‘পরকালের প্রস্তুতি’ বইটি নিয়ে কিছু না বলা কথা
লিখেছেন লিখেছেন নূর আয়েশা সিদ্দিকা জেদ্দা ১২ মার্চ, ২০১৮, ১১:২৫:৫৪ রাত
গত শনিবার এক শোকার্ত বোনের বাসায় গিয়েছিলাম সান্তুনা দিতে।এর একদিন আগে অর্থাৎ শুক্রবার বোনটির মা মারা গেছেন। এক বছরের ও কম সময়ে তিনি বাবাকে ও হারিয়েছেন। আমাকে দেখে বোনটি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।আমিও পুরোপুরি বাক্যহারা । কি দেব সান্তনা? বছর খানেকের ও বেশী আগে যখন আমার আব্বার মুমুর্ষ অবস্থায় আমি ৮ দিনের জন্য বাংলাদেশে তখন এই বোনটি সব সময় খোঁজ নিতেন। আমাকে সাহস যোগাতেন। আব্বা মারা যাওয়ার ২০/২৫ মিনিটের মধ্যেই ফোন দিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে আমাকে বলছিলেন- দেখ, আজ আমি তোকে স্বান্তনা দিচ্ছি। কিন্তু একদিন তোর মত অবস্থা যখন আমার হবে তখন আমি নিজকে কি দিয়ে বোঝাবো? সেই চরম দিনটিতে আজ আমি বোনটির সামনে।– এইতো জীবন পেয়ে না পাওয়া পেয়ে হারানো হাসি বেদনার নিয়তির লিখন……..
সামান্য অভিমানে অনেক সময় দু’চোখে জলাধার নামে। আবার অনেক বড় কষ্টে ও কখনো কখনো বুকের ভেতরটা শুধু বোবা কান্নায় ভারী হয়ে উঠে। দু’চোখ থাকে প্রতিক্রিয়াহীন। আব্বাকে হারিয়ে আমার অনুভূতির জায়গাটা ও এইরকমই। হঠাৎ শোকে পাথর হয়ে যাওয়া সেই আমি সেদিন স্বশব্দে কাঁদতে পারিনি বলে প্রতিদিনই বুকের মাঝে এক অব্যক্ত ব্যাথার জ্বলুনি অনুভব করি।আজ এই বোনটিকে স্বান্তনা দিতে গিয়ে সেই অব্যক্ত বেদনারা অশ্রু হয়ে গড়িয়ে পড়লো দু’চোখ বেয়ে।
প্রিয়জনের কত কত স্মৃতিই না মানুষ জমিয়ে রাখে বুকের গহীনে। চিরবিচ্ছেদের বেদনায় সেই স্মৃতির ঝাঁপিই হয়ে উঠে একমাত্র অবলম্বন।বোনটি একটু একটু করে সেই স্মৃতি চারণ করছিলেন। আমরা দু’জনই দোয়া করলাম- মহান আল্লাহ যেন আমাদেরকে বাবা মায়ের জন্য উত্তম সাদকায়ে জারিয়া হিসেবে কবুল করে নিন। আহারে মরহুম বাবা মাকে ঘিরে সন্তানের কত করুন আহাজারি।বোনটি একটু পর পর ছটফট করছিলেন আহত পাখির মত বলছিলেন- বলতে পারিস আব্বা আম্মাকে ছাড়া আমি কি করে বেঁচে থাকবো? আমি যেন বোনটির অভিব্যক্তির মাঝে নিজের মনের প্রতিবিম্বই দেখছিলাম।
মনে পড়লো ,গত ২০১৬ আগষ্টে আমার ষষ্ঠ বই ‘পরকালের প্রস্তুতি’ বইটি প্রকাশিত হয়। প্রকাশক প্রায় তিন /চার মাসের মাথায় জানালেন বইয়ের স্টক শেষ। উনারা নতুন করে ছাপাতে চান। একজন নবীন লেখকের জন্য এটা অনেক বেশী আনন্দের। কিন্তু কেন যেন সেই আনন্দের অনুভুতি বুকের মাঝে অনুভব করলাম না। কেননা আমার লিখালিখির জীবনে আমার বাবা ছিলেন আমার অনেক গুরুত্বপূর্ণ একজন পাঠক,উৎসাহদানকারী স্বজন এবং একজন কঠোর সমালোচক ও বটে। কিন্তুআফসোস আমার এই বইটি আব্বার হাতে নেয়ার সুযোগ হয়নি। কেননা বইটি ছিলো মৃত বাবাকে উৎসর্গ করে লিখা।বইটির প্রথম কপিটি হাতে পেয়ে আনন্দের চাইতে গলার কাছে বোবা কান্নার অনুভুতিই অনুভব করেছি অনেক বেশি।মূলত এরপর হতেই লিখালিখির জগত হতে হাত গুটিয়ে নিই।‘পরকালের প্রস্ততি’ বইটি পড়ার পর পাঠকের অনেক দোয়া আমি পেয়েছি। জেদ্দা রেডিওর বাংলা বিভাগ হতে বইটি ধারাবাহিক ভাবে পড়ে শুনানো হয়। বাংলাদেশ হতে একজন সম্মানিত পাঠক বইটির বিরাট সংখ্যক কপি সাদকায়ে জারিয়া হিসেবে কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।( আমি দু:খিত প্রচন্ড ইচ্ছে থাকার পর ও মানসিক আহত অবস্থার কারণে সেই সম্মানিত ভাইটিকে আমার মতামত তখন জানাতে পারিনি।)
মহান আল্লাহ এই বইটির সমস্ত সওয়াব আমার প্রিয় বাবার রুহের জন্য সাদকায়ে জারিয়া হিসেবে পৌঁছে দিন। সেই সাথে আল্লাহর কাছে কল্যাণ কামনা করছি সেই সব প্রিয় পাঠকদের জন্য যারা আমাকে আবার নতুন করে কলম হাতে তুলে নিতে মানসিক ভাবে সাহস যুগিয়েছেন।এখনো প্রতিনিয়ত তাগাদা দিয়ে যাচ্ছেন।
নূর আয়েশা সিদ্দিকা( বিউটি)
বিষয়: বিবিধ
৭৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন