রমজান আলী নাকি নতুন রেসিপি নাকি .......

লিখেছেন লিখেছেন নূর আয়েশা সিদ্দিকা জেদ্দা ২০ মে, ২০১৮, ১০:৫৭:৩২ রাত



ছোটবেলায় আমার এক ক্লাশমেটকে স্কার্ফ পরে না আসার অপরাধে বেঞ্চের উপর কান ধরে দাঁড় করিয়ে ধর্ম স্যার প্রশ্ন করেছিলেন- এই তোর নাম কি? বেচারী কাচুমাচু হয়ে বলল- সায়মা। স্যার তখন দাঁত কিটমিটিয়ে বললেন- সায়মা নামের অর্থ জানিস? মেয়েটি না সূচক মাথা দোলাল। স্যার তখন বললেন- সায়মা মানে রোজাদার নারী। রোজাদার নারী অথচ স্কার্ফ না পরে স্কুলে আসিস? দুঃখের বিষয় বেচারীর পরে টাইফয়েডের কারণে চুল কেটে ফেলতে হল। আর তাই সব সময় মাথায় স্কার্ফ পরে রাখতো।

আবার কারো নাম রাখা হয় ’সিয়াম’মানে ‘বিরত থাকা’। কারো নাম থাকে ‘রমজান আলী’ এমনি বিভিন্ন নামের প্রচলন আমাদের সামাজে খুব দেখা যায়। যদিও ইসলামের অন্য গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত নামাজ ,হজ্জ বা যাকাত কারো নাম হিসেবে থাকতে ততটা দেখা যায় না।

শুধু নাম নয়। এই রোজাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মানুষের মাঝে বিভিন্ন প্রবণতা দেখা যায়। যেমন- কালোবাজারীদের মধ্যে বেড়ে যায় দব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে জনসাধারণের হয়রানি করা। আর নিজের পকেট ভারী করার প্রবণতা। সংস্কৃতি জগতে ঈদের নাটক কিংবা ঈদের সিনেমা তৈরীর হিড়িক পড়ে যায়। আবার নতুন নতুন রান্নার রেসিপি দেখিয়ে বেচারি রোজাদারদের ক্ষুধাকে আরো হাজার গুণ উস্কে দেয়ার ও মহড়া চলে। পোষাক নির্মাতাদের মাঝে চলে ঈদ কেন্দ্রিক নতুন পোষাক তৈরী আর বাজারজাত করার হিড়িক।এমনি এক একজনের এক একরকম সচেতনতা দেখা যায়।

কিন্তু যার নির্দেশে এই রোজা কিংবা রামাদান মাসের গুরুত্ব সেই প্রভুরই নির্দেশ-‘’হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য রোজা ফরয করা হয়েছে। যেমনি ফরয করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর । আশা করা যায় যে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারবে।‘’সূরা আল বাকারা-১৮৩

এখানে ৩টি বিষয় এসেছে।

১. রোজা একটি ফরয ইবাদত।

২. এটা শুধু উম্মতে মোহাম্মদী নয় বরং পূর্ববর্তীদের উপর ও ফরয ছিলো।

৩.রোযা ফরয হওয়ার মূল উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জন।

‘তাকওয়া’ মানে আল্লাহকে পরিপূর্ণ ভাবে ভয় করা। কিভাবে ভয় করতে হবে তাও আল্লাহ শিখিয়ে দিয়েছেন।

‘’ হে ঈমানদারগন! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। যেভাবে তাকে ভয় করা উচিত।‘’ সূরা আলে ইমরান- ১০২

অনেকে মনে করেন কারো মুখে লম্বা দাড়ি থাকলো। কিংবা কেউ লম্বা পঞ্জাবী পরে থাকেন সব সময়। তিনিই বোধহয় খুব বেশী তাকওয়াবান। কিন্তু আসলে তাকওয়ার মাপকাঠি নির্ধারিত হবে মানুষের চরিত্র ও আমল দিয়ে।

আমরা অনেকে আছি তেলাপোকা ভয় পাই। আবার বাঘকে ও সবাই ভয় পাই। কেউ যদি হঠাৎ বলে আপনার সামনে একটি তেলাপোকা তখন আমরা ভয়ে সে জায়গা হতে সরে যাবো। আবার কেউ যদি এসে বলে এই রুমের দরজায় একটি বাঘ দাঁড়িয়ে আছে তখন আমরা চেষ্টা করবো জানালা দিয়ে লাফিয়ে হলেওসেই জায়গা হতে বেরিয়ে যাবার। খেয়াল করে দেখুন। তেলাপোকা কিংবা বাঘ দুটোই ভয়ের। কিন্তু ভয়ের মাত্রা ভিন্ন। একটি সামান্য ভয়। আর একটি তীব্র ভাবে ভয়। ঠিক তেমনি আল্লাহকে ভয় করতে হবে চরম ভাবে।যার চেয়ে বেশী ভয় আর কাউকে করা যাবেনা।

আমরা সবাই আগুনকে ভয় পাই। কেউ আমাকে হাজার বার অনুরোধ করে কিংবা কোটি কোটি টাকা দিয়ে ও আগুনে ঝাঁপ দিতে বাধ্য করতে পারবেনা। ঠিক তেমনি আল্লাহর ভয় মনে সঠিক ভাবে থাকলে শত লোভের হাতছানিতে ও আমরা জাহান্নামে যাওয়ার মত কাজ করবো না।

নেক ব্যক্তিদের জীবন হতে আল্লাহকে ভয়ের অনেক নমুনা আমরা খুঁজে পাই।

যেমন-আলী (রাঃ)যখন মুসলিম জাহানের খলিফা ছিলেন তখনকার ঘটনা। একদিন তাঁর ছোট ভাই আকীল(রাঃ) এসে নিজের অভাব অভিযোগের কথা জানালো। আর তাকে কিছু সাহায্য করার জন্য আলী (রাঃ) কে অনুরোধ করলো। আলী (রাঃ) তখন বললেন-জনগনের সম্পদের কোষাগার হতে আমি তোমাকে ১টি পয়সা ও দিতে পারবোনা। মাসের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা কর। আমি বেতন পেলে তা হতে তোমাকে কিছু দিতে পারবো। তখন আকীল (রাঃ) বললেন- আপনি নিজের বেতন অগ্রীম নিয়ে নিন। আলী (রাঃ) বললেন- আমার বেতন অন্য সবার বেতনের সাথে আসবে। অগ্রিম নেয়ার কোন অধিকার আমার নেই। আকীল (রাঃ) যখন বার বার অনুরোধ করতে লাগলেন তখন আলী (রাঃ) বললেন- এক কাজ কর। বাজারের কোন একটি দোকানের তালা ভেঙ্গে কিছু নিয়ে নাও। আকীল (রাঃ)বললেন- ওটা তো চুরি করা হয়ে যাবে।

আলী (রাঃ) তখন বললেন- এই মুহূর্তে আমি যদি তোমাকে কিছু দিই তা ওতো জনগনের সম্পদ হতে চুরি বা ডাকাতি বলে গন্য হবে।

তখন আকীল (রাঃ) গিয়ে আমীর মুয়াবিয়া (রাঃ) কাছে সাহায্য চাইলেন। আমীর মুয়াবিয়া (রাঃ) তাকে ১০০ দিরহাম দিয়ে বললেন-তুমি মসজিদের মিম্বরে দাঁড়িয়ে সবাইকে বলবে যে, আলীর কাছে যেয়ে তুমি সাহায্য পাওনি। কিন্তু মুয়াবিয়ার কাছে চেয়ে পেয়েছো।

ইতিমধ্যে আকীল (রাঃ) ঠান্ডা মাথায় ভেবে আলী (রাঃ) এর ফিরিয়ে দেবার যৌক্তিকতা বুঝতে পারলেন। তাই তিনি মসজিদের মিম্বরে দাঁড়িয়ে বললেন- আমি আলীর কাছে অন্যায় ভাবে সাহায্য চেয়েছিলাম । কিন্তু তিনি আত্নীয়তার উপরে আল্লাহভীতিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। আর মুয়াবিয়ার কাছে সাহায্য চাইলে তিনি আল্লাহভীতির পরিবর্তে ব্যক্তিগত পরিচয়কে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।‘’

মহান আল্লাহ পবিত্র রামাদান মাস হতে আমাদেরকে ব্যক্তিগত ও জাতীয় জীবনে আল্লাহভীতির সঠিক চর্চা করার তৌফিক দিন।( সংক্ষেপিত)

নূর আয়েশা সিদ্দিকা।(বিউটি)

জেদ্দা, সৌদি আরব

বিষয়: বিবিধ

১০৫৫ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

385383
২১ মে ২০১৮ দুপুর ১২:২৫
মোঃ মাকছুদুর রহমান লিখেছেন : রমজানে স্বর্থকতাই হলো তাকাওয়া অর্জন করা। অথচ আমাদের মধ্যে অন্যগুলোর প্রতিযোগিতা বেশি,তাকাওয়ার নয়।
অসংখ্য ধন্যবাদ।
385389
২১ মে ২০১৮ রাত ১১:২৪
নূর আয়েশা সিদ্দিকা জেদ্দা লিখেছেন : জ্বি আসলে ও তাই। মহান আল্লাহ আমাদেরকে সত্যিকারের তাকওয়া অর্জনের তৌফিক দিন।পবিত্র মাহে রমযানে মহান আল্লাহর রহমতের ধারায় সিক্ত হোক আপনার জীবন।
385399
২২ মে ২০১৮ দুপুর ০৩:২৭
আমি আল বদর বলছি লিখেছেন : আমরা সবাই আগুনকে ভয় পাই। কেউ আমাকে হাজার বার অনুরোধ করে কিংবা কোটি কোটি টাকা দিয়ে ও আগুনে ঝাঁপ দিতে বাধ্য করতে পারবেনা। ঠিক তেমনি আল্লাহর ভয় মনে সঠিক ভাবে থাকলে শত লোভের হাতছানিতে ও আমরা জাহান্নামে যাওয়ার মত কাজ করবো না।
- মাশাল্লাহ মনের ভিতরে এসে লাগলো. অসম্ভব ভাল লিখেছেন আল্লাহ আপনাকে উওম পুরস্কার দান করুণ প্রিয়

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File