সন্তানদের কিভাবে ইসলাম শেখাবো
লিখেছেন লিখেছেন নূর আয়েশা সিদ্দিকা জেদ্দা ১০ জুন, ২০১৮, ০৭:২০:০২ সন্ধ্যা
একবার আমার ছোট মেয়েটিকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলাম। ওর বাবা নামাজ শেষ করে তখনো এসে পৌাঁছায়নি। ডাক্তার প্রথমে আমার মেয়ের নাম দেখে প্রশ্ন করলেন –তুমি কি জানো জুয়াইরিয়া কার নাম ছিলো? আমি বললাম- জ্বি তিনি উম্মুল মুমেনীন ছিলেন। তখন উনি আমার মেয়েকে বললেন- জানো জুয়াইরিয়ি রাঃ কত ফেমাস একজন মানুষ ছিলেন। কেননা তাঁর কারণে তার পুরো গোত্র বনু মুসতালিকের প্রায় ৭০০ মানষ যুদ্ধবন্দী হওয়া হতে মুক্তি পেয়েছিলো। আয়েশা রাঃ তার সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন- “আমি কোন নারীকে তার সম্প্রদায়ের জন্য জুয়াইরিয়া থেকে অধিকতর কল্যাণময়ী দেখিনি।“ তার একটি ঘটনা বলি। একদিন সকালে রাসূল (সাঃ) দেখলেন জুয়াইরিয়া (রাঃ) মসজিদে বসে দোয়া করছেন। তিনি চলে গেলেন। দুপুরে এসে তাঁকে একই অবস্থায় পেয়ে রাসূল (সাঃ) বললেন, তুমি সব সময় এ অবস্থায় থাক? জুয়াইরিয়া (রাঃ) বললেন-হ্যাঁ। তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, আমি কি তোমাকে এর চেয়ে ভালো কিছু কথা শিখিয়ে দেবনা। যা এই নফল ইবাদাত থেকে ও বেশী গুরুত্বপূর্ণ? তারপর তিনি তাঁকে এ দোয়া শিখিয়ে দিলেন- সুবহা-নাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি,আ’দাদ খালক্বিহি, ওয়া রিদ্বা নাফসিহি,ওয়া যীনাতা আ’রশিহি ওয়া মিদা-দা কালিমাতিহ। অর্থ আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ননা করছি তাঁর প্রশংসার সাথে তাঁর সৃষ্টি বস্তু সমূহের সংখ্যার সমান, তাঁর নিজের সন্তুষ্টির সমান, তাঁর আরশের ওজনের সমান ও তাঁর বাণী সমূহ লিখার কালি পরিমাণ অসংখ্যবার।‘(মুসলিম-৪/২০৯০’) অবশ্য এ ঘটনা বর্ননায় কিছুটা ভিন্নতা ও রয়েছে।
আলহামদুলিল্লাহ ! আমি বিদেশী এই ডাক্তারের ভূমিকায় বেশ মুগ্ধ হলাম। আমাদের দেশের ডাক্তাররা ও যদি পেশার পাশাপাশি এধরণের সুন্দর ভূমিকা রাখতেন সেটা ইসলামের জন্য কতই না কল্যাণকর হত। আমি এরপর আমার মেয়েকে উৎসাহ দিলাম দোয়াটি শিখতে। ওকে প্রতিদিন স্কুলে নেয়ার পথে সকাল বেলা দোয়াটি পড়াতে পড়াতে নিয়ে যাই। আলহামদুলিল্লাহ ও দোয়াটি শিখে ফেলে। এভাবে ওকে স্কুলে যাওয়ার পথে ছোট ছোট বিভিন্ন দোয়া শেখাই। সাইয়েদুল এস্তেগফারের ফজিলত যখন জানলাম যে- রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি দিনে ইয়াকীনের সাথে সাইয়েদুল এস্তেগফার পড়ে এবং সন্ধ্যার আগে মারা যায় সে জান্নাতী হবে। আর যে ব্যক্তি ইয়াকীনের সাথে রাতে তা পড়ে ও সকালের আগে মারা যায় সেও জান্নাতী হবে।‘(’বুখারী-৭/১৫০) আমি স্কুলে যাওয়ার পথে বাচ্চাদের মুখে মুখে পড়াতে থাকি। মাশাআল্লাহ দেখি এক সময় ওদের শেখা হয়ে গেছে।
আসলে আমার মনে হয় বয়স বাড়লেই কেবল ইবাদতের দিকে ঝুঁকতে হবে । এই প্রাচীন ভাবনা কখনো সঠিক নয়। বরং শিশুকাল হতেই আমরা বাচ্চাদের বিভিন্ন ইসলামী জীবনাচরণের সাথে অভ্যস্ত করে তুলতে পারি। আমি মাঝে মাঝে বাচ্চাদের উৎসাহিত করি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে তাহাজ্জুদ পড়ার জন্য। সকালে চাশত কিংবা ইশরাকের নামাজ পড়তে। কেননা শিশু কালের এই শিক্ষা বড় হলে ও মনে দাগ কেটে থাকবে। তখন ইনশাআল্লাহ স্বাভাবিক ভাবেই করতে পারবে। আর এ সময় মুখস্ত শক্তি ও ভালো থাকে। তাই বড় বড় সূরা কিংবা দোয়াগুলো ও সহজে মুখস্ত করা যায়।
রামাদানের ২/১ দিন আগেই জুয়াইরিয়ার ক্লাশ সিক্সের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল। আমি তখন ওকে বললাম- জুয়াইরিয়া, তুমি তো সারাক্ষণ কম্পিউটারে হোমওয়ার্ক, এটা ওটা করছো। তোমাকে আল্লাহ যদি বলেন তুমি কম্পিউটারকে ইসলামের কি কাজে লাগিয়েছ? তখন তুমি কি জবাব দেবে? দেখলাম কথাটা কাজে লেগেছে। বললো- আম্মু, আমি রামাদানের জন্য পাওয়ার পয়েন্টে একটি প্রেজেন্টেশন করে দিই। আমি বললাম –ঠিক আছে। বেচারা গুগল হতে বাংলা ট্রান্সলেট করে অনেক কষ্টে এটি তৈরী করেছে। আমি পরে একটু ফিনিশিং টাচ দিয়ে দিলাম। সেই সাথে কার্ড বোর্ডে ও রামাদানে পড়ার জন্য দোয়া গুলো নিয়ে একটি চার্ট তৈরী করে ঘরের দেয়ালে ঝুলিয়ে রেখেছে। আমার জন্য ও সুন্দর একটি কার্ড বানিয়ে দিয়েছে রামাদানে।
রামাদানে শুরুতে আমি দানের গুরুত্ব বুঝিয়ে বলেছি। আমি নিজে একটি স্বচ্ছ কাাঁচের জারে দানের জন্য কিছু টাকা রেখে দিয়েছি। বাচ্চাদের বলেছি ওরা ও প্রতিদিন কিছু করে দান করবে। আর আমরা বাসা হতে বের হবার সময় সেটা গরীবদের জন্য নিয়ে যাবো।চেষ্টা করি রাতের তারাবী এবং সালাতুল কিয়ামের নামাজে বাচ্চাদের মসজিদে নিয়ে যেতে। পুরস্কার হিসেবে মসজিদ হতে বের হলে আইসক্রিম কিনে দিই। যদি ও স্বাভাবিক সময়ে ঠান্ডার ভয়ে আইসক্রিম খেতে দিই না।
আসলে এসব ছোট ছোট বিষয়ের মাধ্যমে বাচ্চাদের ইসলামের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা আর কি। আল কোরআনের নির্দেশ-
‘’হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেরা দোযখের আগুন হতে বাঁচ। তোমাদের পরিবার পরিজনদের ও বাঁচা।সূরা তাহরীম-৬
আমাদের প্রিয় সন্তানরা যাদেরকে একটি সুন্দর জীবন দেবার জন্য আমরা আক্লান্ত পরিশ্রম করি। সেই সন্তানকে দাউদাউ করে জলন্ত আগুনের হাত হতে বাাঁচাতে আসুন আমরা তাদেরকে ইসলামের সুন্দর জীবনধারায় অভ্যস্ত করে তুলি।
নূর আয়েশা সিদ্দিকা(বিউটি)
জেদ্দা,সৌদি আরব
https://youtu.be/nMiQhK9j634Please Click here: Ramadan Video
বিষয়: বিবিধ
১৩২৪ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যাই হোক আপনি যা কিছু লিখেন সবগুলি উপদেশের মতো কাজ করে আমার মনের ভিতর অনেক অনেক দেখাও ভালবাসা রইলো আপু,
আর আমাদের দেশি ডাক্তার এমনটি জনস সেটা আমাদের স্বপ্ন ছাড়া আর কিছু নয়, যদিও এই অসভ্য সমাজে কিছু ভাল ডাক্তার রয়েছে
০ তাহাজ্জুদের নামাজ কি রাত ১০ টায় 'ইশা এর পর পড়া যায় ?
আমার কথা হল - তাহাজ্জুদের নামাজ কি আমি রাত ১০ টায় 'এশার পর পড়ে ফেলতে পারি?
মন্তব্য করতে লগইন করুন