গে দুই বছর আগে রাজীবের বিয়ে হয়। অনিকার ডাক নাম বাসন্তী। গতকাল আনন্দ বেকারির শোরুমে বসেই দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ১২টা ৫৩ মিনিট পর্যন্ত দেয়া দীর্ঘ সাক্ষাত্কারে রাজীবের উচ্ছৃঙ্খলতা ও ধর্মদ্রোহিতার বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেন আবদুর রশীদ। বিয়ের পর থেকেই ধানমন্ডি ৪ নম্বর রোডের ২১/১, বাড়ির ২/সি ফ্ল্যাটের মালিক শ্বশুর আবদুর রশীদের আপ্যার্টমেন্টে রাজিব থাকত।
আব্দুর রশীদ জানান, একটু বেশি অস্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্যই তার মেয়ের সঙ্গে ঝগড়া হতো। তার মেয়ের সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ হলে তিন মাস আগে রাজীবকে বাসা থেকে বের করে দেয়া হয়। এরপর তিনি কিংবা তার মেয়ে রাজীবের খোঁজ-খবর নেননি। আবদুর রশীদ দৈনিক আমার দেশকে বলেন, ‘বিয়ের পর সব মেয়েই সুস্থ জীবন চায়। আমার মেয়েও সুস্থ জীবন চেয়েছিল। আর তা হয়নি বলেই তারা তিন মাস ধরে আলাদা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, রাত ১১টায় টেলিভিশনে সংবাদ দেখে তারা রাজীবের বাবাকে ফোন করে ঘটনা জানতে পারেন। পরে তিনি তার দুই ভাইকে নিয়ে পল্লবী থানায় ছুটে যান। থানায় গিয়ে দেখেন রাত সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে পুলিশ কর্মকর্তারা নোবেল এবং রাজীবের খালাতো ভাই গালিবকে উপরে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এ সময় তিনি পুলিশের কাছ থেকে তানজিলার নাম জানতে পেরেছেন। আবদুর রশীদ বলেন, ‘খুন হয়েছে এটা সত্য। তবে তা উদঘাটনের দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। সত্য ঘটনা আজ হোক কাল হোক বের হবেই। তাই আমি না জেনে সে জামায়াত ইসলামী হোক আর যেই হোক কারও ওপর দোষ চাপাতে পারব না’। সরেজমিনে দেখা যায়, পুরান ঢাকার নামী এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আনন্দ বেকারির শোরুমের দেয়ালে মসজিদের ছবি লাগানো। তিনি বলেন, রাজীব যে ধর্মদ্রোহী কাজ করত তা বিয়ের আগে তাদের জানা ছিল না।
খুনের কারণ তানজিলা : পল্লবী থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের মামলা সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য কয়েকটি সূত্র জানায়, ব্লগার রাজীব খুনের কারণ তানজিলাসহ একাধিক প্রেমিকা। ঘটনার রাতে রাজীবের বাসায়ই তানজিলা ছিল বলে নিশ্চিত করেন তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, খুনের সময় তানজিলা রাজীবের বাসায় ছিল। সেদিন তানজিলার ওই বাসাতেই থাকার কথা ছিল। পল্লবী থানা পুলিশ রাজীবের খালাতো ভাই এবং আপন ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রেক্ষিতে রাজীবের বাসা থেকেই তানজিলাকে গ্রেফতার করে বলেও জানায় পুলিশ। তানজিলাকে জিজ্ঞাসাবাদে তার কথায় গরমিল পাওয়া গেছে। এমনকি তানজিলার দেয়া মিরপুর পলাশনগরের ১৩ নম্বর রোডের কবরস্থানের পাশে বোনের বাসার ঠিকানার অস্তিত্বও পাওয়া যায়নি বলে জানায় পুলিশ। তবে তানজিলাসহ আরও অনেক মেয়ে ওই বাসায় রাতযাপন করতো বলেও জানায় পুলিশ। পুলিশের তদন্তে রাজীবের একাধিক নারীর সঙ্গে পরকীয়া, লিভ-টুগেদারের বিষয়গুলো চলে আসে। অন্যদিকে তানিজলার বাসার ঠিকানার জন্য পল্লবী থানায় গেলে ডিউটি অফিসার আবুল হোসেন জানান, তানজিলা ও রাফিকে গ্রেফতারের মাত্র ১০/১৫ মিনিটের মধ্যেই ডিবি পুলিশ নিয়ে যায়। তাই সাধারণ ডায়রি বা থানার কোনো নথিপত্রে তাদের গ্রেফতারের কাগজপত্র নেই। রাজীব হত্যা মামলার আইও মতিয়ার রহমান ফোনে দৈনিক আমার দেশকে জানান, ডিবি পুলিশ নিয়েছে, তারাই ভালো বলতে পারবে। মতিয়ার রহমান ব্যস্ত আছি বলে আর কথা বলতে চাননি।
রাজীবের বাসা ও এলাকায় ঘুরে যে চিত্র পাওয়া গেল : পলাশনগর ১১ নম্বর রোডের ৫৬/৩ নম্বর বাড়িটি রাজীবের মা নার্গিস হায়দারের নামে। একতলা এ ভবনের সামনে ও পেছনে বেশ কিছু খালি জায়গা রয়েছে। সেখানে কয়েকটি বড় গাছপালাও রয়েছে। চারপাশে দেয়ালে ঘেরা বাড়িটির ভেতরটা বাইরে থেকে দেখা যায় না। ভেতরে দু’কক্ষবিশিষ্ট বাড়িটিতে ঢুকে দেখা যায় পুলিশ পাহারা দিচ্ছে। সামনের এক চিলতে বারান্দায় সব জুতো পুরুষের। সার্বক্ষণিক নারীদের থাকার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তালাবদ্ধ রুমে রাজিব থাকত বলে জানায় দায়িত্বরত পুলিশ। তবে বারান্দা ও কক্ষে প্রচুর মদের বোতল দেখা গেছে। এলাকাবাসী ও চায়ের দোকানদাররা জানান, গত তিন চার বছরে অনেক মেয়েকে এ বাড়িতে আসতে দেখেছেন তারা। নাম প্রকাশ করতে চাননি এমন কয়েকজন বলেন, বউ আসবে কি করে, এখানে তো নার্গিস আক্তার কখনও থাকেন না। তবে রাজীবের বউ এখানে কখনও আসেননি সে ব্যাপারটিও নিশ্চিত করেন তারা। সামনের ছোট গলিতে ভাড়া বাসায় থাকা এক নির্মাণ শ্রমিক জানান, বাড়ির গেটে তালাবদ্ধ রেখে তারা বাড়ির ভেতরেই থাকত। এক চা দোকানি বলেন, ‘এখানে দাঁড়িয়ে রাজীব সিগারেট খেত না। সিগারেট নিয়ে সোজা বাসায় চলে যেত’।
চার বান্ধবীকে ঘিরে এগোচ্ছে রাজীব হত্যার তদন্ত : ব্লগার আহমেদ হায়দার রাজীব শুভ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত এগোচ্ছে চার ব্লগার বান্ধবীকে ঘিরে। এদের মধ্যে একজন তানজিলাকে গ্রেফতার করা হয়েছে রাজীবের বাসা থেকেই। অপর বান্ধবী রাফিও রয়েছে গোয়েন্দা হেফাজতে। গোয়েন্দা সংস্থা মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে তিনটি নম্বর পেয়েছে, যেগুলো রাজীবের কাছাকাছি অবস্থানে ছিল। ওই নম্বরগুলো হত্যাকাণ্ডের পর থেকে বন্ধ রয়েছে। পুলিশ এখন ওই নম্বরের মালিকদের খুঁজছে। তাদের ধারণা, সেসব নম্বরের কোনোটি ঘাতকদেরও হতে পারে। রাফি ও তানজিলার বিষয়ে কিছু তথ্য জানালেও অপর দু’ব্লগার বান্ধবীর বিষয়ে কোনো তথ্য জানাতে সম্মত হয়নি পুলিশ। তাদের বক্তব্য, তদন্তের স্বার্থে এখনই তাদের নাম প্রকাশ করা যাবে না।
তদন্ত সূত্র জানায়, ব্লগার বান্ধবীদের মধ্যে তানজিলার প্রতিই গোয়েন্দাদের সন্দেহ বেশি। অপর বান্ধবী রাফির প্রতিও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছেন না রাজীবের স্ত্রী আনিকা ওরফে বাসন্তিও। একটি সূত্র বলেছে, খুনি যে-ই হোক, তারা যে এক নারীর সহায়তা নিয়েছে, সে সম্পর্কে এখন অনেকটাই নিশ্চিত। এক্ষেত্রে তাদের সন্দেহ তানজিলার দিকে। তাদের ধারণা, হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে সব ঘটনা সম্পর্কে অবগত এই তানজিলা। তবে পুলিশ আহমেদ হায়দার রাজীব শুভ হত্যাকারীদের সম্পর্কে গতকাল পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে কর্মকর্তারা বলেছেন।
একাধিক সূত্র বলেছে, তানজিলা এবং রাফির সঙ্গে এতই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল যে, দিনে তাদের সঙ্গে একাধিকবার কথা ও দেখা হতো। তাদের মোবাইল কললিস্ট ও মোবাইল ট্র্যাক করেও সে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
তদন্ত সংস্থার দেয়া তথ্যমতে, মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে ১৩, ১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে রাজীবের অবস্থান সম্পর্কে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। রাজীবের অবস্থান এবং কাদের সঙ্গে ওই দিনগুলো অবস্থান করেছে, সেসব বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রায় অর্ধশত মোবাইল নম্বরের ভয়েস রেকর্ড সংগ্রহ করে তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত রাজীব শাহবাগে অবস্থান করেছিল। ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত ছিল ধানমন্ডিতে। সন্ধ্যা ৬টায় সে ফের শাহবাগে যায় এবং রাত ৮টা পর্যন্ত অবস্থান করে। রাতে পল্লবীর বাসায় ফিরে যায়। পরদিন ১৪ ফেব্রুয়ারি সে শাহবাগে যায়নি। ১৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার রাজীব খুন হয়। ১৩ তারিখ রাতে ফেরার পর ঘটনার দিন বেলা ৩টা পর্যন্ত সে পলাশনগরের বাসায় ছিল। ওই সময়টা সে কাটিয়েছে বান্ধবী তানজিলার সঙ্গে। ৩টায় বাসা থেকে বের হয়ে বাসার অদূরে বাইশটাকি এলাকায় গিয়ে ৪টায় আবার সে বাসায় ফিরে আসে। সোয়া পাঁচটা পর্যন্ত সে বাসার আশপাশে পলাশনগর এলাকাতেই ঘোরাফেরা করে। বাসা থেকে বের হয়ে আবারও বাইশটাকি এলাকায় যায়। সেখানে ১৫ মিনিট অবস্থান করে সাড়ে পাঁচটায় আবারও বাসায় ফিরে আসে। এর কিছু সময় পরে আবারও বাসা থেকে বের হয়ে মিরপুর ১০ নম্বর ও আশপাশের এলাকায় কিছু সময় অবস্থান করে। এরপর রাত সাড়ে আটটার পর বাসার উদ্দেশে রওনা হয়। এ সময় তার সেই ঘনিষ্ঠ বান্ধবী তানজিলা তাকে বাসার গলিতে পৌঁছে দেয়। এর মধ্যে মোবাইল ফোনে তানজিলার সঙ্গে বেশ কয়েকবার কথা হয় রাজীবের ।
রাত ৮টা ৫৮ মিনিটে রাজীব আরেক বান্ধবী রাফির সঙ্গে মোবাইলে কথা বলতে বলতে বাসার সামনে রাস্তায় চলে আসে। রাত ৮টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত সে বান্ধবী রাফির সঙ্গে কথা বলে। সেটাই ছিল ফোনে রাজীবের শেষ কথা বলা। গোয়েন্দারা ধারণা করছে, এরপরই সে হামলার শিকার হয়।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, রাত ৮টা ৪৪ মিনিট থেকে রাজীবের বাসার সামনে তিনটি নতুন মোবাইল নম্বর যুক্ত হয় টাওয়ারের সেল নম্বরে। সেই নম্বরগুলো বেশ কিছু সময় একই স্থানে অবস্থান করে। রাত ৯টা ১৪ মিনিটের পর থেকে ওই তিনটি মোবাইল নম্বর বন্ধ রয়েছে। গোয়েন্দারা ওই মোবাইল ফোনগুলোর গ্রাহকদের খুুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। গোয়েন্দাদের ধারণা, ওইসব নম্বরের কোনোটি ঘাতকদেরও হাতে পারে। রাত ১০টায় রাজীবের মোবাইলে একটি এসএমএস পাঠায় তানজিলা। এসএমএসটি ছিল ‘দাদা বাসায় গেছ?’ ওইসময় তানজিলার অবস্থান ছিল মিরপুর-২ নম্বর এলাকায়। অথচ তার স্বীকারোক্তিতে সে বলেছে, মিরপুর ১১ নম্বরের বাসায় রাজীব তাকে পৌঁছে দিয়েছে।
তানজিলা সম্পর্কে জানা গেছে, এসএসসি পাস করে বখে যাওয়া উচ্ছৃঙ্খল প্রকৃতির মেয়ে ছিল তানজিলা। রাজীবের সঙ্গেও তার সম্পর্ক ছিল সে ধরনের। তানজিলার গ্রামের বাড়ি বগুড়ার সাতমাথা এলাকায়। বাবা মারা যাওয়ার পর লেখাপড়া এগোয়নি তানজিলার। চার বছর আগে ঢাকায় এসে মিরপুর ১৩নং এলাকার একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে। কিন্তু তার পেশা সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য পায়নি পুলিশ।
জানা গেছে, নিজের থাকা খাওয়ার খরচ চালাতে অনৈতিক পথে পা বাড়ায় তানজিলা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট শাহবাগ এলাকায় অস্বাভাবিকভাবে চলাফেরা শুরু করে। এর মধ্যে ফেসবুকে রাজীবের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। পরিচয়ের সূত্র ধরে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। তাদের এ ঘনিষ্ঠতা মেনে নিতে পারেনি শোভনের স্ত্রী বাসন্তি ওরফে অনিক। এতে স্ত্রীর সঙ্গে রাজীবের দূরত্ব বাড়ে। স্বামীর সঙ্গে অন্য মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার বিষয়টি মেনে নেয়নি ধনির দুলালী অনিকা। কয়েক মাস আগেও রাজীব শ্বশুরের বাসা ধানমন্ডিতে থাকত। চারিত্রিক অধঃপতনের কারণে রাজীবকে সে বাসা থেকে একরকম বের করে দিয়েছিল।
একটি সূত্র জানায়, রাফি ময়মনসিংহ ত্রিশালের কবি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। তার গ্রামের বাড়ি রাজশাহীতে। তার বাবা সরকারি চাকরিজীবী। ময়মনসিংহ থাকা অবস্থায় ফেসবুকে রাজীবের সঙ্গে পরিচয় হয় রাফির। সেই সূত্র ধরে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। নিয়মিত ঢাকায় এসে রাজীবের সঙ্গে দেখা করত রাফি। রাজীবও ময়মনসিংহ গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করত।
রাজীব ছাড়া আরও বেশ কয়েকজন ছেলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার ছিল তানজিলার। রাফিও ঢাকায় আসা-যাওয়ার কারণে নিত্যনতুন বন্ধুর সন্ধান পায়। এর মধ্যে শোভনের সঙ্গে তানজিলার ঘনিষ্ঠতা নিয়ে রাফির সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয় শোভনের। শুক্রবার রাতে তানজিলা থেকে আলাদা হয়ে রাফির মান ভাঙানোর চেষ্টা করে রাজীব। রাফি কোনো সুযোগ না দিয়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এর পরপরই দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত হয় রাজীব। এ খুনের সঙ্গে একজন নারীর সহযোগিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে সেই নারী তানজিলা না রাফি, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তদন্ত কর্মকর্তাদের ধারণা, খুনি যে-ই হোক, তারা তানজিলা অথবা রাফির সহায়তা নিয়ে খুন করেছে। হয় খুনিরা রাফির অভিমানকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে রাজীবের বাসার ঠিকানা ও বাসায় ফেরার সময়সূচি জেনেছে, না হয় তানজিলার অভাবটাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে খুনের কাজে তার সহায়তা নিয়েছে।
সূত্র জানায়, ঘটনার দিন রাজীবকে বাসা থেকে ডেকে নেয় তানজিলা। নানা ছলনায় সন্ধ্যা গড়িয়ে রাতে বাসায় ফিরতে বাধ্য করেন। সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডের পর রাজীবের পরিবারের সদস্যরা তার অবস্থান সম্পর্কে যেসব তথ্য দিয়েছে, তার সঙ্গে প্রযুক্তি থেকে প্রাপ্ত তথ্যের অনেক গরমিল রয়েছে। তিনি দিন-রাত শাহবাগ চত্বরে থাকতেন বলে যে দাবি করা হয়েছে, তার সঙ্গেও কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছে না তদন্ত সংস্থা।
বিষয়: বিবিধ
১০৮৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন