বদলে গেল মেয়েটির জীবন ধারা (একটি সত্য ঘটনা)
লিখেছেন লিখেছেন নূর আয়েশা সিদ্দিকা জেদ্দা ১৭ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৫:৫৬ রাত
বদলে গেল মেয়েটির জীবন ধারা (একটি সত্য ঘটনা)
মা...মা.....মা......তিশার আত্নচিৎকারে রান্না ঘরের কাজ ফেলে দৌড়ে আসেন মা। মা ..মা আমাকে তুমি লুকিয়ে রাখো...মা.. আ মা কে তুমি লুকিয়ে রাখো....................কাটা মুরগির মত ছটফট করতে করতে মাকে জড়িয়ে ধরে তিশা। এক সময় জ্ঞান হারিয়ে ঢলে পড়ে।
খানিক আগেই প্রাইভেট পড়তে বেরিয়েছিলো ক্লাশ নাইনে পড়ুয়া তিশা। হঠাৎ কি যে হল মেয়েটির.......
এক, দুই, তিন দিন করে ধীরে ধীরে অনেক গুলো দিন হারিয়ে গেলা তিশার জীবন হতে। আলোকিত পৃথিবীর আলো হয়ে গেল অসহনীয়। ভয় পেতে শুরু করলো মানুষ নামের দু’পেয়ে জীবগুলোকে। সারাক্ষণ এক ধরণের ভয় যেন তাড়া করে ফেরে কিশোরী মেয়েটিকে। হারাতে শুরু করে জীবনের হাসি আনন্দ আর বেঁচে থাকার স্বপ্ন গুলো। বন্ধ হয়ে যায় ভাই বোনদের সাথে আড্ডা আর গল্প করে হেসে লুটিয়ে পড়ার উচ্ছাসগুলো। উদ্বিগ্ন মা অনেক কষ্টে যতটুকু ভাঙ্গা ভাঙ্গা বুঝতে পারেন-সেদিন সকালটায় মানুষের অবয়বে কোন এক নরপশু উঠিয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা করেছিলো মেয়েটিকে।....
কিন্তু সেই অমানুষটাকে জিজ্ঞেস করলে সে রীতিমত কিছু না জানার ভান করে। আর লোক লজ্জার ভয়ে মেয়েটির পরিবার ওবিষয়টি নিয়ে আর উচ্চবাচ্য করার সাহস করেননি।
সময় হারায় নিজের নিয়মে। অনিয়মিত হয়ে যাবার কারণে সে বছর আর এস এসসি পরীক্ষা দেবার পারমিশন দেয়া হলনা স্কুল হতে। সহপাঠীরা সবাই জীবনের দৌড়ে এগিয়ে গেল। অসহায় মেয়েটির মনের ঘরে চলে কেবল দ্বিধাদ্বন্ধের ঝড়। পৃথিবীর প্রতি বুক ভরা ঘৃণা জমে বুকের মাঝে।মাঝে মাঝেই শারীরিক মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে যেতে থাকে। কিন্তু তারপর ও জীবনের দৌড়ে বেঁচে থাকার প্রতিযোগিতায় নামে মেয়েটি। মাথার ভেতর পৃথিবীর কদর্যতার ভয়াল ছায়া। তারপর ও জীবনের কাছে বাতিল হয়ে যাওয়ার ভয়ে ও মেয়েটি বারে বারে পড়ে যেয়েও উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে এবছর ডিগ্রী পরীক্ষা দিয়েছে মেয়েটি।
চোখের সামনে প্রিয় সন্তানের জীবনের এই ভাংচুর অসহায় বাবা মাকে ও কাঁদায় রাত দিন। এক সময় বাকী সন্তানদের হাতে মেয়েটির দায়িত্ব তুলে দিয়ে অনেক কষ্ট নিয়ে পৃথিবী ছাড়েন বৃদ্ধ বাবা মা।
আমি বাকরুদ্ধ হয়ে তিশার ফুলের মত জীবনটা এলোমেলো হয়ে যাবার গল্প শুনলাম। তিশার বোনের সাথে প্রায় ঘন্টাখানেক কথা হল। আমার মনে হলো- মেয়েটি বেশ সংবেদনশীল মনের। না হয় আজ আধুনিকতার ছোঁয়ায় নারী পুরুষের অবৈধ সম্পর্ক যেখানে ডাল ভাতের মত হয়ে গেছে। নষ্ট হওয়া আর সমাজে নষ্টের জীবানু ছড়িয়ে দেয়া যখন অনেকের কাছে এক ধরণের ফান। সেখানে কত পবিত্র আর সরল মনের মেয়ে হলে এধরণের ঘটনায় এতটা মানসিক আঘাত পেতে পারে। অনেক কষ্ট হল অদেখা তিশার জন। রবের কাছে মিনতি রইলো-আল্লাহ যেন সেই দু:সহ অতীত ভুলে যাবার মানসিক দৃঢ়তা তিশাকে দান করেন। আর জীবন চলার পথে এমন কারো দেখা মিলিয়ে দেন, যে মানুষের খোলসে জানোয়ার নয় বরং যেন সত্যিকারেরই একজন ভালো মানুষ হয়। যার চরিত্রের নিষ্কুলষতায় আর নিঁখাদ ভালোবাসার চাতালে মাথা রেখে তিশা যেন বিস্মৃত হয়ে যায় এক ভয়ংকর অতীতের কষ্টকর দু:স্বপ্ন গুলোকে।
নূর আয়েশা সিদ্দিকা বিউটি
জেদ্দা,সৌদি আরব।
বিষয়: বিবিধ
১০১৩ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন